আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা- ৬৫ ; দুরকমের ঝাল ঝাল ডাল ফারা পিঠা
হ্যাল্লো বন্ধুরা
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমি মহান সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদে পরিবারসহ যেমন আছি, বেশ ভালোই আছি। আজ আবারো আপনাদের সামনে হাজির হলাম নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। এর মাধ্যমে আজ আমি কমিউনিটিতে চলমান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চলেছি। আশা করবো আজকের পোষ্ট টি আপনাদের ভালো লাগবে। এবং আপনারা আপনাদের মূল্যবান মতামত শেয়ার করবেন।
শীতের সাথে পিঠে-পুলির যেনো একদম ওতোপ্রোতো সম্পর্ক! কারণ এই সময়টায় সবার ঘরে ঘরে নতুন ফসল ঘরে ঢুকে! যুগের পর যুগ ধরেই সেই নতুন চালের গুড়া আর সাথে সীজনের খেজুর গুড় দিয়ে নানা রকমের ঐতিহ্য বাহী পিঠে পুলি বানানো হয় এই সময়টাতে। তবে তার পাশাপাশি নানা রকমের ঝাল পিঠাও কিন্তু আমাদের ঐতিহ্যের সাথেই মিশে আছে! আজ তেমন ই একটা পিঠের রেসিপি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি। পিঠার নাম- ডালের ঝাল ফারা পিঠে। অনেক জায়গায় এটা আবার চালের ফারা পিঠে নামেও পরিচিত ( কারণ চালের গুড়ার বদলে আগের দিনের রয়ে যাওয়া ভাত দিয়েও এই পিঠা বানানো যায়)। এই পিঠা টা মূলত ভারতে উত্তর প্রদেশ এবং বিহারীদের ঐতিহ্যবাহি একটি পিঠা। ঝাল পিঠা আমাদের বাসায় সেভাবে খাওয়া হয় না বললেই চলে। কি পিঠা বানাবো চিন্তা করতে করতে মনে পড়লো আমার মা-বাবা উত্তর প্রদেশে বেড়াতে গিয়ে এই পিঠা খেয়ে আমার কাছে গল্প করেছিলো। তাই এবার একটু অন্যরকম এই পিঠাটিই বানালাম সাহস করে৷ কষ্ট স্বার্থক তো তখন ই হয় যখন খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যায়। আর সেটিই হয়েছে এই পিঠাটি খেয়ে। আমি এই পিঠাটি দুইভাবে করেছি। দুইভাবেই জমে গেছে পুরো!! দেখতে যেমন তেমন, খেতে ফাটাফাটি!! তার উপর আমার নিজেরও ফটোগ্রাফিতে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে বলে পিঠার ছবি তুলার ক্ষেত্রে আমি খুব একটা সুবিচার করতে পারি নি বোধ হয়!
এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ-
উপকরণ | পরিমাণ |
---|---|
চালের গুড়া | ১ কাপ |
মিক্স ডাল ( মুগ, মসুর, মাসকলাই, অরহর) | ১ কাপ |
রসুন | বড় ৫ কোয়া |
আদা | ১ ইঞ্চি |
পেয়াজ | মাঝারি ২ টি |
কাচাঁমরিচ | ঝাল অনুযায়ী ৫/৬ টি |
লবণ | স্বাদ মতো |
হলুদ | পরিমাণ মতো |
মরিচ গুড়া, জিরে গুড়া | হাফ চামচ মতোন |
গরম মসলা গুড়া, ধনিয়া গুড়া | হাফ চামচ মতোন |
গোটা জিরা, সাদা তিল, সরিষা | সামান্য পরিমাণ |
ধনিয়া পাতা | পরিমাণ মতো |
সয়াবিন তেল | পরিমাণ মতো |
রন্ধনপ্রণালীঃ
ধাপ-১ :
প্রথমেই আমি চার রকমের ডাল সমপরিমাণে নিয়েছি৷ এখানে মুগ ডাল, মসুর ডাল, মাসকলাই ডাল এবং অরহর ডাল একসাথে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে ৫ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখেছি। এতে ডালগুলো বেশ ফুলে টইটুম্বুর হয়ে উঠেছে।
ধাপ-২ :
এবার একটা প্যানে দেড় কাপ পানিতে হালকা সয়াবিন তেল এবং লবণ দিয়ে ফুটতে দিবো। পানি গরম হয়ে এলে চালের গুড়া দিয়ে ভালো করে মেখে নিবো। জল শুকিয়ে এলে ঢাকনা দিয়ে ১০ মিনিটের মতো রেস্টে রেখে দিবো। তারপর ভালো করে হাত দিয়ে মথে মেখে নিবো।
ধাপ-৩:
এখন ভেজানো মিক্স ডাল, পেয়াজ, আদা, কাচা মরিচ, রসুন মিক্সারে নিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিবো।
ধাপ-৪ :
এখন একটি বাটিতে ব্লেন্ড করা ডাল নিয়ে তার মাঝে লবণ এবং সমস্ত গুড়া মসলা গুলো দিয়ে ভালো করে মেখে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিবো।
ধাপ-৫ :
এই ধাপে চালের গুড়ার লেচি তৈরি করে নিবো। আমার প্রায় ব্যাচেলর বাসায় চাকতি- বেলন না থাকায় আমি স্টিলের গ্লাস দিয়েই কাজ সেরে নিয়েছি 😅। সবগুলো লেচি স্টিলের গ্লাস দিয়ে মাপমতো কেটে নিয়েছি। এরপর সবগুলোতে ডালের মিশ্রণ টা দিয়ে আটকে দিয়েছি ছবির মতোন।
ধাপ-৬ :
সবগুলোতে পুর দেয়া কমপ্লিট হয়ে গেলে আমি ১৫ মিনিট করে স্টীম করে নিয়েছি। স্টীম হয়ে গেলে পিঠাগুলো কেটে নিয়েছি। এবারে এক ধরনের পিঠা রেডি ( স্টীম ডাল ঝাল ফারা)!
ধাপ-৭ :
এই ধাপে একটি প্যানে কিছুটা ঘি দিয়ে গরম করে নিয়েছি। ঘি তে সামান্য সরিষা, সাদা তিল এবং ধনিয়াপাতা দিয়ে ফোড়ন দিয়ে পিঠা গুলো দিয়ে এপিঠ ওপিঠ ভালো করে ভেজে নিয়েছি। ব্যাস, ভীষণ অন্যরিকম স্বাদের ফ্রাইড ঝাল ডাল ফারা পিঠাও তৈরি হয়ে গেলো! ঘি এ ভাজা পিঠে সাথে প্রতি বাইট এ তিল, সরিষা, ধনিয়াপাতার স্বাদ, এ স্বাদ আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতোন না! আপনারাও একবার বানিয়ে খেলে ফ্যান হয়ে যাবেন নিশ্চিত!!
পরিবেশনঃ
এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে 🌼 ধন্যবাদ 🌼
আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শিক্ষাগত যোগ্যতা : একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।
বেশ অন্য রকম একটি পিঠার রেসিপি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেছেন। এই পিঠা আমি দেখেছি বলে মনে হয়। আজই প্রথম দেখলাম। শেষে ভাঁজার কারনে পিঠাটি খেতে বেশ মজা লাগবে মনে হচ্ছে।অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
@tipu curate
;) Holisss...
--
This is a manual curation from the @tipU Curation Project.
Upvoted 👌 (Mana: 6/8) Get profit votes with @tipU :)
এই পিঠা আমাদের দেশে বিহার ইউপির লোকেরা খুবই বানায় তবে প্রসেসটা একটু আলাদা৷ একদিন বানিয়ে দেখাব৷ আপনার টাও দারুণ৷ সফট হয়েছে নিশ্চই৷ চালের স্টার ডো ভাপিয়ে নিলে নরমই হবে৷ তবে অনেক রকমের ডাল থাকার ফলে প্রোটিনের ভাগ বেশি। তাই অল্পেই পেট ভরে যাবে৷ ঠিক বলছি তো?
আসলেই তাই দিদিভাই। অল্পেই পেট ভরে যায়। এই পিঠা খেয়ে রাতে আর ভাত খাওয়া হয় নি 😅। আপনার থেকেও সেই রেসিপি দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
আপু আপনাকে সর্বপ্রথম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা- ৬৫,তে ইউনিক একটি রেসিপি উপস্থাপন করার জন্য। আপনি অনেক সময় নিয়ে ধৈর্যের সাথে যত্ন সহকারে খুবই লোভনীয় একটি রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন যা দেখে আমার খুবই ভালো লাগলো। আসলে শীত মানেই পিঠা পুলির সমরহ। আর শীতের বিকেলগুলোতে এ ধরনের ভাজি করা পিঠা খেতে খুবই ভালো লাগে। তাছাড়া আপনার রন্ধন প্রণালী এবং পরিবেশন দেখে মনে হচ্ছে রেসিপিটা অনেক সুস্বাদু হয়েছিল। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু দুরকমের ঝাল ঝাল ডাল ফারা পিঠা রেসিপি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য।
রেসিপি টা আসলেই বেশ মজা লেগেছে গরম গরম খেতে। এই পিঠে খেয়ে রাতে আর ভাত খেতে পারি নি! যেমন মজাদার, তেমন ই পেট ও ভরায়! ধন্যবাদ ভাই।
আসলে একটা কথা বলতে কি দাদার এই পিঠা কনটেস্টের জন্য কিন্তু পরিবারের লোকেদের একটু উপকার হচ্ছে। কেননা তারা বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু পিঠা খেতে পারছে এবং দারুন দারুন ডিজাইনের পিঠা তারা কিন্তু দেখতে পাচ্ছে। আর এই রেসিপি আমার কাছে সম্পূর্ণ একটা নতুন পিঠার রেসিপি।
তা তো ঠিকই। এখানে সকলেরই এত ক্রিয়েটিভিটি!! আমরা সকলের বেশ উপকৃত হই কমিউনিটির যে কোনো রেসিপি প্রতিযোগিতার ফলে 😋😋
অনেক মজাদার পিঠা তৈরি করেছেন দেখছি। আপনার এই পিঠাগুলো কিন্তু অনেক ইউনিক ছিল। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে দেখে। এই পিঠা কখনোই খাওয়া হয়নি এমনকি নামটাও জানতাম না। এত মজাদার পিঠা তৈরি করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলেন এজন্য ধন্যবাদ।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রথমে আপনাকে জানাই আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনি খুবই সুন্দর ভাবে আজকে আমাদের মাঝে দুরকমের ঝাল ঝাল ডাল ফারা পিঠা রেসিপি তৈরি করে শেয়ার করেছেন। আপনার তৈরি রেসিপি দেখে সত্যি জিভে জল সামলে রাখতে পারছিনা আপু। এত সুন্দর ভাবে রেসিপি তৈরীর পদ্ধতি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দেখতে পেয়ে অনেক ভালো লাগলো। খুবই সুস্বাদু এবং ইউনিক একটা রেসিপি আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন। আপনার রেসিপি ধাপগুলো দেখে ভালো লাগলো। রেসিপিটি আমার কাছে ইউনিক লেগেছে।
আপনার সুন্দর গঠনমূলক মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ রায়হান ভাই।
আজকে আপনি এতটা মজাদার ভাবে ঝাল ঝাল ফারা পিঠা তৈরি করেছেন দেখে ভালো লাগলো। পিঠা একটু ঝাল ঝাল হলে আমার কাছে খেতে অনেক বেশি ভালো লাগে। দেখে তো মনে হচ্ছে এই পিঠা খেতে অনেক বেশি ভালো লেগেছিল। অনেক মজাদার ভাবে পিঠা তৈরি করে অংশগ্রহণ করলেন। আপনার অংশগ্রহণ দেখে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।