কে বেশি দায়ী? শিক্ষা ব্যবস্থা না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের?
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলব। মূলত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে বাস্তব জীবনের ফারাক নিয়ে কথা বলবো। ঠিক শিক্ষা ব্যবস্থা নয়; বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান কৌশল নিয়ে কথা বলব।
আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষা অবস্থার বিরুদ্ধে একটা বড় অভিযোগ হচ্ছে, এই শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মমুখী মানুষ তৈরি হয় না। শিক্ষা ব্যবস্থা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার ফল এবং রাতারাতি এখান থেকে কোন প্রকার ফলাফল আসবেনা। কিন্তু আমরা যেভাবে গণহারে শিক্ষা ব্যবস্থার দোষ দিচ্ছি তার কতটুকু ব্যবস্থার দোষ আর কতটুকু পারিপার্শ্বিক অবস্থার দোষ তা হয়তো আমরা চিন্তা করিনি।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্মমুখী না করার জন্য বাংলাদেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দায়ী। আপনি হয়তো একথা শুনে অবাক হয়ে যাবেন কিন্তু এটাই বাস্তব সত্য। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রায় ১২আনাই বাণিজ্যিক। প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার চেয়ে বাণিজ্যকে বেশি প্রাধান্য দেয়। যার ফলে এখান থেকে আপনি সুশিক্ষিত মেধাবী আশা করতে পারেন না। সঙ্গত কারণে আমি কোন প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করছিনা, কিন্তু তাদের পলিসিগুলো আপনাদেরকে বলছি।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো, যাদের ফলাফল দেখে আমরা ঈর্ষান্বিত হই তাদের এই ফলাফলের পেছনে রয়েছে বেশ বিশাল একটি অন্ধকার গর্ত। স্কুল এবং কলেজের পলিসি প্রায় একই। এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি পরীক্ষার সময় তারা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর সাথে বিশাল রকমের বাণিজ্যিক চুক্তি করে থাকে। আমি কিছু উদাহরণ দিলে হয়তো আপনার কাছে বিষয়টা আরো ক্লিয়ার হয়ে যাবে। ধরুন, ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার কেন্দ্র খ। ক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার আগেই বিশাল রকমের অনুদান দেওয়া হয়। সেটা যেকোন রকমের অনুদান হতে পারে। যেমন আমি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চিনি, যারা পরীক্ষার আগে পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠানকে বেশ কয়েকটি এয়ার কন্ডিশন কিনে দিয়েছিল। পরের বছর তারা জেনারেটর কিনে দিয়েছিল। আমি আরেকটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানি যারা পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিচালককে গাড়ি উপহার দিয়েছিল। বিষয়টা আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু এটা সত্য ঘটনা।
ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্য আরেকটি পলিসি হলোঃ শর্ট সিলেবাসে পাঠদান করানো। অর্থাৎ তারা পরীক্ষায় আসবে এমন নিশ্চিত কয়েকটি সিলেক্টেড বিষয়ের উপরে পাঠদান করায়। অবস্থাটা এমন, এই বিষয়গুলো ছাত্র-ছাত্রীদেরকে গলাধকরণ করা হয়, যাতে করে তারা পরীক্ষার খাতায় তা উগড়ে দিতে পারে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্টের প্রতি আপনি নজর দিতে পারেন। সেখানে দেখা যায় সিলেক্টিভ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা চান্স পায়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারবেন নামিদামি যেসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা চিনি তাদের ছাত্ররা সাধারণত পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহজে চান্স পায়না। সমস্যাটা আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে গত কয়েক বছরে। বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীরা পাসই করে না। কম্পিটিশন রেজাল্ট তো দূরের কথা! এ সবকিছুর মূলে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের সেই শর্ট সিলেবাস পলিসি।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখা করে। আপনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারবেন, সেখানে সেমিস্টার পরীক্ষাগুলোতে অহরহ ছাত্র-ছাত্রীরা ফেল করে। এর কারণ অনুসন্ধান করে দেখুন, বুঝতে পারবেন, যতবার পরীক্ষা ততবার টাকা। এই পলিসিতে আটকে ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের টিউশনি বাণিজ্য আরো একটি মাথাব্যথার কারণ আমাদের জন্য। সাধারণত ছাত্রছাত্রীদের ভালো ফলাফলের জন্য টিউশনির প্রয়োজন আছে। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষকই যখন টিউশনি করায় তখন মনে হয় যেন আরেকটি ক্লাস করাচ্ছে। এতে করে একজন ছাত্র বা ছাত্রী যে উদ্দেশ্য নিয়ে টিউশনিতে যাচ্ছে সে উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। এর কোনোটিকেই আমরা সিস্টেমের দোষ কিংবা শিক্ষা ব্যবস্থা দোষ বলে চালিয়ে দিতে পারি না। এগুলো পারিপার্শ্বিক সমস্যা। যা আমাদের আমলে নিতে হবে। এ বিষয়ে আলোচনার দরকার আছে। এসব দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে।
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এসি গাড়ি কিনে দিচ্ছে এমন তো কখনো শোনা যায় না ভাই। বাংলাদেশের এই ব্যবস্থা শুনে বেশ অবাক লাগলো। এভাবে আসলে শিক্ষা বিক্রি হচ্ছে সকলের মাঝখানে। আর এমন ভাবে যতদিন ব্যবস্থাপনা গোলমেলে থাকবে ততদিন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার চরম উন্নতি সম্ভব হবে না। আসলে দেশে কিছু এ গ্রেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাগে যারা ভালো পরিমাণ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী বের করে। ভারতে যেমন আইআইটি বা আই আই এম এর মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি মেধাবী ছাড়া আর অন্য কিছু দেখেনা।
এটা আমার নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘটনা। আমাদের দেশেও এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু সেখানে রাজনীতি প্রবেশ করে পরিবেশটা ভিন্ন করে ফেলেছে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলতে গেলে বলতে হয় কোচিং বান্যিজের কথা। আমি এক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থার দোষ দেব। শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বেশ সুন্দর লিখেছেন ভাই আপনি।
এটাও বড় একটি সমস্যা। ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।