Heart touching story
ওর সাথে প্রথম পরিচয় ২০১৩ সালে ।
ক্যাম্পাসে তখন নতুন এসেছি আমি ।
সবে ক্লাস শুরু হয়েছে । প্রেম ভালোবাসা ব্যাপারটা বুঝে উঠার আগেই প্রস্তাব এসেছিল তার থেকে ।
ছেলে হিসাবে আমাকে সুদর্শনই বলা চলে । ৬ ফুটের মতো লম্বা । শরীরটা হ্যাংলা হলেও দেখতে স্মার্ট । ক্রিকেট আমার নেশা । পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলি আমি । নারী , প্রেম , ভালোবাসা - এই ব্যাপারগুলো সেভাবে কখনো নাড়া দিতে পারে নি ।
কিন্তু ও নাড়া দিতে পেরেছিল । কেন দিতে পেরেছিল তা জানি না । তবে এটা মনে আছে রূপা প্রস্তাব দেয়ার ঠিক সাত দিনের মাথায়ই আমরা রিলেশনে জড়াই । জীবনে কি সবসময় একা থাকা যায় ? যায় না । হয়তো সেই কারনেই রূপার সাথে আমার সম্পর্কটা হয়ে গিয়েছিল ।
আমাদের পথ চলাটা ছিল সুন্দর ।
ও আমার কেয়ার নিতো । আমি ওর কেয়ার নিতাম । পড়াশোনা আর ক্রিকেট চলতো সমান তালে । পারস্পরিক আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা ভালো ছিল । আমি মাঠে গেলে সেও আমার সাথে মাঠে যেতো । আমাকে উৎসাহ দিতো ।
রিলেশনের ঠিক এক মাসের মাথায় আমরা প্রথম শারীরিক সম্পর্কে জড়াই । ভাববেন না শুধু শরীরের লোভেই আমরা সম্পর্কে জড়িয়েছি । প্রস্তাবটা এসেছিল রূপার থেকেই । আমিও আর না করি নি । নির্জনে একজন আরেকজনকে ভালোবেসেছি উজাড় করে । আমাদের সেই উজাড় করা ভালোবাসার সাক্ষী ছিল আমার রুমটা ।
ভালোবেসেছি । প্রেম করেছি । কিন্তু আগ্রহ আমাদের ফুরোয়নি । ঠিক আগের মতোই কেয়ারিং ছিলাম । আগের মতোই ডেডিকেটেড । আমার ফোন ধরতে দেরি হলেই বকা দিতো রূপা । আমাকে অন্য কোন মেয়ের সাথে দেখলেই যা নয় তাই বলে গালি দিতো । যতো গালিই দিক না কেন এগুলোর ভেতরে কিন্তু একটা অমোঘ ভালোবাসাও ছিল । এই কারনেই আমাকে অন্য কারো সাথে ভাগ করতে চাইতো না ।
আমাদের দুই পরিবারের সবাই সম্পর্কের কথাটা জানতো । আমরা জানতাম আমাদের বিয়ে হবে । আর তাই প্রেমের মধ্যে কোন ঘাটতি রাখিনি । প্রেম করেছি প্রেমের মতোই । কখনো সেটা শারীরিক । কখনোবা সেটা মানসিক ।
আমি আস্তে আস্তে বুঝলাম আমার প্রতি রূপার কেয়ারিংটা সন্দেহে পরিনত হচ্ছে । যদিও আমি কখনোই তার বিশ্বাস ভাঙার মতো কিছু করি নি , কিন্তু এরপরেও তার বিশ্বাস অর্জন করতে আমাকে বেগ পেতে হতো ।
ফেসবুকের পাসওয়ার্ড রূপার কাছেই থাকতো । যদিও আমি কোনদিন তার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড পাই নি, জিজ্ঞেসও করি নি কখনো, কিন্তু এরপরেও দেখতাম কারনে অকারণে তার অনেক বেশি সন্দেহ ।
,
কোন মেয়ে আমাকে মেসেজ করলেই সে তাকে যা তা বলে ব্লক করে দিতো । আমার কোন ক্লাসমেট বান্ধবী আমার সাথে মিশতে পারতো না । এমনকি তারা আমার সাথে এড ও ছিল না ( যতদিন সম্পর্ক ছিল ) আমি কখনো মেয়েদের সাথে কথাও বলতে পারতাম না । আমি বুঝলাম রূপার সন্দেহবাতিক আছে ।
মেয়েটার প্রতি আমার ভালোবাসা কমে নি । কিন্তু এরপরেও আমি রিলেশনে থেকে হাপিয়ে উঠলাম । একটা মানুষ এতো সন্দেহ করে কিভাবে ? এখনো বিলিভ করতে না পারলে কখন করবে ?
রূপারও অনেক ছেলে বন্ধু ছিল । কিন্তু আমি তাদেরকে নিয়ে বাজে চিন্তা করি নি । সন্দেহ তো দূরের কথা । আমাদের ভালোবাসার সম্পর্কটা কেমন জানি তেঁতো হয়ে যেতে থাকলো । ভালোবাসার কমতি ছিল তা বলবো না । তবে টিউনটা কেন জানি আলাদা হয়ে যেতে লাগলো । তবে সময়ে সময়ে মান অভিমানের মেঘটা সরে গিয়ে ঠিকই সূর্যটা হেসে উঠতো । জমে উঠতো ভালবাসাটাও ।
আগের সেই রোমান্স । সেই আদর । সেই ভালোলাগা গুলো পূর্নমাত্রায় ফিরে পেতাম তখন । দিনগুলো ভালোই যাচ্ছিল ।
আমাদের সম্পর্কের বয়স তখন ৩ বছর ।
মাঝে মাঝেই রূপার ফোন ওয়েটিং পাই । জানি না কেন এমন করে । জিজ্ঞেসও করিনি কখনো । তবে আগের সেই কেয়ারটুকু দেখায় না । দেখা হতো নিয়মিতই । কথাও হতো সবসময় । তবে আমি বুঝতাম কাছে থেকেও আমরা অনেক দূরে । সেই দূরত্বের কোন হিসাব নেই ।
নিয়ম করে একটা সময়ে তার ফোন ওয়েটিং থাকতো । এরপর গভীর রাতে আমরা কথা বলতাম । আমি কিছুই সন্দেহ করি নি । কারন রূপা আর যাই করুক এমন বাজে কিছু করবে বলে আমার বিলিভ হয় না ।
বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার গিয়েছিলাম সেবার ।
জানি না আমার কপাল কেন এমন খারাপ হবে । বন্ধুরা আমাকে ভালোবাসে বলেই হয়তো ব্যাপারটা চেপে গিয়েছিল । নতুবা আমিও জানতে পারতাম রূপা তখন কক্সবাজারে অন্য একটা ছেলের সাথে ছিল । ছেলেটা কে তার পরিচয় তক্ষুনি জানতে পারি নি ।
তবে আমাদের ফর্মাল রিলেশনটা কিন্তু চলছিল । ভুল করেও আমি বুঝতে পারিনি আমাদের মধ্যে এসে পড়েছে অন্য কেউ ।
কে সেই ছেলে ?
পরে বলছি । তারও আগে জানিয়ে রাখি আমার সাথে সম্পর্কের আগেও রূপার একটা সম্পর্ক ছিল । আমি রূপার জীবনে প্রথম নই । বন্ধুদের মধ্যে তাকে নিয়ে মাঝে মাঝে কিছু কথা শুনতাম । তবে অন্ধ বিশ্বাস ছিল বলে খুব একটা পাত্তা দিতাম না ব্যাপারগুলো ।
শুধু তাই নয় আমার সাথে সম্পর্কের আগেও ইকোনোমিক্সের সাথে একটা ছেলের সাথে রূপার ১ মাসের রিলেশন ছিল । সেই রিলেশনে কি হয়েছিল তা জানি না । তবে বুঝতে পারি ভালো কিছু হয় নি । আমি তার জীবনে কতো নম্বর তা জানি না ।
শুধু এইটুকু জানি কক্সবাজারে যে ছেলেটাকে রূপার সাথে দেখা গিয়েছিল সে ছিল তার would be husband ।
রূপার বিয়ের ঠিক ২ সপ্তাহ আগেও আমরা এক বিছানায় সময় কাটিয়েছি । তখনো জানতে পারিনি দুই সপ্তাহ বাদেই সেই ছেলের সাথে তার বিয়ে ।
বিয়ের ১ সপ্তাহ আগেও আমরা একজন আরকেজনের সাথে ছিলাম ।
এরপর আচমকাই যোগাযোগ বন্ধ ।
রূপার সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি । হলের সামনে গিয়েছি । ওর বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ করেছি । বিভিন্নভাবে কথা বলার চেষ্টা করেছি । কিন্তু পারি নি ।
আমার আকাশের সুন্দর সূর্যটাকে কেউ যেন মেঘ দিয়ে ঢেকে দিলো । সেই আকাশ এখন আর হাসে না । সূর্যটাকে আর দেখা যায় না ।
ঠিক ১ সপ্তাহ পরে গিয়ে জানলাম সে আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে, আমাদের ৩ বছরের রিলেশনের যবনিকা হয়ে গেছে । অথচ আমি কিছুই জানতে পারলাম না ।
কার সাথে বিয়ে ?
পাত্র কে ?
আমাকে বললে না কেন ?
আমাদের ব্রেকাপ তো হয় নি ?
এতোদিনের সম্পর্ক তাহলে কি ছিল ?
কেন এমন করলে ?
হাজারটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরছে । অসহায় আমি কোন উত্তরই খুঁজে পাচ্ছি না । যে মানুষটা আমাকে উত্তর দেবে সে এখন অন্যের ঘরনী ।
না জানিয়ে বিয়ে করার কয়েকদিন পর হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে রাতে কল দিলো রূপা । আমাকে বলল তাকে যেন বিরক্ত না করি , ওর বিয়ে হয়ে গেছে,। বিশ্বাস করিনি বলাতে পালটা উত্তর আসে প্রোফাইল পিকচার চেনঞ্জ করছি দেখো,। ছবিটি ছিল তার বিয়ের। সেই মুহুর্তে একটা ছেলের অবস্থা কিরকম হতে পারে তা শুধু ওই ছেলেই জানে । অন্য কেউ নয় । আমার পৃথিবী সেদিন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল । চোখের সামনে আমি নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে দেখেছি ।
কেঁদেছি অনেক ।
চোখের জলে ভাসিয়েছি দুঃখগুলোকে ।
রূপা ফিরে আসে নি । ভালোবাসাও আর ফিরে পাই নি । কখনো জানতে চেয়েও জানতে পারিনি আমার সাথেই কেন এমন হলো । কি করেছিলাম আমি ?
এরপরে কি আমি নষ্ট হয়ে গেছি ?
নাহ একদমই না । রূপার গল্পটাকে কবর দিয়ে আমি ঠিকই আমার গল্পটা লিখে গেলাম । ক্রিকেটে মন দিলাম । পড়াশোনাও চলছে । এইবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিবো ।
আমি নষ্ট হই নি ।
আমি উচ্ছন্নেও যাই নি ।
আমি রূপাকে ক্ষমা করেছি । তবে রূপার মতো মেয়েরা আর কোথাও ক্ষমা পাবে কিনা জানি না ।
ওর স্বামীর জন্য মাঝে মাঝেই আফসোস হয় !! তবে জীবনের এপাড়ে এসে আমি ঠিকই আপন গতিতে চলছি । এখন আর রূপাদের গল্প আমার চোখ ভেজায় না । তাঁদের আবেগ আমাকে স্পর্শ করে না ।
আমি মানে শুধুই আমি । আর কেউ নয় ।
জীবনটা গুছিয়ে নিচ্ছি রূপাকে ছাড়াই ।
রূপাদের মতো মেয়েরা যদি আমাকে ছেড়ে চলতে পারে, তাহলে আমি নই কেন ?
হ্যা আমিও পারি ...আমাদের পারতে হয় ।
জীবনের প্রতিটা কষ্ট আমাকে শিখিয়ে দিয়ে গেছে যা চলে যায় তা কখনো অর্জন করার জন্যই আসে নি । আর যা তোমার হবে তা কেউ তোমার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না ।
মানুষ নিজেই নিজের দুর্ভোগের জন্য দায়ী ।
এখনো শাটলে যাই । আগের মতো কারো জন্য সিট ধরি না । আগের মতো আমার ফোনটা ব্যাস্ত থাকে না । আসলে ব্যাস্ত থাকার দরকার হয় না । জীবন আমাকে অন্য কিছু উপহার দিয়েছে ।
সেই উপহার রূপার থেকেও দামী । সন্দেহ নেই :-
This post has received a 0.64 % upvote from @booster thanks to: @rbit.