আলোকচিত্র : শান্তিনিকেতনে কিছুদিন -০৭

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

শালবনি থেকে দুপুরে হোটেলে ফিরেই অমনি লাঞ্চে বসে গেলাম । সকালবেলা ভারী প্রাতরাশের পর আমি বাদে আর কারোরই তেমন একটা খিদে নেই । আমার কিন্তু প্রচন্ড খিদে লেগেছিলো । আমার জন্য অর্ডার করলাম আবার সেই বাঙালি খানা । তনুজা খেলো চায়নিজ । আমার ভাই খেলো মোঘলাই ডিশ । আর আমার বাবা-মা স্রেফ ডাল ভাত । ড্রাইভার এর চয়েস রুটি মাংস । টিনটিনবাবু নুডুলস আর স্যুপ । এবার প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন খানা অর্ডার করলো ।

আমি দিলাম ধোঁয়া ওঠা সাদা ভাত, পার্শে মাছ ভাজা, মাছের মাথা দিয়ে মুগ ডাল, কাতলা মাছের কালিয়া, বাটা মাছের ঝাল, চিংড়ি দিয়ে রকমারি সবজি, ফুলকপি আলু দিয়ে ভেটকি ঝোল, নরমাল দেশি লাল মোরগের ঝোল । এমন খাওয়া খেলাম যে আর নড়তে পারি না । সোজা বেডে ধপাস ।

আধা ঘন্টা যেতে না যেতেই তনুজা আর বাবু আমাকে ঠেলে তুলে দিলো । বেড়ানোর এমন নেশা । আমার বাবা এই বছরে নভেম্বরে ৭৩ এ পা দেবে, অথচ স্ট্যামিনা আমার চাইতেও বেশি । বাবা-মায়ের রুমে গিয়ে দেখি তারা ফিটফাট হয়ে অপেক্ষা করছে । ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে নিচের লবিতে এসে বসলাম ।

হোটেল থেকে সোনাঝুরির হাট গাড়িতে গেলে মিনিট তিরিশেক লাগে । স্পটে পৌঁছে গিয়ে দেখি ও মা গাড়ি পার্ক করবো কোথায় ? আজকে হাটবার । অন্তত ১০০ চার-চাকা, বাইক, সাইকেল আর টোটো মিলিয়ে আরো শ'চারেক যানবাহন । বিশাল জ্যাম । হাট বসেছে শালবনের মধ্যে । হাটের দৈর্ঘ্য ২-৩ কিলোমিটার এর মতো । আর এর ব্যাপ্তি শালবনের মধ্যে খোয়াইয়ের ভিতর দিয়ে কমপক্ষে ৪০০-৫০০ মিটার ।

শুধুমাত্র সপ্তাহের দু'দিন হাটবারে এমন বড় করে হাট বসে । অন্যদিন গুলিতে ছোট্ট করে বসে । তো আমরা গাড়ি থেকে পুলিশ স্টেশনের সামনে নেমে ড্রাইভারকে বললাম জঙ্গলের মধ্যে কোথাও পার্ক করতে । এই হাটের মধ্যে একটি পুলিশ ক্যাম্প আছে । ছোট্ট, কাঠের তৈরী, গোল এবং সুন্দর । হাটের দুই দিন পুলিশ প্রহরা থাকে ।

সাঁওতালিরা এমনিতে খুবই নিরীহ এবং সহজ সরল । এদের সরলতার সুযোগ নিয়ে অতীতে এদের সাথে বহু অন্যায় করা হয়েছে । এর ফলে অনেক রক্তক্ষয়ী হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে । সাঁওতালিদের কাছে লং বো বা বড় তীর ধনুক থাকে । তা দিয়ে বুনো জীব জন্তুর সাথে অনায়াসে মানুষ পর্যন্ত শিকার করা চলে ।

এ ছাড়াও হাটে প্রচুর টাকার কেনাবেচা হয় । শান্তি রক্ষার জন্যই সপ্তাহের দুই হাটবারে পুলিশ ক্যাম্পে পুলিশ থাকে । এই হাটে আদিবাসী ও বাউলদের অনেক নাচ গানের ভিডিও রেকর্ডিংস আছে আমার কাছে । আগামী পর্বগুলোতে সেগুলি দেয়ার চেষ্টা করবো ।


IMG_20220416_162633.jpg

IMG_20220416_162639.jpg

IMG_20220416_162704.jpg

বিখ্যাত খোয়াই এর সোনাঝুরির হাটে ।

তারিখ : ১৬ এপ্রিল ২০২২
সময় : দুপুর ২ টা ৪০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


IMG_20220416_162719.jpg

IMG_20220416_162734.jpg

IMG_20220416_162800.jpg

IMG_20220416_162804.jpg

IMG_20220416_162826.jpg

IMG_20220416_162833.jpg

সোনাঝুরির হাটে আদিবাসীদের তৈরী নানান সৌখিন সামগ্রী পাওয়া যায় - যেমন চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য (মাটি, পেতল, কাঁসা), কাঠ ও বেতের তৈরী নানান শিল্পকর্ম ও আসবাব পত্র, মেয়েদের গয়না গাটি, সাঁওতালিদের তাঁতে বোনা নানান ধরণের অসংখ্য ডিজাইনের শাড়ি, ধুতি, গামছা, গেঞ্জি এমন অসাধারণ সব জিনিসপত্র ।

তারিখ : ১৬ এপ্রিল ২০২২
সময় : দুপুর ৩ টা ২০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


IMG_20220416_162850.jpg

IMG_20220416_162852.jpg

IMG_20220416_162855.jpg

IMG_20220416_162916.jpg

IMG_20220416_162916__01.jpg

IMG_20220416_162918.jpg

IMG_20220416_163054.jpg

সোনাঝুরির হাটে আদিবাসীদের নানান নাচা গানা হয়ে থাকে । তনুজা সাঁওতালিদের সাথে অনেক নাচ করেছে । ভিডিও আছে । দেখাবো পরে ।

তারিখ : ১৬ এপ্রিল ২০২২
সময় : দুপুর ৩ টা ৫০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


ক্যামেরা পরিচিতি : OnePlus
ক্যামেরা মডেল : EB2101
ফোকাল লেংথ : ৫ মিমিঃ


Sort:  
 3 years ago 

বাবা আমার যুবক জেন
আমার মনে হয়,,
বাবার স্ট্যামিনার কাছে
আমার পরাজয়।

আলোকচিত্রে দেখে নিলাম
সাঁওতালদের হাট
নানা রকম আয়োজনে
হরেক দোকানপাট।

সাঁওতাল মেয়েদের নাচের তালে
প্রিয় তনুজাও নাচে
ভিডিও করে রেখে দিয়েছি
দেখিয়ে দিব পাছে।

কি সুন্দর বলেছো দাদা
লিখেছো দারুন করে,,
ফটোগ্রাফি গুলো দেখে নিলাম
আমি দুচোখ ভরে।♥♥

শান্তিনিকেতনের পাশেই আমার
কবি বন্ধুর বাড়ি,,
নর তো নয় তিনি হলেন-
আমার মতোই নারী♥♥

Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

 3 years ago 

যে খাবারের অর্ডার দিয়েছেন শুনেইতো পেট ভরে গেল। এগুলো খেয়ে কি নড়াচড়া করা যায়? আর মাত্র ৩০মিনিট রেস্ট নিয়েছেন। বেশ ঘোরাঘুরি করেছেন দেখছি। সাঁওতালদের তৈরি জিনিস গুলো ভালো লেগেছে।

এই হাটে আদিবাসী ও বাউলদের অনেক নাচ গানের ভিডিও রেকর্ডিংস আছে আমার কাছে।

নাচ গানের ভিডিও গুলোর অপেক্ষায় রইলাম।

 3 years ago 

আমার বাবা এই বছরে নভেম্বরে ৭৩ এ পা দেবে, অথচ স্ট্যামিনা আমার চাইতেও বেশি ।

দাদা,আপনার বাবার বয়সশুনে এবং ঘুরে বেড়ানোর প্রস্তুতি শুনে সত্যি অনেক ভালো লেগেছে। দাদা যদি স্ট্যামিনা না থাকে তাহলে দুর্বল হয়ে পড়বে আর আপনার মত যার সুন্দর এবং ভালো মনের পূত্র রয়েছে তার তো এমনিতেই শরীরে স্ট্যামিনা থাকবেই।সাঁওতালদের হাটে যাওয়া কারণে বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্র দেখতে পেয়েছি আর দাদা, আপনার পোষ্টটে লিখেছেন এই হাটের দৈর্ঘ্য ২-৩ কিলোমিটার দাদা হাটের দৈর্ঘ্য কথা শুনে আমি অবাক এতো বড় হাট।যাই হোক দাদা,হাটের বিভিন্ন রকমের জিনিসের ফটোগ্রাফি দেখে খুব ভালো লেগেছে।দাদা, বৌদির সাঁওতাল মেয়েদের সাথে নাচের ভিডিও এবং অন্যান্য ভিডিও আপনি বলেছেন শীঘ্রই আমাদের মাঝে শেয়ার করবেন সেই অপেক্ষায় রইলাম দাদা।
ধন্যবাদ দাদা।।

 3 years ago 

সোনাঝুড়ি হাটের কথা বিগতে সময়ে ছোট দাদার পোস্টে কিছুটা দেখেছিলাম তবে সেটা আবছা আবছা । আজ বেশ ভালোই লাগলো হাটটা দেখে , মনে হচ্ছিল আমিও আপনাদের সঙ্গেই ঘুরছি ভাই ।

 3 years ago 

আমি দিলাম ধোঁয়া ওঠা সাদা ভাত, পার্শে মাছ ভাজা, মাছের মাথা দিয়ে মুগ ডাল, কাতলা মাছের কালিয়া, বাটা মাছের ঝাল, চিংড়ি দিয়ে রকমারি সবজি, ফুলকপি আলু দিয়ে ভেটকি ঝোল, নরমাল দেশি লাল মোরগের ঝোল । এমন খাওয়া খেলাম যে আর নড়তে পারি না । সোজা বেডে ধপাস ।

হতেই হবে, এতো খেলে কেউ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে নাকি? হা হা হা তবে নামগুলো পড়তে পড়তে কিন্তু একটা লোভ জেগে উঠতেছিলো, সত্যি সত্যি। আর হাটের দৃশ্যগুলো সত্যি দারুণ ছিলো, অনেক কিছুই দেখছি পাওয়া যায়। নাচের দৃশ্যগুলো কিন্তু বেশ ভালো লেগেছে আমার কাছে। ধন্যবাদ

 3 years ago 

ওরে বাবা কত কিছু খাবারের অর্ডার করছেন,এত কিছু খেয়ে তিনদিন বিছানা থেকে উঠতে পারতাম না।😊।তবে ভালো লাগলো ৭৩ বছর বয়সেও আপনার থেকে ফিট।যাই হোক পরর্বতী ভিডিও এর অপেক্ষায় রইলাম।ধন্যবাদ

 3 years ago (edited)

দাদা আপনার সাথে একবার ভোজন করার খুব শখ আমার, সুযোগের অপেক্ষায় আছি। খাব তারপর ধপাস হব 😉😊। এই পর্ব গুলো যত দেখি তত ভালো লাগে। মেলার পরিবেশ টা দারুন। পাশে বড় বড় গাছ মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে যেন ক্ষুদ্র মানুষদের। দাদা সেই নাচের ভিডিও দেখার অপেক্ষায় রইলাম। 😊🙏 অসাধারন একটা মুহূর্ত ছিল নিশ্চিত