আশা করি ,মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভাল আছেন।আমিও ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ। আমি
@rumana12 আজকে আমি স্টিম ফর ট্রাডিশন কর্তৃক আয়োজিত কনটেস্টে অংশগ্রহণ করব। আজকের প্রতিযোগিতার বিষয় হল -
আমাদের এলাকার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার ,যা আমাদের এলাকাকে প্রসিদ্ধ করে তুলেছে।
চলুন শুরু করা যাক ,আজকের প্রতিযোগিতার উপর ভিত্তি করে নির্মিত আমার এলাকার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার যা আমার এলাকাকে প্রসিদ্ধ করে তুলেছে।
উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার "সিদল" । |
উত্তরবঙ্গে দিনাজপুর জেলার মানুষের কাছে সিদল একটি জনপ্রিয় খাবার। দিনাজপুর জেলায় বসবাস করে এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম পাবেন যারা এখনো অব্দি সিদল খায়নি বা এর সম্পর্কে জানে না। এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। যা উত্তরবঙ্গের মানুষ বহুদিন ধরে বাড়িতেই বানিয়ে সংগ্রহ করে এবং রান্না করে খায়। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে একটা সময় সিদল তৈরির ধুম পড়ে যায়। এটি অনেক মজাদার ও মুখরোচক একটি খাবার।
|
উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী খাবার সিদল এর প্রস্তুত প্রণালী। |
|
ঐতিহ্যবাহী খাবার "সিদল"তৈরি প্রধান উপাদান হচ্ছে কচু শাক। প্রথমেই কচুশাকগুলো সংগ্রহ করে সুন্দর মত ধুয়ে ফেলা হয় ।এবং বাছাই করে ভালো কচুগুলো সংগ্রহ করা হয়। তারপর সেগুলোকে কেটে ছোট করা হয় এবং রোদে একটু শুকাতে দেওয়া হয়। সারাদিন রোদ পাওয়ার পর সেই কচুগুলোকে সংগ্রহ করে রাখা হয় এবং পরের দিন সকালবেলা কচু শাকগুলো বাটা হয়। যেন কচুশাকটি একটি মিহি আকার ধারণ করে। অতঃপর অন্যান্য সব উপাদান যেমন-শুটকি মাছ ,জিরা মসলা ভেজে নেওয়া হয় এবং বাকি উপাদান হিসেবে রসুন ও ধুনিয়া সহ সব উপাদান আলাদা আলাদা করে সুন্দর ভাবে মিহি আকারে বেটে নেওয়া হয়। এরপর সব উপাদান গুলোকে একত্রিত করে সুন্দর করে মিশ্রিত করা হয়। মিশ্রিত করার পর নির্দিষ্ট আকার অনুযায়ী তৈরি করা হয় এক একটি সিদল। মাছি বা অন্যান্য কীটপতঙ্গের হাত থেকে বাঁচাতে এর উপরে সরিষার তেল এবং হলুদের একটি লেপ দেয়া হয়। সবশেষে সিদলগুলো রোদে শুকিয়ে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা যায় বহুদিন।
রান্নার প্রয়োজনীয় উপকরণ |
সিদল | ১টা |
মাছ | হাফ কেজি |
পেঁয়াজকুচি | পরিমাণ মতো |
মরিচ বাটা | পরিমাণ মতো |
আদা বাটা | পরিমাণ মতো |
রসুন কুচি | পরিমাণ মতো |
লবণ | পরিমাণ মতো |
হলুদ | পরিমাণ মতো |
ভাজা মসলা | পরিমাণ মতো |
তেল | পরিমাণ মতো |
অন্যান্য মসলা | প্রয়োজন অনুযায়ী |
চলুন তাহলে এবার দেখে আসি রান্নার ধাপগুলো-
- প্রথমেই সংরক্ষিত সিদলটিকে আগুনে একটু ঝলসে নেয়া হয়। যেন সংরক্ষণ থাকা অবস্থায় একটু স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়া ভাব না থাকে।
- এবার ঝলসানো সিদলটিকে ভালোভাবে পানিতে ভিজিয়ে দিতে হবে। যেন সিদলটিতে শক্ত কোন অংশ না থাকে এবং পুনরায় সেই মিহি দানাটি ফিরে পাওয়া যায়।
- এবার তৃতীয় ধাপে প্রায় আধাঘন্টা পর ভিজিয়ে রাখা সিদলটি থেকে পানি গুলো ফেলে দিয়ে অন্য বাটিতে নিয়ে হাত দিয়ে সিদলটি ভাঙ্গা হয়। এভাবে প্রথম এর মত পুনরায় সেই মিহি উপাদানের সিদলটি পাওয়া যায়।
- এবার পরিমাণ মতো পেঁয়াজ কুচি করে নেয়া হয়। অন্যান্য সব মসলার উপাদান যেমন মরিচ, রসুন ও আদা বেটে নেওয়া হয়।
- এবার বেটে নেওয়া মসলাগুলো, পেঁয়াজকুচি , আদা ,রসুন ও মরিচ বাটা, পরিমাণ মতো লবণ, পরিমাণ মতো হলুদ সহকারে সিদলটিকে একত্রিত করা হয়।
- এবারে একটি পাত্রে পরিমাণ মতো তেল দিয়ে সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ কুচি সহ পরিমাণ মত লবণ ও হলুদ সহকারে মাছ গুলো খাওয়ার উপযোগী করে নেয়ার জন্য সে তেলের মধ্যে ভেজে নিতে হবে।
- মাছগুলো অন্য একটি বাটিতে ঢেলে নেওয়া হয়। এবং সে কড়াই বা পাত্রের মধ্যেই সামান্য পরিমাণ তেল দিয়ে একত্রিত করা সিদলসহ সেই বাকি উপাদানগুলো দিয়ে দেওয়া হয়।
- সবগুলো উপাদান কিছুক্ষণ নেড়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে (সুন্দরভাবে যেন সব উপাদান সেদ্ধ হয়) পাত্রটি কয়েক মিনিটের জন্য ঢেকে দিতে হবে।
- ১০ থেকে ১২ মিনিট পর সব উপাদান সিদ্ধ হয়ে গেলে ঢাকনাটি খুলে দিতে হবে। এবং মাছগুলো এর মধ্যে দিয়ে দিতে হবে।
- মাছ সহ সব উপাদানগুলো কিছুক্ষণের জন্য নাড়তে হবে। যেন সব কয়টি উপাদান সুন্দরভাবে মিশ্রিত হয়। এভাবেই কিছুক্ষণ ধরে কষতে হবে।
- সর্বশেষ ধাপে কিছুক্ষণ কষে নেওয়ার পর দেখা যাবে যে কয়টি উপাদান সুন্দরভাবে একত্রিত হয়েছে এবং মাছগুলো ভেঙে গিয়েছে। এবার রান্নাটি পরিবেশনের জন্য প্রায় প্রস্তুত। চুলা থেকে নামিয়ে অন্য একটি বাটিতে তরকারিটি তুলে নিতে হবে।
রান্নাটি পরিবেশন এর জন্য প্রস্তুত। আপনারা চাইলে যে কোন ভাবে সাজিয়ে পরিবেশন করতে পারেন। আমি সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কাঁচা মরিচ ব্যবহার করে বাটিটি সাজিয়েছি।
আজকের খাবারের রেসিপিটি আমি বিশেষ করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য সাজিয়েছি। সিদল আমাদের দিনাজপুর জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। যা বহু কাল ধরে এই জেলার মানুষেরা খায়। আমরা উত্তরবঙ্গের মানুষেরা কম বেশি সবাই সিদল খেতে পছন্দ করি। আমাদের বাড়িতে আসা অতিথিরাও এ খাবারের অপ্রশংসা কোনদিন করেনি। অন্যান্য জেলার মানুষেরাও এখন এই সিদল খেতে পছন্দ করে। তাই সর্বোপরি বলা যায় আমাদের এলাকার এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটি আমাদের এলাকাকে প্রসিদ্ধ করে তুলেছে।
আশা করি ,আমার পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে ।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।সকালে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আর আমার মনে হয়, সকলেই আমাদের দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী এ খাবার তৈরির রেসিপিটি সবাই জানতে পারলেন।আজকের রেসিপি পোস্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন।
এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আমি আমন্ত্রণ জানাচ্ছি-
@nahela
@johnmitchel
@angel08arts
ডিভাইস | Redmi Note 11 |
ফটোগ্রাফার | @rumana12 |
লোকেশন | দিনাজপুর |
সিদল আমারও অনেক প্রিয় একটি রেসিপি, এই সিদল আমাদের এখানেও অনেক প্রসিদ্ধ একটি রেসিপি, আপনি সিদল তৈরির অসাধারণ একটি আইডিয়া দিয়েছেন, রেসিপির ধাপ গুলোও অনেক সুন্দর করে উপস্থাপনা করেছেন, আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো আপু।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
Twitter link-
https://twitter.com/rumana4102/status/1685643209454891008?t=g7UgxeiN2-oKB3_PGzX_4w&s=19
বাহ চমৎকার লাগলো আপু আপনার পোস্ট। উত্তর অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার এই সিদল, তবে এই সিদল এর নাম অনেক শুনেছি। কখনো খাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি। আপনার খাবার তো অনেক লোভনীয়। মনে হয় অনেক সুস্বাদু হয়েছে। প্রতিটি ধাপ অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করছেন অনেক ধন্যবাদ আপু।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে এই সিদল।আমি পার্বতীপুর থাকার সময় বেশ কয়েকবার খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আমাদের এলাকায় এই খাবারের প্রচলন নেই। রেসিপি তৈরির প্রক্রিয়াটি খুব ভালোভাবেই তুলে ধরেছেন। ফটোগ্রাফি গুলো যথেষ্ট ভালো হয়েছে। শুভকামনা রইল
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
শীতল আমার অনেক পছন্দের একটি খাবার।আম্মু মাঝে মাঝে বাসায় সিদল রান্না করে।বোয়াল মাছ দিয়ে সিদল আমার অনেক পছন্দের।আপনি খুব সুন্দর ভাবে সিদল রান্নার রেসিপিটি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।আপনাকে প্রতিযোগিতার শুভকামনা রইল আপু
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
Hola muchas gracias por la mención. Me gustó mucho tu receta.
Thank you.
সিদল আমাদের এলাকারও একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। সিদল খেতে আমার অনেক ভালো লাগে। তবে অনেকেই হাসাহাসি করে যে সিদল পাঙ্গাস দিয়ে রান্না করলে সবথেকে বেশি ভালো হয়। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে সিদল রান্না করার রেসিপি দেখিয়েছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই।সিদল দিনাজপুর জেলার অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার।সিদল আমি অনেক পছন্দ করি।আমাদের বাসায় মাঝে মাঝে সিদল রান্না করে।আপনি খুব চমৎকার ভাবে ধাপ গুলো সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন।আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সিদল উত্তরাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। গ্রামের কমবেশী প্রতিটি বাড়িতেই সিদল দেখা যায়। আর সিদল দিয়ে সাধারণত বোয়াল মাছ, শোল মাছ, টাকি মাছ, চাম ঘাস এগুলো রান্না করা হয়। আপনি খুবই চমৎকারভাবে সিদল দিয়ে মাছ রান্নার রেসিপিটি দেখিয়েছেন। ফটোগ্রাফিগুলোও চমৎকার হয়েছে। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য। আর আপনার পোস্ট লিংক কন্টেস্টের পোস্টে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ঠিক আছে ভাইয়া।