রকম ফেরে যুগ বদলেছে, যুদ্ধও বদলেছে।। জেনারেল রাইটিং

in আমার বাংলা ব্লগ7 days ago (edited)

।। নমস্কার বন্ধুরা।।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত



যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্॥
পরিত্রাণায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে॥

1000002406.jpg

অর্ধনারীশ্বর

যুদ্ধ নিয়ে কথা বললে আমাদের মাথায় হয়তো শুরুতেই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ কাহিনী এসে ভিড় করে৷ কিন্তু ভেবে দেখলে স্পষ্ট হয় সৃষ্টির মুহুর্ত থেকেই যুদ্ধ হয়। শুধু সময়ের সাথে সাথে যুদ্ধ অর্থাৎ লড়াই এর ধরণ বদলেছে৷ ভুল বলছি?

আচ্ছা, কথা শুরুর আগে বলুন বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় আপনারা বেশ ভালোই আছেন। আমিও আছি। এদিকে মুম্বাই বা গোয়ার মতো মুষলধারে বৃষ্টি না হলেও সারাদিন ঠান্ডা বাতাস বয়৷ আর মেঘলা ওয়েদার৷ খুব গরমে ঘেমে নেয়ে হতে হচ্ছে না ঠিকই, রোদহীন ঠান্ডা ঠান্ডা ওয়েদারের জন্য বেশ শীত শীত করে৷ আমি যখন খুব গরম সহ্য করতে পারি না তেমনি একেবারে রোদ নেই সেটাও ভালো লাগে না৷ তো সব মিলিয়েই এক প্রকার চলে যাচ্ছে বলা যায়। এই বাতাসি সময়গুলোতে বসে বারবার মনে হচ্ছিল আজকাল মানুষ অনেক বেশি লড়াই করে। সেই লড়াই ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম। কখনো নিজের সাথে কখনো ছায়ার সাথে কখনো হাওয়ার সাথে। কিন্তু লড়াই প্রত্যেকেই করি। লড়াই কার নেই কবেই বা ছিল না। তাই ভাবলাম কিছু লিখে রাখি।

যখন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল তখনও লড়াই ছিল। সবাই সবার সাথে লড়াই করে এক একটা জায়গায় নিজের অবস্থান স্থির করে নিয়েছে। আমাদের পৃথিবীর কথাই ভাবি। ঠিক এই জায়গায় না জায়গা করতে পারলে সঠিক পরিমাণে আলো বাতাস এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যাবতীয় জিনিস যা প্রাণ উৎপাদনে সাহায্য করে তা সঠিক পরিমাণে পেত না। আমাদের গ্যালাক্সিতে প্রাণ সঞ্চারের দিক থেকে বলা যায় পৃথিবীরই জয়জয়কার। শুধু কি তাই? পৃথিবীর সৃষ্টির পর যখন ঠান্ডা হতে লাগলো, তখন প্রকৃতিতে কত রকমের যুদ্ধ চলল। আজকের পৃথিবীতে আর একদিন তৈরি হয়নি। বহু বছর ধরে একটু একটু করে তৈরি হয়েছে। কখনো বলেছে কখনো ধ্বংস হয়েছে আবার গড়েছে। সেও তো এক যুদ্ধ। প্রকৃতির ভেতর যুদ্ধ।

1000001649.jpg

মহাকাল(স্ত্রী রূপে)

তারপর কোন এক সময় প্রাণ সৃষ্টি হলো, ধীরে ধীরে মানুষ এলো। প্রাণ সৃষ্টির পর থেকেই অন্যরকমের যুদ্ধ। বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ শুরু হলো। একে মেরে খাওয়া ওকে মেরে খাওয়া। কেউ আবার সেখানে প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে। এও এক লড়াই। তারপর যখন সভ্যতা তৈরি হলো তখন থেকেই যদি আমরা লক্ষ্য করি রাজা হওয়ার লড়াই শুরু হলো। যারা তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী, তারা অন্যদের কায়েম করতে চেষ্টা করল। কখনো মেরে কখনো জুলুম করে। রাজ্য দখলের লড়াই, গদি দখলের লড়াই। এসবের মাঝেই যখন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত রচনা করেছেন, সেখানেও আমরা দেখেছি রাজ্য নিয়ে লড়াই। নিজের রাজ্যের পরিধি বাড়ানোর জন্য যুদ্ধ হয়েছে। তারপর শুরু হল মহাযুদ্ধ যার নাম কুরুক্ষেত্র। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধকে আমরা সহজ ভাবে যদি দেখি তাহলে ঘরে ঘরে যুদ্ধ বলা যায়। ভাই ভাই যুদ্ধে প্রতিবেশী রাজ্যরা পক্ষ নিয়েছে। অথচ একে বলা হচ্ছে ধর্ম স্থাপনের যুদ্ধ। ধর্ম স্থাপনের যুদ্ধ করতে গিয়ে কত প্রাণ গেল, এটাই কি অধর্ম নয়? আমার তো কোথাও গিয়ে মনে হয় সেই সময় নানান রাজ্যের নানান রাজারা ভয়ঙ্কর ভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। হয়তো তাদের নাম মেরে ফেললে কোন কিছুরই সুরাহা হত না। তাই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষে দেখা যাচ্ছে কেউই বেঁচে নেই। সেখান থেকেই আরেকটা নতুন শুরু। দুর্নীতিবিহীন সভ্যতা শুরু হল যা ধীরে ধীরে আবার দুর্নীতিগ্রস্ত হলো। আসলে মানুষের লোভ যেখানে বিদ্যমান সেখানে দুর্নীতি হবে না, এ হবার নয়।

তারপরের যুদ্ধ বলতে গেলে দেশ দখলের লড়াই হল, আমাদের থেকে খুব কাছাকাছি সময় প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ হলো দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হলো। এ বলে আমি ঠিক ওভাবে আমি ঠিক। অথচ স্টিফেন হকিংস বলেছিলেন ইউনিভার্সে কোন কিছুই সঠিক নয়। আমরা যেমন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখি আমাদের তেমনই লাগে।

এখন সারা বিশ্ব যুদ্ধ হয় বিজ্ঞানসম্মতভাবে। বায়োলজিক্যালি, কিংবা ইকনোমিক্যালি। অর্থাৎ অর্থনৈতিক দিক থেকে কোন দেশ কাকে কাইম রাখতে পারে। এ তো গেল বৃহত্তম মঞ্চ । আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেখুন না, লড়তে লড়তে সমস্ত একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে আমি তুমি তুমি আমি সংসার হল এখন সেটাও টিকছে না। সন্তান-সন্ততির সাথে লড়াই হচ্ছে। সর্বোপরি লড়াই হচ্ছে নিজের সাথে নিজের। এই এক মহা যুদ্ধ। কোথায় যেন একবার পড়েছিলাম, কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ আমাদের শরীরের মধ্যেই সব সময় ঘটে যা আমরা টের পাইনা। এই যে মানুষের নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ এও কি মহাযুদ্ধ নয়। মানুষ নিজে জানে না সে কি চায়, তা চাওয়ার পরিধি কতটা। শুধু লড়াই করে যায়। যেন সে জন্মেইছে লড়াই করার জন্য। এই চাওয়া আর যুদ্ধের মাঝে হয়তো একদিন সভ্যতাই শেষ হয়ে আবার নতুন শুরু হবে৷ কারণ ধ্বংস না হলে সৃষ্টি যে হয় না৷

1000002407.jpg

শান্তিরূপা

জানেন আজকাল বাচ্চাদের মায়েরা শেখায় "তোকে মারলে তুইও মেরে আসবি", অসহিষ্ণুতা জন্ম থেকেই বুনে দেওয়া হচ্ছে যেন৷ দৌড়ে প্রথম হতে হবে৷ এ জীবন নাকি যুদ্ধক্ষেত্র?

বন্ধুরা আসুন না নতুন প্রজন্ম একটা হাওয়া বাতাসে ভরা পৃথিবী দিই৷ মুক্ত ভালোবাসায় বাঁচতে শেখাই৷ আমার আমার, অধিকার, জবরদস্তি এই সব কি অত্যন্ত সস্তা নয়? আচ্ছা আমি কি একাই ভাবি এরম? আপনারা কি ভাবেন? অবশ্যই শেয়ার করবেন অপেক্ষায় থাকব৷

আজকের বকবক এখানেই শেষ করি বন্ধুরা, আপনারা ভালোবেসে ভালো থাকুন এই কামনা করি৷ আবার আসব অন্য কিছু নিয়ে৷

টা টা

সমস্ত ছবিই আমার হাতে আঁকা, জল রঙ ও পোস্টার রঙ ব্যবহার করে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। তবে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ বর্তমানে ভারতবর্ষের পুনে তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


Sort:  
 7 days ago 

দারুণ লেখনী আপু আপনার! আসলে পড়তে পড়তে বেশ ক'বার ই যেন মনে হলো প্রশ্নের মাঝে হারিয়ে গিয়েছি৷ জানা জিনিস নতুন করে ভাবছি! এটাই তো লেখার মাহাত্ম্য! আসলেই পৃথিবীর শুরু থেকেই যুদ্ধ আছে, যুদ্ধ থাকবেও! শুধু রূপ পরিবর্তন হচ্ছে, মাধ্যম পরিবর্তন হচ্ছে। এই যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন কিছুতে মতের অমিল হলেই অনেকে নেগেটিভ কিছু কমেন্ট করে ফেলে, গালাগালিও দিয়ে ফেলে কোন কিছু চিন্তা না করে, এটাও কিন্তু একপ্রকার যুদ্ধই মনে হয় আমার কাছে! অথচ আমরা ভুলে যাই, এই মহাবিশ্বের সবকিছুই একে অন্যের সাথে কানেক্টেড!

 5 days ago 

আপনি পড়লেন মন দিয়ে, আর এভাবে মন্তব্য করলেন দেখে খুবই ভালো লাগছে৷ আমি তো আমার মনে চলা কথাগুলো ছাইপাঁশের মতোই লিখে যাই৷ কোথায় শুরু করি কোথায় শেষ হয় নিজেই বুঝি না৷ তাও আপনার ভালো লাগল দেখে খুব খুশি হয়েছি। ভালো থাকবেন দিদি।

 7 days ago 

যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যেভাবে ধাপে ধাপে উত্তরণটাকে তুলে নিয়ে এলে তা প্রশংসনীয়। ছবিগুলোর কথা নতুন করে কি বলবো। ভীষণ প্রাসঙ্গিক। আর সত্যিই তো, যুদ্ধই জীবন। কটা যুদ্ধ জিততে পারলাম সেই হিসাবের আগে যুদ্ধের পটভূমি চিনতেই সময় চলে যায় যেন। তবে 'তোকে মারলে তুইও মারতে আসবি' এই শিক্ষায় আমি বিশ্বাসী নই। হয়তো পরিস্থিতি মানুষকে এমন উগ্র করে তুলেছে। সকলেই আজ সৈনিক। যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে চলাটাই যেন জীবন।

 5 days ago 

তোমার এমন মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগছে৷ জীবন যেন যুদ্ধই৷ আর কি। এখন মানুষ নিজের সাথে লড়াই করে নিজেকে আরই কুক্ষিগত করে ফেলেছে৷ এটাই দুঃখের৷ যাইহোক ভালো থেকো৷

 4 days ago 

যুদ্ধের রকমফের নিয়ে অনবদ্য একটি লেখা শেয়ার দিয়েছেন আপু। এটা সত্য যে কোন যুদ্ধ শুধু ধবংস ডেকে আনে, মঙ্গল আনে কমই। তবে জীবন যুদ্ধে যারা লড়ছে তাদের সেলুট জানাতে কার্পণ্য নেই আমার। আবার কিছু যুদ্ধ সৃষ্টিও করে। সেই যুদ্ধের ফসল আমার প্রিয় বাংলাদেশ। আপনি একদম ঠিক বলেছেন আপু, বাচ্চাদের দৌড়ে প্রথম হতে হবে৷ এ জীবন নাকি যুদ্ধক্ষেত্র"? এই অসম যুদ্ধা বাচ্চাদের শৈশব কেড়ে নিচ্ছে। সকল প্রকার অনৈতিক, দূর্বলের উপর সবলের যুদ্ধ বন্ধ হোক। বিশুদ্ধ আলো-বাতাসে মানবিক মানুষ ও পৃথিবী গড়ে উঠুক। অনবদ্য জেনারেল রাইটিংটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 4 days ago 

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু৷ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে বিষয়টা বুঝে এতো সুন্দর মন্তব্য করলেন৷ আমি আপ্লুত৷ আমার লেখা আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি তারজন্য আমার বাংলা ব্লগের কাছেও কৃতজ্ঞ৷ ভালো থাকবেন আপু। এভাবেই পাশে থাকবেন৷