বিবর্তন ও একটি ভবিষ্যৎবাণী -পর্ব ০৬

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago


Copyright Free Image Source : Pixabay


আগুনকে বশীভূত করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না মোটেও । বহু বছরের পর্যবেক্ষণের ফলে তারা বুঝতে পারলো এক খন্ড শুকনা কাঠ অপর একটি শুকনো কাঠের সাথে প্রচুর ঘসাঘসি করলে একটি অগ্নি স্ফুলিঙ্গের জন্ম সম্ভব । এবং এই স্ফুলিঙ্গ কে খাদ্য দিলে (শুকনো ঘাস লতা পাতা জ্বালানি হিসেবে দিলে) তা দ্রুতই বড় অগ্নিশিখাতে রূপান্তরিত হয়ে থাকে ।

এই বিশেষ জ্ঞান (বিজ্ঞান) প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আরো উন্নতি ও বিস্তৃতি লাভ করে । একটা সময় গুহাবাসী মানুষ আগুন জ্বালানোর একটি চমকপ্রদ উপায় আবিষ্কার করে । এক খন্ড ভারী শুষ্ক কাঠের মাঝখানে গোল একটি ছিদ্র করে অপর একটি শুকনো কাঠের লাঠি সেই ছিদ্রে ঢুকিয়ে রেখে হাতের দুই তালু দিয়ে তাকে সজোরে পাক দিতে থাকা । বহুক্ষণ ধরে ক্রমাগত পাক দিতে দিতে হঠাৎই একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গের জন্ম এবং কাঠের নিচে রাখা শুকনো ঘাসে দপ করে জ্বলে ওঠা । ব্যাস, আগুন আবিষ্কার হয়ে গেলো । আর তাদের পায় কে ?

পরবর্তীতে পাথরে পাথরে ঠোকাঠুকি করে আরো সহজে তারা আগুন জ্বালাতে শিখে যায় । কাঠ বা পাথর যেটা দিয়েই আগুন জ্বালানো হোক না কেনো খুবই কঠিন কাজ ছিলো এটি । বহু সময় ধরে বহু পরিশ্রমের ফলে আগুন জ্বালাতে সক্ষম হতো তারা । কিন্তু, বর্ষার সময় স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় বা শীতকালে যখন তাদের সব চাইতে আগুনের প্রয়োজন হতো বেশি তখনই আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ হতো তারা সবচাইতে বেশি ।

তাই, আগুন নিভতে দিতে চাইতো না তারা । ক্রমে, বিভিন্ন জনগোষ্ঠী তাদের দলপতির গুহাতে সর্বক্ষণ একটি অগ্নিশিখা প্ৰজ্জ্বলিত রাখতো । জ্বালানির জোগান ফুরোতে দিতো না তারা । দলের কেউ না কেউ পালাক্রমে আগুন পাহারা দিতো । তখনও পর্যন্ত কিন্তু আগুন দিয়ে মানুষেরা বিশেষ কিছু করতে জানতো না । শুধু শীত থেকে বাঁচার জন্য, রাতের আঁধার দূর করার জন্য আর হিংস্র পশুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য তারা আগুনকে ব্যবহার করতো ।

কয়েক হাজার বছর এভাবেই যায় । এরপরের ঘটনা অনুমান করতে পারি আমরা শুধু । আগুনের কাছে রাখা মৃত কোনো প্রাণীর ঝলসে যাওয়া মাংসের স্বাদ গ্রহণ করে মানুষ খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় । আগুনের এই গুণটি দেখে বিস্মিত হয় তারা । কাঁচা মাছ-মাংসের চাইতে বহুগুনে স্বাদ বেশি আগুনে ঝলসানো মাছ-মাংস । আগুনের এই ব্যবহার খুব দ্রুতই এক গোষ্ঠী থেকে আরেক গোষ্ঠীতে বিদ্যুৎ বেগে ছড়িয়ে পড়ে ।

এরপর থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষ আর কোনোদিনও কাঁচা মাছ মাংস সবজি খায়নি । যাই খেতো আগুনে ঝলসে খেতো । কিন্তু হায় তারা তখনো রান্না শেখেনি, কারণ কোনো তৈজসপত্র বানাতে জানতো না তারা । অস্ত্র বলতে ছিল বিভিন্ন আকারের পাথরের টুকরো । এগুলোই ছিল যুদ্ধাস্ত্র ও শিকারের হাতিয়ার । হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতি কিন্তু ক্যানিবল ছিলো না । স্বজাতি ভক্ষণ করতো না তারা । যদিও কিছু কিছু জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্যানিবলিজম লক্ষ করা যেত । যেমন এখনো আধুনিক পৃথিবীর বুকে বহু আদিম জনগোষ্ঠী আছে যারা মানুষের মাংস খায় ।

আগুন আবিষ্কারের পর থেকে মানব সভ্যতা খুবই দ্রুতগতিতে এগোতে থাকে । হাজার হাজার বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আগুনে ঝলসানো মাংস খেয়ে বুদ্ধিমত্তার সঠিক বিকাশ লাভ করতে থাকে । মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বুদ্ধিমান হতে থাকে । ক্রমে আগুনকে মশালের মতো ব্যবহার করতে শেখে তারা । ফলে খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আগুনকে নিয়ে যেতে পারতো তারা ।

আগুনে পোড়া খাবার সহজে কাঁচা খাবারের মতো পঁচে যেতো না । ফলে, খাদ্য সঞ্চয় করতে শিখলো তারা । আর এটাই ছিল তাদের সব চাইতে বড় পদক্ষেপ উন্নত সভ্যতা গড়ার লক্ষ্যে । খাদ্য সঞ্চয়ের ফলে সারাক্ষন আর তাদের উদরপূর্তির চিন্তা করা লাগতো না । অবসর টাইম পেতে লাগলো । আর এর ফলে মানুষ ভাবতে শিখলো আরো গভীরভাবে । ইতর জীবেরা সারাটাদিন নিজেদের উদরপূর্তির জন্যই ব্যয় করে । তাই তারা ভাবার সময় পায় না । তাই, বুদ্ধির বিকাশও তাদের তেমন হয়নি ।

কিন্তু, মানুষ ভাবতে শিখলো । আর এক এক করে উন্নত সভ্যতার রুদ্ধদ্বারগুলি খুলে যেতে থাকলো তাদের সামনে । আগুনে পক্ক মাছ মাংস খাওয়ার জন্য ধীরে ধীরে কয়েক হাজার বছরের বিবর্তনে তাদের ব্রেন সিগনিফিক্যান্টলি উন্নত হলো ।

এরপরের কয়েকটি এপিসোডে মানব সভ্যতার বিবর্তন নিয়ে খুব সংক্ষেপে আলোচনা করবো । তারপরে, ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো মানুষের সাথে ডলফিনের মৌলিক পার্থক্য । ফলে, পরিষ্কার হয়ে যাবে ডলফিনরা কেন উন্নত মস্তিষ্কের অধিকারী হয়েও সভ্যতা গড়তে ব্যর্থ হলো । এবং, ফাইনালি আমি ভবিষ্যৎবাণীটি পরিষ্কার করবো । আজ এ পর্যন্তই । ভালো থাকবেন সকলে ।

[ক্রমশ ...]


পরিশিষ্ট


প্রতিদিন ১২৫ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ৭ম দিন (125 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 07)


trx logo.png




টার্গেট ০২ : ৮৭৫ ট্রন স্টেক করা


সময়সীমা : ২৪ জুলাই ২০২২ থেকে ৩০ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত


তারিখ : ৩০ জুলাই ২০২২


টাস্ক ১৪ : ১২৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

১২৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : 972712f202700ce9a0c544301dad6d1badc6ec9287dc0c4eda5ed99ca28d61ed

টাস্ক ১৪ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png

Wallet Address
TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

Sort:  

RME, Thank You for sharing Your insights...

maybe some dolphins gone to space... and became the grey aliens but they still have the same air cut!

Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

 2 years ago 

একজন একজন করে আগুনকে পাহারা করা । এই কথাটা পড়ে খুব মজা পেলাম । ভাবছি আমি সেই সময়ের মানুষ হলে হয়তো আমার সামনে এখন ল্যাপটপের বদলে থাকতো একটা আগুনের কুণ্ডলী আর আমি কী বোর্ডে হাত না চালিয়ে একটা একটা করে গাছের ডাল আগুনে ফেলতাম ।
দাদা আমার মনে হচ্ছে সেই সময় থেকেই মানুষের মাঝে অগ্নি-পুজা করার প্রথাটা চালু হয়েছে ।
পরের পর্ব গুলোর অপেক্ষায় রইলাম ।

Thank You for sharing Your insights...

 2 years ago 

যদিও শীতকালে আগুন সংরক্ষণের ব্যাপারটি বেশ কষ্টকর ছিল ,তবে আগুন পাহাড়ার কথা শুনে বেশ হাসি পেয়েছে ভাই । তাছাড়াও বিবর্তনের পরের ব্যাপার গুলো বেশ গুছিয়ে লিখেছেন, অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের ।

Thank You for sharing...

 2 years ago 

ভাগ্যিস এই আগুন আবিস্কার করতে পেরেছিল। তা না হলে তো সভ্যতার এত বিকাশ ঘটতো না। আর কাঁচা খাবার খেতে হত।
আর সেইদিন আপনি টাস্ক শুরু করলেন। দেখতে দেখতে দুই সপ্তাহ হয়ে গেল। পরবর্তী টার্গেট নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে ঠিক করে ফেলেছেন?

 2 years ago 

আপনার এই পোস্ট পড়ার মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারলাম দাদা। যে তথ্যগুলো এর আগে জানিনি। আগুন সত্যি আমাদের জীবনে অনেক উপকারী। আগুন আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই মানব সভ্যতার উন্নতি হয়েছে। অনেক সুন্দর ভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো তুলে ধরেছেন এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি দাদা। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।♥️♥️

Thank You for sharing...

 2 years ago 

আগুন আবিষ্কার না হলে তো সব কিছু কাঁচাই খেতে হতো। ভাবতেই কেমন লাগছে। আদিম যুগের মানুষ তাদের বুদ্ধি এবং দক্ষতায় আগুন আবিষ্কার করেছিল জেনে ভালো লাগলো। অনেক সুন্দর ভাবে আপনি এই তথ্যগুলো তুলে ধরেছেন দাদা। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

হাহা একসময় এই আগুনকে আদিম মানুষরা ভয় পেত তারা ভাবতো এটা বোধয় দেবতার ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ।অতঃপর সেই মানুষরাই আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করলো আর এগিয়ে নিয়ে গেলো মানব সভ্যতাকে।আসলেই মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।আর ধন্যবাদ দাদা সুন্দর একটা বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য।পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

Thank You for sharing...