শৈশব স্মৃতি || @shy-fox 10% beneficiary

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

কিছু কিছু মানুষ জীবনের সঙ্গে এমন ভাবে অতপ্রতভাবে জড়িয়ে থাকে , যাদেরকে আসলে চাইলেও কোন ভাবেই ভুলে থাকা যায় না বা ভুলে থাকাটাও বেশ কষ্টকর হয়ে যায় । বহুদিন ধরেই মানুষের জীবন নিয়ে লিখছি । এইটা অনেকটা নেশার মতো হয়ে গিয়েছে । কিছু কিছু জীবনের কাছে বড্ড ঋণী আমি । সেই ঋণ এক কথায় অপরিশোধ যোগ্য ।

ডাক্তার সাহানা বানু , ঠিক তেমন একজন মানুষ । আমার কৈশোর কালে বেড়ে ওঠায় পথ প্রদর্শকের ভূমিকায় তার অবদান অপরিহার্য । নিজের বাবা-মা ছাড়াও যে কিছু মানুষ ছায়ার মতো পাশে থাকে তার বাস্তব উদাহরণ তিনি । যদিও এর পেছনে আরও কিছু কারণ ছিল । বলতে গেলে আতিফ আমার বাল্য বন্ধু আর ওদের বাড়িই ছিল আমাদের সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু ।

received_785926069293083.jpeg

এই তল্লাটে ডাক্তার সাহানা বানুর বাড়ি চিনতো না , এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। শুধু যে আমার একার কেন্দ্রবিন্দু ছিল সেই বাড়ি , সেটা বললে নেহাত অন্যায় হয়ে যাবে । আমার বাল্য বন্ধুদের আবেগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সেই লাল দোতলা বাড়িটা । মূলত তার ছোট ছেলে আতিফ আমার বাল্যবন্ধু আর এই জন্যই ব্যাপারটা আরও গভীরতাপূর্ণ ছিল ।

জীবনের কতগুলো সময় যে ঐ বাড়িতে কাটিয়েছি তা হয়তো বলে শেষ করতে পারবো না । ঐ বাড়ির প্রতিটি ইট পাথরের সঙ্গে মনেহয় আমাদের সন্ধি হয়ে গিয়েছিল। কৈশোর বেলায় কোন রকম শুধুমাত্র খালি রাত্রিটা যাপন করেছি নিজেদের বাড়িতে । তারপর ভোরের আলো ফোটা মাত্রই আরও গিয়ে জটলাপাঁকা শুরু সেই বাড়িতে । বেলা যতই ক্রমাগত বাড়ে , সকলের উপস্থিতিতে যেন মুখরিত হয় চারপাশ । কত গুলো নবীন প্রাণ একত্রে হৈ-হুল্লোড় করা ভাবা যায় । কেমনে ভুলি সেইসব শৈশব স্মৃতি, আত্মারটান তো লেগেই আছে ।

মূলত আন্টিকে পথপ্রদর্শক সম্মোধন এজন্যই জানালাম । প্রথমত তিনি একজন কর্মজীবী নারী ছিলেন । তাছাড়াও দু সন্তানের জননী । ব্যক্তি জীবনে তিনি বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন । তারপরেও বিবাহ সূত্রে এই মফস্বল শহরে বসবাস করে ছিলেন । তবে ভাগ্য বেশিদিন সুপ্রসন্ন হয়নি । আংকেলের হঠাৎ চলে যাওয়াতে বেশ ভেঙ্গে পড়ে ছিলেন ।

তবে তারপরেও সে নিজের দায়িত্ব থেকে কখনো পিছপা হয়নি । দুই সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা ,পুরো সংসার সামলানো ও একই সঙ্গে ডাক্তারী পেশাও চালিয়ে গিয়েছিলেন ।

received_575766980961219.jpeg

হয়তো স্বচক্ষে কাছ থেকে বিষয় গুলো দেখেছিলাম বিধায় অনায়াসেই কথা গুলো অবলীলায় বলে ফেললাম । সেই প্রাইভেট পড়া থেকে শুরু করে খেলাধুলা, সবকিছুর সঙ্গে বাড়িটার সম্পর্ক ছিল যেন পারস্পরিক। তাছাড়াও যেহেতু আন্টি একা মানুষ ছিল , তাই মোটামুটি আমাদের সবাইকেই বেশ পছন্দ করত । যেহেতু ডাক্তার মানুষ, চাইলেই হয়তো অন্যত্র ক্যারিয়ার করতে পারতো । শুধুমাত্র তার ছেলেদের কথা চিন্তা করেই, তার বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিয়েছিল এই মফস্বল শহরে ।

এই মফস্বল শহরে যখন হাতে গোনা মাত্র ২ থেকে ৩ জন ডাক্তার ছিল । সেই সময়ের ডাক্তার ছিলেন সাহানা বানু । আমি তো সেই ছোটবেলা থেকে তাকে দেখেই বড় হয়েছি এবং মোটামুটি বেশ বাস্তব জীবনের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা গুলোর স্বয়ং অনুপ্রেরণা গুলোও তার কাছ থেকেই পেয়েছি । বেশ কয়েকবার সুযোগ হয়েছিল আন্টির সঙ্গে খুব কাছাকাছি বসে গল্প করার ও তার কথা শোনার ।

আমার তো এখনো মনে আছে , যেকোন উৎসবে বিশেষ করে ঈদের সময়টাতে বেশ ঘটা করে আন্টি সবাইকে দাওয়াত দিত । সেই সময় গুলোর কথা মনে পড়লেই যেন, এখনো চোখের কোণে জল চলে আসে ।

এত বড় বাড়িতে আমাদের মত ছোট ছোট কিছু দুরন্ত কৈশোর অতিথি হিসেবে যাওয়া অনেকটাই একদম শূন্য হাতে । তাছাড়া গিয়েই নিজের বাড়ির মতো করে খাবার টেবিলে বসে সেই ঝরঝরে ধোঁয়া ওঠা বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট, কাবাব, স্পেশাল সবজি আরো কত রকমারি খাবার । উফ, কিভাবে যে ভুলি এসব । খাবার গুলোর স্বাদ ও গন্ধ যেন এখনও মস্তিষ্কে গেঁথে আছে । কখনো ভুলেও বুঝতে দেয়নি যে আমরা পরিবারের বাহিরের কেউ । এইটা সত্য সেই সময় বাড়িটাকে আমরাও বেশ আগলে রেখেছিলাম । যা এখনও চলমান।

এই ছোট্ট জীবনে বন্ধু বহু পেয়েছি । তবে কাছের বন্ধুর তালিকা খুবই ছোট । হয়তো সেই তালিকায় আতিফ তার স্থান পরিপক্ক করে নিয়েছে । যা মূলত সম্ভব হয়ছে ওর মানসিকতার জন্য । আমার হৃদয়ের বেশ বড় একটা স্থান দখল করে আছে আতিফ ।

যাইহোক, আন্টি সেই সকাল আটটায় হাসপাতালে চলে যেত আর ফিরত দুপুর দুইটার মধ্যেই । আর এই সময়টা পুরো বাড়িটা ছিল আমাদের দখলে । পুরো বাড়িটা যেন আমরা চিড়িয়াখানা বানিয়ে ফেলতাম। সেই সময় ওর সদ্য কেনা কম্পিউটারের উপর বেশ ভালোই নির্যাতন চালিয়ে ছিলাম । তবে আন্টি হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার কিছু আগেই আমরা আবার যে যার মত করে সে তার গন্তব্যে চলে যেতাম এবং বোঝার কোন উপায় ছিল না যে, এতটা সময় এই বাড়িতে এতো হৈ-হুল্লোড় হয়েছে । যাওয়ার আগে সবকিছু আবার ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে রেখে যেতাম ।

received_1513075382528571.jpeg

আজ বহুদিন পরে হুট করে মাঝরাতে যখন আতিফের সঙ্গে কথা হল । তখন সেই অতীতের কথা গুলো মুহূর্তেই মনে পড়ছিল । আন্টির কথা জিজ্ঞাসা করলাম । বললাম, কেমন আছে । ও বলল , তোর আন্টির বেশ বয়স হয়ে গিয়েছে রে । সবাই আমরা এখন ঢাকায় আছি । এইদিকে কবে আসবি, বহুদিন হল আন্টিকে দেখিনি । খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ।

আমি তো ওকে বলেই ফেললাম, আন্টির কাছ থেকে আমি বা আমরা যা পেয়েছি তা কখনো ফেরত দেওয়ার মতো সৌভাগ্য আমার হবে না । তবে আমার ইচ্ছা আছে আন্টির কাছ থেকে আর একবার একটু সময় নেওয়ার। হয়তো সেই সন্ধ্যেতে সবাই মিলে আন্টিকে নিয়ে আমার বাসায় ছোট্ট পরিসরে নিজেদের মতো করে ফেলে আসা দিনের মতো সময় কাটাবো ।

যদিও বন্ধু আতিফ আমাকে কথা দিয়েছে । সে তার পুরো পরিবার নিয়ে আমার বাসায় বেড়াতে আসবে । আমি মনেকরি , ঐদিনটা হবে আমার কাছে বিশেষ একটা পাওয়া । আমি অপেক্ষায় আছি সেই দিনের।

Banner-3.png

ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago (edited)

অনেক ভাল লাগলো পড়ে ভাইয়া। আন্টির অনেক অবদান তার পরিবারের উপর। আপনার বন্ধু আতিফ ভাইয়া সপরিবারে একদিন আপনার বাসায় আসবে। সেদিন খুব স্মৃতিচারণ করবেন। সেই পোস্ট এবং সবাইকে দেখার অপেক্ষায় রইলাম। অনেক ভাল থাকবেন ভাইয়া। অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago (edited)

শৈশবে তাহলে অনেক চালাক চিলেন। আন্টি আসার আগেই এলোমেলো করা জিনিষ পত্র গুছিয়ে আবার নিজ বাসস্থানে চলে যেতেন। আতিফ ভাইয়ার মত এমন বন্ধু সবার কপালে থাকে না। আপনি সত্যি সুভাগ্যবান। আন্টি আপনার বাসায় আসলে আরো একটি পোষ্ট পাবো মনে হয়। কিছু সৃতি ভুলার মত না। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago (edited)

আপনার শৈশব টা খুব আনন্দে কাটিয়েছে। আপনার আন্টির কথা শুনে খুবই ভালো লাগলো। উনাদের পরিবারে ওনার অবদান অনেক। আপনি এরকম একটা আন্টি পেয়েছেন। এবং আতিফ ভাইয়ের মত এমন একটা বন্ধু পেয়েছেন তা সবার ভাগ্যে থাকে না। এটা জেনে আরো ভালো লাগলো ।যে উনারা সপরিবারে আপনার বাসায় আসবে। ওই দিনের পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম। আপনার শৈশব স্মৃতি গুলো পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে ভাইয়া। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। শৈশবের স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আশাকরি আপনার সাহানা বানু আন্টি একদিন আপনার বাড়িতে আসবে। আপনি তার সম্পর্কে যে কথাগুলো বললেন শুনে বোঝা গেল অনেক ভালো একজন মানুষ উনি। বলা যেতেই পারে উনি আপনার অনুপ্রেরণা।।

 2 years ago 

কেমনে ভুলি সেইসব শৈশব স্মৃতি, আত্মারটান তো লেগেই আছে ।

শৈশবের স্মৃতিগুলো কখনো ভোলা যায় না। ভাইয়া আপনার এই লেখাগুলো পড়ে আমিও আমার শৈশবের স্মৃতিগুলোর মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম। কারণ এইরকম স্মৃতি আমার জীবনেও ছিল। আমার এক বান্ধবীর মা টিচার ছিলেন। আর ওদের বাসা ছিল স্কুলের মাঠের পাশে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আমরাও সেখানে গিয়ে অনেক হৈ হুল্লোড় করতাম, লুডু খেলতাম, আড্ডা করতাম। আণ্টি বাসায় আসার আগেই সবাই বিদায় হতাম। যাইহোক ভাইয়া আপনার বন্ধুর পরিবারের সবাই মিলে আপনার বাসায় বেড়াতে আসবে এটা জেনে ভালো লাগলো।

 2 years ago 

আমাদের সবার জীবনে শৈশবের অনেক স্মৃতি আছে। আর শৈশবের বন্ধুগুলো সব সময় প্রকৃত বন্ধুই হয়। কারণ শৈশবে কারো মনে কোন হিংসা বিদ্বেষ থাকে না। আতিফ ভাইয়ার সম্পর্কে এবং উনার মায়ের সম্পর্কে অনেক কথাই জানতে পারলাম। তিনি সত্যি একজন আদর্শ মা। যিনি তার সন্তানদেরকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করেছেন। ভাইয়া আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।♥️♥️

 2 years ago 

এইটা একদম সঠিক কথা যে আন্টি একদম যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন তার জায়গা থেকে ।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার শ্রদ্ধেয় আন্টির অনুপস্থিতে আপনার বন্ধু আতিফকে নিয়ে খুবই মজার সময় কাটিয়েছেন সেটা আপনার পোস্টটি পড়েই বুঝতে পারলাম। আপনার বন্ধু আতিফ এবং আপনার শ্রদ্ধেয় আন্টি যখন আপনার বাসায় বেড়াতে আসবে নিশ্চয়ই আপনার ছোটবেলার কথাগুলো আরো বেশি মনের মধ্যে জেগে উঠবে। প্রিয় ভাইয়া আমি আপনার শ্রদ্ধেয় আন্টির সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করি।

 2 years ago 

হুম কিছু মানুষ জীবনের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে থাকে তাদেরকে ভুলে যাওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে যায় ।

 2 years ago 

জীবনের স্মৃতি জড়ানো বাড়ি আর আপনার প্রিয় আন্টির মাতৃ সুলভ আচরণ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। শিশুকালে যে সকল লোকের সান্নিধ্য পাওয়া যায় তা কখনো ভোলার নয়। দোয়া ও আশীর্বাদ রইল আপনার প্রিয় আন্টি ও বন্ধু আতিফ সহ আপনার বাসায় একসঙ্গে সাক্ষাতের সৌজন্য হয়ে ওঠে। আপনার জন্য মঙ্গল কামনা অবিরাম।

 2 years ago 

এই সত্য যে আন্টির ভূমিকা ছিল আমার শৈশব কালে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেরণা মূলক । কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করছি ভাই ।

 2 years ago 

ছোট বেলার এই ছোট ছোট স্মৃতি গুলো বড় হলে মনের মধ্যে খুব বড় জায়গা করে নেয়।যা হুট করে মনে পরলে ভালো লাগে আবার খারাপ ও লাগে।

 2 years ago 

যথার্থ বলেছেন কিন্ত ম্যাডাম, যেখানে স্মৃতির বিষয় থাকে সেখানে একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতার সঞ্চারণ হয় ।