জেনারেল রাইটিং || শৈশবের স্মৃতিচারণ : প্রথম স্থান অধিকার করার গল্প
নমস্কার,
তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই ভালো আছো। আমিও ভালো আছি। |
---|
আমি ছোটবেলায় পড়াশোনায় বেশ ভালোই ছিলাম। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত আমি আমাদের গ্রামেই পড়াশোনা করেছি। আমি যখন স্কুলেও ভর্তি হইনি, তার আগে থেকেই টুকটাক পড়াশোনা পারতাম। অর্থাৎ অ আ লিখা, এ বি সি ডি লেখা, নাম্বার লেখা ইত্যাদি সবকিছুই পারতাম। আর এইগুলো কোন শিক্ষকের কাছ থেকে আমি শিখিনি। যেমন, অ আ এ বি সি ডি এগুলো বাড়ির লোকজনের কাছ থেকেই শিখেছিলাম। আর নাম্বার লেখার বিষয়গুলো আমি আমাদের বাড়ির ঘড়ি দেখেই শিখেছিলাম। আমাদের বাড়িতে একটি কাঁচের ঘড়ি ছিল। যেটা সব সময় উপরে টাঙ্গানো থাকতো।
আমি একবার টেবিলের উপর উঠে অনেক কষ্টে সেই ঘড়িটির নিচে নামিয়ে নিয়ে আসে। তারপর সেই ঘড়ি আমার খাতার পাশে রেখে নিজে নিজে সেই নাম্বার গুলো লেখি। এই ভাবেই আমার নাম্বারিং লেখার সূত্রপাত ঘটে। তারপর যখন স্কুলে আমাকে ভর্তি করা হয়, আমি পড়াশোনায় এতই ভালো পারতাম যে আমাকে এক ক্লাসে প্রমোশন দেওয়া হয়। অর্থাৎ আমি যখন ছোট ওয়ানে পড়তাম তখন সেই বছরই আমাকে বড় ওয়ানে উঠিয়ে দেওয়া হয়। আর ছোট ওয়ানে পড়াশুনা আমাকে করতে হয়নি কারণ ছোট ওয়ানে যে পড়াশোনা গুলো ছিল তা আমি আগেই বাড়ি থেকে শিখে নিয়েছিলাম। এভাবেই শৈশবের স্কুল জীবনের যাত্রা শুরু হয় আমার। তারপর যখন দ্বিতীয় শ্রেণি এবং তৃতীয় শ্রেণিতে উঠি, সেই সময়টাতেও আমি পড়াশোনায় বেশ ভালোই ছিলাম। দ্বিতীয় শ্রেণীতে আমি যখন উঠি তখন আমার রোল দুই হয়। রোল এক হয়েছিল আমার এক কাকুর। আমার কাকুর বয়স আর আমার বয়স প্রায় একই ছিল। আর আমরা একই ক্লাসেই পড়াশোনা করতাম।
যাইহোক, ক্লাস টু তে যখন আমার রোল দুই হয়, আমার মন বেশ খারাপ থাকে। আর অন্যদিকে আমার সেই কাকু পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিল। সে আমার থেকেও একটু পড়াশোনা কম করলেও তার ব্রেন ভালো থাকায় সে ক্লাস টু তে প্রথমই হয়েছিল। তারপর আমি জেদ করি, পরের ক্লাসে উঠার সময় আমি তার আগে যাবই। পরের বছরটা আমি আরও মন দিয়ে পড়াশোনা করি। আমাদের স্কুল টাইমিং ছিল সকাল ন'টা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত। আমি একদম দুপুরে স্কুল শেষ করা বাড়ি গিয়ে স্নান করে পড়াশোনায় লেগে যেতাম এবং বিকাল পর্যন্ত পড়াশোনা করতাম । তারপর বিকেলে খেলাধুলা করতাম। এভাবেই দ্বিতীয় শ্রেণীতে আমি পড়াশোনা করি। তারপর তৃতীয় শ্রেণীতে যখন পরীক্ষা হয়, আমি ঠিকই প্রথম স্থান অধিকার করি। অন্যদিকে আমার কাকু দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।
সেই জন্য তার মনও প্রচন্ড খারাপ ছিল। সে হয়তো এটা ভাবতেই পারেনি, আমি প্রথম হয়ে যাব। তবে আমি যেহেতু অনেক পরিশ্রম করেছিলাম, সেই জন্য সেই জায়গাটা নিতে পেরেছিলাম। আমার এতটা পড়ার আগ্রহ দেখে, আমার ছোটবেলায় বাড়ির লোকজনও অবাক হয়ে যেত। তাছাড়া সেই ছোটবেলায় আমায় যদি কেউ জিজ্ঞেস করতো, "তুমি বড় হয়ে কি হবে?"। আমি তখন বলতাম, বিজ্ঞানী হতে চাই। কেন বলতাম আমি জানিনা, তবে সবসময় আমি এটাই বলতাম। ক্লাস টু থেকে থ্রি তে যখন আমি প্রথম স্থান অধিকার করে উঠি, অনেক ভালোবাসা পাই সবার কাছ থেকে। শিক্ষকরাও অনেক ভালো চোখে দেখত আমায়। ক্লাস থ্রি তে ওঠার পর আমি পরবর্তী বছরেও খুব ভালো করে পড়াশোনা করি।
অন্যদিকে আমার সাথে পাল্লা দিতে আমার সেই কাকুও অনেক পড়াশোনা করে। তবে আমি পরিশ্রম বেশি করতাম। ছোটবেলায় পড়ার অনেকটা আগ্রহ ছিল আমার। তবে বড় হয়ে এই পড়ার আগ্রহটা কখনো খুঁজে পাইনি। অনেকদিন পর ছোটবেলার এই কথাগুলো মনে পড়ে গেল তাই ভাবলাম তোমার সাথে শেয়ার করি। যাইহোক, পরবর্তী বছরও আমি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলাম। এইভাবে পরপর আমি পরবর্তী দুই বছর প্রথম স্থান অধিকার করি। পরে যখন ক্লাস ফোরে উঠি, আমি শহরে চলে আসি। শহরে আসার পর আর প্রথম স্থান অধিকার করার ধারাবাহিকতা ছিল না। শহরে আসার পূর্বের ওই দুই বছরই আমার জীবনের গোল্ডেন সময় ছিল বলা যায়।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
লোকেশন | বারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল। |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আমাদের বন্ধদের ভেতর এমন একজন থাকেই যে অল্প পড়া শুনা করে কিন্তু রেজাল্ট ভালো করে। আমার খালাতো ভাই আমার সাথে পড়তো সেও এমনি ছিলো। আপনার রোল দ্বিতীয় শ্রেণিতে দুই ছিলো আমারও দুই ছিলো। কঠিন পরিশ্রম ও অধ্যবসায় করলে যে কোন জায়গায় সফল হওয়া সম্ভব। আর আপনি সেটাই করেছেন আর তার প্রাপ্য কৃতিত্বটা অর্জন করেছেন। ধন্যবাদ ভাই আপনার শৈশবের স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এত সুন্দর করে গুছিয়ে আপনার এই মন্তব্যটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
গুছিয়ে কথা আমি বলতেই পারি না ভাই যাক জেনে খুশি হলাম সু স্বাগতম ভাই আপনাকে।
আপনার শৈশবের স্মৃতিচারণ মূলক প্রথম স্থান অধিকার করার গল্পটি আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো। আসলে শৈশব বেলায় মানুষের প্রতিযোগিতা বেশি থাকে আর আগ্রহটাও বেশি থাকে। দিন যত বেশি চলে যাই তেমন আগ্রহ যেন ভেতর থেকে হারিয়ে যাই তবে আপনার কাকু সাথে প্রতিযোগিতামূলক পড়াশোনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো । শৈশবের এমন সুন্দর স্মৃতিচারণ মূলক গল্পটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার এই সুন্দর মন্তব্য টি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
বাহ! আপনিতো ছোটবেলা অনেক বেশি মনোযোগী ছিলেন পড়াশোনা। পড়াশোনার মধ্যে প্রতিযোগিতা না থাকলে পড়াশোনার মর্ম উপলব্ধি করা যায় না। আপনার প্রচেষ্টা তৃতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার যে খুব ভালো লেগেছে, সেটা জেনে অনেক খুশি হলাম ভাই আমি।