গোয়েন্দা রহস্য গল্প : "অর্কিড যখন মৃত্যুর হাতছানি দেয়" - পর্ব ০২
copyright free image source pixabay
প্রথম পর্বের পর
দুই
হরিসাধন একটু নার্ভাস ভঙ্গিতে ঘাড় হালকা কাত করে সায় দিলো ইন্সপেক্টর মিত্রের কথায়; তারপরে গলাটা দু'বার কেশে নিয়ে তার বিবরণী শুরু করলো ।
-"আমি হুজুর, আর পাঁচটা দিনের মতোই গতকাল ভোর ছ'টায় উঠে ইলেকট্রিক কেটলিতে চায়ের জল চাপিয়ে, ব্যালকনিতে গেলাম ফুল গাছগুলোয় জল দিতে । জল দেয়ার পরে কিচেনে ঢুকে চা-জলখাবার রেডি করে, বাবুকে বেড টি দিতে গেলাম । "
-"ক'টা বাজে তখন ?" ইন্সপেক্টর জানতে চাইলেন ।
-"সাড়ে ছ'টার মতো হবে হুজুর, বাবু ঠিক সাড়ে ছ'টায় বেড টি খেতেন । বাবুর ঘরে গিয়ে দেখি বাবু উঠে বসেছেন, বেডে বসে প্রাণায়াম করছেন ।"
-"বেডে প্রাণায়াম করছেন তোমার বাবু ? এত বড় খোলা ছাদ থাকতে ? তোমার বাবু কি অসূর্যম্পশ্যা ?" বড়বাবুর প্রশ্ন ।
-"কী বলছেন হুজুর ? বুঝতে পারলাম না । তবে বাবু ছাদে তেমন একটা যেতেন-তেটেন না ।"
-"আচ্ছা ও সব থাক; হরিসাধন তুমি বলতে থাকো ।" বড়বাবুর দিকে ঈষৎ বিরক্ত চোখে তাকালেন ইন্সপেক্টর মিত্র । বড়বাবু তাঁর বাংলা জ্ঞান জাহির করার চেষ্টা করছেন বুঝতে পারলেন । মনে মনে একটু হাসিও পেলো ইন্সপেক্টরের ।
হরিসাধন আবার শুরু করলো - "আমি বেড টি আর জলখাবারের ট্রে টা সাইড টেবিলের উপরে রেখে চলে আসছিলাম । এমন সময় বাবু বললেন, বাজারে গিয়ে আজকে তোপশে মাছ যদি পাও, এনো তো হরিদা । আমি সায় দিয়ে চলে আসলাম । এসে রান্নাঘরের কিছু টুকিটাকি কাজ সেরে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, এই সাতটা নাগাদ ।"
-"টাকা ?" বড়বাবুর আবার খোঁচা ।
-"হুজুর ?"
-"বলি টাকা নাওনি ? বাজারের টাকা ? তোমার বাবুর কাছ থেকে ? টাকা না নিয়েই বাজারে গেলে ?"
-"টাকা আমার কাছেই থাকতো আজ্ঞে, মাসকাবারি বাজারের টাকা বাবু আমাকে মাসের শুরুতেই দিয়ে রাখতেন । যদি বেশি কিছু লাগতো তবে ওনাকে বললেই দিয়ে দিতেন ।"
-"বাহ্, তোমার বাবু তো বেশ মালদার লোক ছিলেন দেখছি ! মাসকাবারি বাজারের টাকা চাকরের হাতে দিয়ে রাখতেন !"
-"বাবু আমাকে বিশ্বাস করতেন ।"
-""আর তুমি তাঁকে খুন করে বিশ্বাসের প্রতিদান দিলে ?"
-"আমি ??"
-"হ্যাঁ, তুমি । You're the damn culprit !"
-"হুজুর !!! ....." হরিসাধন কেঁদে দিলো ।
-"আহ, বড়বাবু থামুন তো আপনি । কি শুরু করলেন এসব ?" ইন্সপেক্টর এবার বেশ রাগতস্বরে ধমক দিলেন বড়বাবুকে ।
-"আপনি জানেন না স্যার, এ ছাড়া আর কে murder করবে ? বন্ধ ঘরে তৃতীয় কেউ ছিল না, শুধু ভিক্টিম আর তাঁর চাকর ছাড়া ।আমি মেন্ দরজার বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখেছি স্যার । গতকাল বাইরের কেউ ঢোকেনি ।"
-"তাই যদি হবে তো হরিসাধন পালালো না কেন ?"
-"এ মহা ঘুঘু স্যার, পালালে আমরা সন্দেহ করবো তাই পালায়নি ।"
-"তাহলে আপনি হরিসাধনকে প্রাইম সাস্পেক্ট করছেন ?"
-"হ্যাঁ স্যার, শিউর ।"
-"তাহলে arrest করছেন না কেন ওকে ? হরিসাধনের কোনো alibi ছিল কি ?"
-"দুটো কারণে স্যার । এক - এখনো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পাইনি, কি ভাবে মারা গেলেন বুঝতে পারছি না । দুই - এই হত্যার পিছনে হরিসাধনের সঠিক কোনো মোটিভ খুঁজে পাচ্ছি না ।"
-""হুম, তাহলে আপাতত চুপ থাকুন । আমি হরিসাধনের কাছ থেকে সব কিছু খুঁটিয়ে জেনে নিই আগে ।"
-"ওকে স্যার, এই হরিসাধন বলো ।" ধমক দিলেন বড়বাবু ।
-"হ্যাঁ হুজুর , বলি " চোখ মুছে ধরা গলায় আবার শুরু করলো হরিসাধন ।
-"আমি বাজার করে প্রায় সাড়ে ৮ টা নাগাদ এসে ঘরে ঢুকে দেখি বাবু কাকে জানি ফোন করছেন । বাবুর গলায় খুশি খুশি ভাব লক্ষ করলাম ।"
-"কাকে ফোন করছিলেন তুমি জানতে পেরেছিলে ?" ইন্সপেক্টর মিত্র জানতে চাইলেন ।
-"না , হুজুর । তবে অনুমান করতে পেরেছিলাম কোনো নার্সারি থেকে ফোন এসেছে । বাবুর খুব ফুলের শখ ছিলো তো । নার্সারি থেকে প্রায়শই ফুল গাছ কিনতেন ।"
-"কী কী ফুল গাছ ?"
-"আজ্ঞে হুজুর, বাবু বলতেন অর্কিড না কি যেন ।"
-"অর্কিড ? হুম বুঝতে পেরেছি । বলো তারপর ।"
-"আমি বাজারের ব্যাগ নিয়ে সটান রান্নাঘরে চলে গেলাম । রান্নার জোগাড়যন্ত্র করছি, এমন সময় বাবু আমাকে ডেকে বললেন উনি স্টাডি রুমে যাচ্ছেন, ঘন্টা দুই পরে বেরোবেন ।এর মধ্যে নার্সারি থেকে যদি কোনো ক্যাটালগ পাঠায় তো ওটা নিয়ে নিতে ।"
-"ক্যাটালগ ?"
-"হ্যাঁ হুজুর, ফুলের ছবি ছাপা বই ।"
-"বুঝতে পেরেছি অর্কিডের ক্যাটালগ । তা এসেছিলো কি সেই ক্যাটালগ ?"
-"হ্যাঁ, দশটা নাগাদ কলিংবেলের শব্দ শুনে আমি গেলাম দরজা খুলতে । দেখি ক্যাটালগের প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নার্সারির লোক । আমি প্যাকেটটা এনে সেন্টার টেবিলের উপরে রেখে আবার রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছি এমন সময় বাবু ডাকলেন আমাকে । স্টাডি রুমে গেলে বাবু জানতে চাইলেন ক্যাটালগ এসেছে কি না ? আমি বললাম - হ্যাঁ এসেছে । শুনে বাবু বই বন্ধ করে লিভিংরুমে এসে ঢুকলেন । আমিও রান্নাঘরে চলে গেলাম ।"
-"তারপর ?"
-"মিনিট কুড়ি পরে আমি তোপশে ফ্রাই আর কফি নিয়ে লিভিংরুমে ঢুকে দেখি বাবু কেমন যেন অদ্ভুত ভঙ্গিতে সোফাতে আধশোয়া হয়ে আছেন । দ্রুত আমি কাছে এসে দেখি বাবুর ঘাড় পিছনে হেলানো, মুখ অল্প একটু খোলা, ঠোঁটের দু'পাশে গ্যাঁজলা, চোখ বিস্ফারিত আর বাবুর কোনো সাড় নেই শরীরে । প্রথমে আমি ভাবলাম বাবু হয়তো অজ্ঞান হয়ে গেছেন । আমি দ্রুত চোখে মুখে জলের ঝাপ্টা দিলাম একটু, কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের ডাক্তারবাবুকে ডেকে আনলাম । ডাক্তারবাবু এসে বাবুকে ভালোভাবে দেখে বললেন .....বাবু ..... আর ......... নেই !!!"
হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো হরিসাধন ।
Hi @rme,
my name is @ilnegro and I woted your post using steem-fanbase.com.
Please consider to approve our witness 👇
![](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmSF26PXf1kfhN1tkBJCVESn8hJAV3iKB7pmuNRzabJwvx/HAPPY%20POWER%20UP%20DAY%20!!.gif%22/%3E)
Come and visit Italy Community
গল্পটি ধীরে ধীরে আরো গভীরে চলে যাচ্ছে। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
অর্কিডের ক্যাটালগেই কি তাহলে সব গোলমাল নাকি অন্য কিছু যতই পড়ছি ততই সামনে কি হবে সেটা ভেবে শিহরিত হচ্ছি । দাদা চালিয়ে যান গল্পটা জমে খীর হবে আশা করছি। ভাল থাকবেন। অপেক্ষায় রইলাম ৩য় পর্বের।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
ব্যাপারটা বেশ ঘোরেল হয়ে উঠছে। আমার মনে হচ্ছে ক্যাটালগের পেছনের আসল রহস্য লুকিয়ে।
একই সাথে দুটি পর্বই পড়ে নিলাম কারণ গতকাল সময় ছিল না পড়ার। গল্পটি দারুণ জমে উঠেছে , কিন্তু রহস্যে ভরা। শুধু এতটুকুই মনে হচ্ছে নার্সারির লোকজনের সাথে বাবুর কোন শত্রুতা থাকতে পারে।
দাদা আপনি তো খুবই চমৎকার লেখেন, গল্প পড়ে মনে হচ্ছে আমি একজন জনপ্রিয় লেখক এর গল্প পড়ছি, আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা এবং পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ডিটেকটিভ কাহিনী মানেই অনেক ধোঁয়াশা। কিন্তু আপনার কাহিনীটা আরো বেশি ধোয়াশাময় মনে হচ্ছে আমার কাছে। কি হতে যাচ্ছে পরবর্তীতে ?মৃত্যুর আসল কারণটাইবা কি? বড় বাবুর সন্দেহটাই কি ঠিক? নাকি হরিসাধন ঠিক বলেছে? সো, এই মুহূর্তে অনেক প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে দাদা। তৃতীয় পর্বের অপেক্ষায় আছি । আশা করি খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবো দাদা।
ক্যাটালগে কি কোন বিষাক্ত কিছু মেশানো ছিল? যেটার সংস্পর্শে আসলে মানুষ মারা যাবে। যেহেতু তৃতীয় কোন ব্যক্তি ঘরে ঢোকেনি। তাহলে তো মনে হচ্ছে ওই ডেলিভারি ম্যান যে ক্যাটালোগ ডেলিভারি দিয়েছিল সেটাই মার্ডারের পিছনে দায়ী। কিন্তু খুনটা করালো কে? টানটান উত্তেজনা। মনে হচ্ছে সমরেশ মজুমদারের কোনো লেখা পড়ছি।
দাদার আজকের দ্বিতীয় গল্পে রহস্য আরো জমে গেছে। পুলিশ এখন আরো ভালো ভাবে ও সতর্ক ভাবে কাজ করবে। পরের পর্বের অপেক্ষায় ......
ও মাই গড । হাউ কুড । তাহলে কি , মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না । আমি অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী পর্বের জন্য।