জীবনে প্রথম এক্সিডেন্ট করার ঘটনা

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প পড়ে অনেক কিছু জানার সুযোগ পাবেন। তাহলে চলুন গল্পটা পড়ি এবং জানার সুযোগ করি আমার জীবনের ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনা।

IMG_20240830_111509_460.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

What3words Location


দুর্ঘটনার গল্প:


দুই হাজার সাত সাল। রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট থেকে বড় খালা এবং বড় খালাতো বোন এসেছে নানি বাড়িতে। আমাদের বাসা থেকে নানি বাড়ি ছয় সাত কিলো দূরে। সিন্দুরকোটা গ্রাম। ২০০৬ সালে আমার মেজো মামা আব্বাকে একটি মোবাইল গিফট করেছিল। তখন হাতে গুনে গ্রামে দশ বারোটা মোবাইল হয়েছে কিনা, তার মধ্যে আমাদের একটা। তাই আত্মীয়-স্বজনের খবরা-খবর নিতে অনেকে ফোন দিত আমাদের মোবাইলটাতে। ফোনটা আমার কাছেই থাকতো, রিসিভ করতাম ব্যাক করতাম ইত্যাদি। জানতে পারলাম খালাম্মারা এসেছেন এবং আমাদের ডাকছেন, দুই ভাইকে অনেক দিন দেখেনি। আমাদের বাড়িতে তিনটা ছোট ছোট পুকুর ছিল,তার মধ্যে যে পুকুরটা সর্ব ছোট সেখান থেকে দুই ভাই মাছ ধরলাম। বেশ অনেকগুলো মাছ পেয়েছি। আমার বড় খালা এবং খালাতো বোনটা মাছ অনেক পছন্দ করেন। নানি বাড়িতে যাওয়ার আগেই ভাইয়ের সাথে কি নিয়ে যেন ঝড় ঝগড়া হয়ে গেল। আমি আর ওই দিন গেলাম না। ভাই গিয়েছিলেন ফিরে এসেছিলেন। বড় খালা খুব আফসোস করেছিল আমাকে দেখার জন্য। কারণ আমি যতটা জানি আমার নাম "সুমন" তিনিই রেখেছিলেন। শনি বার বার ফোন করছিলেন আমি কেন যায়নি। আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য মানান দামি টি-শার্ট এনেছিলেন। ইচ্ছা ছিল দুই ভাইয়ের গায়ে পরিয়ে দিবে। কিন্তু সেটা হলো না ভাইয়ের হাতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তারা কয়েকদিনের মধ্যে চলে যাবে, আমি যেন দেখা করতে যায়। এভাবে বারবার বলতে থাকলে। তখন মোবাইলের কল রেট ছিল সাত টাকা মিনিট। এদিকে ফ্লাক্সি দেওয়ার কেমন জায়গা ছিল না। তিন চার দিন পর সেম মাছ ধরা হলো। আবার দুই ভাই প্রস্তুতি নিলাম নানি বাড়ি যাওয়ার জন্য।


বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া সেরে রেডি হয়ে বের হয়ে পড়লাম সাইকেলে চড়ে। তখন সাইকেলটা আমি সিটে চালাচ্ছিলাম ভাই পিছনে বসে। সবে মাত্র বছরখানেক হয়েছে সিটে সাইকেল চালানো শিখেছি। আমরা দুই ভাই একটু দেরিতেই শিখেছিলাম। হাই স্কুলে ওঠার পর সিটে সাইকেল চালানো শেখা আর কি। আমাদের গ্রাম জুগীরগোফা পার হয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রাম শহরাবাড়িয়া, ঠিক সেই গ্রামের দাস পাড়া পার হয়ে শটে রাস্তা তারপর পার্শ্ববর্তী গ্রাম শিমুলতলা রাস্তায় উঠলাম। রাস্তায় উঠে সামনে দেখলাম একটি মহিষের গাড়ি, ধান বোঝাই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি বারবার সাইকেলের বেল দিতে থাকলাম। লক্ষ্য করে দেখলাম বাম সাইডে আমাকে একটু সাইড দিলেন বের হয়ে যাওয়ার। প্রথম সাইকেল চালানো শিখেছি তো জানতাম ডান সাইড দিয়ে বের হতে হয়। যাইহোক বাম সাইড দিয়ে যখন পথ দিলেন তাই বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা। বুঝতে পারছেন গ্রামের রাস্তা চিকন হয়। পিচ ঢালা রাস্তা এগিয়ে যেতে থাকলাম। মহিষের গাড়ি বহন করার মুহূর্তে মহিষ বেশি হেলেদুলে কষ্টের সাথে চলে। তাই বুঝতে আমার একটু অসুবিধা হয়।


গাড়ি অতিক্রম করতেই পিছনে বসে থাকা বড় ভাইয়ের পা বেধে গেল রাস্তার পাশের আকন্দ গাছের সাথে। তাই সে সাথে সাথে সাইকেল থেকে পিছনে পড়ে যাওয়ার মত দাঁড়িয়ে গেছে আর আমার সাইকেলটা জোরে ধাক্কা লেগে পড়ে গেছে মহিষের গাড়ির সামনে। এদিকে আমিও পড়ে গেলাম একদম বাম পাশের মহিষের পায়ের নিচে। মহিষের সামনের দুইটা পার মধ্যে একটি পা আমার বুকের পাশে। আরেকটি পা বুকের উপর খাড়া। এদিকে পড়া মাত্র আমি চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম আতঙ্কে। সাইকেলটা ছিটকে গিয়ে আমার সামনে পড়ে রয়েছে। ততক্ষণে মহিষের গাড়িওয়ালা মহিষের নাকের দড়ি টেনে ধরেছেন। মহিষ যে অবস্থায় এক পা খাড়া করে দাঁড়িয়ে পড়েছিল সেই অবস্থায় পা খাড়া রেখেছে, পা আর ফেলে নাই। মহিষ যদি তার উঁচা করা পা আমার বুকের উপর ফেলে চাপা দিত তাহলে তখনই আমি লাশ। কথায় আছে না "রাখে খোদা, মারে কে" ঠিক তখন আমার সে অবস্থা। মহিষের গাড়িওয়ালা বললো বাবু দ্রুত বের হয়ে পড়ো। আমি দ্রুত বের হয়ে পড়লাম আর ভয় পাচ্ছিলাম আমার হাত পা ভেঙে গেছে কিনা। ভাই পিছনে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। তার কোন সমস্যা হয়নি শুধুমাত্র তার গাছের ডালে পা বেঁধে লেগেছিল। তাই সে পিছনে দাঁড়িয়ে গেছে।


আমি দ্রুত বের হয়ে সাইকেলের কাছে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ততক্ষণে সাইকেল, সাইকেলে বাধানো মাছগুলো সব রাস্তার উপর পড়ে। গাড়িওয়ালা খুব আফসোস করতে থাকলো। বলল আমার জীবনে কোনদিন এমন দুর্ঘটনা হয়নি, আজকে কেন এমন হয়ে গেল। তোমরা যদি একটু সাবধানে আসতে তাহলে তো এমনটা হতো না। আসলে সেখানে কারও দোষ ছিল না। মহিষের গাড়ি সারা রাস্তা জুড়ে চলছে। মহিষ অবুলা প্রাণী। রাস্তার পাশে বন জঙ্গল গাছগাছড়া। সেখানে আমাদেরও দোষ নাই মহিষদেরো দোষ নাই। এটা একটা দুর্ঘটনা। তবে মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে সেই দিন খুব সুন্দর ভাবেই বাঁচিয়ে দিলেন। যদি মহিষ তার উঁচা করা পা টা আমার বুকের উপরে বসিয়ে দিয়ে একটা চাপা দিতেন, তাহলে আজকে আপনারা জানতেন না সুমন বলে কেউ একজন ছিল। যাইহোক এরপর সাইকেল তোলার সাধ্য আমার হলো না। ভাই সাইকেল উঠালেন, মাছ উঠালেন। এরপর সে সাইকেল চালিয়ে আমি পিছনে বসে নানি বাড়ি পৌঁছে গেলাম। ততক্ষণে নানি বাড়ি উপস্থিত হয়ে লক্ষ্য করে দেখলাম আমার হাঁটুতে কয়েক জায়গায় কেটে রক্ত বের হয়েছে। হাতের কয়েক জায়গায় কেটে রক্ত বের হয়েছে। কিন্তু খালা খালাতো বোন কাউকে জানতে দিলাম না, আমার এই অবস্থা হয়েছে। পরবর্তীতে তারা টের পেয়েছিলেন কিন্তু গায়ের রক্ত গোপন করে টিউবওয়েল থেকে ধুয়ে ফেলেছিলাম। আর এভাবেই একটা বিপদজনক রোড দুর্ঘটনা থেকে জীবনে প্রথম বেঁচে গেছি।


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিমহিষের গাড়ি
বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
ঘটনার লোকেশনগাংনী-মেহেরপুর
ব্লগারSumon
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  
 2 days ago 

বেশ বড়সড় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন তো ভাই। তবে কপাল মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। তাই উপরওয়ালাই আপনার জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছেন। তাই আজ আপনি আমাদের সঙ্গে গল্প করতে পারছেন। তবে ছেলেবেলায় সাইকেল দুর্ঘটনার ঘটনা আমি বিভিন্ন সময় শুনেছি। আমিও একবার পড়ে গিয়েছিলাম সাইকেল থেকে। একেবারে নর্দমার ভেতর। সে এক অদ্ভুত কাহিনী ভাই। তবে এবার থেকে সাবধানে চলাফেরা করবেন।