কলমি চর ভ্রমণ || নোয়াখালী

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম

সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আজকে আপনাদের সামনে একটা নতুন ব্লগ নিয়ে হাজির হলাম। আশা করছি ব্লগটি আপনাদের ভালো লাগবে।

IMG-20240618-WA0037.jpg
https://w3w.co/mercies.prematurely.passports

বাসা বসে থাকতে থাকতে যেন একঘেয়েমি আচার-আচরণ চলে আসছে আমার কাছে। এই একঘেয়েমি মনোভাবকে দূর করার জন্য বিনোদনের বিকল্প নেই। তাইতো মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াই মাঝেমধ্যে দূর অজানা কোথাও। আমার কাছে মন ভাল করার একটাই ঔষুধ রয়েছে, তা হচ্ছে ভ্রমণ। ভ্রমণ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। যখনই হাতে সময় থাকে তখনই ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়ি। একঘেয়েমি মনোভাবকে দূর করার মহা ঔষধ হচ্ছে ভ্রমণ। নিত্য নতুন জায়গা আবিষ্কার নেশা আমি ঘুরে বেড়াই এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে। তাই বন্ধুরা মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা ঘুরতে যাব। কিন্তু কোথায় ঘুরতে যাব সেটা নিয়ে হলো বিতর্ক শুরু।

20220504_173703.jpg

প্রথমে আমি উপস্থাপন করলাম। কোন পাহাড়ি অঞ্চলে ঘুরতে যাওয়া যাক। কিন্তু সবাই বলতে লাগলো এই গরমের মধ্যে এত দূর যাওয়া সম্ভব নয়। আমরা কাছে কোথাও ঘুরতে যাব। এখন বেশি দূর যাওয়া যাবেনা। তখন আমিও বললাম ঠিক আছে যদি সবাই সম্মতি দেয় তাহলে আমরা আশেপাশে ঘুরার জন্য বের হব। তখন এটা নিয়ে শুরু হলো মজার ছলে কিছু বিতর্ক। অবশেষে সিদ্ধান্তে আসলাম আমরা। তখন সবার সম্মতিক্রমে আমরা কলমি চর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এটি লোকেশন হচ্ছে নোয়াখালী জেলার মধ্যে। তবে অসাধারণ একটি জায়গা বলে এটি যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। তাই আমি শতভাগ সিদ্ধান্ত দিলাম, আমরা সেখানে যাব।

পরের দিন সকালে বের হলাম কলমি চর যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আমাদের দাগনভঞা থেকে এটা দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হলাম সেখানে। কারন আমরা যেখানে যাই মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে বেশি অভ্যস্ত। আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে নোয়াখালীর কিছু রোড খুবই সরু এবং অনেকটা কাঁচা রাস্তা। তাই সেখানে বড় গাড়ি কিংবা সিএনজি প্রবেশ অনেক কষ্টকর। মোটরসাইকেল হলে যে কোনভাবেই যাওয়া যায়। তাই আমি আশেপাশের এরিয়া হলে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়াটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ ফীল করি। তাইতো এবারও রওনা হলাম মোটরসাইকেল নিয়েই।

IMG-20240618-WA0035.jpg

মোটরসাইকেল দুইটি নিয়ে চারজন রওনা হলাম কলমি চরের উদ্দেশ্যে। অসাধারণ এক মুহূর্ত উপভোগের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। লং জার্নি হওয়ার কয়েকবার যাত্রা বিরতি দিলাম। প্রতি যাত্রা বিরতিতে ছিল ভিন্ন ধরনের খাবার আইটেম। নাস্তার মধ্যে স্পেশালি ছিল, চটপটি। সত্যি কথা বলতে এভাবে লোকালয়ে চটপটি খাওয়ার মজাটাই আলাদা। খুবই ভালো লাগলো রাস্তার পাশে চটপটি খেতে পেরে। খাওয়া শেষ হওয়ার রওনা দিলাম সামনের দিকে। উদ্দেশ্য একটাই যাব কলমি চর। রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। বড় গাড়ি নিয়ে বের হলে যাওয়াটাই সম্ভব ছিল না। রাস্তায় রাস্তায় থামতে হতো আমাদেরকে। হয়তোবা গন্তব্যে পৌঁছাতে হতো গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে।

মোটরসাইকেল বিধায় আমাদের এতটা সমস্যা হয়নি। বাধাঁহীনভাবেই এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। যতই ভিতরে যাচ্ছিলাম রোড়ের কন্ডিশন খারাপই হচ্ছিল। তারপর সব বাঁধা পেরিয়ে পৌঁছলাম গন্তব্যে। গ্রামের দৃশ্যটি এত সুন্দর ছিল যে, মন আকৃষ্ট করে ফেলল। ওইখানে গিয়ে দেখলাম বিশাল চর। নদীতে অসংখ্য মানুষ মাছ ধরতেছে। এটি ভালোলাগার অন্যতম একটি কারণ। অসম্ভব সৌন্দর্যের সমন্বয় যেন এই চরটি ঘটিত হয়েছে। জায়গাটি আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। চারদিকে ঘুরে দেখলাম আর আড্ডা দিলাম।

20220504_181208.jpg

আমরা প্রথমেই নদীর ধারে গেলাম, যা বসার খুব সুন্দর প্লেস রয়েছে। সেখানে গিয়ে মনের আনন্দে বসলাম। এত সুন্দর বাতাস যেটা কল্পনা করা যায় না। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে জায়গাটি। চর আঞ্চল গুলো দেখতে খুবই চমৎকার হয়ে থাকে। যখন জোয়ারের সময় হয় তখন জমিগুলোতে পানি ভরপুর হয়ে থাকে। আমরা যাওয়ার পর সেখানে জোয়ার দেখলাম। জোয়ারের মুহূর্তটা খুবই সুন্দর হয়। এক চমৎকার উপভোগ্য সময় কাটিয়েছি সেখানে। পানির মধ্যে কিছুক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করলাম। জমিনগুলোর মধ্যে পানি অল্প থাকা খুবই মজা লেগেছে।

সেখানে আমরা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অতিবাহিত করলাম। চারদিক ঘুরে দেখলাম এবং গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। মাটির রাস্তা গুলো দেখতে অসাধারণ ছিল। বর্তমানে সচরাচর মাটির রাস্তা দেখা যায় না। কিন্তু আপনি যত গ্রাম অঞ্চলের দিকে যাবেন তত মাটির রাস্তা আপনি দেখতে পাবেন। নোয়াখালীর মধ্যে অসংখ্য জায়গা রয়েছে যেখানে মাটির রাস্তা অনেক বেশি দেখা যায়। অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে ইলেকট্রিসিটি এখনো পৌঁছ হয়নি। আমরা সব শেষ করে আবার রওনা দিলাম মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে।

সেখানে কিছু ব্যক্তির সাথেও খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেল। গ্রামের মানুষ গুলো অনেকটা সাদামাটা হয়ে থাকে। সেখানে এক বাড়িতে গেলাম তারা আমাদেরকে নারিকেলের ডাব খাইতে দিল। টাকা দেওয়ার জন্য অনেক জোরাজুরি করলাম কিন্তু তারা কোনভাবেই টাকা নিল না। অথচ এক একটি ডাবের দাম হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। তারা কোন টাকা না নেওয়া তাদের প্রতি রেস্পেক্ট অনেক বেড়ে গেল। গ্রামের মানুষগুলো সত্যিই ভালো মনের হয়ে থাকে। যাইহোক নির্দিষ্ট সময় শেষ করে সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে আসলাম।

20220504_175444.jpg

20220504_173725.jpg

IMG-20240618-WA0036.jpg

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

1000106788.jpg

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছেন। প্রথমেই সবাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন। আমি তাহেরুল ইসলাম, আমার স্টিমিট ইউজার আইডি হল - @ti-taher। আমি ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেছি। বর্তমানে ফেনী শহরে অবস্থান করছি। আমি ফেনীতে পড়াশোনা করেছি এবং বড় হয়েছি। আমি একজন ভ্রমণপ্রিয় মানুষ, আমি ভ্রমণ করতে এবং ছবি তুলতে ভালোবাসি। নতুন জায়গায় ঘুরতে আগ্রহী, নতুন জায়গায় ঘুরতে এবং নতুন কিছু আবিষ্কার করতে ভালোবাসি। আমি বই পড়তেও ভালোবাসি, অনেকে আমাকে বই পোকাও বলে থাকে। আমি কবিতা, গল্প, উপন্যাস এবং বৈজ্ঞানিক বই সহ সব ধরনের বই পড়তে পছন্দ করি। আমার প্রিয় কবি "কাজী নজরুল ইসলাম"। প্রিয় কবিতা "বিদ্রোহী"।(ফি আমানিল্লাহ)


VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_proxy_vote.png

Sort:  
 6 months ago 

বাহ্ বেশ দারুণ সময় কাটিয়েছেন কলমি চরে। ভালো লাগলো ব্লগটি। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

 6 months ago 

কলমি চরে দারুন কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছেন আপনি। জায়গাটা বেশ সুন্দর এবং শান্ত একটা পরিবেশ। আপনারা পাঁচ ঘন্টা সেখানে ছিলেন জেনে ভালো লাগলো। মাটির রাস্তা কখনো দেখা হয়নি। যাইহোক মুহূর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 6 months ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্টটি পড়ে আপনার মূল্যবান মন্তব্য দেয়ার জন্য। সত্যিই খুব শান্তসৃষ্ট একটি পরিবেশ ছিল। সেখানে ঘুরতে গিয়ে খুবই ভালো লাগলো।

 6 months ago 

নোয়াখালীর এই চরটির নাম শুনেছি।আজকে আপনার পোস্টটির মাধ্যমে দেখতে পেলাম।চর এলাকা হিসেবে পরিচিত এই নোয়াখালী।আমার খুব ইচ্ছা একদিন যাব সবগুলো চর ভিজিট করতে।বেশ সুন্দর সময় করিয়েছেন ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 6 months ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার পোস্টটি পড়ে সুন্দরভাবে কমেন্ট করার জন্য। নোয়াখালী জুড়ে অসংখ্য চর রয়েছে। সবগুলো চর ঘুরে দেখতে গেলে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।

 6 months ago 

কলমি চর জায়গাটার নাম প্রথম শুনলাম। আপনাদের এখান থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে হলে মোটামুটি ভালোই সময় লেগেছে যেতে। তবে জায়গাটা দেখে আমিও মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আরো বেশি মুগ্ধ হয়ে গেলাম গ্রামের সাদামাটা মানুষগুলোর আপ্যায়ন দেখে। তারা আপনাদেরকে তাদের নিজের গাছের ডাব খাইতে দিলো। তারা ইচ্ছা করলে টাকা নিতে পারতো,কিন্তু তারা আপনাদেরকে অতিথি হিসেবে আপ্যায়ন করেছে। আপনার কলমি চর ভ্রমণের অনুভূতি পড়ে আমার কাছেও খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 6 months ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার পোস্টটি পড়ে সুন্দরভাবে মন্তব্য করার জন্য। গ্রাম বাংলার মানুষেরা অনেকটা ভালো মনের মানুষ হয়ে থাকে। নোয়াখালীর মানুষগুলো খুবই আপ্যায়ন প্রিয় হয়, সেটির বাস্তব প্রমাণ মিলেছে আমাদের সাথে।

 6 months ago 

নোয়াখালীর এই সুন্দর স্থানে ভ্রমণ করেছেন দেখে খুবই ভালো লাগছে৷ খুব সুন্দরভাবে আপনি ফটোগ্রাফির মাধ্যমে এখানে সবকিছু ফুটিয়ে তুলেছেন এবং খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা দিয়েছেন৷ এখানে আপনি খুব সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছেন যা আপনার পোস্ট দেখে বুঝতে পারলাম৷ অসংখ্য ধন্যবাদ৷

 6 months ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ার জন্য এবং আপনার মূল্যবান মন্তব্য উপস্থাপন করার জন্য। দৃশ্যটি অনেক সুন্দর এবং আরামদায়ক ছিল। প্রাকৃতিক দৃশ্যে অপরূপ সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে চারদিকে। সময় সুযোগ হলে অবশ্যই সেখান থেকে ঘুরে আসবেন।