সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র- মনোজগৎ !

in Help4Help2 years ago

হ্যালো কে?
ম্যাম আমি...
কন্ঠটা চেনা চেনা, কমবয়সী আওয়াজ, এতো আপন মেশানো কন্ঠের - ম্যাম, আমি বলা কে চিনতে না পারার অপরাধ বোধে এ প্রান্তের আমি কেমন যেন লজ্জিত... আমাকে আমতা আমতা করতে দেখে,সে বুঝতে পারে ব্যাপারটা।
ম্যাম আমি........... বলে তার নামটা বলে।
আমি হাফ ছাড়লাম !
ও, তুমি ! এতো দিন পর! কি অবস্থা? কি করছো এখন? পড়ালেখা কেমন চলছে ? গড় গড় করে বলে গেলাম, খারাপ লাগাটা কাটানোর জন্যে।
পড়ালেখা করছি না- ছেড়ে দিছি ম্যাম ।
এ্য! কি বললে ? (বলাবাহুল্য আমি পড়ালেখা পাগল মানুষ)।
এখনো ছোট মানুষ, এই সময়টায় পড়ালেখা না করে কি করবে শুনি ? বিরক্তি আর ধমকের সুর আমার কন্ঠে ।
ম্যাম, আমি অসুস্থ ছিলাম - শেষ বার যখন আপনার সাথে দেখা হয়,আপনি জব continue করার কথা বলেছিলেন, তখনো আমি অসুস্থ - তার অনেক আগে থেকেই আমি অসুস্থ ছিলাম, কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতাম না।

ও, এই জন্যই তুমি কাজে নিয়মিত আসতেনা !

জী ম্যাম, তবে এখন সুস্থ ।
আমার চমকের পালা সবে শুরু বলা চলে ......

আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম ম্যাম ! অনেক দিন ধরেই আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ - এই তো কিছুদিন আগে একজন ডাঃ (সাইক্রিয়াটিস্ট) দেখিয়েছি,ডাঃ এর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ খাচ্ছি - আলহামদুলিল্লাহ, এখন সুস্থ হচ্ছি ধীরে ধীরে। আপনার কাছ থেকে দোয়া নেয়ার জন্য ফোন করেছি ম্যাম। ঐদিন যে উপকার টা করেছিলেন, ( কি সেটা লিখবো না - আত্ন প্রচার হয়ে যাবে) তখন বুঝিনি, এখন বুঝতে পারি - আপনি অনেক বড় মনের...থাক্ থাক্ সেটা, বাধা দিলাম - ওটা কোন ব্যাপার না...

তোমার অসুখের কথা বলো...এখন তো পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে, কি বলো?
না, পড়ালেখা করতে মন চায় না- বলে উঠে নির্বিকার ভাবে।

সে কি ! আবার আত্কে উঠলাম। কি করবে তবে?

মানুষের জন্য কিছু করব - বলে সে।

আগ্ৰহ নিয়ে বললাম - সেটা কি রকম ?

বই লিখব (অর্থাৎ সে লেখালেখি তে মনোনিবেশ করে ফেলেছে ইতিমধ্যেই) ।
বললাম, সে টা তো খুব ভালো কথা -পাশাপাশি পড়ালেখা টা চালিয়ে যাও...

ও প্রান্ত চুপ !
ভাবলাম পড়ালেখার প্রসংগ থেকে আপাতত সরে আসি,

তোমার অসুস্থতার লক্ষণ টা কি রকম ছিল,বলা যাবে কি? যদি তোমার আপত্তি না থাকে.......

ম্যাম, আমার মনে হতো- ২৫ বছর বয়সে আমি মারা যাব !

সে কি !!! কি বলছ তুমি! রীতিমত চমকে উঠলাম আমি।
জী ম্যাম, অনেক দিন ধরে এই রকম একটা অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে আমি দিন,মাস, বছর পার করে আসছি !

এ প্রান্তে আমি একবারেই চুপ, বাকরুদ্ধ - হতবাক !
সন্বিৎ যেন ফিরে আসে, বলি -
আচ্ছা, তোমার মাথায় কে এই উদ্ভট চিন্তা ঢুকিয়েছে বলতো ?

কেউ না ম্যাম।
সন্নিগ্ধ স্বরে বলি - কোন গণনাকারীর কাছে গিয়েছিলে ?

না,ম্যাম।

কেউ কিছু বলেনি তোমায়? এই ধরো, অনেক টা মজা বা ঠাট্টা করে এই রকম একটি কথা ?

কেউই না ? অবিশ্বাসের সুর আমার কন্ঠে স্পষ্ঠ !
ও প্রান্তের ওই এক কথা - না ম্যাম।

এমনি এমনি তোমার মাথায় এই চিন্তা ঢুকে গেলো যে - তুমি ২৫ বছর বয়সে মারা যাবে ! ?

জী ম্যাম। নির্বিকার, কোন রকম ভনিতা নেই এই গলায়।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি !

বাচ্চা একটা ছেলে, ১৬ থেকে ২০ এর মধ্যে বয়স। দীর্ঘ দিন ধরে Mental Disorder - এ ভূগছে ! এক বিচিত্র চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুরছে ভয়ে টেনশনে এবং হতাশায় ! দিব্যি ভালো মানুষের মতো হাঁটছে, চলছে, খাচ্ছে দাচ্ছে - বুঝার কোন উপায় নেই !

মানুষের মন- মস্তিষ্ক জগতে যে কত বিচিত্র খেলা খেলে সেই গল্প ই লেখা শুরু করেছি - আসলে গল্প বললে ভুল বলা হবে, এটা সম্পূর্ণ বাস্তব ঘটনা। সংগত কারণেই ঘটনার মূল নায়ক এর নাম বলাটা কখনো শোভনীয় হবে না - তাই এড়িয়ে গেলাম।

মূল বর্ননা তে ফিরে যায় -

আমার কাছে যখন সে আসতো ( অবশ্যই কাজে ) দেখতাম সে নিয়মিত আসতো না, আর লক্ষ্য করতাম - কেমন যেন উদাসীন ! আমি ও ব্যস্ত থাকতাম বলে অত বেশি খেয়াল করতাম না। তবে প্রায়ই সময় কাজে সিরিয়াস হতে বলতাম নতুবা সত্যি সত্যি এক দিন চাকরি টা হারাবে বলে সতর্ক করে দিতাম। আর হ্যাঁ, আমার ওকে সন্দেহ না করার বা বুঝতে না পারার আরও একটা কারণ ছিল - সে পড়ালেখার অজুহাত দেখাতো অর্থাৎ তাকে ক্লাস করতে হতো বলে ই নাকি সে কাজে নিয়মিত আসতে পারতো না।
আর তার উদাসীন ব্যাপারটা ?
ভাবতাম, বয়স কম- স্বভাব টাই হয়তো ও রকম ! বলাবাহুল্য, পড়ালেখার পাশাপাশি সে পার্ট টাইম জব করতো।

এতক্ষণ যা লিখলাম - কেমন অদ্ভুত না ব্যাপারটা ?

আরও অদ্ভুত এবং বিচিত্র ভয়াবহ ব্যাপার কি জানেন - এই রকম আরো অনেক বিচিত্র মানসিক সমস্যা নিয়ে প্রচন্ড কষ্টে দিব্যি ভালো মানুষের মতো নিজেকে নিজে ভালো রাখার বা থাকার ভান করে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেক অসহায় মানুষ আমাদের চারপাশে কিংবা খোদ্ আমাদের ঘরের মধ্যেই - অথচ আমরা তার বিন্দুমাত্র খবর জানিনা ! বলাবাহুল্য, এই সমস্যার শেষ পরিণতি খুব একটা ভালো হয় না । চলবে.......
images (10).jpeg

images (8).jpeg

images (3).jpeg

images (1).jpeg

images.jpeg