কনটেস্ট-বৃষ্টির দিনে আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটি স্মরণীয় ঘটনা||
প্রিয় ব্লগার বৃন্দ,
বৃষ্টির দিন নিয়ে যত কথাই বলি না কেন তা কম হয়ে যায়। বৃষ্টি পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কম আছে। আমরা কমবেশি সবাই বৃষ্টিতে ভিজতে কিংবা বৃষ্টি দেখতে খুব পছন্দ করি। বৃষ্টির দিনে বিভিন্ন রকমের পুরনো স্মৃতি আমাদের মনে পড়ে যায়। কারো কাছে এই বৃষ্টির দিনের অনুভূতিটা অনেক ভালোলাগার আবার ,কারো কাছে মন খারাপের কারণ হয়ে যায়। বাঙালিরা বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে সবসময়ই পছন্দ করে। তবে গ্রামের মানুষরা বৃষ্টির দিনে চাউল ভাজা খেতেও খুব পছন্দ করে। প্রচুর বৃষ্টিতে গ্রামের নদী পুকুর ও চাষের জমি গুলো পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় । বৃষ্টি আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এখনো পর্যন্ত বৃষ্টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গান গেয়েছেন সঙ্গীতশিল্পীরা। তাই বৃষ্টির অনুভূতিটা হয়তো সকলের কাছেই এখনো পর্যন্ত এক অন্যরকম ভালোলাগা।
আমার কাছে বৃষ্টি মানে অন্যরকম এক ভালোলাগা। আমার কাছে বৃষ্টি মানে প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি। বৃষ্টিতে ভিজতে আমার অনেক ভালো লাগে। বৃষ্টির দিন মানেই বাসায় সবাই মিলে এক জায়গায় বসে কিছু গল্প কিছু আড্ডা। কখনো কখনো বৃষ্টির দিনগুলোতে বাসায় সবাই মিলে বসে লুডু খেলা হয়। বৃষ্টির দিনে গরম গরম খিচুড়ি খেতে আমার অনেক ভালো লাগে। বৃষ্টির দিনে মনে পড়ে যায় শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা।যখন ,বাসায় বকুনি খাওয়ার পরেও বারবার বৃষ্টিতে ভিজতে যেতাম কিংবা স্কুল থেকে আসার পথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতাম। আবার রাস্তার কাঁদা গায়ে ও কাপড়ে মাখিয়ে এসে বাসায় বলতাম 'পড়ে গেছিলাম'। শিলা বৃষ্টি হলে শিলা কুড়িয়ে জমা করে রাখতাম। পুকুরে একসাথে সবাই মিলে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গোসল করা আর সাঁতার কাটা। সবকিছুই মনে পড়লে যেন অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করে। বৃষ্টির দিনের এই সব স্মৃতি কখনো ভুলবার মতো না।
বৃষ্টির দিনে গ্রামের মানুষগুলোর তাদের গৃহপালিত পশু গুলোকে বাইরে থেকে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য অন্যরকম এক ব্যস্ততা শুরু হয়। অনেকেই বৃষ্টির দিনে মাছ ধরতে বের হয়। বৃষ্টির কথা মনে পড়লেই,টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার সেই শব্দ এখনো কানে বাজে। বৃষ্টির এসব ভালোলাগার দিনের পাশাপাশি কিছু খারাপ লাগা দিন আছে। আজকে আপনাদের সাথে যে ঘটনাটি শেয়ার করব সেটিও আমার জীবনের বৃষ্টির দিনে ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনা। যা আমি কখনোই ভুলতে পারিনা। চলুন সেই ঘটনায় ফিরে যাওয়া যাক।
ঘটনাটি ২০১৯ সালের। সে বারে আমি এস .এস. সি পরীক্ষার পরীক্ষার্থী ছিলাম। আমাদের গ্রামের সামনের বড় রাস্তাটি পাকা করার জন্য সম্পূর্ণ রাস্তাটির মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছিল। দিনটি ছিল ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখ ২০১৯ সাল। ঘটনাটি শনিবারের। সেদিন আমাদের গণিত পরীক্ষা ছিল। গণিত পরীক্ষার দিনগুলোতে প্রতিটা স্টুডেন্ট একটু অন্যরকম টেনশনে থাকে। আমরাও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। বাসায় ঠিকমতো প্রিপারেশন নিয়েও একটা দুশ্চিন্তা মনের মধ্যে কাজ করছিল। আমরা আমাদের গ্রাম থেকে একসাথে সাত জন পরীক্ষা দিয়েছিলাম। সেদিন সকাল থেকে আকাশটা অনেক মেঘলা ছিল। তারপরেও পরীক্ষা তো দিতে যেতেই হবে। সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সাতজন। প্রায় হাফ কিলো রাস্তা যেতে না যেতেই শুরু হয়ে গেল প্রচন্ড বৃষ্টি। শুধু বৃষ্টি নয়, প্রচন্ড বাতাস ও শিলা বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন। রাস্তায় সেখানে লুকানোর মতো কোন জায়গাও ছিল না। একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে একটা দোকান ঘর ছিল। সেখানে যাবার জন্য সাইকেল চালানো সম্ভব হচ্ছিল না কারণ প্রচন্ড পরিমাণে শিলা বৃষ্টি আর বাতাস হচ্ছিল। আমরা সাইকেলগুলো সেখানেই রেখে দৌড়ে সেই দোকান ঘরে গিয়ে লুকাই। ইতিমধ্যে চারপাশে শিলা বৃষ্টির কারণে অনেক শিলা জমে গেছে। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কোন উপায়ও ছিল না। কিছুক্ষণ পরেই এই তুমুল বৃষ্টিতেও আমার বাবা ও দুইজন চাচা ছাতা নিয়ে এগিয়ে যায়। একটু অপেক্ষা করার পর বৃষ্টিটা যখন কমে গেল আমরা সাইকেল গুলো রেখেই হাঁটা শুরু করলাম। তখনো বৃষ্টি সম্পূর্ণভাবে থামেনি। এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে তিন কিলো রাস্তা চলে গেলাম। পরীক্ষার হলে ঢুকতে না ঢুকতেই আমি সম্পূর্ণ মানুষটা বৃষ্টির কারণে ভিজে গেছিলাম। ওদের কাছে ছাতা ছিল তাই ওরা খুব একটা ভেজেনি।পরীক্ষার হলে গিয়ে শুনি বৃষ্টির কারণে পরীক্ষা আরো আধ ঘন্টা সময় পিছিয়ে দিয়েছে। আধা ঘন্টা পর পরীক্ষা শুরু হলো ইতিমধ্যে আমার প্রচন্ড জ্বর শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় লিখতে খুব সমস্যা হচ্ছিল এবং একজন স্যার বিষয়টি বুঝতে পারেন। স্যার আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলে আমি কি বলবো বুঝতে পারতেছিলাম না। তারপর আমার সামনের বেঞ্চে বসা আমার বান্ধবী স্যারকে বলে দেয় যে আমার খুব জ্বর আসছে। স্যার সেখান থেকে মেডিকেল রুমে নিয়ে গেলেন ।জ্বর মেপে দেখে ১০৩ ডিগ্রি জ্বর । তৎক্ষণাৎ ওষুধ এনে দেয়। ওষুধ খেয়ে পরীক্ষার খাতায় আবার লিখতে শুরু করি। সবকিছু কেমন যেন অগোছালো লাগছিল। সেদিন এই জ্বরের কারণেই আমার পরীক্ষাটি খারাপ হয়েছিল। আমি ৮ নম্বর অ্যানসার করতেই পারিনি। ফলে আমার রেজাল্টের দিন দেখি আমার গণিতে B এসেছে। মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় সেদিন। পরে বারবার মনে হচ্ছিল- হয়তো যদি সেদিন আকাশটা এরকম না থাকত ! আমি বৃষ্টিতে ভিজে না যেতাম ! তাহলে আমার পরীক্ষাটা ভালো হতো।
এই ছিল বৃষ্টির দিনে আমার সাথে ঘটে যাওয়া এক স্মরণীয় ঘটনা। যা মাঝে মাঝে আমার মন খারাপের কারণ হয়ে যায়। যে ঘটনাটি হয়তো আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। যাক ঘটনাটা অনেকদিন পর আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম।
আশা করি, আমার পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন । সকলে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আপনাদের কাছে আমার আজকের শেয়ার করা সম্পূর্ণ আলোচনা কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদান্তে,
প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করার জন্য আমি আমন্ত্রণ জানাচ্ছি-@nobelbro,@luckoni,@surinadewi
ডিভাইস Redmi Note 11 ফটোগ্রাফার @rumana12 লোকেশন দিনাজপুর
@rumana12
You can also vote for @bangla.witness witnesses
https://twitter.com/rumana4102/status/1694223204708172129?t=_78y8vJU9G-2qB9ot2RpwA&s=19
বৃষ্টিতে ভিজতে কার না ভালো লাগে। আমার ও বৃষ্টিতে ভিজতে অনেক ভালো লাগে। বৃষ্টির দিনে আম কুড়ানোর মজাটাই আলাদা রকম। তবে আপনার ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আসলেই বেদনাদায়ক। আর পরীক্ষা খারাপ হলেও পরীক্ষা পাশ করছেন। এটাই আপনার জন্য অনেক পাওয়া। আল্লাহ তায়ালা যা ভালো মনে করেন তিনি তাই করেন।। সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করছেন।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
পৃথিবীর সব ধরনের মানুষ বৃষ্টি খুবই পছন্দ করেন। বিশেষ করে কিশোররা বৃষ্টির পানি বেশি পছন্দ করেন। আমরাও হিসেবে বৃষ্টিতে অনেক খেলাধুলা এবং গোসল করেছিলাম। সেগুলো এখন স্মৃতি হয়ে পড়ে রয়েছে। তবে আপু আপনার বৃষ্টির দিনের ঘটনাটা শুনে খুবই খারাপ লাগলো। অনেক দুঃখজনক একটি ঘটনা। যাইহোক অনেক সুন্দর একটি পোস্ট লিখেছেন আপু। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার পুরা পোস্টটি আমি পড়লাম। প্রথমেই আপনার ফটোগ্রাফির প্রশংসা করতে হয়। আপনি অনেক সুন্দর ছবি তোলেন। পরিক্ষায় লেট করে যাওয়া এমনিতেই অনেক অনেক খারাপ একটি প্রভাব ফেলে নিজের উপরে। তার পরে আবার বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর চলে আসছে। পড়ার পরেই আমা গাঁ ঝিমাচ্ছে আপু। প্রতিযোগিতায় আপনার জন্য শুভকামনা রইলো আশা করি ভালো কিছু হবে।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
বাহ চমৎকার উপস্থাপন করছেন আপু। আপনি সাইকেল চালাতে পারেন? আপনার বান্ধবীরা মিলে সেদিন সাইকেল চালিয়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন। বৃষ্টি হওয়ার কারণে সাইকেল রেখে পরীক্ষা দিতে চলে যান। ১০৩ ডিগ্রী জ্বর নিয়ে ঔষধ খেয়ে তৎক্ষণিক পরীক্ষা দিয়েছেন, শুনে অবাক হলাম। তারপরও সেই সাবজেক্টে আপনি B পেয়ে পাশ করেছেন, আপনার স্মরণীয় দিনটি আমি সম্পূর্ণ পড়লাম। প্রতিযোগিতার জন্য শুভকামনা রইলো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। দারুন ফটোগ্রাফি করেছেন
জ্বি ভাই পারি।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক। বৃষ্টি একেকজনের জীবনে একেক ভাবে চলে আসে। এটি কারো উপকার করে। আবার কারো ক্ষতি করে। আপনার ঘটনাটি শুনে খুবই খারাপ লাগলো। আপনি ছবিগুলো দারুন তুলেছেন। অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।
আমার ও একবার পরীক্ষার সময় প্রচন্ড জোরে পানি হয়েছিল। সকালে উঠে ভিজে ভিজে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম।সেই কথা মনে পড়লে আজ ও অনেক কষ্ট লাগে।যাই হোক
ফটোগ্রাফি গুলো কিন্তু আপনি অনেক সুন্দর তুলেছেন।অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন আপনি। ধন্যবাদ আপনাকে
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
বাহ্! আপনি অসাধারণ লেখছেন আপু।বৃষ্টিতে ভিজতে কার না ভালো লাগে।আমরা কম বেশি সবাই বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো বাসি।আমিও বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভালো বাসি। তবে আপনার স্বরনীয় ঘটনাটি অনেক বেদনাদায়ক।তবে আমার কাছে এটাই আপনার জন্য ভালো ছিল। আপনি যেখানে B পাইছেন।সেখানে যদি ফেল আসতো তাহলে বিষয়টা অন্যরকম হয়ে যেত।আপনি সব কিছু সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন আপু।আপনার তোলা ফটোগ্রাফি দারুণ হয়েছে। আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।