বিবর্তন ও একটি ভবিষ্যৎবাণী -পর্ব ০৮
Copyright Free Image Source : Pixabay
যখন ব্যাপকহারে কৃষির সূচনা হলো তখন শিকারের উপর নির্ভরশীলতা বেশ খানিকটা কমে গেলো । মানুষ মাছ-মাংসের পাশাপাশি নানান ধরণের শস্য ও সবজি-ফলমূল নিজেরাই চাষ করে খাওয়া শুরু করলো । এসময়, মানুষ মাছ-মাংস আগুনে ঝলসানোর পাশাপাশি শস্য ও সবজিও আগুনে পুড়িয়ে খাওয়ার চেষ্টা করে । কিন্তু, সমস্যা দেখা গেলো যে মাছ-মাংসের মতো এগুলো আগুনে ঝলসানো খুব একটা সহজ কাজ নয় । আগুনে শস্য ঝলসাতে গেলে সম্পূর্ণ ভষ্মীভূত হয়ে যায় দেখা গেলো ।
এ সমস্যার থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে লাগলো মানুষ । বুদ্ধিমান মানুষ লক্ষ করলো যে এক খন্ড পাথরের উপরে শস্য রেখে সেটিকে অগ্নিকুন্ডের উপরে রাখলে শস্য পুড়ে ছাই হয়ে যায় না, কিন্তু সুন্দরভাবে খাওয়ার উপযোগী ঝলসানো যায় । শুরু হয়ে গেলো আদিম রন্ধন প্রণালী । প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নানান উৎসকর্ষের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে রন্ধনপ্রণালী আরো উন্নত হলো ।
মানুষ, পাথরের নানান টুলস ব্যবহার করে ঘষে ঘষে মসৃন অনেক তৈজসপত্র তৈরী করলো বিভিন্ন আকৃতির পাথরের খন্ড থেকে । এগুলোই তাদের রান্না করার বাসন কোসন । রান্না করার সিস্টেমে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হলো এই সব পাথরের তৈজসপত্র আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে ।
তবে, আবার সমস্যা শুরু হলো । মনের মতো আকৃতির তৈজসপত্র বানানোর সীমাবদ্ধ ছিল খুব বেশি । কারণ, উপযুক্ত পাথরের খন্ড সব সময় পাওয়া যেতো না । আর এক খন্ড পাথরকে কাটাকুটি, ঘষামাজা করে ধীরে ধীরে একটি তৈজসপত্রে রূপ দেওয়া মোটেই কিন্তু সহজ কাজ ছিল না । প্রচুর সময়, অধ্যবসায় আর পরিশ্রমের দরকার হতো একটি মাত্র তৈজসপত্র নির্মাণে ।
তখন মানুষ লক্ষ করলো কাদামাটি সূর্য্যের তাপে শুকিয়ে গেলে সেটা যদি অগ্নিকুন্ডের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ রাখা হয় তবে পাথরের মতোই শক্ত আকার ধারণ করে । কিন্তু, একটা সুবিধা হলো কাদামাটিকে ছেনে যে কোনো আকার দেওয়া যায় । পরে রোদে শুকিয়ে আগুনে পোড়ালে দিব্যি মনের মতো তৈজসপত্র তৈরী করা সম্ভব । আমি যত সহজে কথাগুলি লিখলাম এত সহজে কিন্তু এই আবিষ্কারটি হয়নি । শত শত বছরের নিরন্তন প্রচেষ্টায় অবশেষে মানুষ পটারি (pottery) শিখলো ।
এর ফলে কাদামাটির হরেক তৈজসপত্র তৈরী হলো দেদার হারে । খাওয়ার জল, খাবার রাখার পাত্র, রান্না করা ও খাওয়ার হরেক প্রকারের তৈজসপত্র আবিষ্কার করলো মানুষ । আগে, শুধুমাত্র খাবার আগুনে ঝলসানো হতো । এই সময়টাতে তারা মাটির তৈজসপত্র শস্য ও সবজি জলে সিদ্ধ করে খেতে শুরু করলো । জলে সেদ্ধ নানান শস্য ও সবজির সাথে আগুনে ঝলসানো মাছ ও মাংস তারা খাবার হিসেবে গ্রহণ করতো ।
তখনো পর্যন্ত কোনো ধাতুর ব্যবহার জানতো না তারা । পোশাক শিল্প, গবাদি পশু প্রতিপালন, ভাষার উদ্ধব ও লিখন প্রণালী, মুদ্রা ব্যবস্থা ও ব্যবসা এসব কিছুরই আবিষ্কার হয়নি । এ যুগের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো - আগুন, পাথরের তৈরী অজস্র যুদ্ধাস্ত্র ও শিকারের অস্ত্র, কুকুর পোষ মানানো ও প্রতিপালন, দূর থেকে ছুঁড়ে মারা অস্ত্র হিসেবে তীর ধনুক ও বর্শা, চামড়া ও গাছের গুঁড়ি-বাকলের তৈরী ভেলা ও নৌকো, কৃষিকাজ এবং মৃৎশিল্প (pottery) ।
নিওলিথিক বা নব্য প্রস্তর যুগের একদম শেষের দিকে মানুষ তামার আকরিকের সন্ধান পায় পাথরের খাঁজে এবং মাটির গভীরে । শুরু হয় তাম্র যুগের । ধাতু নিষ্কাশন ও এর ব্যবহার মানুষকে উল্কা গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলে ।
একটা আবিষ্কারের কথা কিন্তু বলা হয়নি । এটা আমার মতে প্রস্তর যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার । কী বলুন তো ? গুহা চিত্র (Cave Painting) । তখনো কিন্তু ভাষা ও লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার হয়নি । মানুষ আকার ইংগিত ও মুখে নানান ধরণের সাংকেতিক শব্দ উচ্চারণ করে মনের ভাব প্রকাশ করতো ও যোগাযোগ রক্ষা করতো পরস্পরের সাথে । পরবর্তী এপিসোডে গুহা চিত্র নিয়ে একটা বিস্তারিত লেখা প্রকাশ করার ইচ্ছে আছে । আমি মিউজিয়ামে নিজের চোখে আদিম মানুষের প্রস্তর যুগের নানান অস্ত্র-শস্ত্র এবং গুহা চিত্র দেখেছি । সে সব ফোটোগ্রাফও আগামী পর্বে শেয়ার করবো ।
[ক্রমশ ...]
পরিশিষ্ট
প্রতিদিন ১৫০ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ৩য় দিন (150 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 03)
টার্গেট ০৩ : ১,০৫০ ট্রন স্টেক করা
সময়সীমা : ৩১ জুলাই ২০২২ থেকে ০৬ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত
তারিখ : ০২ আগস্ট ২০২২
টাস্ক ১৭ : ১৫০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
১৫০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : f2bb101f9d75e80a2b8343c2ed538ce3309c38c4c9d1207d54a5577ae8410316
টাস্ক ১৭ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
@tipu cutate 7
তাম্র যুগ সম্পর্কে বইয়ে কিছুটা পড়েছিলাম দাদা । আসলে সেই সময়ই লোহা বাতা আমার অনেক কিছু ব্যবহার হতো ।
সময়ের বিবর্তনে মানুষ তাওবায়েল বাকি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অস্ত্র বানাতে শিখেছে । তবে সব থেকে বেস্ট আবিস্কার হলো গুহার পেইন্টিং । পরের পর্বে গুহার পেইন্টিং দেখতে পারবো । অপেক্ষায় রইলাম দাদা
Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
তাহলে তো ভালোই হবে,কিছু ছবি দেখা যাবে।তবে বই এ কিছু কিছু চেয়ে চিএ দেখেছিলাম।বেশ ভালো লাগছে পড়তে এবং জানতে।ধন্যবাদ
দারুন লাগলো পুরো বিষয়টি পড়ে।
সত্যি বলতে তারা যুগ যুগ ধরে পরিশ্রম করে সব জিনিস আবিষ্কার আর তৈরি করেছে আর আমরা আধুনিক যুগে এসে সবকিছুর ফল ভোগ করছি। তবে সত্যিই তারা সেই সময়ে যদি এমন পরিশ্রম আর বুদ্ধিদীপ্ত কাজগুলো না করতো তাহলে আমরা এতদূর এগিয়ে আসতে পারতাম না । গুহার চিত্র অঙ্কন পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা 💚
তাহলে এখন একটা কথা এভাবে বলা যায়। সর্বপ্রাচীন তৈজসপত্র হিসেবে আমরা এখনো ব্যবহার করে থাকি মাটির পাত্র।
তবে পাথর খন্ডের ব্যবহার ও করি শিলপাটা হিসেবে।
জানিনা এটা বাসন পত্রের মাঝে পড়ে কি না।
শাক সবজি পাতিলেন মধ্যে রেখে সিদ্ধ করে খেতে তাদের কত শত বছর সময় লেগেছে আর আমরা কয়েক মিনিটে পড়ে জেনে গেলাম। আদিম মানুষের জিনিষ পত্র কোন মিউজিয়ামে গেলে দেখা যাবে সেটা জানতে পারলে ভাল হতো। ধন্যবাদ দাদা পরের পর্বের আশায় রইলাম।
আদিম মানুষের সভ্যতার সূচনা ও বিবর্তনবাদ নিয়ে আগে অল্প বিস্তর জানতাম। মানে যতটুকু পাঠ্যপুস্তকে পড়েছিলাম ঠিক ততটুকুই জানতাম। এটা নিয়ে আলাদাভাবে বিস্তারিত কখনো পড়া হয়নি। এখন এই বিষয়ের উপর বিস্তারিত সবকিছু জেনে খুব ভালো লাগছে। আদিম মানুষেরা হাজার বছরের প্রচেষ্টায় সকল প্রতিকুলতাকে অতিক্রম করে একটু একটু করে আবিষ্কার করেছে। দাদা আপনার লেখাগুলো পড়ে এখন কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছি। এই যে আমরা এত আধুনিক হয়েছি এর ভিত্তি কিন্তু আদিম মানুষেরাই গড়ে দিয়ে গিয়েছিল। ধন্যবাদ আপনাকে।
দাদা আপনি যখন আগামী পর্বে গুহা চিত্র এর কথা লিখবেন লিখলেন।তখন ই আমি ভাবছিলাম কিছু ছবিও দেখাতে বলবো।কিন্তু তখন ই আপনি বললেন ছবি দেখাবেন।😍😍
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community