ক্রিয়েটিভ রাইটিংঃ "মধ্যবিত্তের গল্প"❤️
🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001।
হ্যালো বন্ধুরা..........
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি।আজ আমি আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।প্রতি সপ্তাহের মতো আজ আমি একটি ক্রিয়েটিভ রাইটিং পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। লেখালেখি করতে আমি অনেক পছন্দ করি।আমার বাংলা কমিউনিটিতে অনেক সদস্যরাই ক্রিয়েটিভ রাইটিং পোস্ট শেয়ার করে থাকেন।তাদের লেখা পোস্টগুলো পড়তে আমার কাছে অনেক ভালো লাগে এবং আমি নিজে অনেক উৎসাহিত হই। আশা করি আমার লেখা ক্রিয়েটিভ রাইটিং পোস্ট আপনাদের কাছে অনেক ভালো লাগবে। চলুন তাহলে দেখে আসা যাক।
হাঁসফাঁস করা শহরের বুকে এক টুকরো ছোট্ট ফ্ল্যাট। ভোর হতে না হতেই যেন অজানা কোনো অদৃশ্য শাসনে সবাই দৌড়ায়। বাবা অফিসের ব্যাগ গুছিয়ে বের হন, মা রান্নাঘরের ধোঁয়া সামলান, আর ছোট্ট তিতলি স্কুলের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে স্কুলে যায়।বাড়িতে ফ্রিজে রাখা এক টুকরো মাছ নিয়ে মাঝে মাঝে তর্ক হয়। বাবা বলে, মাছটা তিতলির জন্য রাখো,আর মা বলে, তোমার শরীরটা তো ভালো না তুমি খাও। আর তিতলি সেখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে কথা শোনে। এই মধ্যবিত্ত জীবনের হিসেব সে বুঝে গেছে।
পাশের বিল্ডিংয়ের বড় ফ্ল্যাটের জানালায় রোজ দেখে ছোট্ট একটি মেয়ের খেলার সরঞ্জামের সম্ভার। সে হেসে ওঠে, আবার মন খারাপও হয়। সে ভাবে কেন তার জীবনটা এমন। কেন তার মা-বাবাকে এত পরিশ্রম করতে হয়?
মধ্যবিত্তের জীবনে বড় হওয়ার সাথে সাথে নতুন নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। বাবা যখন বললেন, আমার পেনশনের টাকা দিয়ে তোমার পড়াশোনার খরচ চালাবো, তখন তিতলির চোখ ভিজে ওঠে। সে ভাবল, বাবা তার স্বপ্নগুলো বিসর্জন দিয়ে তার জন্য বাঁচেন। আর মা তিনি নিজের শখের চুড়ি বিক্রি করে তিতলির স্কুল ফি মেটান। কিন্তু মুখে হাসি রেখে বলেন, আমার কাছে তো চুড়িগুলো এমনিতেই পুরনো হয়ে গিয়েছিল।তিতলি জানে তাদের ছোট্ট সংসারে সবকিছু ভাগাভাগি করা হয় খাবার, জায়গা, স্বপ্ন, এমনকি হাসি-কান্নাও। তারা বড় কোনো বিলাসিতা চায় না। বরংনছুটির দিনে একসঙ্গে বসে খিচুড়ি খাওয়ার আনন্দেই তাদের পরিবার পূর্ণতা পায়। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে দুঃখ মানেই শক্তি। তারা জানে, ছোট্ট ছোট্ট সুখের খোঁজেই জীবনটা সুন্দর। তিতলির মা-বাবা যখন রাতের খাবার শেষে তাকে গল্প শোনান, তখন তাদের চোখের ক্লান্তি ঢেকে যায় ভালোবাসায়।
তিতলি একদিন বড় হয়ে লিখবে তাদের জীবনের এই গল্প। সে জানে, মধ্যবিত্তের গল্প কেবল কষ্টের নয়, এই গল্পে আছে ত্যাগ, ভালোবাসা আর একে অন্যের জন্য নিঃস্বার্থ লড়াই।সত্যি বলতে, এটাই তো আমাদের জীবনের আসল সৌন্দর্য যেখানে সুখ আর দুঃখ একসঙ্গে বুনে যায় জীবন নামের এই অমূল্য গল্প।
একদিন তিতলি বড় হয়ে সফল হলো। সে প্রথম যে কাজটা করল, তা হলো তার বাবা-মায়ের জন্য নতুন একটা ফ্ল্যাট কিনে দেওয়া। কিন্তু তখনও তাদের গল্পে সেই পুরোনো ফ্ল্যাটের মায়া লেগে রইল। তার বাবা মা বলল জায়গাটা ছোট ছিল ঠিকই, কিন্তু আমাদের ভালোবাসা তো ওই দেয়ালের মধ্যেই গড়ে উঠেছে।
মধ্যবিত্তের জীবনটা হয়তো অনেক সীমাবদ্ধতার, কিন্তু সেখানেই লুকিয়ে থাকে অগণিত গল্প। গল্পগুলো ছোট ছোট ত্যাগের, একে অন্যকে আগলে রাখার, আর অল্পতেই সুখ খুঁজে পাওয়ার। এই জীবন হয়তো খুব সাধারণ, কিন্তু তার মধ্যেই থাকে এক অসাধারণ সৌন্দর্যের ছোঁয়া।যেখানে সীমাবদ্ধতা, সেখানেই প্রকৃত ভালোবাসার আসল ঠিকানা।
মূলভাব:
মধ্যবিত্ত জীবনের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, পারিবারিক ভালোবাসা, ত্যাগ, এবং একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি তাদের জীবনকে অর্থবহ করে তোলে। এই গল্পে ছোট ছোট ত্যাগের মাধ্যমে জীবনের বৃহৎ সৌন্দর্য ও সুখ খুঁজে পাওয়ার বার্তা ফুটে উঠেছে। এটি আমাদের শেখায় যে সত্যিকারের আনন্দ বিলাসিতায় নয়, বরং একে অপরকে আগলে রাখার মধ্যেই নিহিত।
পোস্টের বিষয় | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
---|---|
পোস্টকারী | তানহা তানজিল তরসা |
ডিভাইস | রেডমি নোট ১১ |
লোকেশন | পাবনা |
মধ্যবিত্তের দারুণ চিত্র অংকন করেছেন, আপনার আজকের লিখনিতে আপু। মা রান্নাঘরের ধোঁয়া সামলান একদম বাস্তবস্ত। দারুণ টাচি বাক্য গঠন। বেশ ভালো লেগেছে আপনার লেখাটি। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমার লেখা গল্পটি আপনার কাছে অনেক ভালো লেগেছে জেনে আপু আমি খুবই খুশি হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
মধ্যবিত্তের পরিবারের মানুষের জীবন থাকে খুবই বৈচিত্র্যময়। আর তাদের গল্প গুলো হয় খুবই আবেগঘন এবং কষ্টের। মধ্যবিত্তের জীবনে থাকে সীমাবদ্ধতা তবে তাদের স্বপ্নগুলো থাকে অনেক। যখন স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারে না তখন তারা হতাশা ভুগে। ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর বিষয় উপস্থাপন করার জন্য।
ভাইয়া আপনার মূল্যবান অভিমত ব্যক্ত করে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
মধ্যবিত্ত মানুষদের গল্প পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো। আসলে তারা হয়তো বেশি বিলাস বহুল জীবন যাপন করতে পারে না। কিন্তু কষ্ট করে হলেও পরিবারটাকে ভালো রাখার চেষ্টা করে। আমার কাছে বেশি ভালো লাগে পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যের একে অপরের প্রতি যে ভালোবাসা রয়েছে তা। স্বপ্ন থেকে শুরু করে খাবার সবকিছুই ভাগ করা হয়। এরকম জীবন দেখতে কষ্টের কিন্তু অনেক সুন্দর। তিতলি অবশেষে সফল হয়েছে দেখে ভালো লাগলো। অনেক সুন্দর হয়েছে গল্পটা।
আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
please follow this ,
https://steemit.com/hive-129948/@rex-sumon/very-important
আপু খুব সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন। আপনার গল্পের মাঝে যেনো নিজকে ফিরে পেয়েছিলাম। সত্যিই মধ্যবিত্ত জীবটা হয়তো ছোট কিন্তু তার মধ্যে থাকে ভালোবাসার ছোঁয়া। যেখানে সুখ দুঃখ নিয়েই গড়ে উঠে সুন্দর একটি জীবন। শুধু টাকা পয়সা থাকলেই যে সুখে থাকা যায় তা কিন্তু নয়,টাকা পয়সা ছাড়াও সুন্দর একটি জীবন পাড়ি করা যায়। ধন্যবাদ সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
আমার লেখা গল্পটি আপনার অনেক ভালো লাগার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।