শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি- প্রিয় শিল্পীর গান শুনতে যেয়ে যা হলো II written by @maksudakawsar II

in আমার বাংলা ব্লগ3 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। দিন যায় কথা থাকে। দিন কিন্তু সত্যি সত্যি চলেই যাচ্ছে। চলে যাচ্ছে সময়। সময় কখন আসে আর কখনই বা যায় সেটা টেরই পাই না। তাই ব্যস্ততার পরিমানও দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে। আজকাল যেন জীবনের সাথে যুদ্ধ করেই জীবন পার করতে হচ্ছে। তবুও সময় করে বসে পড়লাম আপনাদের জন্য একটু লেখালেখি করার জন্য। আমি আশা করি আজকের ব্লগ আপনাদের সবার অনেক বেশি ভালো লাগবে। সব সময় চেষ্টা করি ভালো ভালো ব্লগগুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

image.png

Source

প্রতিটি মানুষের জীবনে ছেলেবেলা হলো একটি স্বর্ণযুগ। আমরা কেউ কিন্তু আমাদের ছেলেবেলাকে ভুলতে পারি না।জীবনের প্রতিটি পদে পদে আমাদের কাছে আমাদের ছেলেবেলা ধরা দেয় স্মৃতি হয়ে। ছেলেবেলার সেই আনন্দঘন দিনগুলো আমাদের জীবনে মাঝে মাঝে মধুর স্মৃতি বিলিয়ে দেয়। নিয়ে যায় সেই শৈশবের কিছু সুন্দর মূহূর্তে। যেখান থেকে ফিরে আসাটাই বেশ মুশকিল। তবুও আমরা ফিরে আসি। আমাদের কে ফিরে আসতে হয়। তাই তো আজ আমি আবার চলে আসলাম আপনাদের মাঝে আমার সেই ছেলেবেলার আরও কিছু স্মৃতি ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য।

আজ ক’দিন যাবৎ আশেপাশে কান পাতলেই যেন শোনা যাচ্ছে ড্রাম আর বাদ্যযন্ত্রের সুর। বেশ পরিচিত কিছু গানের সুরও যেন মনকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচেছ নিমিষে। এমন কিছু গানের সুর শুনে গতকাল গিয়েছিলাম বাসার কাছেই একটি কনসার্ট দেখার জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো কেন জানি সেখানে ঢুকতে দিলো না। সে যাইহোক এই কনসার্ট দেখেই বার বার মনে হচ্ছিলো আমার ছেলেবেলার কথা।মনে হচ্ছিলো এমন কিছু স্মৃতির কথা যা মনে আসলে আজও বেশ হাসি আসে।

ছেলেবেলায় আমাদের এলাকায় একবার কনসার্ট এর আয়োজন করা হয়েছিল। তখন হয়তো আমি ক্লাস ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশুনা করি। একদিকে ডিসেম্বর মাস। তার উপর পরীক্ষা শেষ এখন শুধু ফলাফলের অপেক্ষায়। তো সে সময়ে এলাকায় একটি কনসার্ট এর আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে দেশের নাম করা সব ব্যান্ডদলের শিল্পীরা এসেছিল। আর সেই প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য আমার বন্ধু বান্ধব সবাই বেশ উৎসাহিত ছিল। কিন্তু আমার মুশকিল হলো আমার বাসা হতে সেই প্রোগ্রামে যেতে দিবে না। কারন একদিকে যেমন প্রোগ্রাম রাতে, আর অন্যদিকে শীতের রাত। আমারও গেল বেশ মন খারাপ হয়ে। তবে সেই প্রোগ্রামে কিন্তু মহিলাদের জন্য আলাদা জায়গা রাখা হয়েছিল। যাতে করে কোয়াটারের মা বোনেরা সামনাসামনি বসে প্রোগ্রামটি উপভোগ করতে পারে।

কিন্তু ঐ যে বাসা থেকে আমার বড় ভাই আর মা যেতে দিবে না। সেটাই বেশ কষ্টের বিষয়। সবাই যাবে আর আমি যাবো না। এটা কেমন কষ্টের বিষয়। তার উপর আবার আমার সব প্রিয় ব্যান্ডদলের শিল্পী আসবে এখানে গান গাইতে। শুনেছি, রবি চৌধুরী, মনি কিশোর, সোলস্ এবং এলআরবি আসবে। বলেন এ ও কি সয়? আমি তো বেশ মন খারাপ করলাম। যে করে হোক আমাকে যেতেই হবে। তাই বান্ধবীদের সাথে পরামর্শ করলাম। কি করে বাসায় রাজি করানো যায়।

অবশেষে বান্ধবীদের সহায়তায় এলাকার বড় ভাইদের অনুরোধে বাসায় রাজি হলো। আর আমিও সেই কনসার্ট দেখার সুযোগ পেলাম। তো সেদিন বেশ সেজেগুজে চলে গেলাম কনসার্ট দেখতে। আমরা সবার সামনের সাড়িতে সোফায় বসলাম এবং অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে শুরু করলাম। প্রথমেই এলাকার পরিচিত শিল্পীদের গান দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু করা হলো। আমার তো এদের গান শুনতে ভালো লাগছে না। আমি কখন এলআরবি আর সোলস এর গান শুনবো। সেই প্রতীক্ষায় ভিতরে আগুন জ্বলছে।

দেখতে দেখতে এক সময়ে স্টেজে উঠে গেল সোলস। তার প্রিয় সব গান দিয়ে মাতিয়ে দিলো পুরো কনসার্টটি। এরপর একে একে স্টেজে আসলো রবি চৌধুরী সহ অন্যান্য শিল্পীরা। কিন্তু কি জানেন? ঘটনা তো একটি ঘটেই গেল। মানে মনি কিশোর কয়েকটি গান করার পড়েই মাঠে লেগে গেল হট্টগোল। মানে পিছন থেকে ঠিল মারা শুরু হয়ে গেল। আমরা তো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ দেখতে পেলাম সেখানে মারামারি শুরু হয়ে গেছে। আর সেই মারামারি এক পর্যায়ে আমাদের এদিকেও চলে আসলো। হট্রগোলের মধ্যে কোথায় যাবো বুঝতে পারছিলাম না। আর আমার পাশের বান্ধবীরা কোথায় চলে গেল সেটাও বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ দেখলাম শিল্পী মনি কিশোর তার হাত দুটো আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। যাতে করে আমি স্টেজের উপর উঠে নিজেকে রক্ষা করতে পারি।আমিও হাত বাড়িয়ে উঠে পড়লাম। তারপর আর কি। কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে আসলাম।

ভাবলাম বাসার কাউকে এসব কথা বলবো না। ওমা সে কি করে হয়? আমি পৌঁছানোর আগেই সেখানকার সব খবর পৌঁছে গেল বাসায়। সেদিন যে মায়ের হাতের দু একটি চর থাপ্পর খাইনি তা কিন্তু নয়। সাথে ছিল ফ্রি বকা। একেবারে কান ধরিয়ে ছাড়লো যাতে করে আর কখনও এমন জায়গায় না যাই। সেই থেকে আর এমন কোন প্রোগ্রাম হলে শুধু দূর থেকেই শুনে শেষ। মাফও চাই, দোয়াও চাই।

জানিনা কেমন লাগলো আমার আজকের টপিকটি। আশা করি আপনাদের কাছে আজকের পোষ্টটি বেশ ভালা লাগলো। ভালো থাকবেন, সুখে থাকবেন। আর নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করবেন।

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

Sort:  
 3 days ago (edited)

image.png

 3 days ago (edited)
 2 days ago 

ঘটনাটি আমার জানা ছিল না। আজ আপনার পোস্ট পড়ে জানলাম। আপনি কিন্তু ছেলেবেলায় বেশ দুষ্ট ছিলেন। আবার গানও বেশ পছন্দ করতেন। যাই হোক আপনার পোস্ট পড়ে হাসতে হাসতে আমার জীবন শেষ। ধন্যবাদ পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 yesterday 

ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।