এপ্রিলে উড়বে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

in #life7 years ago (edited)

397685aa13634441956fccc9b1fa41c2-5a9b94bf20013.jpg
গত বছর এপ্রিলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর রেপ্লিকা তুলে দেন ওই সময়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম

আগামী এপ্রিলের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহেই মহাকাশে যাত্রা করবে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’। ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরালে অবস্থিত স্পেস এক্স-এর লন্ড প্যাড থেকে এটি উৎক্ষেপণ করা হবে। ঢাকায় নব নির্মিত উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে এই উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফ্লোরিডায় থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

শাহজাহান মাহমুদ জানান, প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই স্যাটেলাইট প্রকল্পের উদ্বোধনকে জাতীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার আর প্রসারে সরকার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। ফ্রান্সের থেলেস এলেনিয়া স্পেস নামের প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে এই স্যাটেলাইট নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে। এখন সেটি রাখা আছে ফ্রান্সে। কয়েক দিনের মধ্য সেটি বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নেওয়া হবে।

এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য রকেট নির্মাণ করেছে বিশ্ববিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারক টেলসলার প্রধান নির্বাহী অ্যালেন মস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্প। ফ্যালকন-৯ নামক একটি রকেট দিয়ে এটির উৎক্ষেপণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।

এপ্রিলের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে এটির উৎক্ষেপণ করা হবে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, দিন তারিখ ঠিক হওয়ার মাত্র ১৫ দিন আগে আমাদের জানানো হবে।

এই স্যাটেলাইটটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণের দিন ধার্য ছিল। তবে, স্পেস এক্স-এর রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে আগুন ধরে প্যাড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিলম্ব হলো বলে জানানো হয় ব্রিফিংয়ে।

স্যাটেলাইটটি সঠিকভাবে মহাকাশে পাঠানো গেলে ৮ দিন পর এটি মহাকাশে বরাদ্দ পাওয়া ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছাবে। সেখান থেকে নজরদারি চালাতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে, বাংলাদেশের প্রায় ৩৭টি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল যারা এখন বিদেশের স্যাটেলাইট নির্ভর ফ্রিকোয়েন্সিতে প্রচারণা চালাচ্ছে, তাদের কাছে ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ১২৫ কোটি ডলার আয় করা যাবে। তবে, এই টিভি চ্যানেলগুলি এখনকার প্রচলিত ক্যাবল ভিত্তিক প্রচারণার পরিবর্তে ছোট ছোট ডিস অ্যানটেনার ডাইরেক্ট টিভি সিগনাল পাবে। সেই সিগনাল ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দের দায়িত্ব থাকবে দুটি প্রতিষ্ঠান। বেক্সিমকো গ্রুপ এবং বায়ার মিডিয়া এই পুরো টিভি চ্যানেল ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ এবং সিগন্যাল বিকিকিনির পুরো ব্যবসায়িক দিকটি উপভোগ করবে। এদের ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানি এখানে ডিটিএস প্রযুক্তির ব্যবসায় নামতে পারবে না বলে জানানো হয়েছে।

কোন পন্থায় মাত্র দুটি কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান বিটিআরসির চেয়ারম্যান। তিনি জানান, ‘এটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। এটা স্পর্শকাতর একটি বিষয়, আমার কাছে সঠিক উত্তর নেই’।

বাংলাদেশের গাজীপুরে প্রায় ১৩ একর জায়গার ৫ একর জুড়ে এই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে বিদেশি স্যাটেলাইট ইঞ্জিনিয়ার কাজ করছে। প্রায় ১৫ জনের দলে একমাত্র বাংলাদেশি ছিলেন তাসনিয় তাহমিদ নামের একজন।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশ ব্যবহার করবে। বাকি ২০টি বিদেশি বা প্রতিবেশী দেশের কাছে ভাড়া দিতে পারবে। উৎক্ষেপণের পর পরবর্তী ১ বছর পর্যন্ত এর তদারকি করবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। এটি আগামী ১৮ বছর পর্যন্ত মহাকাশে থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি এবং কাজ করতে পারবে বলে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দীন আহমেদ, জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, কনসাল জেনারেল শামীম আহমেদ এনডিসি, বিটিআরসি রেগুলেটরি কমিশনের সচিব মোহাম্মদ সারোয়ার আলম আর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের কনস্যালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান, স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) ম্যানেজিং পার্টনার শফিক এ চৌধুরী প্রমুখ ।

Source: prothom alo