জীবন থেকে নেয়া গল্প || "বড় বোন "||~~

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম/আদাব


ধারাবাহিক গল্প-- "বড় বোন"


সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন,এটাই প্রত্যাশা করি। আজ আমি একটি ধারাবাহিক গল্পের ১ম পর্ব নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

1000025906.jpg




"বড় বোন"

প্রথম পর্ব

আজ সাহস করে জীবনের সব দ্বিধা কাটিয়ে, মনের গভীরে জমে থাকা অনুভূতিগুলো কলমে তুলে ধরলাম। এই কথাগুলো বলা আমার জন্য সহজ ছিল না। তবে মনে হলো, আমার মৃত্যুর আগে অন্তত এই সত্যগুলো বড় বোনকে জানিয়ে যাওয়া উচিত। তাই গভীর রাতে কলম হাতে।

রাত গভীর, পৃথিবীর কোলাহল থেমে গেছে। কিন্তু আমার মনে এক অশান্ত ঝড়। বারবার ভাবছিলাম, এই কথাগুলো যদি আমি বলে না যাই, আমার অন্তরে এক চিরস্থায়ী শূন্যতা থেকে যাবে। সাহস করে কলম তুলে নিলাম, কারণ মৃত্যুর আগে অন্তত একবার আমার বড় বোনের কাছে কিছু কথা না লিখে আমি থাকতে পারছি না।

বোন,, তোর যখন বিয়ে হলো, আমি তখন অনেক ছোট। তোর বিয়ের স্মৃতি আমার তেমন মনে পড়ে না। তবে এটুকু মনে আছে, দুলাভাইয়ের সাইকেলে চড়ে তোর বাড়িতে যেতাম। তুই নিজের হাতে আমাকে গোসল করিয়ে দিতি। তখনকার সেই যত্ন আজও আমি ভুলিনি। স্মৃতিতে অমলিন হয়ে রবে আজীবন।

আমি তোকে বড় বোন হিসেবে এতটাই ভালোবাসতাম যে তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। যখন তুই ধান সিদ্ধ করে শুকোতে দিতি, তোর বাড়ির অঙ্গীনায় কিংবা তোদের খুলি বাড়িতে আমি মুরগি আর কাক তাড়ানোর দায়িত্ব নিতাম। তোর সাথে তোদের বাড়ির পিছনের শাকসবজি বাগানে পানি দিতাম। আলুর খেতে গিয়ে আলু তোলার মুহূর্তগুলোও মনে পড়ে গভীর ভাবে।

তিথির জন্মদিনের স্মৃতি

কখনো ভুলব না। নীলফামারী সদর হাসপাতালে যখন তুই প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলি, তখন আমি নিজেও অনেক যন্ত্রণায় ছোটাছুটি করছিলাম। কি করবো ভেবে না পেয়ে বার বার নার্সদেরকে ডেকেছিলাম। সেদিন আমার ছোটাছুটি দেখে হাসপাতালের বাকি রোগীর লোকেরাও অবাক হয়ে গিয়েছিল। আমার ডাকে নার্সরা বারবার এসে তোকে দেখছিল। যখন দেখল বাচ্চা হওয়ার সময় এখনো অনেক আছে,,, তখন তারা একপর্যায়ে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়েছিল।

কিন্তু তোর কি মনে আছে! প্রচন্ড ব্যথায় একবার খুব জোরে চিৎকার করে উঠছিলি। তখন আমি আর সহ্য করতে না পেরে নার্সদেরকে নিয়ে যখন ডাকি, তখন তারা সারা না দিলে, তাদের দরজায় জোরে জোরে লাথি মেরে ছিলাম। আমার চিৎকারে নার্সরা এসে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল। এবং তোকে নিয়ে প্রসব রুমে গিয়েছিল। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যে আমার চোখের সামনেই তিথির জন্ম হলো।

যখন তিথি জন্মাল, তখন ফজরের আজানও হয়নি। সেদিন আনন্দে আমি হাসপাতাল থেকে গভীর অন্ধকারে কবরস্থানের সামনে দিয়ে এক দৌড়ে বাড়ি গিয়ে সবাইকে খবর দিয়েছিলাম। তুই তখন হাসপাতালে বেডে।আর মা ছিল তোর পাশে। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম আনন্দের দিন ছিল সেই দিনটি। প্রথম খালামণি হবার অনুভূতি এতটাই তীব্র ছিল যে, সেই ছোট বয়সে মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করেছিলাম সেদিন।

তিথি যখন ১৪ দিনের, তখন দুলাভাই তোদের নিতে এসেছিল। তোদের নিয়ে গ্রামে যাবে। আমি কিছুতেই যেতে দিতে চাইছিলাম না। সেই কান্নাকাটি আজও মনে আছে। কারণ সেই সময়টা তিথিকে ছাড়া একটি সেকেন্ডও যেন আমার কাছে বড় বেশি বিষদময় মনে হয়েছিল। আমার কান্না কাটি যখন দুলাভাই এর মন গলাতে পারলোনা। তখন দুলাভাই এমন একটি কথা বলল--দুলাভাইয়ের কথাটি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিল—“একটা বাচ্চা জন্ম দিয়ে তারপর এত মায়া দেখাস।” বুঝলি। এই কথা শোনার পর আব্বা আমাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে গিয়েছিল। এবং আমার কান্না থামানোর নানা রকমের চেষ্টা করেছিল। আর এই ফাঁকে তোরা চলে গিয়েছিলি।

আমার বিয়ের দিনও তিথিকে জড়িয়ে আমি কত কান্না করেছি। তিথি আমার বোনের মেয়ে হলেও, ওর প্রতি আমার ভালোবাসা যেন মাতৃত্বের মতো গভীর ছিল।

এরপর তোর মেজ মেয়ে ইতির জন্মদিনে

সেই সময়ের কথা মনে আছে তোর ? যদিও ওর নাম রেখেছিলাম সিঁথি। কারণ তিথির নাম করণ ও আমার করা । ওর সাথে মিলিয়ে নামটি রেখেছিলাম। তবে, ওর নাম ইতি কে রেখেছে আমার সঠিক মনে নেই। গ্রামের বাড়িতে ওর জন্ম হয়। ওর জন্মের কথা শুনে সবাই মিলে ওর প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে গিয়েছিলাম।। আব্বাও তখন বেঁচে ছিলেন।
সে কি আনন্দ ছিল সবার চোখে মুখে। তখন ও তোকে
দেখাশোনা করার জন্য অনেকদিন থেকেছিলাম তোদের গ্রামের বাড়িতে। অনেক সময় নিয়ে।

শেষে আসি

শ্যামার জন্মের গল্পে।

দুলাভাই তখন নীলফামারীর বাইরে চাকরি করতো। সেদিনও তোকে মাতৃসদনে আমি ভর্তি করিয়েছিলাম।
হ্যাঁ দুলাভাইও সাথে ছিলেন। তার পাশে ছিলাম আমি।
তুই যখন নরমাল ডেলিভারির জন্য দুদিন ধরে চেষ্টা করছিলি, আমি তখন গর্ভবতী ছিলাম শিপুকে নিয়ে। এদিকে আব্বা ভীষণ অসুস্থ ছিল। আম্মা ব্যস্ত ছিল তাকে নিয়ে।
তোর সিজারের সময়, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও আমি পাশে থেকেছি। ডাক্তাররা বারবার সাবধান করছিল, কিন্তু আমি শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলাম—আমার বোন যেন সুস্থ থাকে। অসিত দাদা সহ মাতৃসা ধরনের অনেকেই আমাকে এত ছোটা ছুটি করতে নিষেধ করেছিল। এও বলেছিল যে আমার খারাপ কিছু হতে পারে। তখন অসীত দাদার বউ ছিল তোর পাশের বেডে। গভীরভাবে চোখ বন্ধ করে একবার আমার সেই সময়টাকে উপলব্ধি করে দেখিস। কতটা ঝুঁকি নিয়ে সেদিন তোর পাশে ছিলাম সর্বক্ষণ। আমারও ভীষণ কষ্ট হতো, সারাদিনে কয়েকবার সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে এবং রিকশায় যাতায়াতে। অবশেষে শ্যামার জন্মের পর সেই তুলতুলে নরম -শরম মেয়েটিকে দেখে সমস্ত কষ্ট ভুলে গিয়েছিলাম।

তোর জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমি ছিলাম ছায়ার মত । কিন্তু তুই কি এসব স্মৃতি মনে রেখেছিস? হয়তো ভুলে গেছিস, নয়তো অস্বীকার করবি। চিরদিনই দেখেছি উপকারের গাছে ছাল থাকেনা।

আমাদের সম্পর্কের গভীরতা

তোর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমি তোর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তোর প্রতিটি সন্তানের জন্মের সময় আমি মনের সবটুকু দিয়ে প্রার্থনা করেছি, সাহায্য করেছি। হয়তো তুই সেসব ভুলে গেছিস, কিংবা মনে রাখতে পারিসনি। কিন্তু আমি কখনো ভুলিনি।

আমার বড় বোন,
তুই শুধু আমার বোন নোস, তুই আমার মনের আশ্রয়। জীবনের প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে তোর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তুই যদি কখনো ভাবিস, আমি তোকে কষ্ট দিয়েছি, তবে মাফ করে দিস। এই পৃথিবীতে তোকে ছাড়া আমার জীবনের গল্প অসম্পূর্ণ। তুই আমার ভালোবাসার বিশাল একটা অংশ।

তোর ছোট বোন
সাথী

(চলবে...)

পরবর্তী পর্বে:

তোর জীবনের আরও অজানা অধ্যায়, আমার মনের গভীর অনুভূতি এবং কিছু না বলা কথার বিস্তার।

এক হৃদয়ের সুর,
এক পবিত্র ভালোবাসার আবেগ।



1000024355.jpg

1000024352.jpg



বন্ধুরা আমার আজকের গল্পঃটি নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর কবিতা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব, আমি সেলিনা সাথী...

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

photo_2023-07-07_17-27-00.jpg

আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং

কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 days ago 

1000006850.jpg

1000006849.jpg

1000006848.jpg

1000006847.jpg

 yesterday 

বাড়িতে ছোট বোন থাকলে তারা সবসময়ই সর্বস্ব দিয়ে বড় বোনের সমস্ত কাজে অকাজের বিপদে-আপদে সব সময়ই পাশে থাকে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বড় বোনেরা না জানি কেন সেগুলো ভুলে যায়। আমার বড় মাসি এবং মায়ের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তেমনটা লক্ষ্য করেছি। তোমার লেখা অনুভূতি এবং ঘটনাগুলো পড়তে পড়তে আমার মায়ের বলা তার জীবনের গল্পগুলো মনে পড়ল অনেকখানি মেলে তোমার সাথে।