জীবন ডায়েরীর পাতা থেকে.... ৯। ব্যবসা বানিজ্যের ইতিকথা.....steemCreated with Sketch.

in #lifestory6 years ago (edited)

পূর্ব প্রকাশের পর:

ব্যবসা বানিজ্যের ইতিকথা.......

সব কিছু ঠিকঠাক করে রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম পরের দিন সকালের অপেক্ষায়। আগামীকাল থেকে আমার নতুন ব্যবসা শুরু হবে.......

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে প্যাককৃত সকল জামা কাপড় নিয়ে রিকশাওয়ালা ভাই আমাকে নিয়ে চলল বিক্রীর ‍উদ্দেশ্যে। তিনি আমাকে মহাখালী বাসষ্টান্ডে নামিয়ে দিলেন। বলে গেলেন সন্ধার পরে এসে আমাকে নিয়ে যাবেন। শুরু হল জীবনের প্রথম ব্যবসার কাজ। সারাদিন রোদে ঘুরে ঘুরে জামা কাপড় ফেরি করতে লাগলাম। দুপুর পর্যন্ত একটাও বিক্রী করতে পারলাম না। হতাশ হয়ে গেলাম। একটা চায়ের দোকানে বসে চা, রুটি, কলা আর পানি খেয়ে আবার শুরু করলাম ফেরি করা। অবশেষে বিকেলে দিকে কাজ থেকে ফেরা ঘরমুখো মানুষের আনাগোনা শুরু হলে আমার বিক্রী শুরু হলো। দাম হাকাতে শুরু করলাম লোক বুঝে আর বিক্রী করতাম সর্বনিন্ম একশত টাকায়। বেশ ভালই বেচা বিক্রী হল। প্রথম দিনই আমার কাপড়ের দাম এবং ঢোলাই ও প্যাকিং খরচ উঠে এল মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যে। রাত আটটার দিকে রিকশাওয়ালা ভাই এসে আমাকে নিয়ে গেলেন। সারাদিন রোদে ঘুরে অনেক ক্লান্ত লাগছিল।

রাতে ঘুমাতে গিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম, আমার এই ব্যবসা তো শুধু বিকালে হয়, বাকি সারাদিন এমনিতেই ঘুরে ঘুরে কাটাতে হয়। ভাবতে লাগলাম কি করা যায়। অবশেষে রিকশাওয়ালা ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই জামাকাপড় তো শুধু বিকালে বিক্রী হয় আর তাহলে সকালে অন্য কাজ করলে কেমন হয়। তিনি শুধু হু উত্তর দিলেন, বুঝলাম তিনি ঘুমাচ্ছেন। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। ভাবতে লাগলাম কি করা যায়, হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল, আমি হোটেলে থাকাকালীন দেখতাম এক লোক প্রতিদিন হোটেলে একবারে ১৫/২০ টি মুরগী দিয়ে যেতেন, যা দিয়ে হোটেলে চিকেন ফ্রাই সহ বিভিন্ন আইটেম তৈরী করা হত। কাজটাও বেশী কঠিন না, প্রথম অবশ্য কষ্ট হবে পরবর্তীতে কয়েকটি হোটেল ঠিক করতে পারলেই হবে। যা ভাবা তাই কাজ, সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছুটলাম কাওরান বাজারের পথে।

প্রথম দিন ২০ টি মুরগী কিনলাম প্রতি পিচ সম্ভবত ৫০ টাকা করে কিনেছিলাম। আমার এখন অনেক কিছুই সঠিক মনে নেই। যাই হোক মুরগী নিয়ে বিভিন্ন হোটেলে হোটেলে ঘুরতে শুরু করলাম, কিন্তু বিক্রী হচ্ছিল না। সবারই একটা উত্তর তাদের লোক ঠিক করা আছে। চিন্তায় পরে গেলাম, মুরগী তো আর রেখে দেয়া যাবে না, কাপড় তো বিক্রী না হলেও সমস্যা নেই কিন্তু মুরগী তো মরে যাবে। আকাশ পাতাল চিন্তা করতে লাগলাম। অবশেষে একটা বুদ্ধি বের করলাম আর তা হল, আমাদের ওখানে প্রতিপিস মুরগী বিক্রী করত ৭০ টাকা করে, তাই ধারণা করলাম ঢাকার সব যায়গায়ই মুরগীর দাম হয়ত এর কাছাকাছিই হবে। তাই আমি কেনা দামের থেকে মাত্র ৫ টাকা লাভ রেখে মুরগী বিক্রীর সিদ্ধান্ত নিলাম। আবার হোটেলে হোটেলে ঘুরতে শুরু করলাম। দেখলাম আমার এই ঔষধে কাজ হচ্ছে। প্রায় সকল হোটেলেই ৬৫/৭০ টাকা করে মুরগী কিনে আর আমি দিচ্ছি মাত্র ৫৫ টাকায় সবাই খুশি হয়ে ২/৩টি করে মুরগী কিনছে এবং জিজ্ঞাসা করছিল এই দামে সব সময় তাদের চাহিদা মত মুরগী দিতে পারব কিনা। বললাম পারব।

শুধু মাত্র জনসন রোডের আল ইসলামিয়া (সম্ভবত) নামের একটি হোটেল থেকে ৪০ পিস মুরগীর অর্ডার দিল এবং সেটা আগামীকাল সকাল আটটার মধ্যে দিতে হবে। সব মিলিয়ে প্রথম দিনেই আমার প্রায় ১০০ পিসের মত মুরগীর অর্ডার হল। খুব খুশি মনে সাথে সাথেই আবার চলে গেলাম কাওরান বাজার। সেখানে এক মুরগী পাইকারের সাথে মোটামুটি দফারফা করে ফেললাম, প্রতি দিন আমি তার কাছে থেকে মুরগী নেব এবং তিনি প্রতি পিস মুরগী ৪৮ টাকা করে রাখবেন। সব টাকা একসাথে দিতে হবে না, কিছু এডভান্স দিতে হবে এবং বাকী টাকা সন্ধার পরে দিলেও চলবে। কথা মত সেদিন ১২০ পিস মুরগীর অর্ডার দিয়ে কিছু এডভান্স করে চলে আসি। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে বিকেলে আবার কাপড়ের গাট্রি নিয়ে বের হয়ে যাই। কয়েক দিনের মধ্যেই বেশ জমজমাট হয়ে গেল আমার ব্যবসা। মুরগী সাপ্লাইয়ের হোটেলের সংখ্যাও বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২০০ পিস মুরগী সাপ্লাই দিচ্ছি তাও আবার সকাল ১০/১১ টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। প্রথমে বিকেলে এসে টাকা নিতে কষ্ট হচ্ছিল, কারণ বিকেলে তো আমার আরও ব্যবসা আছে তাই না! অবশেষে ঠিক হল বিকেলে আর আসব না, পরের দিন সকালে যখন মুরগী দেব তখন আগের দিনে টাকা নিয়ে যাব।

চোখের সামনে তখন শুধু টাকা আর টাকা, খুব তারাতারিই আমি অনেক টাকার মালিক হয়ে গেলাম। সপ্তাহখানেক এভাবে চলার পরে দেখলাম সকাল ১১ টার পরে আমার আর কোন কাজ থাকে না, প্রায় সারাদিন বসেই থাকতে হয়। তাই এই সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে, কিন্তু কিভাবে? এই সমস্যার সমাধানও হয়ে গেল, বেকার সময়টাতে কখনও ক্যালেন্ডার (আনারশ) আবার কখনও গ্যন্ডারি (আখ) আবার কখনও বা পেপে বিক্রী করে খুব ব্যস্ত সময় কাটছিল তখন। ভালই চলছিল দিনকাল, দিন যতই যাচ্ছিল আমার ব্যবসার প্রসারও তত বারছিল এবং সাথে সাথে অনুভব করতে লাগলাম আমিও কেমন যেন দিন দিন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি। খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম, গোছল সব কিছুই ছিল অনিয়মিত। আর বিশেষ করে যেই রিকশার গ্যারেজে থাকতাম সেখানে টয়লেট, বাথরুমের কোন ব্যবস্থা নেই। অনেক দূড়ে গিয়ে অনেকক্ষন লাইনে থেকে কোন রকম কাকের মত গোসল এবং টয়লেট সারতে হত, যাতে আমি অভ্যাস্থ ছিলাম না। এছাড়া খাবার দাবারেও কেমন যেন একটা অরুচি চলে আসল।

মাস খানেক বেশ ভালই চলল, এর পরে আর সামলাতে পারলাম না। বুঝতে শিখলাম

টাকা দিয়েই সব হয় না, বাঁচতে হলে টাকা ছাড়াও আরও অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়, আর টাকাও সেই সব প্রয়োজনয়ি বস্তুর মধ্যের একটা মাত্র। শিখলাম মানুষ টাকার পেছনে দৌড়ালে টাকা ঠিকই ধরা দেয়, তবে জিনি এটার পেছনে দৌড়ান তার প্রয়োজনে খুব কমই আসে। মানুষের জীবনে প্রতিটা জিনিসেরই একটা লিমিট থাকে। আমার একবেলা পেট ভরতে একথালা ভাতের প্রয়োজন কিন্তু আমি যদি পুরো একবল ভাত নিয়ে বসি খাওয়ার জন্য তবে সেটা খেতে তো পারবই না উল্টো বদ হজম এবং সম্পূর্ণ বলের ভাতগুলি নষ্ট হবে। তেমনি মানুষের জীবনে টাকারও একটা লিমিট আছে। কিন্তু আমরা সবাই সেটাই করি, টাকার পেছনে ছোটা আমাদের একটা নেশা হয়ে গেছে, প্রয়োজন থাকুক আর না থাকুক আমরা প্রতিনিয়ত শুধু ছুটেই চলেছি। আমি ঠিক করে ফেল্লাম আমি আর এভাবে নিজেকে টাকার মেশিনে পরিনত করব না। প্রতিটি মানুষের জীবনেই একটা লক্ষ থাকে, আর আমার লক্ষ আমি ঠিক করলাম, আমি শান্তিতে থাকব, অল্পেতেই তুষ্ট থাকব এবং ঝামেলা মুক্ত জীবন গড়ব। এবং বর্তমানে আলহামদুলিল্লাহ আমি খুব ভাল আছি, আমার কোন লোভ নেই, লোভ নামের বস্তুটিকে আমি প্রতিহত করতে পেরেছি। হয়ত আমি আমার স্ত্রী সন্তানের সকল চাহিদা পূরণ করতে পারি না, তবুও আমি এবং আমার ফ্যমিলি সবাই মিলে মানসিক ভাবে অনেক সুখে এবং শান্তিতে আছি।

টাকা কামিয়ে দেখেছি, এতদিনে আমি অনেক টাকা ইনকাম করেছি, প্রতিদিন গড়ে আমি ২০০০ টাকা ইনকাম করেছি। ১৯৯৮/৯৯ সালে এটা অনেক টাকা, কিন্তু টাকাগুলো আমার কাছে গচ্ছিতই রয়ে গেছে। বিনিময়ে কি পেলাম, শুধুই টাকা আর রোগা একটা শরীর। সিদ্ধান্ত নিলাম আবার আগের যায়গায় অর্থাৎ হোটেলেই ফিরে যাব। রাতে রিকশাওয়ালা ভাইকে (তার নামটা আমার মনে নেই) জানালাম, সে মনকষ্ট পেল এবং আমাকে বল্ল এত অল্প সময়ে এত তারাতারী সফলতা খুব কম লোকই পেয়েছে, তুমি যেটা করতে পেরেছ সেটা যদি মাত্র একবছর একই ভাবে করতে পার তবে তোমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কথাগুলো খুবই মূল্যবান এবং যথার্থই ছিল, কিন্তু আমি নিজেকে টাকার মেশিন বানাতে চাই না। তাই আর বেশি কথা না বলে দুজনে ভাল একটা হোটেলে রাতে খেতে গেলাম এবং দুজনে ইচ্ছে মত পেটপুরে খেলাম। পরের দিন সকালে সেই ভাইকে একটা নতুন রিকশা কেনার জন্য আট হাজার এবং তার সন্তানদের জন্য দুই হাজার টাকা জোর করে পকেটে গুজে দিলাম। লোকটি কেদে ফেলল। তিনি এতদিন ভাড়া রিকশা চালাতেন, এখন থেকে তার নিজের রিকশা হবে। তাকে বিদায় জানিয়ে আবার ফিরে চললাম হোটেলের উদ্দেশ্যে................

চলবে...........

Halo Dear Friends,
We can do anything for ourselves if we want. We do not have to pay any attention to this. So I have made the following decisions. The ones who complete the following steps will also give him the same reprisal.

Follow 👉 @sohelsarowar

👉 Resteem any post from my Blog

👉 Upvote any post from my Blog

I request be honest and kind, once you completed all steps then don't forget to leave your post URL in the comment box i will do sometime instant otherwise confirm in 4-24 hours. respect everyone. Thank You!

Note: Please do not post multiple Post URL in the same blog. 1 person Allow 1 URL then after 24 hours i will new post then you can give me the new one.

Thank you...

Sort:  

ভালো হয়েছে আপনার লেখা।

ধন্যবাদ কমেন্টস করে পাশে থাকার জন্য। দোয়া করবেন যেন আরও ভাল করে লিখতে পারি।

@sohelsarowar, I gave you a vote!
If you follow me, I will also follow you in return!

Thank you bro for upvoting me....

Congratulations!

This post has been upvoted from Steemit Bangladesh, @steemitbd. It's the first steemit community project run by Bangladeshi steemians to empower youths from Bangladesh through STEEM blockchain. If you are from Bangladesh and looking for community support, Join Steemit Bangladesh Discord Server.

If you would like to delegate to the Steemit Bangladesh, you can do so by clicking on the following links:

50 SP, 100 SP, 250 SP, 500 SP, 1000 SP.

YOU ARE INVITED TO JOIN THE SERVER!

Congratulations! This post has been upvoted from the communal account, @minnowsupport, by sohelsarowar from the Minnow Support Project. It's a witness project run by aggroed, ausbitbank, teamsteem, someguy123, neoxian, followbtcnews, and netuoso. The goal is to help Steemit grow by supporting Minnows. Please find us at the Peace, Abundance, and Liberty Network (PALnet) Discord Channel. It's a completely public and open space to all members of the Steemit community who voluntarily choose to be there.

If you would like to delegate to the Minnow Support Project you can do so by clicking on the following links: 50SP, 100SP, 250SP, 500SP, 1000SP, 5000SP.
Be sure to leave at least 50SP undelegated on your account.

Hello, as a member of @steemdunk you have received a free courtesy boost! Steemdunk is an automated curation platform that is easy to use and built for the community. Join us at https://steemdunk.xyz

Upvote this comment to support the bot and increase your future rewards!