জীবন ডায়েরীর পাতা থেকে.... ৬। নতুন কর্মস্থলে আমি......

in #lifestory6 years ago (edited)

পূর্ব প্রকাশের পর:

নতুন কর্মস্থলে আমি.......

হোটেলের অন্যান্য কর্মচারীদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তারা যেমন বিস্ময় হয়েছে তেমনি মনে হয় আমার প্রতি হিংসায়ও জ্বলে যাচ্ছে ..........

মহাজনের সাথে তার গাড়ীতে উঠে বসলাম। জীবনে প্রথম প্রাইভেট কারে বসার সৌভাগ্য হল। গাড়ির ভেতরে এসি চলছে সাথে পুরানা দিনের হিন্দি গান। বেশ ভালই লাগছিল, মহাজন মাঝে মধ্যে কিছু হয়ত প্রশ্ন করছিল, আর আমার উত্তর ছিল শুধুমাত্র “হু”। কারন গাড়ীতে ওঠার সাথে সাথেই আমার চোখে দুনিয়ার যত ঘুম ছিল সবই যেন ভর করেছে, তাই ঘুমিয়ে পরেছিলাম এবং মহাজন যখন আমাকে প্রশ্ন করছিল তার প্রতিউত্তরে শুধু ঐ একটি বাক্য ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছিলাম না। অবশ্য খুব জানতে ইচ্ছে করছিল যে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সাহস করে আর জিজ্ঞেস করতে পারি নি। এখন আর জিজ্ঞাসা করারও সময় নেই কারণ দুচোখে শুধুই ঘুম আর ঘুম। নেশাগ্রস্থের মত দুলছি আর শা শা শব্দ করে গাড়ি গতি বাড়িয়ে ছুটে চলেছে। হঠাৎ করে মহাজনের হাতের ঢাক্কায় ঘুম ভাঙ্গল, দেখলাম একটা দ্বিতল বাড়ীর গেটের সামনে আমাদের গাড়ী দাড়িয়ে এবং একজন দারোয়ান মহাজনকে সালাম দিয়ে গেট খুলে দিল। গাড়ি ভেতরে ঢুকে আমাদের নামিয়ে দিয়ে পার্কিং করতে চলে গেল। কেমন যেন ভয় করছিল, কোথায় এলাম, এখানে কারা থাকে, কি করে ইত্যাদি নানা প্রশ্ন।

মহাজনের পিছু পিছু বাড়ীর ভেতরে ঢুকে গেলাম। সিরি দিয়ে দোতলায় উঠে মহাজন কলিংবেল টিপতেই ৩০/৩২ বয়স্ক , ছিপছিপে উজ্জল শ্যাম বর্ণের একজন ভদ্র মহিলা এসে দড়জা খুলে দিলেন। মহাজন তাকে সালাম করতে বললেন, বল্ল উনি তোর ভাবি। সালাম দিলাম, দেখলাম ভাবি আমার সব দিক দিয়ে ঠিক আছে কিন্তু পেটটা শুধু উচু উচু লাগছে। তিনি তখন গর্ভবতি ছিলেন। সে কিছু বলার আগেই মহাজন তাকে বলতে শুরু করলেন, এই ছেলেটি খুব ভাল, ওর কোন খারাপ অভ্যাস নেই, ও নামাজ পড়ে, আরও যত গুনগান আছে সবই তার সাথে বলতে লাগল। মনে মনে আমার খুব হাসি পাচ্ছিল, এরই মধ্যে অন্য একটি রুম থেকে একজন বৃদ্ধ মহিলা বের হয়ে আসলেন। মহাজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, বাদশা... আসছ! মহাজন কিছু বলার আগেই আমি তাকে সালাম দিলাম। তিনি উত্তর দিয়ে আমাকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করল ও কে? মহাজন বলল ওকে আমাদের এখানের হোটেলের জন্য এনেছি। ও খুব ভাল..... ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু তার মাকেও বুঝাতে লাগল। তার মা বল্ল দেখিস বাবা আবার আগেরটার মত যেন না হয়। নাসিরের ব্যপারে তো জানই, আবার কিছু হয়ে গেলে ওকে কিন্তু আস্ত রাখবে না।

মহাজন আমাকে একটি ড্রয়িংরুম দেখিয়ে দিলেন এবং সেখানে গিয়ে ঘুমাতে বললেন এবং সাথে বাসার অনেক নিয়ম কানুনও বলে দিলেন। বললেন এর আগেও তিনি একটি ছেলেকে বাসায় এনেছিলেন কিন্তু সেই হারামজাদা নাকি চুরি করে ধরা পরেছিল এবং মহাজনের ছোটভাই নাসির তাকে অনেক মেরেছিল। এমনকি তার পায়ের সাথে দড়ি বেধে ঝুলিয়ে পিটিয়েছিল। এছাড়াও কোন হোটেল ষ্টাফদের বাসায় থাকার অনুমতি নেই, তাদের জন্য ভিন্ন একটি ঘর ভাড়া নেয়া আছে, সকল হোটেল ষ্টাফ ওখানেই ঘুমায়। শুধু বাবুর্চি বাসায় ঘুমায়, কারণ তার এখানে যে হোটেল আছে সেখানে রান্না করার ব্যবস্থা নেই। বাসা থেকে রান্না করে হোটেলে নিয়ে যেতে হয়। তাই বাবুর্চি বাসায়ই থাকে, আর এখন থেকে তার সাথে আমিও থাকব। অবশেষে বুঝলাম আমাকে এখানে আনার কারণ হচ্ছে তার এখানকার হোটেলের জন্যই তাহলে আমাকে নিয়ে আসা, কিন্তু ঐ হোটেলের ছেলেগুলো কেন অমন করছিল। ওটাও হোটেল, এটাও হোটেল, দুটোতেই একই ধরণের কাজ। তাহলে ওরা এখানে কেন আসতে চায়। রাত প্রায় একটা বেজে গেছে, তাই রুমের ভেতরে ঢুকে গেলাম, দেখলাম অন্য একজন ঘুমাচ্ছে মানে ইনিই হয়ত সেই বাবুর্চি। মেঝেটে নরম কার্পেট, মাথার নিচে দিলাম ছোপার কুশন, আহ....... কি শান্তি। কতদিন পরে শান্তিতে একটু ঘুমানোর ব্যবস্থা হল।

ফজরের আজানের শব্দ কানে আসতেছিল, এরই মধ্যে পাশ থেকে বাবুর্চি ভাই উঠে আমাকেও ঢাক্কাতে লাগল, এই ছেলে তুমি কে? ঘুমের চোখেই বললাম মহাজন আমাকে নিয়ে এসেছে। ওওওওওও বলেই বলল তারাতারী উঠ, আর ঘুমানো যাবে না, এবার উঠে গোছল করে নাও। তারপরে আমার সাথে সাহায্য করবে। বলেই সে ওয়াশরুমে চলে গেল এবং আমিও আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। তিনি গোছল সেরে আমাকে আবার একপ্রকার জোর করে উঠিয়ে ওয়াশরুমের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। কি আর করার কতদিন পরে একটু শান্তিতে ঘুমাতে চেয়েছি, সেটাও আর হল না। বাসায় থাকলে নিশ্চই আমি আজ ১২ টা পর্যন্ত ঘুমাতাম। ওয়াশরুমে ঢুকে গোছল করে ফ্রেশ হয়ে বের হওয়ার পরে তিনিও আমাকে বাসায় থাকার অনেক নিয়ম কানুন শেখাতে শুরু করলেন সাথে তিনি তার কাজও চালিয়ে যেতে লাগলেন। গত রাতেই তিনি অনেক কিছু রান্না করে রেখেছেন, কিছু কিছু আবার অর্ধেক রান্না করেছেন (পুরোপুরি সেদ্ধ করেন নি) যাতে হোটেলে নেয়ার পরে কাষ্টমারের চাহিদামত এগুলো আবার মেশিনে রান্না(ওভেনে) করে দেয়া হবে। আবার কিছু কিছু একেবারে কাঁচা, শুধু মাত্র মশলা মিশিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি কথা বলছেন আর কাজ করছেন, বেশ ভালই লাগছিল, মনে হয় লোকটাও খুব ভাল হবে।

সকাল ছয়টার সময় অন্য আরও একটি ছেলে আসল এবং তৈরীকৃত খাবার একে একে নিচে নামাচ্ছিল। এরই মধ্যে মহাজনের স্ত্রী রুম থেকে বের হয়ে একগোছা চাবি আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন মহাজন তোমাকে হোটেল খুলতে বলেছেন এবং ঝাড়ু দিয় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে বলেছেন। আর কিছুক্ষণ পরে তিনিও হোটেলে যাবেন বলেই ভাবি আবার ভেতরে ঢুকে গেলেন। বাবুর্চি ভাই আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন এবং তার নামও বল্লেন। তার নাম হারুনুর রশিদ, তো হারুন ভাই আমাকে বললেন চল আমিও আজ তোমার সাথে হোটেলে যাব। আমি কখনও হোটেলে কাজ ছাড়া যাই না কিন্তু আজ শুধু তোমার জন্য যাব। দেখলাম সেই ছেলেছি সব খাবার নিচে রাখা একটি পায়ে চালিত কাভারভ্যানে ভরে ফেল্ল, এরপরে আমরা তিনজন সেই ভ্যান ভর্তি বিভিন্ন খাবার নিয়ে চললাম হোটেলের উদ্দেশ্যে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পৌছে গেলাম হোটেলে, হারুন ভাই আমার কাছ থেকে চাবি নিয়ে হোটেলের সবকটি তালা খুলে দিলেন। এর পরে তিনি আমাকে হোটেলের কাজ সম্পর্কে অনেক কিছু শেখালেন। আমি ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করলাম, টেবিলগুলো মুছে গ্লাশ ধুয়ে সুন্দর করে টেবিলে সাজিয়ে রাখলাম। এখন বুঝতে পারছি ঐ হোটেলের ছেলেগুলো কেন এখানে আসতে চায়। কারণ এখানে ভাতের কোন ব্যবস্থা নেই, এখানে তেহারী, বিরিয়ানি, খিচুরি, কাবাব, সহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রী হয়। এক কথায় এটা একটি মিনি চাইনিজ রেষ্ট্রুরেন্ট। কিছক্ষনের মধ্যে আরও কয়েকজন লোক চলে আসল, হারুন ভাই সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কিছুক্ষন পরে মহাজনও চলে আসল, বাবুর্চি হারুন ভাইকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন, হারুন ছোহেলরে আজ তুই বাসায় নিয়া যা, ও আইজগা একটু বিশ্রাম করুকগ্যা, অর চেহার দ্যাকছত, কেমন দেহা যায়! কাইল থেইক্যা অয় কামে আইব, আর সাথে তুইও অরে একটু কাম টামের বিষয়ে হিক্যাইয়া দিচ।

হারুন ভাইয়ের সাথে বাসায় চলে আসলাম, চোখ থেকে ঘুমের রেশ কাটে নি, তাই ভাবছিলাম ঘুমাতে যাব। ড্রইং রুমে ঢুকতে যাব এমন সময় পেছন থেকে মোটা কণ্ঠস্বরে..... এই তুই কেরে....... এখানে ঢুকলি কিভাবে? দারোয়ান ও এখানে আসল কিভাবে? খুব ভয় পেয়ে গেলাম কিন্তু পেছনে ঘুরতেই অবাক হয়ে গেলাম। একি আমি সত্যি দেখছি! চলচিত্র জগৎের বিখ্যাত খলনায়ক বেদের মেয়ে জোৎনা খ্যাত “নাসির খান”। তিনি আমার সামনে সাদা লুঙ্গী আর স্যন্ডগ্যাঞ্জি পরে দাড়িয়ে ..................

চলবে...................................

Sort:  

ভালো লাগলো আপনার আর্টিকেল টা।

দোয়া করবেন যেন আরও সুন্দর করে লিখতে পারি। সাপোর্ট দেয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Your post has been selected to be presented in Steemit Bangladesh Curation Competition Episode # 19 . If you are from Bangladesh and would like to present the article in the voice hangout during the competition, Please join the hangout on our Discord server.

Steemit Bangladesh Curation Competition Episode # 19
Time : 10 PM BDT
Date: 18/09/2018 (Tuesday)


আমাকে সুযোগ দেয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ

This post has received a 3.13 % upvote from @drotto thanks to: @sohelsarowar.

How Cool!

You got a 6.25% upvote from @coolbot courtesy of @sohelsarowar!

Help us grow, delegate today!

Loading...

Congratulations!

This post has been upvoted from Steemit Bangladesh, @steemitbd. It's the first steemit community project run by Bangladeshi steemians to empower youths from Bangladesh through STEEM blockchain. If you are from Bangladesh and looking for community support, Join Steemit Bangladesh Discord Server.

If you would like to delegate to the Steemit Bangladesh, you can do so by clicking on the following links:

50 SP, 100 SP, 250 SP, 500 SP, 1000 SP.

YOU ARE INVITED TO JOIN THE SERVER!

Congratulations! This post has been upvoted from the communal account, @minnowsupport, by sohelsarowar from the Minnow Support Project. It's a witness project run by aggroed, ausbitbank, teamsteem, someguy123, neoxian, followbtcnews, and netuoso. The goal is to help Steemit grow by supporting Minnows. Please find us at the Peace, Abundance, and Liberty Network (PALnet) Discord Channel. It's a completely public and open space to all members of the Steemit community who voluntarily choose to be there.

If you would like to delegate to the Minnow Support Project you can do so by clicking on the following links: 50SP, 100SP, 250SP, 500SP, 1000SP, 5000SP.
Be sure to leave at least 50SP undelegated on your account.