ভালো ঘুম ভালো নেতৃত্ব
একজন মানুষের প্রতি রাতে কতটুকু ঘুম দরকার? আট ঘণ্টা ঘুমের পরামর্শের কথা অনেকেই জানেন। কিন্তু কাজ, পরিবার বা সামাজিক বিষয়গুলোর কারণে অনেকেই ১৬ ঘণ্টার বেশি কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাই হিসাব মেলানো সহজ হয় না। অনেকে রাতে চার-পাঁচ ঘণ্টা ঘুমকেই মেনে নেন। ঘুমের সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা তাই বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁরা বলছেন, কম ঘুমানোর মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্ব পর্যায়ে থাকা মানুষগুলোর ক্ষেত্রে তা বেড়ে গেছে। ন্যাশনাল হেলথ ইন্টারভিউ সার্ভের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন নাগরিকদের রাতে ছয় ঘণ্টার কম ঘুমানোর অনুপাত ১৯৮৫ সালে ছিল ২২ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ২৯ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৭ সালে সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভ লিডারশিপ নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা চালায়। এতে দেখা যায়, এসব মানুষের অবস্থা আরও করুণ। রাতে তাঁদের ৪২ শতাংশ ছয় ঘণ্টা বা তার চেয়ে কম ঘুমায়।
অথচ রাতে ঘুমানোটা অনেক জরুরি। এর সুফলের কথা সবারই জানা। ভালো ঘুম হলে স্মৃতি সুসংগঠিত হতে পারে, আবেগের অভিজ্ঞতাগুলো প্রক্রিয়াকরণ করে এবং মস্তিষ্কের শক্তি জোগায়। অন্যদিকে, ঠিকমতো ঘুম না হলে বিচারবুদ্ধি ঠিক থাকে না, আত্মনিয়ন্ত্রণে সমস্যা ও সৃজনশীলতায় ঘাটতি দেখা যায়। তবে নেতৃত্ব পর্যায়ের ব্যক্তিদের ঘুম কম হলে প্রতিষ্ঠানে ওপর কী প্রভাব পড়ে, সে বিষয়ে খুব বেশি তথ্য ছিল না। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ে লেখা এক প্রতিবেদনে গবেষক ক্রিস্টোফার এম. বারনেস লিখেছেন, তাঁর করা গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের ঘাটতিতে ব্যক্তিগত ক্ষতির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়। ব্যবস্থাপকেরা ঠিকমতো না ঘুমালে তাদের কর্মীদের কাজের অভিজ্ঞতা ও কাজের ফলাফলে প্রভাব পড়তে দেখা যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যবস্থাপকেরা ঠিকমতো না ঘুমালে বা বিশ্রাম না নিলে কর্মীদের প্রতি ধৈর্য রাখতে পারেন না। তাঁদের প্রতি বাজে আচরণ করেন এবং নিজের দক্ষতা দেখাতে পারেন না। কর্মীদের সঙ্গে তখন সম্পর্ক খারাপ হয়। তখন তাঁদের অধীনস্তরাও ঘুমের ঘাটতিতে ভোগেন এবং অনৈতিক আচরণ করেন। কিন্তু এ আচরণের ব্যাপারে তাঁঁরা ঠিকমতো বুঝতে পারেন না।
গবেষকেরা বলেন, ঘুমের ব্যাঘাত হলে ব্যবস্থাপকেরা কর্মীদের ঠিকমতো উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতে পারেন না। ২০১৬ সালে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, ঘুম ভালো না হলে ব্যবস্থাপকদের মেজাজ ঠিক থাকে না। কর্মীদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। তাঁদের নেতিবাচক আচরণ ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণে থাকে না বলে কর্মীরাও বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন।
গবেষকেরা বলেন, নেতা যদি ঠিকমতো বিশ্রাম না নেন, তখন পুরো ইউনিটকে তার মূল্য দিতে হয়। এ ধরনের সমস্যা সমাধানের অবশ্য ভালো উপায় রয়েছে। ঘুমের মান ও সময় বাড়াতে হবে। নির্দিষ্ট সময় বেঁধে ঘুমাতে যাওয়া বা ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন, অ্যালকোহল বা নিকোটিন বাদ দিতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। এর বাইরে কিছু আরাম করা বা কাজের চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে হবে।
এর বাইরে স্মার্টফোনের আচরণ নিয়েও নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে। ঘুমানোর জন্য আলো ও মেলাটোনিন নামের বায়োকেমিক্যালের যথেষ্ট ভূমিকা আছে। মেলাটোনিন হলো একধরনের হরমোন, যা ঘুম ও অন্ধকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। ঘর পুরোটা অন্ধকার না হলে শরীরে মেলাটোনিন উৎপন্ন হতে দেরি হয়। অর্থাৎ মেলাটোনিন উৎপন্ন না হলে দুচোখের পাতা এক হবে না। মাঝারি পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাত নয়টার পর স্মার্টফোন ব্যবহার করলে তা ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে সহজ সমাধান হলো রাতে স্ক্রিনের দিকে তাকানো বন্ধ করতে হবে। অনেকের পক্ষে অবশ্য এটা সম্ভব নয়। তখন নীল আলো ফিল্টার করে—এমন গ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
অনেকেই আবার ২০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত ঘুম দেন। কাজের সময় ঘুমের বিষয়টিকে অনেকেই সময় নষ্ট বলে মনে করেন। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, সংক্ষিপ্ত এ ঘুম কিন্তু দারুণ কাজে লাগে। ২০ মিনিট পর্যন্ত ঘুমাতে পারলে কাজের মান ভালো হয়। সংক্ষিপ্ত এ বিশ্রাম শেখার প্রক্রিয়া বাড়ায়, ভুল কমায় ও জটিল কাজের জন্য স্ট্যামিনা বাড়িয়ে দেয়। স্মৃতি উন্নত করতে দিনের বেলায় আট মিনিটের ঘুমও যথেষ্ট বলে এক গবেষণায় দেখা গেছে।
Congratulations @mit.bangla! You have completed the following achievement on the Steem blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Award for the number of upvotes received
Click on the badge to view your Board of Honor.
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Do not miss the last post from @steemitboard:
Congratulations @mit.bangla! You received a personal award!
You can view your badges on your Steem Board and compare to others on the Steem Ranking
Do not miss the last post from @steemitboard:
Vote for @Steemitboard as a witness to get one more award and increased upvotes!