বিবর্তন ও একটি ভবিষ্যৎবাণী -পর্ব ০৯

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago


Copyright Free Image Source : Pixabay


প্রস্তরযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার গুলো হলো আগুন, দূরে ছুঁড়ে মারার অস্ত্র বর্শা ও তীর, কুকুর পোষা ও শিকারের কাজে ব্যবহার করা, নৌকো, কৃষিকাজ এবং মৃৎ শিল্প । আর একটি খুব বড় আবিষ্কার হলো চিত্রকলা । হ্যাঁ, মানুষের চিরন্তন শিল্পকলার সূত্রপাত সেই আদিম যুগ থেকেই । প্রস্তর যুগেই সর্বপ্রথম মানুষের শিল্পকলার সূত্রপাত ঘটে ।

সেই যুগে ভাষা ছিল নির্বাক, সংকেতময় । মনের ভাব প্রকাশের এক মাত্র মাধ্যম ছিল হাতের আঙুলের মাধ্যমে নানান রকমের সংকেত সৃষ্টি করে । সেই, যুগেই মানুষ কিন্তু চিত্রকলার দিকে ঝোঁকে । গুহার দেওয়ালে তারা গল্প বলতো, গল্প লিখতো, তাদের মনের ভাব ফুটিয়ে তুলতো । কী ভাবে ? চিত্রকলার মাধ্যমে ।

প্রস্তরযুগে রাতের বেলায় উদরপূর্তির পর মানুষের থাকতো বেশ খানিকটা লম্বা অখন্ড অবসর । প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুন্ডের সামনে বসে তারা তাদের অবকাশকালীন সময়টুকু উপভোগ করতো । আগুন আবিষ্কারের আগে মানুষ সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই একটা আশ্রয় খুঁজে ঘুমিয়ে পড়তো । মানুষের চোখ নিকষ কালো আঁধারে কিছুই দেখতে পায় না, অন্যান্য প্রাণীর মতো চোখ নয় তাদের । তাই আঁধার নামা মাত্রই তারা ঘুমিয়ে পড়তো ।

কিন্তু, আগুন আবিষ্কারের পরে রাতের আঁধার দূর হলো । অন্ধকারকে মানুষ আজীবন ভয় পায় । সেই ভয় দূর করতে পারলো । স্থায়ী বাসস্থান গুহা, ভরপেট খাওয়া আর আগুনের আলো ও ওম তাদের একটা ভারী নিশ্চিন্ত রাত উপহার দিতো । সকাল সকাল তাই তারা না ঘুমিয়ে নিজেদের মধ্যে আকারে ইঙ্গিতে গল্প করতো ।

শিল্পীসত্ত্বা প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই রয়েছে । কেউ সেটি প্রকাশ করতে পারে না, আর কেউ সেটি খুব সুন্দর করে প্রকাশ করতে পারে । আদিম মানুষদের মধ্যেও এই শিল্পীসত্ত্বাটি ছিল । প্রত্যেকটি আদিম গোষ্ঠীতে একদল শিল্পী ছিল । তারা আগুনে পোড়ানো কয়লা কাঠ, চুনা পাথরের টুকরো, গেরুয়া খড়ি মাটি, ফুল ও লতাপাতা থেকে নিষ্কাশিত রঙ দিয়ে ছবি আঁকতো । গুহার দেয়াল জুড়ে ।

প্রায় অধিকাংশ চিত্রকর্ম হতো শিকারের ছবি ভিত্তিক বা উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা ভিত্তিক । আর ছিল নানান প্রাণীদের চিত্রকর্ম । সেই আদিম যুগেও মানুষ নিজেদের ইতিহাস লিখে গিয়েছে ছবির মাধ্যমে । স্মরণীয় শিকারের দৃশ্যগুলো নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছে পাথরের বুকে । তাদের চিত্রকর্মগুলো ছিল একাধারে গল্প, ইতিহাস আর স্মৃতির ডায়েরি । মনের মাঝের অব্যক্ত কথাগুলি কয়লা কাঠ বা চুনাপাথরের স্পর্শে ফুটে উঠতো কঠিন পাথুরে দেওয়ালে ।

আজকে মিউজিয়াম থেকে তোলা আমার কয়েকটি ফটোগ্রাফ এখানে শেয়ার করছি । প্রস্তর যুগের এগুলি । কিছু হলো প্রস্তর যুগের অস্ত্র-শস্ত্র আর কিছু হলো আদিম গুহাচিত্র ।


বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রাচীন মানব প্রজাতির মাথার খুলি । এখানে আছে - হোমো সাপিয়েন্স (সবার উপরের তাকে), হোমো নিয়ান্ডারথাল (তার নিচের তাকে), হোমো ইরেক্টাস (তার নিচের তাকে), হোমো হাবিলিস (সব চাইতে নিচের তাকে)

নিম্ন-প্রস্তর যুগের নানান প্রস্তর নির্মিত অস্ত্র শস্ত্র । বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হাত কুঠার, ছুরি, স্ক্র্যাপার, হারপুন । সবই যুদ্ধ ও শিকারে ব্যবহৃত হতো ।

মধ্য-প্রস্তর যুগের নানান প্রস্তর নির্মিত অস্ত্র শস্ত্র । বিভিন্ন আকার ও আকৃতির সেল্ট, রিংস্টোন, স্ক্র্যাপার, ক্লিভার ও হাত কুঠার । সবই যুদ্ধ ও শিকারে ব্যবহৃত হতো ।

উচ্চ-প্রস্তর যুগের নানান প্রস্তর নির্মিত অস্ত্র শস্ত্র । বিভিন্ন আকার ও আকৃতির সাইড স্ক্র্যাপার, টুলস ও হাত কুঠার। সবই যুদ্ধ, গৃহ নির্মাণ ও শিকারে ব্যবহৃত হতো ।


এগুলি হলো আদিম যুগের মানুষের গুহা চিত্র । ভীমবেটকা গুহার দেয়াল চিত্র থেকে প্রাপ্ত ।

[ক্রমশ ...]


পরিশিষ্ট


প্রতিদিন ১৫০ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ৪র্থ দিন (150 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 04)


trx logo.png




টার্গেট ০৩ : ১,০৫০ ট্রন স্টেক করা


সময়সীমা : ৩১ জুলাই ২০২২ থেকে ০৬ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত


তারিখ : ০৩ আগস্ট ২০২২


টাস্ক ১৮ : ১৫০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

১৫০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : 187d7ac754933eb5d9f319de9ec51b6bfcc522f0c25b52a09f1b2a77e221dff5

টাস্ক ১৮ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png

Sort:  

RME, Thank You for sharing Your insights...

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



 2 years ago 

বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে আপনার এই পর্বগুলো। অনেক নতুন নতুন কিছু জানতে পারছি। আজকে তো বেশ কিছু ছবিও দেখতে পেলাম। বিশেষ করে দেয়ালের গায়ের চিত্রগুলো খুব ভালো লেগেছে। এত আগেকার চিত্র এখনো কত স্পষ্ট রয়েছে।

 2 years ago 

আদিম যুগের মানুষের জীবনযাত্রা এবং বিভিন্ন চিত্রকর্মগুলো দেখে খুবই ভালো লাগলো। দাদা আপনার এই পোস্টগুলো দেখে অনেক কিছু জানতে পারছি। যেগুলো অজানা ছিল। অনেক সুন্দর ভাবে আপনি প্রতিটি বিষয়ে তুলে ধরেছেন এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি দাদা।

 2 years ago 

মিউজিয়ামের ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ হয়েছে দাদা। আপনার শেয়ার করা ফটোগ্রাফির মাধ্যমে প্রাচীন যুগের অনেক নিদর্শন দেখতে পেলাম এবং গুহা গুলোর ভেতরের শিল্পচিত্রকর্মগুলো দেখতে পেলাম। এত পুরনো চিত্রকর্ম অথচ দেখে মনে হচ্ছে যেন একেবারে নতুনের মত। খুবই ভালো লাগলো দাদা আপনার এই পোস্ট দেখে। আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।♥️♥️

Thank You for sharing Your insights...

 2 years ago 

দাদা আজকে আপনার মিউজিয়ামের ফটোগ্রাফি গুলো দেখে খুবই ভালো লাগলো। খুবই সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি করে আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। এই ফটোগ্রাফি গুলো দেখে অনেক কিছু জানতে পারলাম এবং দেখতে পারলাম। খুবই সুন্দরভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। আসলে আদিমকালে মানুষ গুহাচিত্র শিল্পগুলো করেছিল সেগুলো দেখতে পেলাম। সত্যিই অনেক ভালো লেগেছে।

দাদা, আপনার পোস্ট পড়ে প্রস্তর যুগের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় জানতে পারলাম।

হোমো সাপিয়েন্স (সবার উপরের তাকে), হোমো নিয়ান্ডারথাল (তার নিচের তাকে), হোমো ইরেক্টাস (তার নিচের তাকে), হোমো হাবিলিস (সব চাইতে নিচের তাকে)

হোমো সাপিয়েন্স, হোমো নিয়ান্ডারথাল, হোমো ইরেক্টাস, হোমো হাবিলিস - এ গুলো মাথার খুলির নাম, নাকি অন্য কিছু বুঝতে পারিনাই।

এছাড়াও অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও গুহাচিত্র দেখতে পেয়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

এগুলো বিভিন্ন মানব প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম । আধুনিক মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হোমো স্যাপিয়েন্স ।

ধন্যবাদ দাদা। এখন বুঝতে পেরেছি।

 2 years ago 

"হোমো হাবিলিস" এই প্রজাতি টি মুখ ত মানুষের চেয়ে অনেক লম্বা।
গুহা চিত্র গুলো আঁকার সময় তারা কি পদার্থ ব্যাবহার করেছিল। এটা জানার আগ্রহ বোধ করছি। কালের বিবর্তন এ অনেক কিছু হারিয়ে গেছে তবু ও এর অস্তিত্ব বিদ্যমান।

 2 years ago 

আগুনে পোড়ানো কয়লা কাঠ, চুনা পাথরের টুকরো, গেরুয়া খড়ি মাটি, ফুল ও লতাপাতা থেকে নিষ্কাশিত রঙ দিয়ে ছবি আঁকতো

 2 years ago 

ধন্যবাদ দাদা । ছবি আঁকার বর্ণনা শুনেছি এর আগেও তবে এমন স্পষ্ট ছবি আজ ই প্রথম দেখার সুযোগ হলো । এতদিন পরেও এর উজ্জল্য দেখেই কৌতুহল জেগেছিল মনে । এখন দেখছি রঙ তৈরি তে ও ছিল প্রচুর কসরত ।

 2 years ago 

গুহাচিত্রগুলো ছিল মানুষের শিল্পকলার আদি রূপ সন্দেহ নেই। এই ছবিগুলো আগেও আমি বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি। ভাবতে অবাক লাগে এত হাজার বছর পরেও এগুলো অক্ষত থাকে কিভাবে। আর ভারতের কোন অঞ্চলে প্রস্তর যুগের সবচাইতে বেশি নিদর্শন পাওয়া গেছে জানালে উপকৃত হব। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

ভীমবেঠকা, ভারতের মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত । এখানে বেশ কিছু গুহায় প্রস্তরযুগের নানান নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে ।

https://en.wikipedia.org/wiki/Bhimbetka_rock_shelters

 2 years ago 

আদিমকালে মানুষেরা চিত্রাংকনের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতো এই বিষয়টা জানতে পেরে আমি সত্যিই অনেক বিস্মিত হয়েছি। পাশাপাশি আদিম যুগের মানুষের চিত্র অঙ্কন গুলো দেখতে পেরে খুবই আনন্দিত হয়েছি। সত্যিই, এই পোস্টটি পড়ে আদিম যুগের মানুষ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। এত সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেয়ার জন্য আমার প্রিয় দাদাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।

Thank You for sharing Your insights...