"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা- ২৩: আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি
আসসালামু আলাইকুম।
সবাই কেমন আছেন ,আশা করি ভালোই আছেন ।আমার বাংলা ব্লগের নিউ মেম্বার হওয়াতে এটাই আমার প্রথম কনটেস্ট প্রতিযোগিতার পোস্ট ।খুবই ভালো লাগছে যে , অতীতের একটি ঘটনা যা আমার হৃদয়ে আজও দাগ কেটে আছে এমন ঘটনা এই প্ল্যাটফর্ম এসে শেয়ার করতে পারছি ,আর তা একমাত্র সম্ভব হয়েছে এই প্লাটফর্মের এডমিন প্যানেলের জন্য ,তাই তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
এই বারের কনটেস্ট-২৩ প্রতিযোগিতায় মূল বিষয় ছিল "স্কুল জীবনে তিক্ত অনুভূতি "তাই আজ আমি সেই তিক্ত অনুভুতি টি প্রকাশ করবো।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্কুল জীবনের সময়কাল ১০ বছর ,আবার অনেকেরক্ষেত্রে ১২ বছর (যারা প্লে /নার্সারি পরে)।তবে আমার স্কুল জীবন ছিল ১০ বছরের ,এই ১০ বছরে আমি মাত্র দুইটি স্কুলে পড়েছি
ক্লাস ওয়ান - ফাইভ এক স্কুল আর ক্লাস সিক্স - টেন পড়েছি হাই স্কুলে যায় নাম ছিলো হাজী মোয়াজ্জেম আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়।আজ এই স্কুলে পাঠদান কালের ই একটা তিক্ত ঘটনা বলবো।
আমি তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ।আমি যেই স্কুলে পরাতম সেখানে দুই শিফটে ক্লাস হতো - মর্নিং শিফট(মেয়েদের জন্য )আর ডে শিফট (ছেলেদের জন্য)। তবে আমি যে সেকশনে ছিলাম তার নাম ছিলো স্পেশাল ব্যাচ ,ঐখানে যাদের রোল ১- ১৫ তাদের অন্যদের থেকে আলাদা করে ক্লাশ নেওয়া হত।যার ফলে এই সেকশনে ছেলে মেয়ে একসাথে ক্লাস করতো সব মিলিয়ে এই সেকশনে ছাত্ৰ- ছাত্রী ছিল ২৫ জন।
দুর্দান্ত পড়াশোনা ,কেউ কারো থেকে কম না মেধায় ,আমাদের একটা খুবই ভালো বৈশিষ্ট্য ছিলো সেটি হলো ছেলে মেয়ে এক সাথে ক্লাস হলেও আমরা কারো সাথে একটুও কথা বলতাম না ,সবার ই খুব ভাব ছিলো ।ছেলে গুলাও খুবই ভালো নম্র স্বভাবের কখনো ঠাট্টা তো দূরের কথা কথাও বলতো না ।শুধু পরীক্ষার খাতা দিলে কথা হতো জাস্ট কে কত নাম্বার পেয়েছে? এই বিষয়টা।
আর আমাদের ক্লাস নিতো স্কুলের সব থেকে কড়া ,রাগি, বাঘ ,অজগরের বংশধর স্যার ম্যাম রা।
আর বাংলা ক্লাস নিত বশির নামের এক স্যার ,যার মধ্যে কোনো রস কষ ছিলো না ,ক্লাশে এসেই কোনো কথা নাই গাইড হাতে নিয়েই বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ধরা শুরু করে দিতো, ১৫০ টা থাকেল তা যেই অবদি শেষ না হবে ধরতেই থাকতো ।
এক বার বশির স্যার এর ক্লাশে একটা ছেলে যার নাম মামুন ও একটা অকাম করে ফেলছিল। ওর অকাম টি ছিলো এমন যে ,ও হাই বেঞ্চে কলম দিয়ে ক্লাশের অন্য এক ছেলে আবিদ তার নাম খোদাই করতেছিল ,জাস্ট এই টুকুই ওর অপরাধ ছিলো ।স্যার এটি দেখা মাত্র তীব্র রেগে গেলো আর ছেলেদের ক্যাপ্টেন কে বলল চারটা বেত একটা সাথে নিয়ে আসতে ।স্যারের এই কথা শুনে ক্লাশ এক প্রকার থমথমে হয়ে গেলো ,আমরা সবাই ভয়ে চুপ করে রইলাম ,কেউ কারো দিকে তাকানোর মতোও সাহস নাই।পরক্ষণে ক্যাপ্টেন মজিদ চারটা বেত নিয়ে আসলো ।স্যার চারটা বেত একটা সাথে করে মামুন কে পুরাই গরু পেটানোর মত মারলো ,আর ওদিকে মামুন বেতের আঘাতে অনেক লাফালাফি করতে ছিলো ,স্যারের বেতের আঘাতে পাশের ক্লাশের ছোট বাচ্চাও চুপ হয়ে গিয়েছিলো।
আর আমরা আমাদের সহপাঠীর আঘাতের দৃশ্য চুপ চাপ দেখে যাচ্ছিলাম ,কারো কিছুই বলার ছিলো না ,স্যার ওকে মারতে ছিলো আর বলতেছিলো প্রেম করস ,এই বয়েসে ,প্রেমিকার নাম খোদাই করে লিখিস,আরো ও অকথ্য বাসায় যা খুশি তা বলতেছিলো।স্যার যখন প্রেমের কথা বলতেছিলো তখন আমাদের মেয়েদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিলো ,আমরা সবাই মনে মনে ভেবে ছিলাম আল্লাহ ও যদি আমার নাম লিখে তাইলে তো এখন আমারও এমন মাইর খেতে হবে ।
আরেকটা কথা ,মামুন আমার খুবই ছোট বেলার বন্ধু ছিলো ,যখন আমি কিন্ডারগার্টেনে পড়ি তখন একই ম্যাম এর কাছে প্রাইভেট পরাতম ।খুবই কাছের বন্ধু ছিল ।ও প্রাইভেটে যাওয়ার আগে আমাদের বাসায় এসে আমাকে নিয়ে যেতো ।বৃষ্টির দিনে ও অনেক বড় একটা ছাতা নিয়ে আসতো ,হটাৎ রাস্তায় ওর খুব হিসি ধরতো তখন আমি ছাতা ধরে রাখতাম আর ও হিসি করতো ।হাহাহা😂
তাই স্যার যখন ওকে মারতে ছিলো ,প্রেমের কথা বলে বলে তখন আমিই বেশি ভয় পাইছিলাম যে ,ওকি আবার আমার নাম ই লিখলো কিনা 😓।তবে হাই স্কুলে উঠে বা একই সেকশনে পড়েও আমরা কথা বলি নাই কখনো।।
স্যার তো ওরে গরুর মত পিটিয়ে ঘন্টা পড়ার সাথে সাথে ক্লাশ থেকে বেরিয়ে গেলো ,মামুনের খুবই খারাপ অবস্থা ,সাদা মুখটা পুরাই লাল হয়ে গেছে 😥।আমরা এমনি সহপাঠী ছিলাম কেউ ই ওর সাথে কথা বলার সাহস টুকু পেলাম না।তারপর মামুন ব্যাগ নিয়ে খোড়াতে খোড়াতে ক্লাশ থেকে বের হয়ে যায় । মজিদ তখন ওর সিটের সামনে যেয়ে দেখে ও কোনো মেয়ের নাম না ,আবিদ এর নামে খোদাই করেছিলো।তখন মজিদ কান্না করে বলে উঠলো আবিদ এর নাম লিখাতে স্যার ওকে এমন মারতে পারলো।পুরো ক্লাশ তখন কেঁদে দিয়েছিলো ।
সেই যে মামুন খোড়াতে খোড়াতে ক্লাশ থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো আর কখনো স্কুলে আসে নি।আর ওর বাবা ও বিচার নিয়ে স্কুলে আসে নি ।
শুনেছিলাম ও আমুলিয়ার একটা স্কুলে ভর্তি হয়েছিলো, তবে এস এস সি পাশ করতে পারি নি।খবুই মেধাবী ছাত্র ছিলো ,শুধু একটা ছোট ভুলের জন্য স্যার ওর সাড়া জীবন নষ্ট করে দিয়েছে ।"একটা সুন্দর ফুলকে আর ফুটতে দিলো না "-বশির স্যার।
এস এস সি পরীক্ষার পর ওর সাথে আমার বেশ কয়েকদিন দেখা হয়েছিল তবে ও কথা বলতে চাই নি পাশ কেটে বা পালিয়ে গেছে হয় লজ্জায় না হয় আমার প্রতি তীব্র ঘৃণায় কেন সেদিন পুরো ক্লাশ ওর হয়ে কথা বললাম না, কেন ওর প্রিয় বন্ধু মজিদ ওকে রক্ষা করতে পারলো না ।
সেই দিনের পর থেকে বশির স্যার কে আমরা ক্লাসের সবাই খুবই ঘৃণা করতাম ।
অনেক বছর আগে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর তিক্ত ঘটনা আজ আমি লিখলাম ,লিখার সময় বুকের ভেতরটা গুমরে খাচ্ছিলো,নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছিলো আর মামুনের সেই বিষণ্ন লাল চেহারা আর প্রতিটা বেত্রাঘাতের ঠাস ঠাস শব্দ আমার দৃষ্টি ঘোলাটে করে দিচ্ছিলো।
আপনার ঘটনা শুরুতে পরে হাসলাম। কারণ স্যার ম্যাম দের সুন্দর নাম দিয়েছেন। আবার মাঝে দিয়ে মামুন ভাই এর মার খাওয়ার কথা শুনে দুঃখ পেলাম। শেষে আবার আপনার ছাতা ধরার কাহিনী শুনে আমি হাসতে হাসতে শেষ।
জি ভাইয়া দুঃখের মাঝে কিছু কিছু মজার ঘটনা শেয়ার করলাম।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য
শিক্ষকদের মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যখন এই ধরনের কাজ করে তখন তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ অনেকটা কমে যায়। শাসনের নামে বাড়াবাড়ি করা কখনোই উচিত নয়। আপনার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা পড়ে বেশ খারাপ লাগলো।
ঠিক বলেছেন ।এই শিক্ষক ই মানুষ গড়ার কারিগর আবার ধ্বংসের ।কিছু কিছু শিক্ষক খুবই বাড়াবাড়ি করে অল্প বিষয় নিয়ে ।ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।