একটি খাকি খাম পাওয়ার গল্প // শেষ পর্ব
আস্সালামু আলাইকুম /আদাব 🤝
আমার প্রাণ প্রিয় বন্ধুরা, কেমন আছেন আপনারা সবাই। আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো এবং সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো ও সুস্থ আছি ।আমি @mahfuzur888, বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে আপনাদের সাথে আছি ।
আমার বাংলা ব্লগের প্রাণপ্রিয় বন্ধুরা, প্রতিদিনের মতো আজকে আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম আপনাদের সবার মাঝে। আজকের এই পোস্টটি সাজিয়েছিলাম আমার জীবনের সফলতার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার একটি গল্পের শেষ পর্ব নিয়ে।
এভাবে অনেক যুবকই চূড়ান্ত মেডিকেলে আনফিট হয়েছে। পরে আবার বাহিরে থাকা ২০ জন যুবককে ভিতরে নিয়ে আসা হয়েছিল। যদিও এই সংখ্যাগুলো আমি কাউন্ট করতে পারিনি। তবে ওই সৈনিকগুলোর কাছ থেকে শুনতে পেরেছিলাম। ওই সৈনিক গুলো তখন স্টেডিয়াম মাঠে আসা অফিসারকে সমস্ত হিসাব দিচ্ছিল । এবার আমার পালা চূড়ান্ত মেডিকেলের আমি সহ আরো দুইজন চূড়ান্ত মেডিকেলের রুমে প্রবেশ করলাম। যদিও চূড়ান্ত মেডিকেল পর্বে গিয়ে আমি অস্বস্তি বোধ করছিলাম। তখন পায়ের নখ থেকে শুরু করে একদম মাথার চুল পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ টস লাইট জ্বালিয়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতো। সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আমি চূড়ান্তভাবে নচিত হয়ে গেলাম। তখন আমার মনের ভিতর আরও একটু ভালো লাগা কাজ করতেছিল। তবে সেই ভালো লাগাটা আমি কারো সাথে শেয়ার করতে পারছিলাম না কারণ তখন কোন প্রকার মোবাইল ফোন ছিল না।
যাইহোক একে একে সমস্ত যুবককে চূড়ান্ত মেডিকেল করার পরে আমরা মাত্র ৩০ জন ফাইনালি টিকে ছিলাম। এবং এই চূড়ান্ত মেডিকেল শেষ করতে করতে তখন রাত ৮ঃ৪৫ মিনিট হয়তোবা দুই এক মিনিট এদিক সেদিক হবে। তারপর আমাদের এই ৩০ জনকে বলা হলো বাইরে গিয়ে কিছু খেতে চাইলে খেয়ে আসতে।এবং টাইমটা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ৯:৩০ এর মধ্যেই হাজির থাকতে হবেকিন্তু আমার হাতে তখন ছিল মাত্র ৩০ টাকা। তখন পেটে ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও টাকার দিকে তাকিয়ে কিছু খেতে পারিনি। কারন আমাকে এই রাত্রিতে আবার বাড়ি ফিরতে হবে। শুধুমাত্র টিউবওয়েল থেকে এক হাত দিয়ে টিউবয়েলের মুখ ধরে অন্য হাত দিয়ে টিউবওয়েলের হ্যান্ডেল চেপে কিছু পানি পান করেছিলাম। তারপর আবার হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে যখন দেখলাম সময় হয়ে গেছে তখন আবার ভিতরে চলে আসলাম। এবং আমরা ত্রিশ জন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে ছিলাম। রাত ১০: ৩০ মিনিটে আমাদের সবাইকে ডাকা হল এবং সেখানে একে একে সবাইকে জিজ্ঞাস করা হলো কে কোন কোড় নিবে। তখন যেহেতু আমার কোন কোড় সম্পর্কে ধারণা ছিল না তাই আমি কোন কোড় সম্পর্কে বলতে পারিনি। যাদের কেউ আর্মিতে ছিল অথবা আগে থেকে জানা ছিল তারা কেউ কেউ ভিন্ন ভিন্ন কোড় চেয়েছিল। পরে আমরা তিরিশ জন সেখানে আবার বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করলাম।
রাত তখন ১২ টা আমাদেরকে আবার ডাকা হল এবং এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে বেশ কিছু আদেশ উপদেশ দেওয়া হল। তারপর একে একে নাম ডেকে একটি খাকি খামের ভিতরে অ্যাপার্মেন্ট লেটার দিয়ে দেওয়া হল। আমি অ্যাপার্মেন্ট লেটার হাতে পেতে পেতে রাত ১২:৩০ মিনিট । সবাইকে পরবর্তীতে জয়েন ডেট জানিয়ে বিদায় দেওয়া হল। এবার শুরু হলো নতুন আরেক অধ্যায়। এত রাত্রিতে বাস চলাচল বন্ধ অনেক দূর পায়ে হেঁটে চলে আসলাম আমার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তার মাথায়। এবং সেখানে একে একে আমার বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার আরো দুইজনকে পেলাম। যখন আমরা তিনজন একত্রিত হলাম তখন মনের ভিতর একটি সাহস চলে আসলো। কিছুক্ষণ পর দুইটি রিক্সা দেখতে পেলাম। এবং সেই রিকশা আমাদের তিনজনের শেষ গন্তব্যে পৌঁছাতে ১০০ টাকা ভাড়া চাইল। তখন আমি যেহেতু একটু আগেই নেমে যাবো সেহেতু আমি ৩০ টাকা দিলাম বাকি দুইজনে ৭০ টাকা দিয়ে সেই রিকশায় উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।
দীর্ঘ ৫০ মিনিট পর আমি আমার বাড়ির পাশের বাজারে এসে পৌঁছাইলাম কিন্তু এখানেও সমস্যা আরেকটা যেটা হলো আমার বাড়িতে যেতে বেশ কিছু বড় বড় গাছ পার হতে হতো। তাই আমি আর একা যেতে সাহস পেলাম না তখন বাজারের ভিতরে নাইট গার্ডের সাথে বসে রইলাম ৫ থেকে ১০ মিনিট পরেই আমার এক সম্পর্কে মামা হয়। সেই মামা সিনেমা হলে কাজ করতো। সেই সিনেমা হলের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন একটি রিকশা করে। আমি সেই মামাকে দেখতে পেয়ে ডাক দিতে না দিতেই সে আমাকে রিক্সায় উঠিয়ে নিল এবং আমার সমস্ত কারণ জেনে নিল। এবং রিক্সা ওঠার চার মিনিটের মাথায় আমার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে সে তার বাড়ির দিকে চলে গেল।এবার আমি আমার বাড়িতে এসে দরজায় নক করতেই। আমার মা দরজা খুলে দিল। আমি আমার মা-বাবার বড় ছেলে কাজেই বড় ছেলে বাহিরে আছে এভেবেই আমার ভাই বোন বাবা ঘুমাতে পারলেও আমার মা ঘুমাতে পারেননি। পরে আমার বাবা উঠে আসলেন। এবং আমার কাছ থেকে সমস্ত কিছু শুনলেন। যদিও আমার ফ্রেন্ডরা সন্ধ্যায় এসে আমার মা-বাবাকে বলেছিল আমি চূড়ান্ত মেডিকেল পর্যন্ত গিয়েছি। কিন্তু তারপরেও পিতা-মাতার মনতো সন্তানের জন্য একটু খারাপ লাগবেই।
তারপর আমার পিতা আমার অ্যাপার্মেন্ট লেটারটি দেখলেন ততক্ষণে আমার মা আমার জন্য খাবার রেডি করলেন। তারপর আমি আমার বোনকে ডাকলাম এবং বললাম বোন তোর জন্য কি নিয়ে এসেছি। আমার ছোট বোনটি যদিও বুঝতো না তারপরেও আমার বাবা-মার কাছ থেকে জেনে খুশি হয়েছিল। যাইহোক যত রীতি খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন সবাই জেনে গেল তখন অনেকেই আমাকে আর আমাকে দেওয়া সেই খাকি কামের অ্যাপার্টমেন্ট লেটার দেখতে আসলো। যথারীতি ১৪ তারিখ বিকালে আমি আমার ফুফুর বাসায় চলে যাই বাকি পরীক্ষাগুলো দেওয়ার জন্য। এবার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি ফিরে আসি আর বাড়ি ফিরে এসেই এক অদ্ভুত আচরণের মধ্যে পড়ে যায়। যে ফ্রেন্ডগুলো আগে আমাকে দেখতে পারতো না সেই ফ্রেন্ডগুলো এখন আমাকে কাছে ডেকে নিচ্ছে। আমি বাড়ি থেকে কখনো আমার আদর ভালোবাসা কাম্য করিনি সেই সমস্ত বাড়ি থেকে আমাকে অনেক ধরনের আদর আপ্যায়ন করা হয়। যে বাড়িতে গেলে কখনো মাছ দিয়ে ভাত জোটেনি সেই বাড়িতে গেলে আমার জন্য মোরগ জবাই করা হয়। আর এর সবকিছুই সম্ভব হয়েছিল শুধুমাত্র একটি খাঁকি খামের জন্য।
তো বন্ধুরা আজকে খাকি খাম পাওয়ার গল্পটি এখানেই শেষ করছি।পরবর্তীতে যেকোনো একটি গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে আবারও হাজির হবো। সে পর্যন্ত্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন আল্লাহ হাফেজ। 💗🙏💗।
ফোনের বিবরণ
ক্যামেরা | স্যামসাং গ্যালাক্সি |
---|---|
ধরণ | গল্প । |
মডেল | এম ৬২ |
ক্যাপচার | @mahfuzur888 |
অবস্থান | রাজশাহী- বাংলাদেশ |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোঃমাহফুজুর রহমান।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের একজন সুনাগরিক। সর্বদাই নিজেকে দেশের মঙ্গল কামনায় ব্যস্ত রাখি। আমার জন্মভূমিকে আমি মায়ের মতো ভালোবাসি।আমি ভ্রমণ করতে খুবি ভালোবাসি।তাছাড়া ফটোগ্রাফি করতে আমার ভালো লাগে,আর রান্না করা আমার নেশা, এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে নতুন কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই আমি আমার সৃজনশীলতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে চাই। এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়,ধন্যবাদ সবাইকে।🌹💖🌹।
https://x.com/mahfuzur888/status/1874879223149834603?t=ecYgbELfDN4gKn36yXpRrg&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Congratulations, your post was upvoted by @supportive.