চেয়েছিলাম অরিগ্যামি ছোট মানুষের আবদার রাখতে হয়ে গেল ক্রাফট।
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
কেমন আছেন? শীতের মরসুম এসে গেছে সাথে কুয়াশায় ঠাসা দিন। আজ গুরুনানকের জন্মদিন উপলক্ষে ভারতবর্ষে জাতীয় ছুটি ছিল। বাচ্চাদের স্কুল নেই। এক একদিন ছুটি হলে সপ্তাহের মাঝে সবারই আনন্দ দ্বিগুণ।
সকাল সকাল প্রতিবেশী বন্ধু বকফুল দিয়ে গেল৷ তখন থেকেই ভাবছি আজ রান্নার ব্লগ করব। কিন্তু প্যাকেট খুলে দেখলাম বকফুল মাত্র কয়েকটি। এতে বড়া হবে কিন্তু অন্যকিছু একেবারেই না৷ বকফুলের বড়া সকলেই জানে কিভাবে বানায় আমি আমাদা করে ব্লগ বানিয়ে আর কি দেখাব বলুন? এই সবের মধ্যে কখন যে বিকেল হয়ে গেল টেরই পেলাম না। সারাদিন পড়া টিভি রুটিন শেষে আমরা পৌঁছে গেলাম মা মেয়ের কোয়ালিটি টাইমে। এই সময়টা আমরা দুজন এক সাথে কিছু করি। কখনও নিচে বেড়াতে যাই, কখনও ছবি আঁকি কখনও আবার কোন কিছু বানাই৷ আজ প্রথমেই একটা কাচের বোতল পরিষ্কার করে তাতে কিছু চাইনিজ বল দিয়ে দিলাম। ফুলে বড় হবে, মেয়ে দেখেনি আগে তাই এবার কলেজস্ট্রিট থেকে নিলাম৷ এরপর ওকে বললাম রঙিন কাগজ আনতে, একটা অরিগ্যামি গোলাপ বানিয়ে দেব। গতকাল শিশুদিবস ছিল, ওকে কিছু দেওয়া হয়নি। আমি হাতে করে কিছু বানিয়ে দিলে ওর বেশ ভালো লাগে৷
লাল কাগজ দিয়ে গোলাপ বানিয়ে দিলাম যখন ও ধাপগুলো নিজেই শিখে নিল। সাথে সাথে অন্য একটা পেপার নিয়ে আমায় বানিয়ে দিল৷ মা মেয়ে এতোক্ষণে মজা পেয়েছি। আর মিজা করতে করতেই বেশ কিছু গোলাপ বানিয়ে ফেলেছি৷ এখন এতো গোলাপ দিয়ে কি করব? তাই বললাম ওর ক্রাফট মেটিরিয়াল থেকে যদি কিছু আইসক্রিম স্টিক ধার দেয় তবে একটা দারুণ উপহার বানিয়ে দিতে পারি। এসবে মেয়ের কোনদিনই না থাকে না৷ নেচে নেচে নিয়ে এসে দিল। আর বললাম গ্লুগানটা বের করতে। নিজের জিনিস সে চাবির ভেতর রাখলেও আমার কোথায় কি থাকে নখদর্পনে জানা৷
সব কিছু চিটিয়ে যখন ওয়ালমেট বানালাম দেখছি ন্যাড়া ন্যাড়া লাগছে ফল একটি সবুজ কাগজ কেটে বেশ কিছু পাতা বানিয়ে চিটিয়ে দিলাম। হয়ে গেল পরিপূর্ণ ওয়ালমেট।
চমৎকার উপহার পেয়ে ছোট সদস্যটি বেজায় খুশি। পড়াশুনো শেষ গিফটও পেয়ে গেছে, তবে কি আমাদের একসাথে কাটানোর সময় শেষ? তা নয়, আমরা দুজনায় অনেকগুলো আবৃত্তি করলাম। অনেকদিন পড়াশুনো বাড়ি যাওয়ার ফলে ও প্রায় সবই ভুলে গেছে৷ তাই নতুন করে শুরু করলাম। বাচ্চা তো এখনও নিজের দায়িত্বে সব করে নেবে এমন হয়নি। আপন খেয়ালেই কেটে যায়। এখন সব কাজ গুছিয়ে ও খেতে বসেছে আমি সেই সময় এলাম এই পুরো কান্ডটা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে। একা হাতে সব করার পর ব্লগে নিয়মিত থাকা এক একসময় কঠিন হয়ে যায়। তাও ভালোবাসি বলেই কখনও থেমে যাই না৷ চেষ্টা করি সব কিছুর সাথে অ্যাডজাস্ট করে চলতে।
অনেক বকে ফেললাম তাই না? চলুন সবটা দেখে নিই।
যেহেতু পুরোটা শুরু থেকে প্ল্যানিং করে করা নয় তাই রঙিন কাগজের ছবি দুটো ও অন্যান্য ছবিও আলাদা আলাদা তুলেছি৷
রঙিন কাগজ
আইস্ক্রিম স্টিক
হট গ্লু
এবার ধাপে ধাপে দেখে নেব, প্রথমে অরিগ্যামি গোলাপ। তারপর বাকিটা।
প্রথমেই সমান চার ভাগে ভাগ করে মুড়ে নিয়ে খুলে দিয়েছি।
কোণাকুণি ত্রিভুজের আকারে দুই দিক মুড়ে আবার খুলে নিয়েছি।
মাঝের বিন্দুর ওপর নির্ভর করে বাকি পুরো কাগজটা ছবিতে দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী ভাঁজ করলাম।
তৈরি হল ত্রিভুজ।
ত্রিভুজের মাথার দিক ঠিক রেখে দুই দিকের বাহু মাথায় ঠেকিয়ে ভাঁজ করে নিয়েছি।
এই ধাপের দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে অংশটা ভাঁজ করে মাথায় ঠেকিয়েছি তার মাঝখানটা ফাঁকা। ওই ফাঁকার উপর নির্ভর করে ত্রিভুজটাকে চেপটে দিলাম নিচের দিক করে। ফলে ছোট্ট একটা বর্গক্ষেত্র তৈরি হলো।
দুই বাহুই ভাজ করে নিয়েছি এবং দুটি বর্গক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
এবার ওই দুই বর্গক্ষেত্রের উপরের অংশটা কে আবারো ভাঁজ করি ছোট্ট ত্রিভুজ বানিয়েছি।
মাঝখানে জিভের মতো একটা অংশ বেরিয়ে থাকে।
ওটা কেউ ভাঁজ করে ওপরের দিকে তুলে দিয়েছি।
এতক্ষণ যা যা করেছি সেই একই জিনিস ত্রিভুজ তার উল্টোদিকে কেউ করে নিয়েছি।
ছবিগুলোতে সেই সবারই ধাপ দেখান রয়েছে। মাঝে জীভের মতো অংশটা মুড়ে নিয়েছিলাম তার ছবি তোলা হয়নি।
দুই পাশে ত্রিভুজ মোড়ে নেয়ার পর মাঝের বিন্দু অনুযায়ী দেখলে বোঝা যাবে দুটি ত্রিভুজের মাঝে ভাঁজ আছে।
এতক্ষণ যা করেছি সেটাকে মাঝখানে রেখে ভাঁজ করে বাকি দুই পিঠের দেখে ঘুরিয়ে নিলাম। অর্থাৎ আমাদের মোট চারটি পিঠ রয়েছে।
খুলে নেওয়ার পর দেখতে অনেকটা ছবিতে আঁকা মাটির ঘরের মতো শেপ৷ এ বার নিচের অংশগুলো ভাঁজ করে ত্রিভুজ বানালাম।
তলায় আবার সেই জিভের মতো একটা অংশ পেরিয়ে রয়েছে। তাকেও ভাঁজ করে নিলাম। একইভাবে উল্টো পিঠটা করে নিয়েছি।
এইভাবে চারপাশ ভাজ করে নেয়ার পর অদ্ভুত একটা শেপ তৈরি হয়েছে।
একি ভাবে মাঝখানের অংশটা কে বিন্দু ধরে চারটে বাহু খুলে দিয়েছি।
এবার চারটে ফাঁকায় চারটে আঙুল গলিয়ে মাছের চুড়ো মতো অংশটাকে ভেতরের দিকে চাপ দিয়ে যেকোনো একদিকে আস্তে আস্তে করে ঘুরিয়েছি।
এর ফলে নিচে যে অংশটা পড়ে থাকে সেটা অটোমেটিকলি ওপর দিকে উঠে এসে ওভারলেপিং পাপড়ির টেক্সচার তৈরি করে।
এভাবেই তৈরি হয়ে গেল অরিগ্যামি গোলাপ।
একই পদ্ধতিতে আরও বেশ কিছু গোলাপ তৈরি করে নিয়েছি।
এখন ওয়ালমেট তৈরি করার জন্য কয়েকটি আইসক্রিম স্টিক নিয়েছি।
প্রথমে মাপ মতো ঠিক হলো বসিয়ে দেখে নিলাম কোথায় কোথায় গ্লু দিয়ে চেটাতে হবে।
সেইমত গ্লু দিয়ে চিটিয়ে নিয়েছি। যেহেতু হঅট গ্লু গান দিয়ে করছি তাই চেটাতে খুব একটা সময় লাগেনি।
এবার জায়গা মতো ফুলগুলো বসিয়ে দিলাম।
ফুলগুলো হট গ্লু দিয়ে চিটিয়েছি।
এবার পাতা তৈরির জন্য সবুজ রঙের কাগজের লম্বা একটা স্ট্রিপ কেটে নিয়েছি।
একে মাঝ বরাবর মুড়ে নিয়েছি।
পেন দিয়ে দাগ করে কেটে নিয়েছি।
ভাঁজ খুলে দিলাম। তৈরি হয়ে গেল লম্বা লম্বা পাতা।
প্রথমে একটি মোটামুটি আয়তাকার সবুজ কাগজের স্ট্রিপ কেটে নিয়েছি।
এই কাটআউটটা কি মাছ বরাবর ভাঁজ করেছি৷
এরপর পাতার শেপে কেটে নিয়েছি৷
স্লান্ট লাইনে সোজা উল্টো করে সরু স্ট্রিপ কেটে ভাঁজ করে নিয়েছি।
সমস্ত ভাঁজ খুলে দিতেই তৈরি হল অন্য রকম পাতা।
একই ভাবে বেশ কিছু পাতা তৈরি করেছি৷
- সমস্ত পাতাকে সাইজ মত জায়গায় হট গ্লু দিয়ে ছিটিয়ে নিয়েছি।
ব্যাস তৈরি হয়ে গেল মেয়ের জন্য ছোট্ট উপহার - কাগজ ফুল ও পাতার ওয়ালমেট।
এই ওয়ালমেট ঠিক এই রান্না ঘরে ঢোকার যে গেট রয়েছে সেইখানে ঝুলিয়ে দিয়েছি। কেমন লাগছে দেখুন তো।
আজ আসি তবে। ভালো থাকবেন।
টা টা
পোস্টের ধরণ | ক্রাফট পোস্ট |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট |
১০% বেনিফিসিয়ারি লাজুক খ্যাঁককে
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1857481627946844293?t=8LZxcJQAvgu_jsTlhO2mow&s=19
অসাধারণ বানিয়েছিস এই অরিগামি প্লাস ক্রাফটখানা। কি দারুন সুন্দর হয়েছে দেখতে। তার থেকেও বড় কথা পোস্টটি ভীষণ আকর্ষণীয় করে সাজিয়েছিস। এত সুন্দর হাতের কাজ করিস যা দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। একেবারে নিখুঁত হয়েছে প্রত্যেকটি গোলাপ ফুল। অরিগামির মাধ্যমে এত সুন্দর গোলাপ ফুল যে বানানো যায় তাই আমি জানতাম না। পোস্টটি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
এই তো হয়। ভাবি এক হয়ে যায় আরেক। অবশেষে যে জিনিসটা দাঁড়ালো এটা অনেক।
আর পোস্ট সাজানোর কথা যদি বলো ওসব তো জানোই আমার নেশা কোন জিনিসকে একটু আলাদা করে প্রেজেন্ট করার নেশা।
আপনার দক্ষতা দেখেই তো আমি একেবারে মুগ্ধ হলাম দিদি। অনেক সুন্দর করে আপনি এটি তৈরি করেছেন। পুরোটা দেখতে খুব ভালো লাগছিল। বিভিন্ন কালারের ফুল হাওয়ায় দেখতে বেশি ভালো লাগছে। এটি ঘরের দেয়ালে লাগালে কিন্তু ভালো লাগবে দেখতে। এরকম জিনিসগুলো তৈরি করতে আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। আপনার এত সুন্দর দক্ষতার প্রশংসা করতেই হচ্ছে দিদি।
চেষ্টা করি আপু। একসম মেয়ে যখন প্লে স্কুলে পড়ত ওকে নিত্য কিছু বানিয়ে দিতাম তাছাড়া প্রতি সপ্তাহে স্কুলেরও নানান প্রজেক্ট থাকত৷ এখন কেমন যেন অনীহা এসে গেছে। তাও মাঝে মধ্যে করি৷ ওরই মন ভোলাতে।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুসবি হলাম। ধন্যবাদ জানবেন আপু।
আপনারা মা মেয়ে মিলে তো খুব সুন্দর একটা ওয়ালমেট তৈরি করলেন। গোলাপ ফুল গুলো সত্যিই চমৎকার লাগছে দেখতে। গোলাপ ফুল বানাতে বানাতে আপনারা দারুন কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছেন একসাথে এবং খুব সুন্দর একটা জিনিসও তৈরি করে ফেললেন। সেই সাথে আপনার মেয়েরও গোলাপ ফুল বানানো শিখা হয়ে গেল। ভালো লাগলো আপনার আজকের পোস্ট দেখে। ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যাঁ আপু। ও গোলাপ বানানো শিখেছে। আজ স্কুলে বানিয়ে দিদিমণিকে উপহারও দিয়েছে। আর কায়দা করে একটা স্টিক লাগিয়েছে৷ আর অন্য একটি কাগজকে পানের খিলির মতো পাকিয়ে তার ভেতর স্টিক সমেত গোলাপটা ঢুকিয়ে দিয়েছে।
যাইহোক আপনি পোস্টটা বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন দেখে ভালো লাগছে। ধন্যবাদ নেবেন৷
দিদি ছোট মানুষের আবদার রাখতে গিয়ে ক্রাফট বানালেও। জিনিসটা কিন্তু দারুণ হয়েছে। আমার কাছে বেশ চমৎকার লাগছে। ধন্যবাদ।