আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-২৪,আমার জীবনে বন্ধুত্বের কিছু স্মৃতিচারণ ।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম

আমি @rahimakhatun
from Bangladesh

২৭ ই আশ্বিন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।

১২ অক্টোবর ২০২২ খ্রিস্টাব্দ ।


এখন ষড়ঋতুর শরৎকাল ।

মার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী সদস্যগনকে আমার সালাম এবং আদাব। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভাল আছি।সবাইকে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ। আজকে আমি আপনাদের জন্য প্রতিদিনের মত নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আমি আজ "আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণের জন্য ফেলে আসা জীবনের বন্ধুত্বের স্মৃতি নিয়ে লিখবো । প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই আমাদের সকলের প্রিয় দাদা @rme দাদাকে সুন্দর একটি বাংলা প্ল্যাটফর্ম আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।তারপর আমাদের প্রিয় এডমিন ভাইদের কে এমন একটা সুন্দর ভিন্ন আঙ্গিকের একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য।



এই ছবিটা হচ্ছে ২০১৫ সালের। ভার্সিটি সব বন্ধুরা মিলে প্রথম রমনা পার্কে গিয়েছিলাম। রমনা পার্কের বেঞ্চে বসে ছবি তোলা। কত দিন যাবৎ দেখা হয় না আমাদের।

ভূমিকাঃ

আমি আজ "আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা ২৪ অংশগ্রহণের জন্য ফেলে আসা জীবনের বন্ধুত্বের স্মৃতি পোস্ট করবো। আসলেই জীবনের সময় গুলো খুব দ্রুত চলে যায়। কিছু কিছু পুরোনো স্মৃতি ভুলা যায় না। আর যদি বন্ধুত্বের স্মৃতি হয় তাহলে তো আরো না। তারপর ও কর্ম ব্যস্ততার জন্য বন্ধুদের সাথে দেখা কিংবা কথা হয় না। তবে পুরানো স্মৃতি মনে পরলে বন্ধুত্বের কথা অনেক মনে পরে। আসলে বন্ধুদের স্মৃতির কথা বলে শেষ করা যায় না। কারণ সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন বন্ধু নতুন করে হয় ,আবার পুরোনো বন্ধু হারিয়ে যায়। যাই হোক আমি আজকে যার কথা নিয়ে লিখবো ,তার সাথে আমার এখনো ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এখনো কথা হয় দেখা হয় ,এমন কি গত কালেই আমাদের কথা হয়েছে। যাই হোক

বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণ:

আমার বন্ধুবির নাম হচ্ছে স্মিথা। ওর সাথে সেই ক্লাস সেভেন থেকে আমাদের বন্ধুত্ব।খুব ভালো স্টুডেন্ট। হঠাৎ করেই আমাদের বন্ধুত্ব। ও আমাদের বাসায় যেত ,আমি ও ওদের বাসায় আসতাম। আসলে ওর জেলা আমাদের জেলা এক ,তাই আমাদের চাল চলন প্রায় এক ছিলো। এমন কি ওর মা ও আমাকে খুব পছন্দ করতো আমার মা ও ওকে পছন্দ খুব করতো। স্কুল ছাড়াও আমরা দুইজন প্রায় একসাথে থাকতাম। বাসা মোটামুটি কাছাকাছি ছিল। কোন ভালো কিছু রান্না করলে ,একজন আরেক জনকে না খাওয়ানো অব্দি শান্তি ছিল না। ক্লাস যখন নাইন এ উঠি তখন ও একটা ভাইয়ার প্রেমে পরে। তো প্রেম গঠিত কোন সমস্যা হলে আমার কাছেই আসতো। যেমন তারা দেখা করলে আমাকে রাখা হত পাহাড়াদার হিসাবে ।

একদিন হল কি আমরা তিনজন মিলে বাসার কাছাকাছি একটা নদী ছিল ,ঘুরতে গেলাম ঠিক তখনই স্মিথার বড় ভাইয়ার এক বন্ধু দেখে ফেললো ,সে তো ঠিক তখনই ফোন দিয়ে ভাইয়াকে বলে দিল। কিছুক্ষন পর আমি আর স্মিথা মিলে ওদের বাসায় গেলাম ,ঠিক তখনি ভাইয়া আমাদের কে জিজ্ঞাসা করলো কোথায় গিয়েছিলাম ,আমার তো ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। পরে স্মিথা বললো বাহিরে হাটতে কোন রকম মিথ্যা বলে পার পেলাম। আরেক দিন আমাদের বাসার কাছের মার্কেটে যাবো ,আমরা ঠিক করলাম বাসায় না জানিয়ে যাবো। আমরা বোরকা পরে মার্কেটের একটা কসমেটিক এর দোকানে কানের দুল দেখছিলাম ,ঠিক ওই সময় ওই দোকানে আমার মা এসে হাজির গ্লিসারিন কিনতে। আমি মা কে দেখে স্মিথার পিছনে লুকিয়ে আছি। কোন রকম এই যাএায় ও বেঁচে গেলাম। কারন আমরা নেকাব পরা ছিলাম,তাছাড়া আমি স্মিথার পিছনে ছিলাম ও অনেক লম্বা, তাই মা দেখতে পায়নি।যাই হোক দুইজনের এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট এর পর একই কলেজে ভর্তি হলাম।কিন্তু সম্যাসা হলো দুইজন দুই সেকশনে।

বাসা থেকে মোটামুটি অনেক দূর বাস দিয়ে আসা যাওয়া করা লাগতো।আমি আবার তখন রাস্তা একা একা পার হতে পারতাম না,তাই ও কলেজে গেলে আমি যেতাম।ও আমাকে হাত ধরে ধরে রাস্তা পার করে দিত।আমাদের কলেজ ছুটি হত ১২.৪৫ মিনিটে, আমার কলেজ ছুটি হলে কখন বাসায় আসবো সেই চিন্তা থাকতো সব সময়ই। কারন বাসায় আগে আসলে একটু বেশি করে ঘুমাতে পারবো,তাই।কিন্তু কলেজ ছুটি হলে ভাইয়া সাথে ফোনে কথা বলার জন্য দেরি করতো।এই নিয়ে প্রায় রাগারাগি করতাম।মাঝে মাঝে রাগ করে আমি ২/৩ ও কথা বলতাম না,তারপর ও এসেই কথা বলতো।কত যে রাগ করতাম ওর সাথে। আমি রাগ করলে ,ও যে বাস এ উঠতো ,সেই বাস এ আমি উঠতাম না। একবার আমরা কেউ কার সাথে কথা বলি না,ও ওর প্যাকটিকেল খাতা বাস স্ট্যান্ডই রেখে বাসায় চলে গিয়েছে। আমি পরে নেমে দেখি কাউন্টারে ওর নাম প্র্যাকটিকেল খাতা ,আমি বাসায় নিয়ে চলে আসলাম। পরে এক ফ্রেন্ড এর মাধ্যমে খবর দিলাম যে যেন চিন্তা না করে ,পরে কলেজে দেখা হওয়াতে জড়িয়ে ধরে বললো কথা না বললে ছাড়বে না ,আর কি কথা না বলে থাকা যায়। আমরা প্রায় কলেজ থাকে আসার পথে বৃষ্টি হলে বৃষ্টি তে ভিজে ভিজে বাসায় আসতাম।

দেখতে দেখতে কলেজ লাইফের দুই বছর কেটে গেলো। পরে দুইজন দুই ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম ,কিন্তু দুই জন দুইজনের ভার্সিটিতে প্রায় যেতাম।বেশ ভালোই যাচ্ছে আমাদের বন্ধুত্ব আর ওদের প্রেম । মাঝে মাঝে ভাইয়ার সাথে ও দেখা হত ,আসলে একই এলাকার ছিলাম আমরা। একদিন শুনি ভাইয়া অসুস্থ। স্মিথা বেশ চিন্তিত আমি ওকে শান্তনা দিতাম ঠিক হয়ে যাবে। হঠাৎ একদিন শুনি ভাইয়াটা মারা গিয়েছে। আমি কোনো রকম বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ,সাথে সাথে স্মিথাকে ফোন দিলাম। সরাসরি ফোন না দিয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি শুনলাম ,পরে বললো সত্যি সত্যি। প্রায় ৯ বছরের সম্পর্ক ছিল ওদের। ভাইয়া ২০১৬ সালে মারা গেলো। আমি কি বলে শান্তনা দিব ,ভেবেই পাচ্ছিলাম না। এর মধ্যে আমাদের বেশ দুরুত্ব হয়ে গেলো ,ও কারো ফোন রেসিভ করতো না ,এমন কি আমারটা ও না। বাসায় গেলে দেখা করতো না। প্রায় দুই বছরের মত ও কারো সাথে যোগাযোগ রাখে নি। আমার সাথে প্রায় আন্টি এর সাথে কথা হতো।আমি অনেক চেষ্টা করতাম কথা বলার জন্য। এর মাঝে হঠাৎ আমার বিয়ে হল ,আমি ওকে জানাতে পারিনি ,কারণ কথা বলে না ,দেখা ও করে না। ২০১৮ সালে যখন আমার বাবু হল ,বাবুর ৬ মাস পর বাবুকে নিয়ে গেলাম ওর সাথে দেখা করতে ,তখন আর না দেখা করে পারলো না। অনেক সময় নিয়ে আমরা গল্প করেছি। ও ভাইয়ার মারা যাওয়ার ঘটনা বলছে আর চোখ দিয়ে পানি পরছে। আন্টি ও পাশে ছিলো। আন্টি আমাদেরকে বেশ আদর আপ্যায়ন করলো। এর মাঝে আমাদের দেখা না হলেই টুকটাক কথা ,চ্যাটিং হতো।

হঠাৎ ২০২০ সালে আন্টি ছাদে উঠতে যেয়ে পা পিচ্ছিলিয়ে পরে যেয়ে সাথে মারা যায়। আমি শুনে সাথে ওর বাসায় যায়। দুঃখ কষ্ট যেন ওর পিছু ছাড়ছেই না। ওকে সাপোর্ট দেওয়া জন্যই সব সময়ই ওর ছিলাম। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের কথা হয়। ওর বাসায় আমি যাই ,ও আমার বাসায় আসে। মাঝে মাঝে আমরা ঘুরতেও যাই। আসলে আমি চাইতাম ও যেনো মন খারাপ না থাকে। বিভিন্ন ঝামেলার মধ্যে দিয়ে ওর গ্রাজুয়েশন কমপ্লেট করতে দেরি হয়। এই তো সেইদিন ,অর্থাৎ ২০২১ সালে বিয়ে হয়।আমি বিয়েতে গিয়েছিলাম। এখন ও সব দিক থেকে ভালো আছে। এখনো মাঝে মাঝে কথা হয় চ্যাট করি।দেখাও হয়। এই তো সেই দিন আমি আর ও রিক্সায় করে ঢাকা ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে ঘুরে আসলাম ,অনেক দিন ধরে বলছিলো ওর ক্যাম্পাস সামনে নাকি এক মামা মজার ফুচকা বিক্রি করে ,তাই আমাকে নিয়ে খাওয়াবে। তাই আর না যেয়ে পারলাম না।তারপর দুইজন মিলে ফুচকা খেয়ে নিউমার্কেট হয়ে বাড়ি ফিরলাম।

পরিশেষে:

আমাদের বন্ধুত্বের প্রায় ১৬ বছর চলছে। হয়তো আগের মত এত বেশি কথা কিংবা দেখা হয় না। কিন্তু আমাদের এখনও একজন আরেকজনের প্রতি বেশ মায়া ও ভালোবাসা কাজ করে। আরো অনেক স্মৃতি আছে ,লিখতে গেলে মনে হয় লিখা শেষ হবে না। এভাবেই বিপদে আপদে পাশাপাশি থাকতে চাই।

আজ এই অব্দি ,আবার আসবো অন্য কোনো দিন ,অন্য কোন ব্লগ নিয়ে ,সেই অব্দি ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশায়।

ধন্যবাদ সবাইকে

device Galaxy A13
LocationDhaka
Photograpy friends
source

Banner.png

ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Sort:  
 2 years ago 
আপনার বন্ধুত্বের গভীরতা পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম। আসলে এর নাম বন্ধুত্ব। শত বাধা -বিপত্তি, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের মাঝে যে সম্পর্কটা অটুট বন্ধনে আবদ্ধ থাকে সেটা হচ্ছে বন্ধুত্ব।যার দৃষ্টান্ত আপনি এবং আপনার বন্ধু স্মিথা ১৬ বছর যাবৎ ধরে রেখেছেন।যদি ও আপনাদের সম্পর্কে মাঝে কিছুটা সময় ঝড় বয়ে গিয়েছিল।কিন্তু মেঘ বলেন বা ঝড় বলেন সেটা তো আর স্থায়ী নয়। সূর্যের আলোর কাছে সবকিছু যে ম্লান হয়ে যায়।তেমন আপনাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা সূর্যের আলোর মত ১৬ টি বছর ধরে রয়েছে আর আজীবন থাকবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।আপনার জন্য শুভকামনা রইল আপু।
 2 years ago 

আসলেই বন্ধু মানেই সুখে দুঃখে পাশাপাশি থাকা।ধন্যবাদ ভাইয়া আমার এত বড় পোস্ট পড়ার জন্য।

 2 years ago 

বন্ধু মানেই হচ্ছে বিপদে-আপদে পাশে থাকা এবং নিজের সুখ দুঃখ শেয়ার করা। আপনার বন্ধু স্মিথার কথা শুনে ভীষণ খারাপ লাগলো। তার আপনজনগুলো দুই তিন বছরের মধ্যে তার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছে সত্যিই খুবই দুঃখজনক একটি বিষয়। আপনার পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম আপনার বন্ধুত্বের গভীরতা কত বেশি ছিল। আপনাদের বন্ধুত্ব যেন সারা জীবন এভাবেই থাকতে পারে আমি সেই কামনা করি।

 2 years ago 

হুম,, ওর জীবনে প্রিয় প্রিয় মানুষ হারিয়ে গিয়েছে।যাই হোক এখন মোটামুটি ও অনেক ভালো আছে। ধন্যবাদ আপনাকে