জীবন ডায়েরীর পাতা থেকে.... ৫। জীবনের প্রথম কাজে যোগদান ও অভিজ্ঞতা.......

in #lifestory6 years ago (edited)

পূর্ব প্রকাশের পর:

জীবনের প্রথম কাজে যোগদান ও অভিজ্ঞতা.......

লোকটি আর কোন কথা না বলে আমাকে বলল আমার সাথে আয়।

কোন কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই দেখি সে ওয়াইজঘাট কলার আরৎের মধ্যে ঢুকে গেছে। আমিও তার পিছু পিছু চললাম। আরৎের ভেতর দিয়ে দোতলায় ওঠার সিরি দিয়ে আমরা উপরে উঠলাম। দেখি দোতলায় একটা হোটেল, সে আমাকে নিয়ে হোটেলের ভেতরে ঢুকে গেল। তখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল, হোটেলের দেয়াল ঘড়িটার দিকে নজর গেল, দেখলাম বেলা তিনটা ছুই ছুই করছে। ক্যাশে বসা মধ্যবয়স্ক এক ভদ্র লোক, সাদা পাঞ্জাবি পরিহীত, মুখে ছেটেছুটে সাইজ করে রাখা সুন্দর দাড়ি, কেমন করে যেন কথা বলছে (ঢাকার স্থানীয় ভাষায়) আর পান চিবুচ্ছে সাথে সিগারেটও টানছে। ভয় ভয় লাগতে শুরু করল, আমাকে আবার বিক্রী টিক্রি করে দিচ্ছে নাতো! শুনেছি ঢাকাতে নাকি মানুষও কেনা বেচা হয়। নানান ভাবনা মাথার ভেতরে কিলবিল করছিল আর সাথে পেটের ক্ষুধাটাুও লাগামছাড়া হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।

সকল ভাবনার অবসান ঘটল একটি ভারি কন্ঠের আওয়াজে, তোর নাম কি? ক্যাশে থাকা ভদ্রলোক জিজ্ঞেসা করল, নাম বললাম, কে কে আছে, লেখাপড়া করেছি কিনা, ঢাকা আসছি কবে, চুরি টুরি করার অভ্যাস আছে কিনা ইত্যাদি নানান প্রশ্ন। এক কথায় বলে দিলাম, আমার কেউ নেই, লেখাপড়া কিছুই জানিনা। অবশেষে যখন জিজ্ঞাসা করল কাজ করতে পারবি কিনা, কোন উত্তর দিতে পারলাম না। দুইচোখ বেয়ে পানি ঝড়তে লাগল, জীবনে কোনদিন কোন কাজ করিনি, আর আজ আমাকে কেহ কাজের জন্য ইন্টারভিউ নিচ্ছে তাও আবার হোটেলের বয়ের চাকুরীর জন্য। ভদ্রলোক আর কিছুই জিজ্ঞেসা করল না, আমাকে বল্ল পিছনের ওই টেবিলটায় গিয়া বস, আগে ভাত খা তারপরে তোর কাজ দেখিয়ে দেব। ভাতের কথা শুনে আর যেন তর সইছিল না। মনে হচ্ছিল কত বছর কিছু খাই না।

আমাকে যে লোকটি নিয়ে আসছিল সেও আমার পাশে বসল এবং আমার খাওয়া দেখছিল, লক্ষ করে দেখলাম ক্যাশে থাকা ভদ্র লোকটি আমার খাওয়া দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। খাওয়ার ফাকে আমাকে এনে দেওয়া সেই লোক বলল আমার বাড়ীও পটুয়াখালী, চমকে উঠলাম তার কথা শুনে। ঠিকানা জিজ্ঞেস করার পর ভাত মনে হচ্ছিল গলার ভেতরে আটকে যাওয়ার মত অবস্থা। এক গ্লাশ পানি খেয়ে নিলাম। সে যে ঠিকানার কথা বলেছে, অর্থাৎ একটি স্কুলের পাশে একটি বাসায় তারা ভাড়া থাকত এবং ঐ স্কুলেই সে পড়াশোনা করেছে। আমার বাবা ঐ স্কুলেরই একজন কর্মচারী, এবং আমার বাসাও ঐ স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরেই। ভাগ্যিস এই লোকটা গত আট বছর আগে ঢাকা এসেছে তার মা বাবা সহ। তখন আমি আরও ছোট ছিলাম তাই তিনি আমাকে চিনতে পারেন নি। আমার ঠিকানা জিজ্ঞাসা করাতে পাশ্ববর্তী একটি গ্রামের নামের কথা বলে দিলাম। খাওয়া শেষে তিনি আমাকে কাজ সম্পর্কে অনেক ধারণা দিলেন এবং অনেক অনেক উপদেশ দিলেন। তার কথাগুলো খুবই গুরুত্বসহকারে শুনলাম। বলে দিলেন ক্যাশে থাকা ভদ্রলোকটিই এই হোটেলের মালিক, তার এরকম আরও দুইটি অর্থাৎ মোট তিনটি হোটেল আছে। সে যা বলে আমি যেন সেটা খুব মনযোগ সহকারে শুনি এবং ভালভাবে কাজ করি।

আহ আজ তিনদিন পরে পেটপুরে ভাত খেলাম, চোখ জুড়ে ঘুম আসছিল। ক্যাশ থেকে মহাজনের ডাক আসল, তার কাছে গেলাম। তিনি আমাকে আমার কাজ সম্পর্কে বুঝিয়ে দিলেন, কাষ্টমার আসলে সাথে সাথে গ্লাশ ধুয়ে পানি দিতে হবে এবং টেবিল মুছে দিতে হবে। এছাড়াও তারা খেয়ে যাওয়ার পরে টেবিল পরিস্কার করে থালা বাটি সব ধুতে হবে। থাকা খাওয়া সব ফ্রি, বেতন মাসে ৬০০/- টাকা। বেশ খুশিই হলাম, আগে বাসায় বসে টিউশনি পড়াতাম, একেকজন মাত্র ১০০/১৫০ টাকা দিত। আর এখানে প্রথমেই ৬০০/- টাকা বেতন পাব। কাজ শুরু করে দিলাম। সময় বেশ দ্রুতই কেটে গেল, রাত দশটা বাজতেই মহাজন আমাকে কাছে ডাকল। মমতা মাখা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল কাজে কি খুব কষ্ট হচ্ছে! আমি মাথা নেরে জানান দিলাম “না”। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আমার কাজে কি কোন ত্রুটি হয়েছে! সে উত্তরে কিছুই বল্ল না তবে বুঝলাম কাজে সে অত্যান্ত খুশি। আমাকে বল্ল থাক আজ আর তোর কাজ করতে হবে না, নতুন মানুষ তুই, এখন যা ভাত খেয়ে নে, বলেই অন্য একটা ছেলেকে ডেকে বল্ল এই ছোহেল (আমার ডাক নাম সোহেল) কে ভাত দে, ওর খাওয়া শেষে আমি ওকে নিয়ে যাব। তার কথা শেষ না হতেই একটা ছেলে আমাকে প্লেট দিল বল্ল হাত ধুয়ে নাও। খাবার দিতে দিতে সে বলতে শুরু করল, আমরা এত বছর এখানে কাজ করেও ওখানে যাওয়ার সুযোগ পেলাম না আর তুমি আজ এসেই আজই সেখানে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে গেলে। কি ভাগ্য তোমার, আমি তার কথা কিছুই বুঝে উঠতে পারচিলাম না, এরা কোথায় যেতে চায় আর মহাজনই বা আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়?

খাওয়া শেষ করে উঠতে না উঠতেই পান চিবুতে চিবুতে এবং সিগারেটের ধোয়া সংবলিত কন্ঠে মহাজন জিজ্ঞাসা করল, ছোহেল তোর খাওয়া হইছে? বললাম জি, সাথে সাথেই বলল তারাতারি আমার সাথ আয় অনেক দেড়ি হয়ে গেল। তোর জন্যই আমি এখনও অপেক্ষা করতেছি, না হলে কখনই চলে যেতাম। হোটেলের অন্যান্য কর্মচারীদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তারা যেমন বিস্ময় হয়েছে তেমনি মনে হয় আমার প্রতি হিংসায়ও জ্বলে যাচ্ছে ..........

চলবে.................................

Halo Dear Friends,
We can do anything for ourselves if we want. We do not have to pay any attention to this. So I have made the following decisions. The ones who complete the following steps will also give him the same reprisal.

Follow 👉 @sohelsarowar

👉 Resteem any post from my Blog

👉 Upvote any post from my Blog

I request be honest and kind, once you completed all steps then dont forget to leave your post URL in the comment box i will do sometime instant otherwise confirm in 4-24 hours. respect everyone. Thank You!

Note: Please do not post multiple Post URL in the same blog. 1 person Allow 1 URL then after 24 hours i will new post then you can give me the new one.

Thank you...

Sort:  

interesting....... looking forward for next episode...

ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবনা @priyanarc . তবে সাপোর্ট দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।🙋

Loading...

Congratulations!

This post has been upvoted from Steemit Bangladesh, @steemitbd. It's the first steemit community project run by Bangladeshi steemians to empower youths from Bangladesh through STEEM blockchain. If you are from Bangladesh and looking for community support, Join Steemit Bangladesh Discord Server.

If you would like to delegate to the Steemit Bangladesh, you can do so by clicking on the following links:

50 SP, 100 SP, 250 SP, 500 SP, 1000 SP.

YOU ARE INVITED TO JOIN THE SERVER!