বিস্মৃতির অতলে
জানালা দিয়ে হালকা চাঁদের আলো আসছে।
স্বাতী শুয়ে শুয়ে চাঁদের এই আলো ছায়ার
খেলা দেখছে। তার চোখে শুকিয়ে যাওয়া
অশ্রুর জলছাপ এখনও লেগে আছে। সে
একদৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে,
আচ্ছা তার জীবনও কি এরকম? ঠিক এখন
যেমন আকাশের উপচে পড়া চাঁদের আলো তার
জানালার পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটিতে
প্রতিফলিত হয়ে আবছাভাবে বিকিরণ করছে
তার ঘরটিতে! পুরোটা আলো কেন প্রবেশ
করছে না? তাহলে কি এই গাছটিই
বাধাস্বরুপ? স্বাতী ভাবে তার জীবনেও
হয়ত এরকম আসবে আসবে করে সুখগুলো দূরে
সরে যায়, আর যা রয়ে যায় তা হচ্ছে সুখের
প্রতিবিম্ব চাঁদের ওই নীলাভ হালকা আলোর
মত তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এসব ভাবতে
ভাবতেই ভোর হয়, বাইরে আলোকিত একটি
সকাল। সকালের এই মিষ্টি ভোরে সূর্যরশ্মি
যেন আকাশ ভেঙ্গে স্বাতীর জানলায় প্রবেশ
করতে চাইছে কিন্তু স্বাতী এসব কিছুই
খেয়াল করছে না সে তখন মগ্ন ঘুমে।
মিসেস রহমান কয়েকদিন থেকে লক্ষ্য
করছেন স্বাতীর ব্যাপারটা, হঠাত কেমন
যেন বদলে গেল মেয়েটি। মায়ের মন
হাজারটা দুশ্চিন্তা, তিনি ভাবছেন ওকে
একবার ভালো ডাক্তার দেখিয়ে আনা উচিত।
যদিও মনে হচ্ছেনা কোন অসুখ করেছে তবুও
তিনি ঠিক করে ফেললেন বিকেলে একবার
নিয়ে যাবেন ডাক্তারের কাছে। হাজার
জিজ্ঞেস করলেও স্বাতী বলবে না উনাকে ওর
কি হয়েছে, স্বান্তনা যদি শারীরিক কিছু
হয় তাহলে নিশ্চয় ডাক্তারকে বলবে। অবশ্য
এটা নিয়ে ছোট ঝামেলাও হতে পারে কারণ
স্বাতী সেই ছোটবেলা থেকে কোন কারণ
ছাড়াই ডাক্তার ভয় পায় নাম শুনলেই তখন
হাত পা ছুঁড়ে কাঁদত আর এখন তা হয়েছে আরো
ভয়াবহ। এখন ডাক্তার নামক জিনিসটা
স্বাতীর মহা বিরক্ত লাগে। তিনি জানেন
এখন হাতি দিয়ে টানলেও স্বাতীকে নিয়ে
যাওয়া যাবে না, রাগ করবে অযথা।
ব্যাপারটা হয়েছিল পাঁচ সাতেক মাস আগে।
স্বাতীর বাবা মি রহমান প্রচন্ড রকমের
অসুস্থ। এপিলেন্সি আর হার্টের সমস্যা বেশী
দেখায় তখন তাকে ভর্তি করা হয়েছে
হাসপাতালে।উনাকে রাখা হয়েছে আই সি
ইউতে। স্বাতীর তখন এইচ এস সি পরীক্ষা
চলছে। পরীক্ষা না থাকলে সে দিনে তার
বাবার হাত ধরে বসে থাকতো প্রচণ্ড মন
খারাপ করে আর মি রহমান তখন অসুস্থ
অবস্থায় ও বিড়বিড় করে বলতেন "ভঞ্জের
পিসি তাই সন্তোষ পান কুঞ্জকে করেছেন
কম্বল দান।" এই কবিতাটি শুনেই স্বাতী আর
পারতো না খিলখিল করে হেসে উঠতো। আর
মি রহমান তখন মুগ্ধ চোখে মেয়েকে
দেখতেন। তার মনে হতো আবার সেই আগের
মতো মেয়েকে কোলে নিয়ে এই কবিতাটি
পড়বেন আর স্বাতী না বুঝেও হেসে কুটিকুটি
হবে। মনে মনে উনি ঠিক করতেন এবার
ফিরে গিয়ে মেয়ের সাথে আবার সেরকম সময়
কাটাবেন। তার এই অসম্ভব সুন্দর মায়াবতী
মেয়েটার জন্যে তার আরো কিছুদিন বাঁচতে
খুব ইচ্ছে হতো। কিন্তু এর কয়দিন পরেই
হঠাত মি রহমানের ব্যাথা বেড়ে যায়,
স্বাতী তখন পরীক্ষায়। অসহ্য রকমের
যন্ত্রণা নিয়েও মি রহমান তার মেয়ে
ডাকছেন। মিসেস রহমান তখন কি করবেন
ভেবে পাচ্ছেন না, অবশেষে স্বাতীকে আনতে
তার মামাকে পাঠানো হল কিন্তু স্বাতী এসে
আর তার বাবাকে জীবিত পেল না। আই সি
ইউতে বাবার নিথর দেহ পড়ে রইলো। সেই
থেকে কেন জানি স্বাতী হাসপাতাল
ডাক্তার এইসবের ধারে কাছে যেতে চায় না
প্রচণ্ড ক্ষোভের কারণে। তার ধারণা হয়ত
এই হাসপাতাল-ই তার বাবাকে কেড়ে
নিয়েছে, সে কাছে থাকলে হয়ত তার বাবা
বাঁচতো।এসব চিন্তা করতে করতেই মিসেস
রহমান স্বাতীর রুমে গেলেন। কিভাবে
বলবেন বুঝতে না পেরে শেষমেশ বলেই
দিলান, 'আমি বলি কি একটা ডাক্তার
দেখালে হয় না মা? যাবি নাকি?' স্বাতী
কোনরকম মানা না করেই বললো হ্যাঁ যাব।
মিসেস রহমান তার এই আচরণেও অবাক
হলেন।
বিকেল পাঁচটায় স্বাতী আর তার মা
ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। তাদের
সিরিয়াল অনেক পরে ৫৩ নাম্বার এখন
চলছে মাত্র ৭নাম্বার। মিসেস রহমান মনে
মনে ভয়ে আছেন এখনও অনেক দেরী উনার
নিজেরও বিরক্ত লাগছে। স্বাতী যদি এই
অবস্থায় থাকতে না পারে তাহলে আর
দেখানো সম্ভবই হবে না। তিনি দেখলেন
স্বাতী তার পাশের চেয়ারে বসা
প্রতীবন্ধী মেয়েটার সাথে কথা বলছে
হেসে হেসে, যাক তিনি একটু স্বস্তির
নিঃশ্বাস ফেললেন। অবশেষে তাদের
সিরিয়াল আসলো স্বাতীকে নিয়ে উনি
ভিতরে ঢুকলেন, কিন্তু এখানেও বিরাট
ঝামেলা, ডাক্তারের একজন সহকারি বসে
আছে কম্পিউটারের সামনে।সেখানে একজন
একজন করে রোগী যাচ্ছে আর সে তাদের
প্রেসার মেপে কম্পিউটারে রোগের বিবরণ
লিখছে তারপর আবার সেটা টাইপ করে
প্রিন্টার থেকে বের করে আরেকজনকে
দিচ্ছে এটা সে ডাক্তারকে নিয়ে দিচ্ছে।
যে ছেলেটা টাইপ করছে একটু পরপর বিদ্যুৎ
চলে যাওয়ায় তার কম্পিউটারে পাওয়ার
সাপ্লাই হতে দেরী হচ্ছে ইউ পিএস চালু
হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে সে বসে আছে তার
কারণে রোগীদের ও বসে থাকতে হচ্ছে।মহা
বিরক্তিকর অবস্থা! এসব করতে করতে
স্বাতীদের যখন ডাকা হলো তখন রাত প্রায়
রাত ৯টা। ডাক্তারের সামনে বসে আছে
তারা। স্বাতী বসে আছে চুপ করে। মনিটরের
দিকে তাকিয়ে ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন
রোগী কে? নাম স্বাতী? স্বাতী মাথা
নাড়লো।তারপর ডাক্তার আবার জিজ্ঞেস
করলেন হুম তা কি সমস্যা কী?দীর্ঘ সময় চুপ
থাকার পর হঠাত স্বাতী বললো সমস্যা কি
তা জানার জন্যেই তো এসেছি! জানলে
আপনার কাছে আসতাম না। ডাক্তার হতচকিত
হয়ে তাকিয়ে রইলেন,এমন উত্তর উনি এই
প্রথম শুনলেন উনার ডাক্তারী জীবনে!
মেয়েটার কি তাহলে কোন মানসিক সমস্যা?
এবার উনি আবার একই প্রশ্ন করলেন।
মেয়েটা চুপ করে আছে দেখে উনি মায়ের
দিকে উত্তরের আশায় মিসেস রহমান কিছু
বলতে যাচ্ছিলেন তখনই স্বাতী অদ্ভূত আচরণ
করলো ডাক্তারের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে উনিও ছুটলেন মেয়ের
পিছন পিছন।
আবারও সে রকম একটি রাত... .স্বাতী তার
ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। আসার পর
আর সে তার মায়ের সামনে যায় নি।
আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বাতী খেয়াল
করলো আজকের চাঁদের আলোটা কেমন অন্যরকম।
হঠাত-ই তার মনে ঢেউ খেলে গেলো তার
মনে হতে লাগলো সমস্ত আলো যেন উপচে
পড়ছে আজ! তবে সে কেন এই একই কষ্টকে পুষে
সুখটাকে দূরে রাখবে। স্বাতী ভাবে সে
চাইলেই তো পারে ছাদে গিয়ে এই সমস্ত
চাঁদের আলোয় আলোকিত হতে। তবে সে কেন
এই আবছা আলোয় বসবাস করছে?হয়তো তার
জন্যে অপেক্ষা করছে সেরকম একটি
চন্দ্রালোকিত রাত কিংবা সুখ নিয়ে আসা
ভোরের সূর্যোদয়! আর অপেক্ষা করে না
স্বাতী দৌড়ে ছুটে যায় জ্যোৎস্নার আলোয়
স্নান করতে অথবা সূর্যালোকিত কোন দিনের
পানে। সে তার অতীত জীবনের যাবতীয়
গ্লানী, ব্যাথা ভুলে যেতে চায় ভবিষ্যতের
সুখের দিকে অগ্রসর হয়ে। আর আবছা আলোয়
স্বাতী তার জীবনকে অন্ধকার করে রাখবে
না। সে হবে আলোর অভিযাত্রী......
Hi and welcome here! When I started on steemit, my biggest problem was to find interesting people to interact with. So, to help newcomers getting started I created a directory with other interesting and or talented steemians to follow or interact with. Feel free to check it out at https://www.steemiandir.com I am sure it will help you find like-minded people. Enjoy your stay here and do not hesitate to contact me if you have any questions!
Welcome to Steem @freelancerwahid.
Do read A thumb rule for steemit minnows - 50:100:200:25 for starter tips.
Spend time reading Steem Blue Paper to know how Steem blockchain works and if you still have any queries ask them on our Ask me anything about Steemit post and we will try to answer that.
You can earn Steem rewards for reading and sharing your insights using our Highlights Extension
All the Best!!!
Congratulations @freelancerwahid! You have completed the following achievement on the Steem blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your Steem Board and compare to others on the Steem Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Vote for @Steemitboard as a witness to get one more award and increased upvotes!
Welcome to steemit @freelancerwahid.
Welcome the new steemians. Have a great day!
I upvote people that use my Partiko referal. And good writers I delegate some steem to them. Starting on steem is slow but make sure to post every day!
Here’s my invite link: https://partiko.app/referral/smallearth, you will get 3000 Partiko Points for sign up bonus, and you can exchange them into Steem token!
Hope to see more of your post soon.
Cheers
Posted using Partiko Android