আমার লিখা কবিতা (আর্তনাদ)

আজ ছেলে-হারা ব্যাথায়
মায়ের চোখে নেই ঘুম!
বাতায়নে এসে তাই
কাঁদছেন; রাত্রি নিঝুম!

ঐ আকাশের চাঁদে যেন
ছেলের মুখ দেখতে পান!
বারে বারে ডাকে মা
তবু ফেরেনা সন্তান!

একটি মাত্র ছেলে ছিল তাঁর
প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ!
ছেলে-হারা গগনবিদারী কান্নায়
আজ যেন উন্মাদ!

হঠাৎ এক সুরেলা আওয়াজ
যেন ভেসে এলো কোথা থেকে,
মা ঠিক বুঝে ফেললেন
কিন্তু এত রাতেও কি কোকিল ডাকে?

কোকিলের সুরেলা সুরে যেন
কষ্ট আছে মিশে।
''ওরে কোকিল! ডাকিসনে তুই
বোবা-কান্নায় মোর আঁখি দুটি যায় ভেসে!''

"কোথাও একটু শব্দ হলে
আমি উঠি চমকে,
বল, ছেলে হারা ব্যথা বুঝবে
মা ছাড়া আর কে?

ওরে কোকিল! বল একবার
কোথায় আমার খোকা?
আমি তো জানি
তুইও আমায় দিবি ধোঁকা!

জানিস! আমার ছেলেটার
গাল দুটি ছিল তুলতুলে নরম!
আর আজ! ওকে হারিয়ে
হৃদয়ে ঘোর জখম।

সে তো আমার হৃদয়-মানিক
কোনদিন করিনি প্রহার !
জানিস! ওর শোকে সারাদিন
করিনি আহার!

আরে এই কোকিল!
তোর কি ছেলে হারা ব্যথা নাই?
তোর আবার কীসের ব্যাথা!
তুই তো ডিমই পাড়িস অন্যের বাসায়!

ছিঃ ছিঃ ছিঃ!!
তোর সাথে কথা বলাটাই বৃথা।
আমি হয়তো পাগল হয়ে যাবো
তুই কেন বুঝলিনা আমার ব্যাথা!

জানিস! বিয়ের আগে বাবা
বিয়ের পরে স্বামী,
বুড়ো বয়সে ছেলে
কিন্তু হতভাগ্য আমি!

আমি জানি, তুই ভুল বুঝেছিস
কারণ আমাকে সবাই ভুল বোঝে
আর করুণ সুরে ডাকিসনে তুই
আমি ছেলে হারা মা যে!

ভুল বুঝেছিলি! বিয়ের আগে বাবাকে হারিয়েছি
বিয়ের পরে স্বামীকে।
আর সবশেষে ছেলেটাকে
হারালাম বার্ধক্যে।

মা তো সেই কবে চলে গেছে
আমি তখন খুব ছোট !
ভাই-বোন কেউ নেই
যা বলেছি সব সত্য !

আমার কাঁদতে ইচ্ছে করছে ভীষণ,
তুই নাকি দরদী!
তোর করুণ আর্তনাদ থামিয়ে দে
একটু মন উজাড় করে কাঁদি!

আমি বারবার ভুলে যাই,
তুই তো কষ্টের কিছুই বুঝিসনা।
কিন্তু কী করব বল!
মন যে মানেনা!

কিন্তু একটা কথা বলি,
আরে এই কোকিল।
তোর আর আমার মাঝে আছে
এক অসম্ভব মিল।

জানতে চাস সেটা কী?
তুই কোনদিনও হাসিসনা !
আর আমিও হাসিনা
হয়তো হাসবোও না!

এই তো গতকাল
চলে গেল আমার খোকা!
ইচ্ছে করে সুন্দর একটি শাড়ি পরলাম
ভাবছিস, আমি বোকা !

শুধু তুই না
যারা যারা শোক সংবাদে এসেছিল বাসায়,
অনেকেই বলেছিল
ছেলে-হারা,স্বামী-হারা বিধবার শখ দেখ হায়!

ওরাই ঠিক, ছেলে মরেছে, আমি সেজেছি!
এতে সমালোচনার ঝড় উঠল যেন।
এতেও দুঃখ নেই- দুঃখ এজন্য যে
কেউ এসে বললনা, 'সেজেছেন কেন? কেন?'

হয়তো ভেবেছে, ছেলে-হারা শোকে
হয়েছি পাগল।
কোকিল! হাসছিস তাইনা?
কারণ আমার মাথায় গন্ডগোল!

নাহ্! আমি বারবার ভুলে যাই
তুই তো হাসিসনা !
তবে কি তুই আমায়,
কারণটা জিজ্ঞেস করবিনা?

কালকে আমার ছেলেটার
ছিল জন্মদিন !
কেউ তা মনে রাখেনি,
আমিও মনে রাখিনি এতদিন!

হঠাৎ কয়েকদিন আগে
ওর একটা পেলাম ডায়েরী।
হয়তো কিছুটা বুঝেছিস;
ডায়েরির কারণেই পরেছিলাম শাড়ি।

ডায়েরীতে কী লেখা ছিল
জানতে চাস, তাইনা ?
তার আগে কথা দে
কাউকে বলবিনা!... কাউকে না!!

ছেলে লিখেছিল-
"মা আমার ভারি মিষ্টি!
সাজলে পরে লাগে সুন্দর
এখন আর সাজগোজে নেই দৃষ্টি!

বাবা মারা যাবার পর
সাজেনি কোনদিন।
অন্তত একটিবার সাজুক
যেদিন আমার জন্মদিন!

কিন্তু এ কথা আমি
মাকে বলবনা,
যে মা ছেলের ইচ্ছেই বোঝেনা
সে কেমন মা?"

লেখাগুলি পড়ার পর
নিলাম সাজার সিদ্ধান্ত,
কিন্তু কে জানত
আমি ওকে দেখবনা জীবন্ত!

ওরে কোকিল!
আর চুপটি করে থাকিসনা
যে মা ছেলের ইচ্ছেই বোঝেনা
বল্, সে কেমন মা! সে কেমন মা!!"

Sort:  
 11 days ago 

অনেক অসাধারন একটি কবিতা লিখেছেন ভাইয়া। কবিতাটি পড়ছিলাম আর আবৃতি করছিলাম। একটি ছেলে হারা মায়ের আর্তনাদ এ কবিতার প্রতিটি লাইনে খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। সব মিলিয়ে কবিতাটি আমার অসংখ্য ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে। খুব সুন্দর একটি কবিতা লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।