একের ভিতর পাচঁ
সবাই কে আমার পক্ষ থেকে সালাম ও আদাব। আশা করি সবাই ভাল আছেন।
প্রতি শুক্রবারের মতো এবার ও ঘুরে এলাম
বান্দরবানের লামা পৌরসভায়।
প্রতিবারের মতো এবারও গেলাম মহান আল্লাহ তায়ালার অপরুপ সৌন্দর্য ভরা প্রাকৃতিক ঝর্নায়।
তবে এবারের ঝরনায় যেমন মজা করে করেছি তার চেয়ে বেশি কষ্ট ও পেয়েছি আল্লাহর রহমতে জীবন নিয়ে বেচে ফিরে আসতে পেরেছি। ভয়ংকর অনেক অভীজ্ঞতা পেয়েছি।
পরশু রোজ শুক্রবার (০৩-০৯-২১)
বৃহস্পতিবার সন্ধায় চকরিয়া মাতামুহুরি ব্রিজে ভাই - বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম।আমি সবাইকে উদ্দ্যশ্য করে বললাম, চলো কাল শুক্রবার সবাই মিলে একের ভিতর পাচঁ ঝর্না থেকে ঘুরে আসি। সবাই যাওয়ার সম্মতি দিল। ৩০ মিনিট পর আড্ডা শেষ করে সবাই কে শুক্রবার সকাল ৬ টায় বাস টার্মিনালে চলে আসার জন্য বললাম। সবাই কে বিদায় দিয়ে বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে শর্ট পেন্ট +গামছা + লুঙ্গি নিয়ে ব্যাগিং করে মোবাইল চার্জ দিয়ে রাতের খাবার শেষ করে শুয়ে পড়লাম। শুবার আগে মোবাইলে ৫ টার এলার্ম দিয়ে রাখলাম।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করে রেডি হয়ে বাহির হয়ে গেলাম, বাস টার্মিনালে পৌছালাম ৬.১০ মিনিটে। সবাই আসতে আসতে ৬.৩০ হয়ে গেল।
গন্তব্য শুরু:
চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনাল থেকে শর্ট বড়ি বা জিপ নিয়ে লামার উদ্দ্যশে রওনা দিলাম। যাওয়ার সময় জিপের ছাদে উঠে পড়লাম, পৌছাতে সময় লেগেছে ৪৫ মিনিট, ভয়ংকর সৌন্দর্য উপভোগ করে করে লামা সদর পৌছে গেলাম। চকরিয়া থেকে লামা ভাড়া -৬০ টাকা জনপতি। লামা টার্মিনালে নেমে সবাই পাশের একটি হোটেল থেকে ডাল, ভর্তা ভাত খেয়ে নিলাম কারণ আমার প্রায় ২.৩০ মিনিট হেটে ঝর্নায় যেতে হবে।
একের ভিতর পাচঁ ঝর্নায় যেতে হলে
লামা সদর---চ্যায়ারমেন পাড়া---মেরাখোলা হয়ে যেতে হবে।
যাওয়ার সময় নদী পাহাড়ের অপরুপ সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
আমরা ঠিক ৯ টায় ঝর্নার উদ্দ্যশে রওনা দিলাম। আমরা ৭ জন সাথে একজন লোকাল বন্ধু কে সাথে নিলাম। সে থাকায় আমাদের চারদিকেই সুবিধে হলো।
https://youtube.com/shorts/rNMSK14roLY?feature=share
ম্যারাখোলা থেকে টমটম যোগে ৫ মিনিট যাওয়ার পর আমাদের একটি সুউচ্চ পাহাড়ের সামনে নামিয়ে দিল।লোকাল বন্ধু বলল এইখান থেকেই ট্রেকিং শুরু, সে আরো বললো মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে কারণ অনেক পাহাড় পর্বত পাড়ি দিতে হবে।
সুউচ্চ পাহাড় এর নিচ থেকে সবাই লাঠি নিয়ে নিলাম, হাটা শুরু করলাম। হাটতে হাটতে যতই সামনে দিকে যাচ্ছি ততই পাহাড় উচু হচ্ছে, আবার ততই সৌন্দর্য বাড়ছে।সত্যি এক কথায় অসাধারণ। প্রায় ১ ঘন্টা খাড়া পাহাড় উঠার পর ঢালু মাটির রাস্তা থেকে কিছু টা হলেও মনে শান্তি পেলাম ২৫ মিনিট ঢালু রাস্তা শেষ করে থলে পাড়া চলে এলাম। এবার বিল বা ধানি জমির আইল ধরে ধরে আরো ১ ঘন্টা ২০ মিনিট হাটার পর আমাদের দেখা মিললো ঝর্নার সৌন্দর্যতা। যা কখনো ভুলার নয়। এ ধরণের ঝর্না দেখলে মন থেকে সকল কষ্ট দূর হয়ে যায়।আমার মন খারাপ থাকলেই কোন না কোন ঝর্নায় যায়।সত্যি মন টা ভাল হয়ে যায়।
সতর্কতা:
১। যাওয়ার সময় অবশ্যই এংলেট নিয়ে যাবেন।
২।প্রচুর জোক থাকায় ব্যাগ লবণ রাখবেন অল্প।
৩।ঝর্নায় আসার পর যদি বৃষ্টি শুরু হয় তাহলে তাড়াতাড়ি চলে আসার চেষ্টা করবেন নয়তো আটকা পরার সম্ভবনা থাকে।
৪।ট্রেকিং করার সময় বাশ + পলিথিন সঙ্গে রাখবেন।
৫।একটানা হাটার চেষ্টা করবেন না, দরকার হলে ১ ঘন্টা পর পর ১০ মিনিট করে ব্রেক দিন।
জীবনের সেরা ৩ টি নতুন অভিজ্ঞতা:
১। জোকঁ:
ঝর্নায় যে ৮ জন গেসি তাদের প্রত্যেক কে নূন্যতম ১৫-২৫ টা করে জোক এ ধরছে।জোক এমনিতেও ভয়ংকর, শরীরের প্রবেশ করলে সব শেষ। তাই সবাই ভয়ে অস্থির হয়ে গিয়েছিল।
২।নদী পার হওয়া:
ঝরনায় যাওয়ার সময় ছোট একটি নদী ৪ বার পার হতে হয়। যা বৃষ্টি বেশি পড়লে প্রচুর স্রোত হয়ে যায়।স্রোত বেশি হওয়ায় পার হতে কষ্টকর হয়ে পড়ে। ৮ জনের ৭ জন সাতার পারে, আমি বেচারা সাতার পারি না। বাকি সবাই পার হয়ে গেসে, ঝুম বৃষ্টি তখনো। একটু পর খেয়াল করলাম নদীর পাশে মুরালি বাশের শিকড় সহ স্তুপ আছে তাদের বললাম বাশ ফেলতে ২ বাশের ওপর ভর করে কষ্ট করে ১ টা পার হলাম। সামনের ৩ টা পার হলাম এক নিয়মে, লম্বা একটা বাশ নিলাম বাশের এক প্রান্তে ২ জন ধরে ছিল অপর প্রান্তে আমরা একজন একজন শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে আটকে ছিলাম, একটু ভুল হলে মাতামুহুরি নদীতে ভেসে যাবো,অনেক কষ্টে মাটির রাস্তায় উঠতে সক্ষম হলাম।
৩। ভয় ও জয়:
ভয় ছিল আদৌ কি বাড়ি পৌছাতে পারবো! এটা ভাবার কারণ হলো যেমন বৃষ্টি তেমন জোক, আবার তেমন বজ্রপাত ও হচ্ছিল আবার নদীর স্রোত সব কিছুকে অতিক্রম করতে পারবো কিনা, তাও শেষ মেষ ভয় কে জয় করলাম, কিন্তু বাড়িতে আসার পর থেকে সবার পা ফুলে গেসে, সবার অবস্থা খুব বাজে হয়ে গেসে।এতো উচু পাহাড় ট্রেকিং আমি আগে করি নি, অসম্ভব খাড়া তেমনি আবার ঢালু ও।
লামা থেকে রাত ১০.২০ মিনিট এ আবার বাড়ি তে চলে এলাম।
আপনার পোস্টটি খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার পোষ্টের ফটোগ্রাফি গুলো খুব সুন্দর হয়েছে।বিশেষ করে নিচের এই ফটোগ্রাফি টা আমার কাছে বেশি ভালো লাগছে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপনার পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।শুভ কামনা রইলো।
পাশে থাকার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
খুবই চমৎকার জায়গা।ঝর্ণাটা খুবই সুন্দর। বন্ধুদের সঙ্গে খুবই আনন্দে সময় কাটিয়েছেন বোঝা যাচ্ছে।ছবি গুলি খুবই সুন্দর হয়েছে।ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য। এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।