বর্তির বিলে কিছুটা সময় ঘোরাঘুরি

in আমার বাংলা ব্লগyesterday

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি ভ্রমণ পোস্ট উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।



ইট পাথরের শহরের ভিতর থাকতে থাকতে খুব বোরিং ফিল করছিলাম। আমি গ্রামের ছেলে তাই আমার সব সময় ইচ্ছা করে গ্রামের পরিবেশের সাথে মিশে থাকতে। কারণ গ্রামের পরিবেশ আর শহরের পরিবেশ আকাশ আর পাতাল। শহরে শুধু যানবাহন আর বড় বড় কলকারখানা চারিদিকে বিষাক্ত ধোঁয়া। কিন্তু গ্রামে এসবের কোন কিছুই নেই। গ্রামে সবুজে সবুজে ভরপুর যতদূরে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এখানে আসলে বুকভরা নিঃশ্বাস নেওয়া যায় মনটাও ভালো হয়ে যায়। আমি বর্তমান শহরেই থাকছি যার জন্য গ্রামে পরিবেশটা খুবই মিস করছি। তাইতো একদিন হঠাৎ করেই চলে গেলাম গ্রামের দিকে ঘোরার জন্য। খুবই পরিচিত একটি জায়গা আমার জায়গাটা খুবই পছন্দের। বর্তির বিল একদম গ্রাম্য পরিবেশ এই গ্রামের ভেতর শুধু চাষের জমি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাবে না। আগে এই বিলটাতে তেমন কেউ আসা-যাওয়া করত না। করোনার কথা সবারই আমাদের মনে আছে সেই সময়টাতে কতটা কষ্টের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। প্রতিটা মুহূর্ত জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়েছে।


যাই হোক, সেই ভয়াবহ দিনের কথা নাই বললাম। লকডাউনের সময় মানুষ কোথাও ঘুরতে যেতে পারত না সবসময় ঘরের ভেতর বন্দী হয়ে থাকতে হতো। মানুষকে কোন সময় ঘরে আটকে রাখা যায় না। সবাই একটু চাইত ফাঁকা জায়গায় পরিবেশের সঙ্গে একটু মেলামেশা করতে। শহর থেকে অনেকটা দূরের একটি গ্রাম ছিল। ওই সময়টাতে তখন শহর থেকে কিছু মানুষ সেখানে আসা-যাওয়া করতো। পরিবেশটা একদম গ্রাম্য অনেক ফাঁকা ফাঁকা জায়গা, শুধু ফসলের জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। বিকেলের সময়টাতে মানুষ সেখানে এসে কিছুটা সময় কাটাতো। এমনভাবে আসতে আসতে সেই জায়গাটা একটি সময় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। এখন সেখানে দুইটি পিকনিক কর্নার আর রাস্তার পাশে বাসের তৈরি রেস্টুরেন্ট। এখন আর এখানে এলে ফাঁকা ফাঁকা মনে হয় না কারণ বিকাল পড়তেই মানুষের ভিড় জমেই থাকে। কেউবা আসে ফটো তুলতে কেউবা আসে ব্লগ করতে কেউবা আসে পিকনিক করতে। যাইহোক, একদিন সময় করে চলে গেলাম সেই বর্তির বিলে। একটু পরিবর্তন হয়েছে জায়গাটা কিন্তু কোন ব্যাপার না। এখানে এলে প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। এখন এখানে দেখার মতন কিছুই নেই কারণ ফসল উঠে গিয়েছে আবার নতুন করে ফসল তৈরি করার জন্য চাষ করা হচ্ছে জমি। যেতে যেতে খেয়াল করলাম বিলের অনেকটা জায়গা জুড়ে এখনো জল রয়েছে। সেখানে কিন্তু নৌকাতে করে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখানে নৌকাতে কত কি দাম নিচ্ছে চড়তে সেটা শোনা হয়নি। আমরা গিয়েছিলাম চারজন বাইকে করে। বাইকে চলার মজাটা কিন্তু অন্যরকম কারণ অনেক ছোট ছোট গলি থেকে কিন্তু ভালোভাবে যাওয়া যায়। বিলের মাঝামাঝি দিকে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির কিছু ফটোগ্রাফি করলাম।
IMG20241124161541.jpg

IMG20241124162305.jpg

IMG20241124162055.jpg

IMG20241124160024.jpg

IMG20241124155911.jpg

IMG20241124162412.jpg

IMG20241124161356.jpg

IMG20241124160222.jpg

IMG20241124160400.jpg


অনেকটা সময় ঘোরাঘুরি করার পর আমরা চলে গেলাম চা খেতে। এখানে একটি ব্রিজ আছে সেই ব্রিজের পাশেই চায়ের দোকান আমরা বেশিরভাগ সময় এই চায়ের দোকানেই চা খেয়ে থাকি। কারণ এই দোকানের চাটা সবথেকে বেশি ভালো লাগে। চা খেতে খেতে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে লাগলাম। চায়ের চুমুকের সঙ্গে প্রকৃতিকে উপভোগ করার মজাটাই কিন্তু আলাদা। পাশেই দেখতে পেলাম একটি লোক খাল থেকে মাছ ধরছে। আগে পরে আমরা এই লোকটির কাছ থেকে অনেক বার মাছ কিনেছি। বেশিরভাগ সময়ে বাজার থেকে মাছ কিনে খেতে হয়। বাজারে কিন্তু টাটকা মাছ অনেকটা সময় পাওয়া যায় না। তাই যখনই গ্রামে আসা হয় তখনই কিন্তু মাছ বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ টাটকা মাছের সাধ আলাদা।মাছ কেনার পর আমরা কিছুটা সময় হাঁটাহাঁটি করলাম। বেশি দূরে হাঁটাহাঁটি করতে পারলাম না কারণ এখনো এখানকার রাস্তা কাঁদা রয়েছে। এখানে এখনো মাটির রাস্তা আর এখনও বিলের জল ভালোভাবে শুকায় পারেনি। তাই এখানকার রাস্তাও অনেকটা নরম রয়েছে। যাইহোক, ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। আপনাদের একটা কথা বলা হয়নি আসতে আসতে দেখতে পেলাম গ্রামের ভিতর একটি মেলা বসেছে। আর যেহেতু মেলা বসেছে আমরা যে সেখানে যে কিছু খাব না সেটা কিন্তু হতে পারে না। গ্রামের রাস্তার দু'পাশেই দোকান বসে ছিল। আমরা সেখানে কিছু খাবার খেলাম। জিলাপি ভাজছিল দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। কারণ গরম গরম জিলাপি খাওয়ার মজাটাই আলাদা। যদি আপনারা কোনদিন গরম জিলাপি খেয়ে থাকেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে কতটা ভালো লাগে খেতে।
IMG20241122174351.jpg

IMG20241122174343.jpg

IMG20241122174330.jpg

IMG20241122163851.jpg
ক্যামেরা পরিচিতি :oppo
ক্যামেরা মডেল :oppo A53s 5G
ক্যামেরা দৈর্ঘ্য :4.05mm
তারিখ :২২.১১.২০২৪
সময়:৪.০৮ মিনিট
স্থান: বর্তির বিল, কলকাতা
বাজারে অনেক ধরনের খাবার খাওয়া দাওয়া করে পেটটা মোটা করে ফেললাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম বাড়িতে যেয়ে আর মনে হয় রাতের খাওয়া হবে না। রাতে যদি খাওয়া না হয় তাহলে বকা খেতে হবে। তাই দাদা বাজার থেকে বাড়ির সবার জন্য খাবার নিয়ে নিল। যাতে করে কোনরকম আমাদের বকা না খেতে হয়। এরপর আরো কিছুটা সময় বাজারে ঘোরাঘুরি করার পর আমরা সোজা চলে এলাম বাড়িতে। অবশেষে একটাই কথাই বলবো অনেকটা দিন পর গিয়েছিলাম গ্রামে ঘুরতে। প্রকৃতির সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে পারলাম তার জন্য মন এবং শরীর দুটোই ভালো লাগছিল। ঘুরা ঘুরির মধ্যে গ্রামের মেলা থেকে নানান রকমের খাবার খেলাম। সবকিছু মিলিয়ে দারুন একটি সময় কিন্তু কাটালাম।

আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  
 yesterday 

আপনি এ কথা ঠিক বলেছেন ভাইয়া টাটকা মাছের স্বাদ আলাদা। কারণ আমি জানি মরা মাছগুলো রান্না করলে একরকম স্বাদ হয় আর পুকুর থেকে ধরে আনার পর যে সমস্ত মাছগুলো রান্না করি সেগুলো আর একরকম স্বাদ হয়। যাইহোক আপনার এই ঘোরাঘুরির মুহূর্তের ফটো গুলো ভালো লেগেছে যেখানে পাটখড়ি নৌকার ফটোগ্রাফি এছাড়াও অনেক সুন্দর সুন্দর চিত্র বর্ণনার সাথে তুলে ধরেছেন। সবমিলে অনেক ভালো লেগেছে আমার।

 23 hours ago 

বর্তির বিলের কথা অনেকবারই শুনেছি কখনো যাওয়া হয়নি। কয়েকদিন আগে কিং পরশ ভাইয়ের পোস্টে পড়লাম আজ আবার আপনার পোস্টে পড়লাম। এসব কিছু পড়ে পড়ে কিন্তু মনের মধ্যে একটা ক্রেভিং তৈরি হয়েছে বর্তির বিল দেখার। দেখি কবে সুযোগ হয়।

 25 minutes ago 

বিয়ের পাড়ে ঘুরতে গিয়ে সত্যিই দারুন সময় কাটিয়েছেন। আসলে জায়গা গুলোতে গেলে অনেক ভালোভাবে সময় কাটানো যায়। আর বিলের টাটাকা মাছ খেতে আরও বেশি ভালো লাগে। অনেক সুন্দর মুহূর্ত গুলো তুলে ধরেছেন দেখে ভালো লাগলো ভাইয়া।