💐 শুভেচ্ছা সবাইকে 💐

---

আশা করছি @amarbanglablog এর সকল মেম্বাররা ভালই আছেন। আমিও আপনাদের দোয়া ও আশীর্বাদে ভালো আছি। সবাইকে আমার সালাম, আদাব এবং নমস্কার জানিয়ে আজকের পোস্টটি লেখা শুরু করছি।আজকে আমি আমার বাংলা ব্লগ আয়োজিত প্রতিযোগিতা-০৬ এ অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। আমরা সবাই জানি এ সপ্তাহের প্রতিযোগিতার হোস্ট হলেন আমাদের সবার প্রিয় @hafizullah এবং @moh.arif ভাই।প্রিয় দুই ভাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আমার অংশগ্রহণ শুরু করতে যাচ্ছি।

---

কমন ক্রিয়েটিভ লাইসেন্স

---

আজকে আমি যে বিষয় টি নিয়ে কথা বলবো সেটি হলো জালালগীতি।আমাদের গ্রাম বাংলার মাঠ,ঘাঠ,পথে, প্রান্তরে ছড়িয়ে আছে অজস্র লোকগান।আমরা পল্লীগীতি, লালনগীতি এই রকম অনেক গানের কথা শুনেছি।কিন্তু জালালগীতির কথা আমরা কজনই বা জানি।মূলধারার কবিদের মধ্যে অন্যতম একজন লেখক ছিলেন কবি জালালউদ্দিন খা।তার লেখনি তে ফুটে উঠেছে গ্রাম বাংলার মানুষের দুঃখ, কষ্টের কথা।সামাজিক অন্যায়, মূল্যবোধ অবক্ষয়ের প্রতিবাদ ও তিনি করেছেন গানে গানে। তার একটি গানের লাইন এমন ছিলঃ

দেখো চোরেরা খায় কোরমা পোলাও,সাধু ঘোরে দারে দারে
তাজ্যব হয়ে গেলাম বাবা দিন দুনিয়ার ব্যবহারে।

---

আমার এলাকার সাথে জালালগীতির সম্পৃক্ততাঃ

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন প্রতিবছর শীতকালে আমাদের গ্রামের বাড়িতে গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। সেখানে বেশিরভাগ গান ধর্মীয় গান হলেও অনুষ্ঠানের শেষে জালাল গীতি প্রচার হতো। জালাল গীতি পরিবেশন করতেন আমার দূরসম্পর্কের এক দাদু, তার নাম হলো বাউল সুনীল কর্মকার।তিনি সুদূর ময়মনসিংহ এর নেত্রকোনা থেকে আমাদের কুমিল্লা আসতেন তার গানের দল নিয়ে জালাল গীতি প্রচারের জন্য।

---

---

জন্ম থেকে অন্ধ হয়েও তিনি হারমোনিয়াম, বেহালা ইত্যাদি বাজাতে পারেন।বলিষ্ঠ কন্ঠের অধিকারী এবং তার কন্ঠে যেন জালালগীতি এক অনন্য রূপ পেয়েছে। তিনিই আমার দেখা একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা জালালগীতি নিয়ে এখনও কাজ করে যাচ্ছে এবং প্রচার এবং প্রসার এ নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। সত্যি বলতে ছোটবেলা থেকে আমি তার গানের ভক্ত এবং তার গানগুলো শোনার জন্য রাত জেগে বসে থাকতাম।তিনি গানের ফাঁকে ফাঁকে জালাল উদ্দিন খাঁ সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন এবং বিভিন্ন গানের মর্মবাণী আমাদের ভেঙে ভেঙে বুঝাতেন। নিম্নে আমার প্রচারিত দুটো গানই আমি ছোটবেলায় তার মুখ থেকে প্রথম শুনেছিলাম। এখনো আমি ইউটিউবে তার গান শুনি এবং পুরনো স্মৃতি কে খুঁজে বেড়াই। নিন্মে জালালগীতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি।

জালাল গীতিঃ

প্রখ্যাত কবি লেখক জালাল উদ্দিন খাঁ এর সকল গানগুলি বিভিন্ন তত্ত্বে বিভক্তঃ

• আত্মতত্ত্ব
• পরম তত্ত্ব
• সংসার তত্ত্ব
• দেহতত্ত্ব
• নিগুর তত্ত্ব
• দেশ তত্ত্ব
• মাতৃ তত্ত্ব
• বিরহ তত্ত্ব
• লোক তত্ত্ব
• গুরু তত্ত্ব
• ভাটিয়ালি
  সংসার তত্ত্ব থেকে একটি গান পরিবেশন করে আপনাদের শোনাচ্ছিঃ

---

---

গানের নামঃআধারে ঘিরিল

সংসারের মায়ায় পড়ে আমরা মাঝে মাঝে অনেক সময় নষ্ট করে ফেলি। সৃষ্টিকর্তাকে ডাকার সময় তেমন হয় না। এই ব্যাপারটাকেই জালাল উদ্দিন খাঁ গানে গানে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

এবার গুরু তত্ত্বের উপর একটি গান পরিবেশন করছিঃ

---

---

গানের নামঃদেখলে ছবি, পাগল হবি
শিল্পীঃশরীফ ভাই
গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার যে নিদর্শন তা ফুটে উঠেছে এ গানে। গুরুভক্তি এবং শ্রদ্ধার মাধ্যমে স্রষ্টাকে পাওয়া একটা ব্যাপার আছে এই এই ব্যাপারটা খুব সুন্দর ভাবে এখানে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি জালাল উদ্দিন খাঁ।
এরকম সুন্দর সুন্দর মর্মার্থ নিয়েই গঠিত কবি জালাল উদ্দিন খাঁ এর প্রত্যেকটি কর্ম।এত সুন্দর সহজ সরল সাবলীল ভাষায় এত সুন্দর অর্থ প্রকাশ করা গান জালাল উদ্দিন খাঁ বলেই হয়তো সম্ভব ছিল।

---

সংস্কৃতিটি বিলুপ্তির কারণঃ

আমরা সবাই জানি মানুষ মাত্রই পরিবর্তনশীল। মানুষের রুচিবোধ, চালচলন, পছন্দ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। আর বর্তমানে আমাদের সংস্কৃতি অনেকটাই অপসংস্কৃতিতে পরিণত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার এর ফলে মানুষ এখন পশ্চিমা দেশের সংস্কৃতিকেই স্মার্টনেস হিসেবে গণ্য করছে।কানে হেডফোন লাগিয়ে ইংলিশ গান ছেড়ে কুল ডুড হয়ে থাকা কেই বর্তমানে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বেশি। আর এইসব এর কারণে আমাদের আদি সংস্কৃতি আস্তে আস্তে বিলুপ্তির পথে। একই ঘটনা ঘটেছে আমার গ্রামের বাড়ির সেই গানের অনুষ্ঠানটির সাথে।বর্তমানে নিষ্ঠাবান আয়োজকের অভাব এবং দায়িত্ববান লোকের অভাবে এই গানের অনুষ্ঠানটি বিগত অনেক বছর যাবত বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে গ্রামে পূজাতে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে নাচানাচি করাকি আনন্দ বা মজা হিসেবে নেওয়া হয়। কেউই ওইসব গানের অনুষ্ঠান আয়োজন এর প্রয়োজনীয়তা টুকু মনে করেন না। আর আয়োজন করলেও বর্তমানে শ্রোতার খুবই অভাব। আমরা ছোটবেলায় দেখতাম গানের অনুষ্ঠানে মানুষ জায়গা দেয়া যেত না, অনেক দূর দূরান্ত থেকে চলে আসতো মানুষ গান শোনার জন্য। কিন্তু যখন থেকেই ডিস ক্যাবল টিভি এভেলেবেল হল এবং সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন চলে এলো তখনই মানুষের রুচিবোধ একটি বিরাট পরিবর্তন চলে গেল। এসবের কারণে বর্তমানে জালাল গীতি, লালনগীতি, পল্লীগীতি এইসব গানের প্রতি মানুষের ইন্টারেস্ট অনেক কমে গেছে।

---

এই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রামঃ

এই সব হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি গুলোর উপর আমাদের চর্চা করা উচিত। আমাদের উচিত মানুষের কাছে যত সম্ভব পারা যায় এই সংস্কৃতি গুলোকে তুলে ধরা। এগুলোই আমাদের অস্তিত্ব এবং এইগুলোর বিলুপ্তিতে আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হবে। আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করি ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব নিয়ে লেখালেখি করার জন্য। এইসব গান নিজে গিয়ে প্রচার করার চেষ্টা করি এবং তুলে ধরার চেষ্টা করি মানুষের সামনে। যারা শুনে তারা ঠিকই ভালোবাসা দেয়,এই গানগুলো খুব সহজেই তাদের মন জয় করে নেয়। যার কারণে শুধু প্রচার এর অভাবের কারণে এসব গান সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মধ্য থেকে। আমরা সবাই যার যার জায়গা থেকে চেষ্টা করবো আমাদের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি গুলোকে সামনে নিয়ে আসার। সবার কাছে এই কামনা রেখে আমি আমার আজকের পোস্টটির ইতি টানছি।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

ধন্যবাদ সবাইকে 💙🙏