প্রবাসী হওয়াই যাদের স্বপ্ন।

in আমার বাংলা ব্লগ20 hours ago

আসসালামুআলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি আমার এলাকার ছেলেদের স্বপ্ন নিয়ে কথা বলবো। তারা একটা স্বপ্ন লালন করেই বড় হয়। আর সেটা হচ্ছে প্রবাসী হওয়া।



pexels-brett-sayles-3226808.jpg

Photo by Brett Sayles

আমার গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায়। ঠিক কবে থেকে জানিনা, তবে আমাদের চাঁদপুর, পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী জেলার মানুষের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি এক ধরনের টান দেখা যায়। অবস্থাটা এমন হয়েছে যে, ওই অঞ্চলের কিশোররা বড় হয় একটা স্বপ্ন নিয়ে। সেটা হচ্ছে তারা প্রবাসী হবে।

এই ধরনের চিন্তাভাবনা ছোটবেলা থেকেই তাদের মনে গেথে যায়। আপনি যদি তারা যখন ছাত্র অবস্থায় থাকে তখন খেয়াল করেন, দেখবেন এরা পড়ালেখায় খুব একটা মনোযোগী নয়। স্কুল-কলেজ বা মাদ্রাসায় খুব একটা যায় না। গেলেও একদম পিছনের দিকে বসে। যাদেরকে আমরা আদর করে ডাকি ব্যাক-বেঞ্চার। এদের পরীক্ষার রেজাল্ট থাকে খুবই নিম্নমানের। বেশিরভাগ বিষয়েই তারা পাস মার্ক তুলতে ব্যর্থ হয়। বাসায় পড়াশোনার চেয়ে গান শোনা,নাটক দেখা, আড্ডা দেওয়া, খেলাধুলা করা; এসব বিষয়ে তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। কারণ তারা ধরে নিয়েছে পড়ালেখা করে তাদের কিছু হবে না। বরঞ্চ তারা বয়স হলে বিদেশ যাবে।

পড়ালেখার প্রতি তাদের এরূপ অনিহা তাদেরকে ইউরোপ কিংবা আমেরিকা কিংবা পূর্ব এশিয়ার উন্নত দেশগুলোতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে ভয় পাইয়ে দেয়। তাদের টার্গেট থাকে আরব দেশগুলো। পড়ালেখা বা সার্টিফিকেট না থাকার পাশাপাশি ওইসব দেশে যেতে খুব একটা কাজের অভিজ্ঞতারও দরকার হয় না। তাছাড়া, একটা সময় হয় যখন তারা নিজেদের পকেট খরচের জন্য পরিশ্রমী কাজ করে। মাটিকাটা, ধান কাটা, ধান লাগানোর মত কাজগুলো তারা করে থাকে। কেউ কেউ আবার রাজমিস্ত্রির কাজও করে। এজন্য তাদের শরীর অত্যাধিক পরিশ্রমের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে থাকে। তারা যখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যায় তখন তাদের খুব একটা বেগ পেতে হয় না।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, প্রবাসী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা এসব কিশোর-তরুণের নিজস্ব কোন ক্যাশ টাকা তো থাকেই না; বাবা-মায়েরও জমা অর্থ থাকে না। তাদের বিদেশ যাওয়ার দুটি রাস্তায় খোলা থাকে। হয় জমি বিক্রি করা, না হয় এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া। অনেকেই আবার এক কাঠি বেশি বেশি সরেস। তারা বিয়ে করে এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে যৌতুক নেয় বিদেশ যাওয়ার টাকা জোগাড় করার জন্য। এমন না যে তার শ্বশুরের নগদ অর্থ থাকে। তাদেরকেও হয় জমি বিক্রি, না হয় ঋণ করে টাকা দিতে হয়। এটা হচ্ছে প্রবাসী দুষ্টচক্র। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের বেশিরভাগ এনজিও প্রবাসী স্কিম চালু করেছে। অর্থাৎ পরিবারের কর্তা যদি প্রবাসী হয় খুব সহজেই বড় অংকের টাকা ঋণ পাওয়া যায়।

আদতে, শেষ পর্যন্ত দেখা যায় প্রবাসী সব মানুষ যখন দেশে ফিরে আসে বেশিরভাগের কাছেই কোন নগদ অর্থ থাকেনা। এজন্য যখন তাদের সন্তানরাও প্রবাসী হতে চায় তখন নিজের কেনা জমি কিংবা ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রি কিংবা ঋণ করে তার ছেলেকেও পাঠাতে হয়। আমাদের ওই অঞ্চলে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই একজন করে প্রবাসী থাকেই। এমন অনেক পরিবার রয়েছে যাদের বাবা-ছেলে দুজনেই প্রবাসী। যদি পরিবারে পুরুষ সদস্য বেশি হয় তখন দেখা যায় তাদের সবাই প্রবাসী। এ যেন প্রবাসী হওয়ার স্বপ্নের কারখানা।


PUSSFi_NFT22.png

আমার সম্পর্কে
আমি মুহাম্মদ সাব্বির আকিব। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। জেলাঃ চাঁদপুর, থানাঃ ফরিদগঞ্জ। থাকি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে একটি ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছি। বিবাহিত এবং আল্লাহ একটি পুত্র সন্তানের জনক করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।