আমার ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া একটি মজার ঘটনা - কুকুরের কামড়"

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago


Copyright Free Iamge Source


শৈশববেলা আসলেই যে কারো কাছে সব চাইতে সেরা সময় । এই জন্যই তো শৈশব বেলাকে বলা হয়ে থাকে মানবজীবনের সব চাইতে সোনালী অধ্যায় । আমার শৈশবের দিনগুলির স্মৃতি আমারও কাছে সব চাইতে দামী, সোনালী সে সব শৈশবের দিনগুলির কথা মনে পড়লে আজও স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়ে আমার মন ।

এখন আমি যেমন শান্ত শিষ্ট , ছোটবেলায় ছিলাম এর ঠিক বিপ্রতীপ । ছোটবেলায় আমি শান্ত শিষ্ট সুবোধ বালক ছিলাম - এতবড় অপবাদ আমার শত্রুরাও দিতে পারবে না । অসম্ভব দুরন্ত ছিলাম আমি । আমার ভাইটা আবার ছিলো আমারো এক কাঠি উপরে । আমার ছেলেটাও হয়েছে একেবারে আমার ছোটবেলার মতো অনুরূপ স্বভাবের । ভীষণ দুরন্ত । রক্তের ধারা অব্যাহত ।

আজকে আমার ছোটবেলার এমনই একটি দুরন্ত মজার ঘটনার কথা শেয়ার করতে চলেছি আপনাদের সাথে । গ্রাম ছেড়ে যখন আজীবনের জন্য শহরে চলে আসি তখন আমার বয়স ৮-৯ বছর । শহরে আসার পরে এক অদৃশ্য কাঁচিতে কাটা পড়ে আমার স্বাধীনতার, আমার দুরন্তপনার পাখা দুটি ।

ছোটবেলায় আমি দুরন্তপনা করতে গিয়ে কিছু ছোট ছোট দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলাম । কুকুরের কামড়, ষাঁড়ের গুঁতো, হাত ভেঙে যাওয়া, নৌকাডুবি, সাপের আক্রমণ, গোসাপের সাথে ফাইট, কোদালে পা কেটে যাওয়া, আছাড় খেয়ে নাক ভেঙে যাওয়া এই রকম অজস্র ছোট বড় রোমাঞ্চকর ঘটনার সাক্ষী আমার ছেলেবেলা । এতদিন পরে লিখতে গিয়ে দেখছি অনেক ঘটনাই মন থেকে চিরতরে মুছে গিয়েছে, কিছু আবছা মনে আছে ।

ইচ্ছে আছে পর্ব আকারে সব ঘটনাগুলিই প্রকাশ করবো । আজকে লিখতে যাচ্ছি ছোটবেলায় আমার হাত ভেঙে যাওয়ার মজার ঘটনাটি । তো চলুন শোনা যাক --

তখন আমার বয়স কত ? খুব সম্ভবত চার । ক্লাস ওয়ানের ছাত্র ছিলাম মনে হচ্ছে । আমাদের বাড়ির পুব দিকের বাড়িটা ছিলো আমার দাদুর এক ভাগ্নের বাড়ি । তো দাদুর সেই ভাগ্নের ছেলে যাকে আমরা মদনদা বলে ডাকি তাঁদের বাড়িতে নতুন একটি ঘর তোলা হচ্ছিলো । গ্রামের দিকে ঘরের পোঁতা মানে বেজ টা বেশ উঁচু করে গাঁথা হয়ে থাকে । মাটির পোঁতা, মাটির দাওয়া । মনে আছে সিঁড়ির কাজ তখনো সম্পূর্ণ হয়নি । বেশ উঁচু পোঁতা, এক মানুষ সমান উঁচু ।

এই অসম্পূর্ন মাটির পোঁতা ছিলো আমাদের মতো ছোটদের ভারী মজার একটি খেলার জায়গা । সকালে ঘুম থেকে উঠে আর বিকেলে স্কুল থেকে ফিরেই এর উপরে উঠে যেতাম সিঁড়ির জন্য কাটা খাঁজে খাঁজে পা রেখে । বিশাল বাড়ি তোলা হচ্ছিলো । তাই উপরে অনেকটা খোলা জায়গা ছিলো । ছোটাছুটি, লুটোপুটি আর বার বার সিঁড়ির জন্য করা খাঁজ বেয়ে নামা আর ওঠা । ভারী মজার খেলা ছিল ।

কিন্তু, দুই তিনদিন যেতে যেতেই আমার কাছে ভীষণ এক ঘেঁয়ে উঠলো খেলাটি । বলা বাহুল্য আমি ছিলাম দলনেতা । তাই আমার দায়িত্ব ছিল নিত্য নতুন খেলা বের করা । আর আমার উর্বর মস্তিষ্কের উপরে আমার বন্ধুদের বেশ ভরসা ছিল । চতুর্থ দিনের দিন আমি ঠিকই বের করে ফেললাম ভারী মজার একটি খেলা ।

খেলাটি বিশদে বোঝালাম । দলের মেয়েগুলোর একটাও এই খেলায় যোগ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলো । তাদের যুক্তি - ভীষণই বিপদজনক খেলা এটা । তাই তারা খেলবে না । দলনেতার কথা অমান্য করার জন্য তৎক্ষণাৎ তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করলাম । মেয়েগুলোও তেমনি, এক হাত লম্বা জিভ বের করে দাঁত মুখ খিচিয়ে ভেংচি কেটে হাওয়া হয়ে গেলো ।

এবার শুরু হলো আমাদের খেলা । আমার নির্দেশে সবাই আট দশটা মাটির ঢিল কুড়িয়ে নিয়ে উঠে গেলাম পোঁতার উপরে । এর পরে শুরু হলো অ্যাকশন । কী ? ঢিল ছোঁড়া । কাকে ? না, কোনো মানুষকে নয়, কোনো বাড়িঘর লক্ষ্য করেও নয় । তবে ? হুঁ, কুকুর লক্ষ্য করে মারো ঢিল । আমাদের বাড়ির আশে পাশে প্রায় প্রতিবাড়িতেই কুকুর ছিলো, আমাদের বাড়িতেও ছিলো । কুকুরগুলো আমাদের ঢিলের রেঞ্জের মধ্যে আসলেই শুরু হতো অ্যাকশন । কেঁউ মেউ করে অধিকাংশ কুকুর সরে পড়তো লেজ তুলে । কিন্তু, কয়েকটি বদমেজাজি কুকুর ধেয়ে আসতো আমাদের লক্ষ্য করে । কিন্তু এক মানুষ উঁচু পোঁতার উপরে ওঠার সাধ্য ছিলো না তাদের কারো । লাফ দিয়ে শুধু দাঁত কিড়মিড় করতে করতে নেমে যাওয়া । আর ঘেউ ঘেউ করে সে কি আস্ফালন, সেই সাথে আমাদের খিল খিল করে হাসি । অদ্ভুত শব্দকুহেলীর সৃষ্টি হতো । বড়রা কেউ দেখে ফেললে বকতো, আর সঙ্গে সঙ্গে সেদিনের মতো খেলা সমাপ্তির ঘোষণা দিতাম ।

দুই দিন এমনি খেলার পরে এক দিন । ভীষণ জমে উঠেছে খেলা । আমাদের বাড়ির কুকুরকে ঢিল মারা নিষেধ ছিল, সেদিন সেও এসেছিলো । তবে অন্য কুকুরদের সাথে ঝগড়া করতে । ৪-৫ টা কুকুর ঢিল খেয়ে ভীষণভাবে ক্ষেপে গিয়েছে । আর আমরাও বেদম মজা পাচ্ছি । এমন সময় আমাদের গোলাগুলি শেষ । ঢিল শেষ হয়ে যাওয়াতে নিচে নেমে নতুন করে ঢিল কুড়িয়ে আনা ছাড়া গতি নেই । কিন্তু, সেই মুহূর্তে নিচে নামতে কেউ রাজি নয় ।

অগত্যা উত্তপ্ত পরিস্থিতি কিছুটা ঠান্ডা হতেই আমরা নেমে পড়লাম । ঢিল কুড়িয়ে নেয়া শেষ । হাফ প্যান্টের পকেট উঁচু উঁচু করে ঢিলে ভর্তি করে আমি কেবল হাঁটা দিয়েছি পোঁতা লক্ষ্য করে এমন সময় । কী ? আর কি, সেই গুণ্ডাটা । একটা ভীষণই বদমেজাজি গুন্ডা কুকুর পুষেছিল আমার এক মামা - তপনমামা । গতকাল বিকেলে আচ্ছা করে ঢিল মেরেছি ওটাকে । হঠাৎ দেখি, গুণ্ডাটা ছুটে আসছে আমাদেরকে লক্ষ্য করে । "য পলায়তি স জীবতি" - সংস্কৃত ভাষার এই প্রবাদবাক্যকে ধ্রুব সত্য বিবেচনা করে আমরা সবাই দিলাম চোঁচা দৌড় । আমাদের লক্ষ্য পোঁতা । কিন্তু হায়, সবাই ঠিকই উঠে গেলো আর আমি কর্মদোষে হাফ উঠতে উঠতেই হঠাৎ করে পিছনে একটি গর গর শব্দ পেলাম এবং পরক্ষনেই একটি কঠিন চোয়ালের ফাঁকে আটকা পড়লো আমার বাঁ পা ।

গুন্ডা আমার পা কামড়ে ধরে ঝুলে পড়েছে । বন্ধুরা সবাই মিলে এমন ভয়ানক ভাবে চেঁচিয়ে উঠলো যে সবাই ছুটে এলো । বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে কুকুরটাকে কামড়-ছাড়া করলো । বেশ অনেকখানি রক্ত বেরিয়েছিল মনে আছে । তবে আমার চোখে সেদিন জল আসেনি মোটেও । ব্যাথা পেয়েছিলাম অনেক, তবে ভয় পাইনি মোটেও ।ভয় পেয়েছিলাম পরে । ক্ষতস্থান ভালো করে ধুইয়ে চুন মাখিয়ে দেওয়া হলো । রাত্রে এলো জ্বর ।

পরেরদিন বাবা খবর পেয়েই শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে এলো আর ভ্যাকসিন দিতে আমায় নিয়ে গেলো পরিচিত এক ডাক্তারের বাড়িতে । তখনকার দিনে Rabies vaccine নিতে হতো মোট ১৪ টা, নাভির চারিপাশে । ইনজেকশন এর কথা শুনেই তো ভয়ে আমার প্রাণ উড়ে গেলো । তবে মনে আছে আমার বুকের উপরে খরগোশ রেখে তারপরে সেই ডাক্তার আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার অন্যমনস্কতার সুযোগে ইনজেকশন দিতো । নকল খরগোশ নয়, আসল খরগোশ ।

বি: দ্রঃ একটু উঁচু ক্লাসে ওঠার পর থেকে আমি সত্যিকারের একজন পশুপ্রেমী হয়ে উঠি । জীবনেও কোনোদিন আর অবলা জীবেরদের উপরে কোনোরকমের নির্যাতন করিনি বরং কাউকে করতে দেখলেএমন শিক্ষা দিতাম যে জীবনেও আর অমন কিছু করার সাহস পেতো না । আর পোষা প্রাণীদের মধ্যে সবচাইতে আমায় লাইক করি কিন্তু সেই কুকুরকেই ।


Sort:  
 3 years ago 

দাদা প্রথমে একটু হেসে নেই, হাহাহাহা।সত্যি বলতে অনেক বার কুকুরের দৌড়ানি খেয়ে ছিলাম, কিন্তু কখন কুকুর আমাকে ধরতে পারিনি। অনেকটাই চঞ্চল ছিলাম অনেকটা আপনার মতই। হয়ে যাই হোক আজকের এই গল্পটা শুনে অনেক মজা পেলাম এবং অনেক ভালো লাগলো। আমারও এরকম দুই একটা গল্প আছে ভবিষ্যতে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

 3 years ago (edited)

হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা। দুরন্ত শৈশবের মজার ঘটনা। সব গ্রামের ছেলেরাই শৈশবে অনেক দুরন্ত কিন্তু আপনারটা একটু বেশি দুরন্তপনা। নিজের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেল। সেই গ্রাম আর সেইসব দুরন্তপনা। মজার ছিল। আরো এমন কিছু দুরন্তপনার স্মৃতিকথা আসছে। অপেক্ষায় রইলাম

How to contact you?Hope to cooperate with you。My telegram: https://t.me/ptg789789
my whatsapp: +85259301120

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



 3 years ago (edited)

দাদা তুমি তো ছোটোবেলায় ভালোই দস্যি ছিলে! পোঁতার উপর চেপে কুকুরদের ঢিল মারা। যদিও ব্যাপারটা খুবই নিষ্ঠুর তবে দারুন বজ্জাতি বুদ্ধি। নিজেদের সেফটি বজায় রেখে দুষ্কর্ম করা! হাঃ হাঃ! আসলে বাচ্চা বয়সে মানুষ কি না কি করে তার ইয়ত্তা নেই। বড়ো হয়ে যে পরিবর্তনটা এলো সেটাই আসলে দরকার।

কুকুরের কামড় আমিও খেয়েছি তবে সেটা কুকুরকে আদর করতে গিয়ে 😁। ৬ টা ইনজেকশন

 3 years ago 

দলনেতার কথা অমান্য করার জন্য তৎক্ষণাৎ তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করলাম । মেয়েগুলোও তেমনি, এক হাত লম্বা জিভ বের করে দাঁত মুখ খিচিয়ে ভেংচি কেটে হাওয়া হয়ে গেলো ।

দাদা আপনার আজকের ছোট বেলার গল্প শুনে আমি হাসতে হাসতে আধমরা। কি যে দুষ্ট ছিলেন আপনি হাহাহাহা ,, কুকুর কে ঢিল মারা নাকি কোনো খেলা হতে পারে , আর কুকুরটা ও কি সুযোগ পেতেই কামড়ে ধরলো। হাহাহা ,অসাধারণ লিখেছেন এমন গল্প আরো শুনতে চায়। ধন্যবাদ দাদা।

ছোটবেলায় আমিও খুব দুরন্ত ছিলাম। কিন্তু আপনার দুরন্তপনার গল্প শুনে এখন নিজেকে নিতান্তই সুবোধ বালক মনে হচ্ছে। আপনার মত কুকুরের কামড় না খেলেও একবার কুকুরের তাড়া খেয়েছিলাম। সেদিনই প্রথম আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলাম যে আমি অত্যন্ত দ্রুত দৌড়াতে পারি। সে দিনের কথা আজও ভুলতে পারিনি।

Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Please consider to approve our witness 👇

Come and visit Italy Community