"নাবিকের জীবন" প্রথম অংশ || মেলে ধরবো নাবিক জীবনের গল্প (১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য 🦊)
"অনেক বৈচিত্র্যময় নাবিক জীবন"
শুভ কামনা দিয়ে শুরু করছি। আমি আজ আমার নাবিক জীবনের গল্প কিছুটা তুলে ধরবো। আশাকরি সবাই পড়বেন।
"নাবিক জীবন" ( ১ম অংশ)
"মেরিনারদের বা জাহাজিদের নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা" এবং "জাহাজে জাহাজির কাজ"।
জাহাজির কাজের আগে জাহাজের কি কাজ সেটা বলি। আমার জাহাজি জ্ঞান যদিও জাহাজের মত বিশাল নয়। তবুও ৬ জাহাজে কাজ করার অভিজ্ঞতায় যা বুঝেছি সেটা বলছি...
পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে, নিরাপদে, স্বল্প সময়ে অধিক পরিমাণ পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম জাহাজ! চাল, চিনি, তেল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় গাড়ি, মোবাইল, ল্যাপটপ, জামা-কাপড় এমন কিছু নাই যেটা জাহাজে আসেনা। ভালো কিছু বোঝাতে সবাই বিশেষ করে ব্যবসায়ীমহল 'এক্সপোর্ট কোয়ালিটি' বা 'ইমপোর্টেড' বলে থাকে। কিন্তু এই এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট যে প্রায় পুরোটাই জাহাজকেন্দ্রিক এটা অনেকেরই অজানা। বাই এয়ার খুব অল্প পরিমাণ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে যা আবার অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সেজন্য পৃথিবীর আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯০% জাহাজের মাধ্যমে হয়
জাহাজের মধ্যে আবার বিভিন্ন রকমফের আছে। অর্থাৎ যে জাহাজে আপনি শখের গাড়ি আমদানি করবেন সে জাহাজে তেল আনতে পারবেন না। গাড়ি পরিবহনের জন্য এক ধরনের জাহাজ, তেল পরিবহনের জন্য একধরনের জাহাজ, গ্যাস পরিবহনের জন্য এক ধরনের জাহাজ, গার্মেন্টসের তৈরি পোশাক পরিবহনের জন্য আবার আরেক ধরনের জাহাজ।
মূলত কন্টেইনার ক্যারিয়ার (কন্টেইনারে টাইলস, ল্যাপটপ, মোবাইল, জামাকাপড় থেকে ফলমূল, হিমজাত খাদ্য ইত্যাদি থাকে), বাল্ক ক্যারিয়ার (চাল, চিনি থেকে আয়রন বার, সিমেন্টের ক্লিংকার টাইপ সব জিনিস পরিবহন করে), কার ক্যারিয়ার (সব ধরনের কার,বাস টাইপ যানবাহন পরিবহনের জন্য), গ্যাস ক্যারিয়ার (এল.এন.জি, এল.পি.জি ইত্যাদি গ্যাস বহন করে), অয়েল ট্যাংকার (তেল পরিবহনের জন্য), কেমিকেল ট্যাংকার (মিথানলসহ সমস্ত ধরনের কেমিকেলের জন্য) ইত্যাদি ভাগে জাহাজকে ভাগ করা যায়।
এবার আসি জাহাজিদের কথায়-
এত বড় একটা জাহাজ চলবে কূলকিনারা ছাড়া নীল দরিয়ায়।
কিন্তু কিভাবে? এই তো বুঝতে পেরেছেন, ইঞ্জিন লাগবে! তাহলে ইঞ্জিন চালানো, রক্ষনাবেক্ষনের জন্য ইঞ্জিনিয়ার লাগবে। মানে জাহাজে একটা ইঞ্জিন ডিপার্টমেন্ট থাকবে। ইঞ্জিন চালু করার পর সমুদ্রে দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা জাহাজ সঠিক গন্তব্যে চালাতে হবে, মানে নেভিগেইট করতে হবে। এই নেভিগেইটররা আবার জাহাজের ডেকের প্রায় সব কাজই করে বলে এই ডিপার্টমেন্টের নাম ডেক ডিপার্টমেন্ট। এখন এই ডেক-ইঞ্জিন দুই ডিপার্টমেন্টের লোকজনই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। একদল ইঞ্জিন চালানো নিয়ে আরেকদল জাহাজ চালানো নিয়ে। তাহলে এদের রান্নাবাড়া-খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা কে করবে?! ঠিক ধরেছেন, রান্না ও খাওয়াদাওয়ার জন্য তৃতীয় এবং শেষটার নাম হলো গ্যালি ডিপার্টমেন্ট! এই তিন ডিপার্টমেন্ট মিলেই জাহাজ।
জাহাজের কথা শুনলে সবার প্রথমেই সবাই যেটা বলে এবং একমাত্র যে শব্দটা সবাই জানে সেটা হলো, ক্যাপ্টেন! ক্যাপ্টেন হলেন ডেক ডিপার্টমেন্ট এবং পুরো জাহাজের ইনচার্জ! ডেক ডিপার্টমেন্টে ক্যাপ্টেনসহ ৪ জন অফিসার থাকে। ক্যাপ্টেন/মাষ্টার, চিফ অফিসার, সেকেন্ড অফিসার আর থার্ড অফিসার। ইঞ্জিন ডিপার্টমেন্টেও সাধারণত ৪ জন থাকে। চিফ ইঞ্জিনিয়ার (হেড অফ ইঞ্জিন ডিপার্টমেন্ট), সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার আর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার! প্রত্যেক অফিসারের সাথে কাজের সময় একজন করে সহকারী থাকে যাদেরকে রেটিং বলা হয়। ক্যাপ্টেন এবং চিফ ইঞ্জিনিয়ার বাদে বাকি সব অফিসারদের প্রতিদিন বাই রোটেশান কমপক্ষে ৮ ঘন্টা করে ডিউটি থাকে। ওহ! বলা হয়নি, জাহাজ যেখান থেকে নেভিগেইট করে সে জায়গাকে বলে ব্রিজ (Bridge). ডিউটির সময় ডেক অফিসার তার সহকারীসহ ব্রিজে আর ইঞ্জিনিয়ার তার সহকারীসহ ইঞ্জিনরুমে থাকে। র্যাংক অনুযায়ী ক্যাপ্টেন-চিফ ইঞ্জিনিয়ার, চিফ অফিসার-সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার, সেকেন্ড অফিসার-থার্ড ইঞ্জিনিয়ার আর থার্ড অফিসার-ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার সমমানের। ইঞ্জিন ডিপার্টমেন্টে একজন ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ারও থাকে জাহাজের সব ধরনের ইলেক্ট্রিক কাজের জন্য।
গ্যালি ডিপার্টমেন্টে মেইনলি একজন কুক আর একজন স্টুয়ার্ড থাকে। কুকের কাজ তিনবেলা রান্না করা আর স্টুয়ার্ডের খাবার সার্ভ করা, থালা-বাসন ধোয়া ইত্যাদি।
বোঝার সুবিধার্থে আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট বললেও আমরা সবাই একটা পরিবারের মতো থাকি জাহাজে। নানা দেশের, নানা বর্ণের, নানা ধর্মের ২০-২২ জনের একটা পরিবার ভাসমান লৌহ কারাগারে করে অবিরাম ছুটে চলি দেশ থেকে দেশান্তরে....
বি.দ্র. আমি ইঞ্জিন ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে জুনিয়র অফিসার মানে ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার। তাই ভবিষ্যতে কেউ আমাকে জাহাজের ক্যাপ্টেন বলে/ভেবে ভুল করবেন না আশা করি! এ জনমে আমি সর্বোচ্চ চিফ ইঞ্জিনিয়ার হতে পারব কিন্তু ক্যাপ্টেন না।
ছবির বিবরণ:-
ছবির যন্ত্র | এম আই 9p |
---|---|
অবস্থান | মাঝ সমুদ্রে |
ছবির কারিগর | @mamunmr |
ধন্যবাদ জানাই বড় ভাই @emranhasan কে আমাকে এতো সুন্দর জায়গায় নিজের অনুভূতিগুলো ভাগ করে নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
সংযুক্তি :-
@rme
@amarbanglablog
নাবিকের জীবনটা মনে হয় খুব উপভোগ্য।আপনি খুব সুন্দর ভাবে নাবিক জীবনের অনেকগুলো কথা শেয়ার করেছেন।খুব সুন্দর উপস্থাপন করেছেন।
সচল থাকুক আপনাদের কার্যক্রম।8 ঘন্টা ডিউটি মনে হচ্ছে খুবই কষ্টসাধ্য।
অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো ভাই।নাবিক জীবনে সব সময় ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ ভাই
ভালো উপস্থাপনা ছিল।
যদিও তুমি মাত্র শুরু করেছ।
সামনে ইনশাআল্লাহ আরো ভালো হবে।
@rme দাদা আশাকরি তোমার পোস্টটি পড়বেন।
নাবিকের জীবনের প্রথম অংশ পরে আমি অনেক কিছুই শিখলাম আগে আমার মোটেও কোন ধারণা ছিলো না।
আপনি অনেক তথ্য বহুল পোস্ট করেছেন। আমি আশাকরি আপনার থেকে আমরা আরও অনেক ভালো ভালো তথ্য পাবো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার জন্য শুভকামনা রইলো 🥀
অনেক ধন্যবাদ ভাই
জাহাজের ধরণ, ডেক ডিপার্ট্মেন্ট এর খুটিনাটি অনেক বিষয় জানলাম। আসলে এগুলো একেবারে অজানা ছিল। ভাল লাগল আপনার পোস্টটি অনেক নতুন কিছু শিখতে পেরেছি জাহাজ আর জাহাজীদের নিয়ে। ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ ভাই