ছোটবেলার ফল-পাকুড় চুরির কিছু মজার ঘটনা - "কাঁচা আমের গুঁটি চুরি"

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago


Copyright free Image Source Pixabay


এমন কারো ছেলেবেলা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর যারা ছোটবেলায় অন্যের গাছের ফল-পাকুড় চুরি করে খায়নি । আমার শৈশব হলো গে নব্বইয়ের দশকের । গ্রামের ছেলে । চারিদিকে প্রচুর ফল-ফলারির গাছে ভরা । শহরের মতো এতো বদ্ধ পরিবেশ নয়, উন্মুক্ত । গ্রামের প্রকৃতি যেমন খোলা উন্মুক্ত, গ্রামের মানুষেরও হৃদয় তেমনি খোলা এবং উদারতায় পূর্ণ । "বাচ্চারা ফল-পাকুড় চুরি করে খাবে" - এটা যেন একটি অলিখিত আইন ছিল । বড়রা এ নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাতো না ।

তাই আমাদের ছিল একটি স্বপ্নের শৈশব । আমি মনে করি সময়ের সাথে সাথে মানুষ চেঞ্জ হয়ে আসে । নব্বইয়ের দশকে আমার জন্মের সময়কার গ্রামের মানুষদের যেমন দেখেছি এখন মনে হয় না তেমন সহজ সরল উদার মানুষ আর খুঁজে পাওয়া যাবে । পরিবেশ, পরিস্থিতি আর সময়ের স্রোতে মানুষগুলি কেমন যেন দিন দিন আরো স্বার্থপর, লোভী আর সংকীর্ণমনা হয়ে যাচ্ছে ।

তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক আমার শৈশবের কাহিনী - ফল চুরি করে খাওয়ার কিছু মজার স্মৃতি ।

প্রথমেই শুরু করি আম দিয়ে । আমি পাকা আমের চাইতে কাঁচা আমই বেশি পছন্দ করি সেই ছোট্টবেলা থেকে । এই সময়টাতেই, চৈত্র মাসে কাঁচা আমের ছোট ছোট গুঁটি পাওয়া যেত । কাল-বৈশাখী বা এমনি ঝোড়ো হাওয়াতে প্রচুর আমের গুঁটি নিচে পড়তো, এছাড়াও আম গাছের নিচু ডালগুলোতে প্রচুর পরিমানে আমের গুঁটির সন্ধান মিলতো । এই গুলো চুরি করার প্ল্যান হতো পুকুরে বাঁধানো ঘাটে বসে, বিকেলে মাঠ থেকে খেলাধুলা করে ফেরার পরে । প্রথমে আমরা এলাকা রেকি করতাম । কোন কোন গাছে ভালো মানের কাঁচা আমের গুঁটি প্রচুর পরিমানে আছে সেটা বোঝার জন্য কয়েকজনকে গুপ্তচর করা হতো । গুপ্তচরেরা অত্যন্ত সততার সাথে কাজ সারতো, নিজেদের বাগানের আম গাছ কেও তারা ছাড়তো না । গাছের খোঁজ পাওয়ার পরে আরেকটা দল পাঠানো হতো যারা গাছে চড়তে ওস্তাদ । তারা গুপ্তচরদের সাথে গিয়ে আরো একবার রেকি করে আসতো ।

এই ফাইনাল অনুসন্ধানে সঠিক গাছগুলো ফিল্টারেশন করা হয়ে যেত । যেসব গাছে ওঠা যেমন সহজ, নামাও তেমনি সহজ এবং গাছের ডাল যথেষ্ঠ নিচু সে সব গাছগুলোকেই শুধুমাত্র প্রাইম টার্গেট করা হতো । প্ল্যানিং শেষ । এবার অ্যাকশন । আমি ছিলাম দলনেতা । নিখুঁত প্ল্যান বানাতে আমার মাথার উপরেই সবার ভরসা ছিল । আমাদের মতো এত প্ল্যান করে চুরি করতে আরো কোনো গ্রূপের ছেলেদেরকে দেখিনি । তারা "ধর তক্তা, মার্ পেরেক" নীতিতে বিশ্বাস করতো । তাই তাদেরকে নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতাম । একেবারে ছোটবেলা থেকেই আমি যে কোন কাজ প্ল্যান করে করতাম । তো, প্ল্যান অনুসারে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই আমরা পুকুর পাড়ে হাজির হয়ে যেতাম । ফাইনাল মিটিং হতো - অতি দ্রুততার সাথে । দলের সবাই চারটি গ্রূপে ভাগ হয়ে যেত ।

প্রথম গ্রূপের কাজ হলো পাহারা দেওয়া । বড়দের কাউকে গাছের কাছাকাছি আসতে দেখলেই শিষ দিয়ে সতর্ক করা দলের বাকিদেরকে । দ্বিতীয় গ্রূপের কাজ হলো গাছের নিচু ডালগুলোতে চড়া এবং ভালো দেখে গুঁটি গুলো বোঁটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে নিচে ফেলে দেওয়া । তৃতীয় গ্রূপের কাজ হলো নিচে পড়া সব আমের গুঁটি এক স্থানে কুড়িয়ে জড়ো করা এবং গামছা দিয়ে পুঁটুলি বেঁধে ফেলা । আর, চতুর্থ এবং শেষ গ্রূপের কাজ হলো গামছার পুঁটুলিগুলো খেপে খেপে পুকুরপাড়ে নিরাপদ স্থানে জড়ো করা ।

সব কাজ মিটে গেলে শুরু হতো ভোজন পর্ব । যে যত পারে ।প্রত্যেকের পকেটে থাকতো ঝিনুকের ছুরি । সেই ঝিনুকের ছুরি দিয়ে আমের গুঁটির ছাল ফেলে দিয়ে কাঁচা লঙ্কা আর নুন দিয়ে কচমচ কচমচ । কিছুক্ষন, আর কোনো শব্দ পাওয়া যেত না । শুধু, কচমচ আর কচমচ ।

খাওয়া শেষ হলে । প্রত্যেককে বাকি গুঁটি গুলো সমান ভাগ করে দিতাম বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য । দলনেতা হওয়ার সুবাদে প্রত্যেকের ভাগের থেকে বাড়তি দুটো করে গুঁটি আমার প্রাপ্য হতো । সেগুলো প্যান্টের পকেটে ভরে আমরা সবাই ভালো ছেলের মতো মুখটি করে যে যার বাড়িতে গিয়ে মুখ ধুয়ে পড়তে বসে যেতাম ।


Sort:  
 3 years ago 

হি হি হি,,,, এত চমৎকার একটি আম চুরি করার গল্প শুনে জিভে জল চলে এলো দাদা♥শৈশবে আমারও এমন অনেক কাহিনী আছে যা এখনো মনে করে একা একা হাসি।তবে দলনেতা হিসেবে আপনি একদম পারফেক্ট ছিলেন দাদা সেই ছোটবেলা থেকে।আপনার গল্প পড়ে কাচা আম লবন মরিচ এবং ধনেপাতা দিয়ে মেখে কচমচ করে খুব খেতে ইচ্ছে করছে।♥♥♥

 3 years ago 

হাহাহা, দাদা সত্যিই অনেক মজা পেলাম ঘটনাটি পড়ে। আর দলনেতা যে একটু বেশি পায় সেটি আমাদের বেলায়ও ছিল এবং খুব চমৎকার ভাবে আপনি প্লানিং করে বিষয়গুলো করেছেন। দলকে চারটি ভাগ করেছেন এবং চারটি দলের আলাদা আলাদা কাজ দিয়েছেন সত্যিই একদম নিখুঁত প্ল্যানিং এবং খুব সুন্দর ভাবে চুরির কলা কৌশল। যাইহোক দাদা আমারও একটি ঘটনা রয়েছে খুব শীঘ্রই আপনাদের সাথে শেয়ার করে নেব সেটি।

 3 years ago 

আপনার ছোটবেলার কাহিনীর সাথে আমার ছোটবেলার কাহিনীর অনেকটা মিল রয়েছে। গ্রামে বাস করে ছোটবেলার ফল চুরি করে খায় নি এমন ছেলে মেয়ে পাওয়া অসম্ভব। আপনার ছোটবেলার সাথে আমার ছোটবেলার কিছু মিল রয়েছে সেটা হলো আমার চাচাতো ভাইদের সাথে আমরা ও একসাথে ফল চুরি করতাম আবার মাঝে মাঝে লোক দেখে দৌড়ে পালাতাম

 3 years ago 

কি দারুণ দলনেতা। 🤪🤪

এতো প্ল্যানিং করে তো কেও কাজ ও করেনা।যতোটা প্ল্যানিং করে আম চুরি করতেন।😅
যাক পড়ে মজা পেলাম দাদা,আর আফসোস আমার শৈশবে এমন কিছুই ছিলোনা।

 3 years ago 

হাহহাহহাহহা। দাদা সব চাইতে বেশি মজা পেয়েছি সকাল ভোরে ফাইনাল মিটিং এর বিষয়টা। এমন ভাবে বললেন মনে হলো খুব বড় একটা প্রজেক্ট এর কাজ যা শেষ মিটিং করতে হয়েছে হাহহাহাহহাহ। আমি একা একা হাসলাম কিছু সময়।

কি দারুন দল নেতা বাহ🤩
আমি স্কুল লাইফে সব কাজে লিডার বা দলনেতা থাকি তবে একটা কাজেই পারি না😔
সেটা হল গাছের আম চুরি করে খাওয়া 😁কারণ আমি গাছে উঠতে পারি না বলে আমারে আমার বন্ধুরা ঠকাতো আম কম দিত। আমার আম চুরি করে খাওয়ার গল্পটা শেয়ার করবো দাদা।
তবে আপনার গল্পটা বা ছোট্ট বেলায় আমের ঘুটি খাওয়ার প্লানিং টা বেশ মজার ছিলো দাদা। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা এত সুন্দর মজার একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



 3 years ago 

দাদা অনেক ভালো লাগলো আপনার শৈশবের গল্প পড়ে। অনেক আনন্দে কাটিয়েছেন আপনি আপনার শৈশব। শৈশবে যদি কোন দুষ্টুমি না করি তাহলে সেই শৈশবের কোন মানেই থাকেনা। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনার শৈশবের মুহূর্তগুলো আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।

 3 years ago 

খুবই অবাক হয়ে গেলাম। ঝিনুকের মাঝখানটা একটু ভেঙ্গে সেই ঝিনুক দিয়ে আম এর খোসা ছাড়ানোর ব্যাপারটি তাহলে আপনারাও করেছেন। দুই বাংলার সংস্কৃতি ও অন্য সব কিছুই কেবল এক নয় বরং ছোটবেলায় শৈশবের কাজ ও মুহূর্ত গুলোও দেখি এক। কেন যে বাংলাকে তারা দুই ভাগ করেছিল!