নিরুপমা||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে।আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। গল্প লিখতে আমার বেশ ভালো লাগে। বিশেষ করে বৃষ্টি ভেজা দিনে গল্প লিখতে এবং গল্প পড়তে আমি খুবই পছন্দ করি। তাই আমি আজকের এই বৃষ্টি ভেজা দিনে সুন্দর একটি গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি।
নিরুপমা:
গ্রামের সহজ সরল মেয়ে নিরুপমা। আদর করে সবাই তাকে নিরু বলে ডাকতো। নিরুর দুরন্তপনা সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। নিরু সবার চোখের মনি। দেখতে দেখতে নিরুপমা বেশ বড় হয়ে উঠেছে। দিন যত বেড়ে যাচ্ছে নিরুপমার বাবা তত বেশি চিন্তায় পড়ে যাচ্ছে। নিরুপমাকে একটি ভালো পাত্রের হাতে তুলে দিতে পারলে যেন তার বাবা স্বস্তি ফিরে পান। নিরুর দুরন্তপনা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। কিছুতেই যেন তাকে আটকানো যাচ্ছে না। একদিকে তার বয়স বাড়ছে অন্যদিকে সে আরো দুষ্টুমি করে চলেছে। তার এই দুরন্তপনা তার বাবার কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিন হঠাৎ করেই নিরুপামার জন্য একটি সম্বন্ধ আসলো। বিয়ের কথা শুনে নিরুপমা তো একেবারেই মুখ গোমরা করে বসে রইল। নিরুপমা তার এই গ্রাম ছেড়ে যেতে চায় না। গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। তাইতো তাদেরকে ছেড়ে বাঁচা নিরুপমার জন্য একেবারেই অসম্ভব।
অনেক কষ্টে নিরুপমা বাবা নিরুপমাকে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে গেলেন। ছেলের বাবা নিরুপমাকে দেখে বেশ পছন্দ করলেন। ছেলের বাবা বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে গেলেন। অন্যদিকে নিরুপমা বিয়ের কথা ভেবে মন খারাপ করে বসে রইল। এভাবে ধীরে ধীরে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। নিরুপমা বিয়ে হয়ে শহরে চলে গেল। যখন নিরুপমা শশুর বাড়িতে গেল তখন সবার আচার ব্যবহার দেখে নিরুপমা অনেকটা কষ্ট পেল। গ্রামের মেয়েকে তারা একেবারে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছিল। সকলের আদরের নিরুপমা সেখানে গিয়ে অবহেলার পাত্রী হয়ে গেল। নিরুপমার শাশুড়ি মা নিরুপমাকে একেবারেই পছন্দ করেন না। অন্যদিকে নিরুপমার স্বামী নিরুপমার সাথে ভালোভাবে কথাই বলেন না। আসলে নিরুপমার শ্বশুরমশাই অনেকটা জোর করেই নিরুপমার সাথে তার স্বামীর বিয়ে দিয়েছিলেন। চঞ্চল দুরন্ত সেই মেয়েটি একেবারে যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। শহরের চার দেয়ালের মাঝে গুটি কয়েক মানুষের মাঝে নিরুপমা যেন হাপিয়ে উঠছিল।
দিন যত যেতে লাগলো নিরুপমার সব দুরন্তপনা গুলো হারিয়ে গেল। শহরের ইট পাথরের ঘেরা দেয়াল গুলোর মাঝে নিরুপমা নিজের স্বপ্নগুলোকে ভেঙেচুরে চুরমার করে দিতে লাগলো। কত স্বপ্ন নিয়ে সে স্বামীর ঘরে এসেছিল। হঠাৎ করে সেই স্বপ্নগুলো একেবারে ভেঙে গেল। নিরুপমা নিজের স্বামী শাশুড়ির মন যোগানোর জন্য তাদের পছন্দের খাবারগুলো রান্না করা শিখতে লাগলো। কিন্তু তাতেও তাদের মন ভরল না। সব সময় অবহেলা যেন নিরুপমার পাওনা ছিল। নিরুপমা যখন একা একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতো তখন ওই দূর আকাশের বিশালতা দেখে নিজের মনের কষ্টগুলো দূর করার চেষ্টা করত। ভাবতো সে যদি আবার তার আগের জীবনে ফিরে যেতে পারত তাহলে হয়তো জীবনটা আরো বেশি সুন্দর হতো। দিন যত যেতে লাগলো নিরুপমার অবহেলা আরো বেড়ে গেল। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর হঠাৎ করেই তার শশুর মারা গেলেন। যেই মানুষটি নিরুপমাকে বাবার স্নেহে আগলে রেখেছিলেন সেই মানুষটিকে হারিয়ে নিরুপমা আরও নিঃস্ব হয়ে গেল।
নিরুপমা নিরবে সবকিছু সহ্য করে যাচ্ছিল। এরপর যখন দেখল তার অবহেলার মাত্রা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে তখন সে বাধ্য হয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। মাঝে মাঝে সে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চিন্তা করেছিল। কিন্তু তার অনাগত সন্তানের কথা ভেবে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। নিরুপমা তার বাবার কাছে ফিরে যায়নি। কারণ এই মুখ নিয়ে বাবার কাছে সে ফিরতে পারবে না। গ্রামের মানুষগুলো যে তার বাবাকে অনেক সম্মান করে। এছাড়া নিরুপমা কে তারা সবাই ভালবাসে। নিরুপমার এই জীবন তাদের কাছে কাম্য নয়। তাইতো সে তার গ্রামের না ফিরে গিয়ে একটি এতিমখানার স্কুলে পড়ানোর চাকরি নিল। নিরুপমা গ্রামের মেয়ে হলেও শিক্ষা-দীক্ষায় কোন অংশে কম ছিল না। হয়তো কখনো চাকরি করতে চায়নি। তবে নিজের পড়াশোনায় বেশ দক্ষ ছিল। নিরুপমা নিজেকে নিয়ে বেশ ভালো ছিল।
এভাবে যতই দিন যাচ্ছিল তার সন্তান এই পৃথিবীতে আসার সময় ঘনিয়ে আসছিল। অন্যদিকে তার স্বামী একটিবারও তার খবর নেয়নি। অচেনা অজানা এক শহরে নিরুপমা নিজের সন্তানকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। জীবন সংগ্রামে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল নিরুপমা। এরপর তার সন্তান এই পৃথিবীতে আসে। এভাবে কেটে গেল আরো পাঁচটি বছর। নিরুপমার একটি মিষ্টি মেয়ে হয়েছে। দেখতে ঠিক যেন নিরুপমারই মত। সেও মায়ের মত হয়েছে। এতিম বাচ্চাগুলোকে একেবারে যেন মাতিয়ে রাখে সারাক্ষণ। সে সবাইকে নিজের ভাই বোন বানিয়ে নিয়েছে। সময় যত যেতে লাগলো নিরুপমা এবং তার মেয়ে তাদের জীবনের গতিতে এগিয়ে যেতে লাগলো। একদিন হঠাৎ করে একটি গাড়ি এসে এতিমখানার সামনে দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে দুজন মানুষ নেমে এতিমখানায় আসলো। দূর থেকে যখন নিরুপমা তাদেরকে দেখছিল তার দুচোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসছিল। কারণ এই মানুষ দুটোর মধ্যে একজন তার অতি পরিচিত।
নিরুপমা নিজেকে আড়াল করে নিল। নিরুপমার মেয়ে নিরুপমার মতই মিশুক হয়েছে। সে দৌড়ে সেই লোকটির কাছে গেল। গিয়ে বলল আপনাদেরকে তো চিনি না আপনারা এখানে কি চান? নিরুপমার মেয়েটিকে দেখে লোকটি অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকলো। এক পলকের দেখাতে মেয়েটিকে ভালো লেগে গেল লোকটির। এবার তারা ভেতরে প্রবেশ করল। কর্তৃপক্ষের কাছে তারা একটি আবেদন জানালো। তারা তাদের এতিমখানা থেকে একটি বাচ্চা চায়। ৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে তারা সন্তানের মুখ দেখেনি। তাইতো একটি সন্তানের আশায় তারা সেখানে এসেছে। নিরুপমা আড়াল থেকে তাদের কথাগুলো শুনছিল। যখন তারা কথাগুলো বলছিল তখন নিরুপমার দুচোখে পানি পড়ছিল। নিরুপমা অনেক কষ্টে নিজের চোখের জল লুকিয়ে তাদের সামনে এলো। নিরুপমা মনে মনে ভাবল আজকেই সে তার সন্তানকে নিয়ে তাদের সামনে যাবে। নিরুপমা সেখানে গিয়ে বলল সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সন্তান সুখ দেন না। যারা আপন মানুষকে পর করে দেয় তারা কখনো সুখী হতে পারে না। আজ আপনাদের সবকিছুই আছে কিন্তু আপনারা অসুখী। আমার কাছে কিছু নেই শুধু আমার সন্তান আছে। তাইতো আজকে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। নিরুপমার কথাগুলো শুনে তার স্বামীর বুঝতে বাকি রইল না এই নিরুপমা সেই নিরুপমা। আর নিরুপমার মেয়ে তার নিজের সন্তান। যাকে সে অবহেলায় ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। আর সৃষ্টিকর্তা আজ তাকে বাবা হওয়ার সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
আজ নিরুপমার স্বামী হয়তো একটি সন্তানের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। কিন্তু একটি ফুটফুটে মেয়ের বাবা হয়েও তাকে নিজের কাছে রাখার অধিকার তার নেই। কারণ সে একদিন নিরুপমাকে ও তার গর্ভের সন্তানকে অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। সৃষ্টিকর্তা হয়তো তার প্রতিশোধ নিয়েছেন। তাইতো সন্তান থেকেও নিরুপমার স্বামী সন্তান সুখ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আশা করছি আমার লেখা গল্পটি সকলের ভালো লেগেছে।
শুধু এটুকুই বলবো আপনি অসাধারণ একটি গল্প লিখেছেন। তবে আপনার এই গল্পে লেখার মত আমার কাছে কিছুই নেই। আর থাকলেও লিখব না। কি বলবো এত সুন্দর গল্পটি উপহার দেওয়ার জন্য, আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম।
আমার লিখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। যখন কেউ সুন্দর মন্তব্য করে তখন লিখার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
প্রথম থেকে গল্পটা পড়ে নিরুপমার কথাগুলো শুনে বেশ ভালোই লাগছিল। পরবর্তীতে যখন নিরুপমার শহরে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ওর কষ্টের দিন শুরু হলো তখন সত্যি ভীষণ খারাপ লাগলো। কষ্টের দিন কেবলই বাড়তে বাড়তে শেষ পর্যন্ত শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হতে হলো। তাও নিজের বাবার বাড়িতে না গিয়ে মাদ্রাসায় চাকরি করে নিজের সন্তানকে জন্ম দেয়। আর সেখানে থেকেই নিজের সন্তানকে বড় করতে লাগলো। শেষে গিয়ে একদম অবাক হয়ে গেলাম। যে তার স্বামী আরেকটা বিয়ে করলো, কিন্তু তাদের কোন সন্তান নেই। এটাই হওয়ার ছিল। যারা প্রথমে থাকতেই যে জিনিসের মূল্য বোঝে না পরবর্তীতে তারা সেটা হাজারো খোঁজে পাবে না। গল্পের শেষটা বেশ ভালই লেগেছে।
আমাদের সমাজে এমন অনেক নিরুপমা আছে যারা অবহেলার শিকার হয়। তবে নিরুপমা তার সেই জীবন থেকে বেরিয়ে এসে। নতুন জীবন শুরু করেছে। তবে তার স্বামী অনেক কিছু অবহেলায় হারিয়ে ফেলেছে।