তোমার ছোঁয়া গল্প শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ3 days ago (edited)

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি 'তোমার ছোঁয়া' গল্পের শেষ পর্বটি আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-dtanpt-773124.jpg

সোর্স



তন্ময় তারপর পার্ক থেকে বেরিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে বাড়িতে চলে আসে। সন্ধ্যার সময় তন্ময় মানবিকাকে ফোন দেয় আর ফোন দিয়ে তাকে সকালে দেখা করার কথা বলে। মানবিকা ও দেখা করার জন্য রাজি হয়ে যায়। মানবিকা জানেনা কাল সকালে তার সাথে কি ঘটতে চলেছে। সেদিন আর তেমন একটা কথা তাদের ভিতরে হলো না। সকাল হতেই তারা দুজনে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় দেখা করলো। তারা যেদিন দেখা করেছিল সেদিন মানবিকার মুড খুবই ভালো ছিল সে খুবই হাসিখুশি ছিল কিন্তু অন্যদিকে তন্ময়ের খুব মুডে ছিল। তাই দেখে মানবিকা তাকে বলল।

মানবিকা: তন্ময় তোমার কি মন খারাপ?
তন্ময়: না আমার তো মন খারাপ নয়।
মানবিকা: তাহলে অন্যদিনের থেকে আজ তোমাকে একটু অন্যরকম লাগছে কেন?
তন্ময়: কারণ আজ আমি এই মানুষটাকে চিনতে পেরেছি।
মানবিকা: তার মানে তোমার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
তন্ময়: এখন তুমি কিছুই বুঝবে না যখন আমি তোমাকে বলবো তখন ঠিকই তুমি বুঝতে পারবে।
মানবিকা: তার মানে কি তন্ময় তুমি তো আমার সাথে এমন করে কোনদিন কথা বলোনি।
তন্ময়: তখন তো আর জানতাম না যে এই মানুষটা আমার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করছে।
মানবিকা: কি বলতে চাও তুমি। আমি তোমার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করেছি। কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে?
তন্ময়: 😀😀😀😀 আমি জানি তুমি আমার কাছে প্রমাণ চাইবে। তার জন্য আমার সঙ্গে প্রমাণ নিয়ে এসেছি। তুমি ধরা পড়ে গেছো মানবিকা কারণ আমি তোমার মিথ্যা ভালোবাসা ধরে ফেলেছি। আসলে তুমি ছলনাময়ী নারী। তুমি আবিরকে ভালোবাসো আর তার মধ্যেও তোমার প্রেমের জালে আমাকেও জড়িয়ে ফেললে।
মানবিকা: তন্ময় তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। আবিরের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
তন্ময়: মানবিকা তুমি সত্যি কথা বলো কারন আমি জানি তুমি আবিরকে ভালোবাসো আর আমার সাথে তুমি ভালোবাসার অভিনয় করছো।
মানবিকা: কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে যে আমি আবির কে ভালবাসি।
তন্ময়: গত দিন সকালে তোমরা পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলে হাত ধরে ঘুরছিলে ছবি তুলেছিলে খাবার খেয়েছিলে। দেখতো এই ভিডিওর ভেতর যে মানুষগুলো রয়েছে তাদেরকে চিনতে পারো কিনা।


ভিডিও দেখার সঙ্গে সঙ্গে মানবিকা চমকে যায়। কিছুতেই মানতে পারছিল না তাকে এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। সে ভিডিওটি দেখে তন্ময়কে কিছুই বলতে পারেনা। তন্ময় তাকে বলে।

তন্ময়: এখন তো তোমার বিশ্বাস হলো যে আমি তোমার সাথে মিথ্যা কথা বলছি না। তুমি আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছ সেটা আমি বুঝতে পেরেছি ।কিন্তু আমি জানতে চাই কেনো করলে আমার সাথে এমনটা? আমার সাথে প্রেমের খেলাটি খেলে কি এমন সুখ পেলে তুমি? আমি তো চাইনি তোমার জীবনে আর আসতে।তোমার জীবনের সাথে আমাকেই তুমি জড়িয়েছো। কেনো করলে তুমি আমার জীবনের সাথে খেলা? আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
মানবিকা: তন্ময় আমি বুঝতে পারিনি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে স্কুল জীবন থেকে পছন্দ করতাম মনে মনে ভালবাসতাম কিন্তু কোনদিন তোমাকে বলতে পারিনি। তুমি স্কুল থেকে চলে যাওয়ার পর থেকে আমি আবিরের সাথে বেশি মেলামেশা করতে থাকি। আর সেখান থেকে কখন জানি আবিরকে আমার ভালো লেগে যায় আর তারপর ওকে ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু যখন তোমার সঙ্গে আমার আবার দেখা হল। আমার সেই পুরনো দিনের কথা খুব মনে পড়ে যাচ্ছিল। আমি তোমার নাম্বার নেই পরবর্তীতে তোমাকে প্রপোজ করি। আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি তোমাকে সত্যি কথাটা বলার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সাহস করে কোনদিন বলতে পারিনি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
তন্ময়: তুমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছ। তুমি আমার নিষ্পাপ ভালোবাসাটাকে নিয়ে খেলা করেছ। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি কিন্তু তুমি একদিন ঠিকই আমার মতন প্রতারিত হবে। সেদিন তুমি বুঝতে পারবে কতটা কষ্ট তুমি আমাকে দিয়েছো। আমি চলে যাচ্ছি কোনদিন আমার মুখ তোমাকে দেখাবো না। আমি যে মানুষটাকে আমার জীবনের থেকে বেশি ভালবাসতাম আজ সেই মানুষটাকে সবথেকে বেশি ঘৃণা করি। আমি তোমাকে ঘৃণা করি মানবিকা।


এই বলে তন্ময় সেখান থেকে চলে আসে। সেদিনের পর থেকে তন্ময় আর কোনদিন মানবিকার সামনে যায়নি। কয়েক বছর পর মানবিকা ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।তন্ময় ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তন্ময় একটি বড় কোম্পানিতে চাকরি পায় ভালোই বেতন পায়। আর অন্যদিকে মানবিকা ছোটখাটো একটা জব করতে থাকে। কিন্তু মানবিকা যাকে ভালবাসত সেই আবির শেষে তাকে কষ্ট দেয়। মানবিকা প্রেগন্যান্ট হয়েছিল আবির সে কথা জানার পর তার সাথে যোগাযোগ করা তার পরিচয় দেওয়া সবকিছু অফ করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে মানবিকা বাচ্চাটিকে নষ্ট করে ফেলে। আর তারপর থেকে সে নতুন জীবন শুরু করে। তখন তার তন্ময়ের কথা খুব মনে পড়ে কিন্তু তখন আর সময় ছিল না ফিরে আসা। কারণ মানবিকা জানতো তন্ময়ের চোখে সে ঘৃণার বস্তু। আর অন্যদিকে তন্ময় নতুন একটি ভালোবাসার মানুষ খুঁজে পায় সে মানুষটি তন্ময়কে প্রচুর ভালোবাসতো আর খুব কেয়ার করতো। পরবর্তীতে তারা দুজন দুজনকে বিবাহ করে। তাদের বিবাহের দু'বছর পর একটি কন্যা সন্তান হয়। তন্ময়ের স্ত্রী একজন স্কুল শিক্ষিকা। তন্ময় তার ছোট্ট পরিবারটিকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। আর সে ভুলে গিয়েছিল তার জীবনে কোন একদিন মানবিকা নামের এই ব্যক্তিটি ছিল।

আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  
 3 days ago 

ভাইয়া আপনি তো দেখছি খুব সুন্দর সুন্দর গল্প লিখেন। আপনার গল্প পড়তে আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। আজকের গল্প পড়ে আরও বেশি ভালো লাগলো। যদিও আগের পর্বগুলো পড়া হয়নি তবে শেষ পর্ব পড়ে খুব ভালো লাগলো। মানবিকা ভালোবাসা নিয়ে তন্ময়ের সাথে যেমন ছলনা করেছে তেমনি সে নিজেও সেই ছলনা আবিরের কাছ থেকে ফিরে পেয়েছে। মানবিকা সত্যিকারের ভালোবাসা কোনটা তা বুঝতে পারেনি বলেই তার জীবনটা এভাবে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে তন্ময় ভালো মানুষ ছিল বলেই সে এখন সুখী রয়েছে। তারজন্য বলে দুই নৌকায় পা না দিয়ে,এক নৌকায় পা দিয়ে চলা ভালো। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 3 days ago 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।