অসম বয়সী বন্ধুর জন্মদিন।। জেনারেল রাইটিং।।

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago (edited)

☘️নমস্কার বন্ধুরা☘️

🙏🙏🙏

নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত

🌸🌸🌸


সাধারণত রাতের দিকে রোজের পোস্ট লিখি। কারণ সারাদিন লেগে যায় এটা ভাবতে, যে কি লিখব। অতয়েব বুঝতেই পারছেন বিকেল বিকেল কন্টেন্ট মাথায় এসে গেছে, আর জ্বালাতেও চলে এসছি। আমি বলছি জ্বালানো, অথচ আপনারা আমার লেখা পড়ে কত ভালো ভালো মন্তব্য করেন, আমিও যে আনন্দে উৎসাহিত হই না তা নয়। ওইগুলিই আসলে পরের দিনের লেখার শক্তিসঞ্চালক। এই সব হাতিঘোড়া ভেবে যেই প্রোফাইল খুললাম ওমা নোটিফিকেশনে দেখি এবিবি ফিচারড মেইনশন ইউ!! আবারও একরাশ আনন্দ। এক আকাশ ভালোলাগা। মডারেটর কিং পরস দাদাকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আর বন্ধু সাথী আপু কে আবারও এক বুক ভালোবাসা। তুমি না নিয়ে এলে জানতেই পারতাম না লিখে এমনও প্রাপ্তি হয়।

বন্ধুরা, বকবক করতে গিয়ে এটাই জিজ্ঞেস করা হয়নি আপনাদের কুশলমঙ্গলের কথা। কেমন আছেন? কোথাও বৃষ্টি কোথাও গরম, সব মিলে আশাকরি আপনাদের ভালোই কাটছে। আমারও চলে যাচ্ছে। ভালো মন্দ মিশিয়ে রোজ যেমন যায়। আসলে মানুষের জীবনে কি আর রোজ রোজ নিত্যনতুন ঘটনা ঘটে? দিন চলে যায়। হয়তো চলে যেতে হয় বলেই চলে যায়।

1000197417.jpg

আচ্ছা, টাইটেলে কি লিখেছি সেটা পড়ে এতক্ষণ কি ভাবছেন, জন্মদিনের পোস্ট লিখতে এসে কি সব হাবিজাবি বকে যাচ্ছি। নাহ চলুন সরাসরি প্রসঙ্গে ঢুকে যাই৷ এই যে ছবিটি দেখছেন এ আমার মাসিদের তরফের ভাইবোনেরা। আমার পাশের জন- আমার প্রিয় দাদার আজ জন্মদিন৷ তাকে দাদা বলি ঠিকই তবে সে আমার দাদার থেকেও অনেক বেশি বন্ধু৷ জন্মের মুহুর্ত থেকে সে আমার বন্ধু। তার কাছেই গল্প শুনেছি জন্মের পর যখন আমার মা হাসপাতাল থেকে ছুটি পেল তখন মায়ের শরীর অনেকটাই খারাপ, আমার বড় মাসি নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন। আমাকে বাড়ির উঠোনে শুইয়ে দেওয়া হত রোজ। আর আমার এই দাদা প্রায় দিনই কোয়াটার পাউরুটি, যার আকৃতি লম্বা আর পেছনটা পোড়া এবং একটি হলুদ কাগজে মোড়া, নিয়ে মুখের কাছে এসে বলত "খাবি? হাঁ কর"। কি।আশ্চর্য বলুন! এক মাসের একটি বাচ্চাকে এই ভাবে লোভ দেখায় তার দশ বছরের বড় দাদা৷ আজকাল একা একা থাকলে মাঝে মধ্যে এই সব কথা মনে করে দৃশ্যটি ভাবার চেষ্টা করি আর আপন মনে হেসে উঠি।

আমাদের সময় জন্মদিন নিয়ে বিশেষ মাতামাতি ছিল না। আমার নিজের জন্মদিনই জেনেছি অনেক বড় হয়ে। অবশ্য তার আগে আমাদের ভাইবোনের বন্ধুত্ব একেবারে পাকাপাকি বটগাছ। শেকড়ের গভীরতা অনেক। আজও ভাবি ওই দিনগুলিই সোনার দিন ছিল। দাদা পড়াশুনো করতে কলকাতায় থাকত। প্রতি পনের দিনে বাড়ি আসার নাম করে চলে আসত আমাদের বাড়ি। এক একবার আমি হয়তো আমাদের ভেতরের উঠোনে ঘোরাঘুরি করছি হঠাৎ দেখি দাদা আসছে। ইয়া লম্বা, বড় বড় চুল, কলেজের ছেলেপুলেদের লম্বাচুল রাখাটা বোধয় ধরাবাঁধা স্টাইল ছিল। আচমকা দেখে ভাবছি গায়ক ইন্দ্রনীল সেন আসছে! কেন আসছে? আসলে সেই সপ্তাহেই বাবা কলকাতা থেকে ইন্দ্রনীল সেনের একটি গানের ক্যাসেড এনেছিলেন৷ তাতে তিনি একটি নীল রঙের জিন্সের জামা পরে ছিলেন। দাদাও আসছিল ওই একই রকম একটি জামা পরে। হয়তো সেকারণেই এক ঝলকে এমনটা মনে হয়েছিল। যাইহোক পরিচিত ডাকে সম্বিৎ ফিরতে সময় লাগেনি।

ছোট থেকে স্মৃতির তো শেষ নেই। কত কিই মনে পড়ে৷ আজ এতো বড় হয়ে গিয়েও আমার তাকে দাদা বলে মানার আগে বন্ধু বলেই বেশি বিশ্বাস করি। নির্ভরতার শক্ত জমি। অথচ আশ্চর্যের বিষয় আমি তাকে দেখিনি প্রায় চোদ্দ বছর৷ এ যেন রামের বনবাস। সময়ের ব্যস্ততায় দুজনের প্রতি দুজনের চাপা অভিমান টপকে কেউই এগোতে পারিনি। আমাদের নিজেদের জন্য হয়তো কোন সময়ই বেঁচে নেই। আজ যখন সকালে তাকে মেসেজ করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই হয়তো সে আশ্চর্য হয়েছে। জিজ্ঞেস করেছে "মনে রেখেছিস?" নির্দ্বিধায় বলেছে "থ্যাংক ইউ"। আমি তৎক্ষনাৎ হেসেছি। আমাদের ছেলেমানুষী মন কতখানি শিশু যে একজন ভেবে নিয়েছে আমি তার জন্মদিনটা ভুলে গেছি। শুধু সে না। এ কথা আমিও ভাবি আমার জন্মদিন এলে, আমার জীবনের প্রথম এবং কাছের বন্ধুটি আমার জন্মদিন ভুলে গেছে৷ সে ভুলে গেছে সে আমার দাদার থেকে অনেক বেশি বন্ধু৷ আসলে আমরা রক্ততুতো ভাইবোন তো। তাই আমার ধারণা আমাদের চিন্তাভাবনাগুলো একই রকম।

জানেন, কবি সাহিত্যিকদের মনের ভেতর অদ্ভুত আবেগের দোলাচল চলে৷ কেউ দেখায় কেউ দেখায় না৷ আমি সেই না দেখানোর দলেই পড়ি৷ আমার পরিচিত স্বল্প পরিচিতরা সকলেই জানেন আমি খুব চাঁছাছোলা ধরণের৷ সে তো আর এক দিনে তৈরি হয়নি। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের ফল। তবে আজ তা নিয়ে আলোচনা করার দিন নয়। কিন্তু আবেগ যে আমার একেবারেই নেই তা নয়৷ এই পোস্টটা সেই আবেগেরই প্রমাণ। সেই ভালোবাসার সুতো যাকে ধরে রেখেছি, আগলে রেখেছি বুকের ভেতর৷ কিভাবে সব ছিঁড়ে দিই। যার হাত ধরে বড় হলাম, জীবন চিনলাম তাকেই ভুলে যাবো! এ কি হয় না হবার৷

1000197400.jpg

শুভ জন্মদিন প্রিয় দাদা, প্রিয় বন্ধু, প্রিয় ছেলেবেলা। তুমি জীবনের অনেকখানি আলো হয়ে রয়েছ। তোমাকে পার্থিব কিছু দেওয়ার ধৃষ্টতা বা দুঃসাহস আমার আজও নেই৷ সারা পৃথিবীর সামনে শুভেচ্ছা জানালাম। তোমার সুস্থ দীর্ঘায়ু কামনা করি। তুমি যেভাবে হীরের মতো জ্বলজ্বল করছ তা আমার কাছে সত্যিই ভীষণ গর্বের, ভীষণ আনন্দেরও৷ তোমার মুকুটে আরও অনেক দামী দামী মণিমুক্তো যোগ হোক এই কামনাই করি৷ আমি জানি না তুমি এই লেখা পড়বে নাকি কোনদিন। তাও তোমার উদ্দেশ্যে এইটুকু দিলাম। জানো এতোক্ষণে আমার চোখে জল এলো। অথচ হাসছি। বড্ড মনে পড়ে তোমার হাসিমুখ৷ চাইলেই দেখা হতে পারে আমাদের অথচ হয় না৷ কি আশ্চর্য তাই না বলো? ঈশ্বর আমাদের জন্য কি রেখেছেন তা তিনিই জানেন। আচ্ছা, তোমার আমাকে মনে পড়ে? স্মৃতির মতো, আলোর মতো। কি ভাবছ এতো কথা পৃথিবীর সামনে কেন বলছি? কি জানি, বলতে ইচ্ছে করল। তোমায় ফোন করে বলতেই পারতাম। কিন্তু হল না বলা। তাই লিখে রাখলাম। কিছু অনুভূতি লিখে রাখা ভালো। যখন লিখতে পারব না তখন পড়ব, বা যদি কোনদিন সব ভুলে যাই, বা অ্যালজাইমার রোগে আক্রান্ত হই তখন এইগুলোই পড়ে মনে করার চেষ্টা করব। এ আমার নেগেটিভিটি না। শুধু একটি সম্ভবনা মাত্র। যাইহোক তুমি ভালো থেকো। তোমার ভালো থাকাই কামনা করি পরমের কাছে।

কি লিখতে লিখতে কোথায় চলে গেলাম। এই হচ্ছে সমস্যা। কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় তা নিজেও জানি না। তবে স্রোতের মধ্যে লেখা যখন হয়েছে তাকে আর মুছলাম না। থাক আমার ব্লগ লিস্টে আমার নিজের মতো করে।

বন্ধুরা অনেক বললাম আজ। আর নয়। পরে অন্য কোনদিন ছোটবেলার গল্প শোনাবো। আজ আসি। যাবার আগে বলি, আমি যা লিখি তা আমার ভাবনার ফল৷ তবে আমার উপদেশ আমিই অনেক সময় মানতে পারি না। সে আমার দূর্বলতা। কিন্তু আপনারা আপনাদের প্রিয় ভাইবোনদের হাতছাড়া করবেন না। এ বড় দ্বন্দ্বের। এর আগুনের আঁচ কোনদিনই নেভে না। জ্বলতে জ্বলতে সব পুড়ে যায় তবু শান্ত হয় না৷ তাই বলব সবার সাথে থাকুন। আনন্দে বাঁচুন। জীবন একটাই। ফুরিয়ে গেলে কিচ্ছু নেই। যদি আবারও জন্ম নিই এই রূপে কি আর জন্মাব? তাই হিসেব নিকেষ চুলোয় তুলে দিয়ে প্রিয় সম্পর্কগুলোকে মূল্য দিয়ে আনন্দে বাঁচুন।

ভালো থাকবেন বন্ধুরা, আসি।

টা টা

ছবিগুলো পুরনো। ফোনে স্ক্যান করা।

1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। তবে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ বর্তমানে ভারতবর্ষের পুনে তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


Sort:  
 4 days ago 

এমন প্রাণের বন্ধুর জন্য লেখা সবসময়ই আবেগঘন হয়। বেঁচে থাক এমন বন্ধুত্ব। প্রিয় মানুষেরা দূরে থাকলে হয়তো এমনই মন খারাপ হয়। মিটে যাক সব দূরত্ব। পৃথিবী হোক নিকটবর্তী। লেখাটির মধ্যে সম্পর্কের আবেগ এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেল। এমন বন্ধুত্বের জন্য অঢেল শুভকামনা।

 4 days ago 

সুন্দর মন্তব্য করলে। এমন পজিটিভ কথা সবার ভেতরে ভেতরে সঞ্চারিত হোক। ভালো থেকো।

 3 days ago 

শুভজন্মদিন প্রিয় দাদা। জন্মদিনের অনাবিল শুভেচ্ছা দাদাকে। তোমার পোস্ট করা সেই ছবিটি অনেক স্মৃতিময়। তোমার পোস্ট পুনরায় ফিচারড আর্টিকেলে স্থান পেয়েছে বলে অনেক বেশি খুশি হয়েছি। তোমার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা প্রিয় বন্ধু 💞

 3 days ago 

এত্তো ভালোবাসা তোমার সাথী। অনেক অনেক ভালো থেকো। তোমার এই সুন্দর শুভেচ্ছাবার্তা আমি অবশ্যই পৌঁছে দেব৷

 3 days ago 

তুমিও ভীষণ ভালো থেকো
🥀🥀