ধ্বংসের পথে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স, প্রতি বছর বছর কমেই চলেছে কিন্তু কেন?

in #new6 years ago

রেকর্ট সংখ্যক ১০ লক্ষ ৮ হাজার ৫ শত ২৫ জন কর্মী গত বছর চাকুরী নিয়ে বিদেশে গেছেন। বিদেশে কর্মরত কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও প্রবাসি আয় অথবা রেমিটেন্স কমেছে ২০১৭ সালে। টানা দ্বিতীয় বছরের মত রেমিটেন্স কমেছে। প্রবাসি কল্যান মন্ত্রনালয়ের হিসাবে ২০১৭ সালে রেমিটেন্স এসেছে ১৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। যা গত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। যেখানে ২০১২ সালের দিকে ছিল ১৪ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার, ২০১৩ সালে ছিল ১৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার, ২০১৪ সালে ছিল ১৪ দশমিক ৯৪ বিলয়ন ডলার, ২০১৫ সালে ছিল ১৫ দশমিক ২৭ বিলয়ন ডলার যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্জন। এখান থেকে কমা শুরু করে টানা দুই বছর কমে। ২০১৬ তা দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার এবং গত বছর ২০১৭ তে কমে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে। অথচ গত ৬ বছরে ৩৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮ শত ৭২ জন বাংলাদেশী চাকুরি নিয়ে বৈদ পথে বিদেশ গেছেন। তার পরও কেন রেমিটেন্স কমেছে তার প্রশ্নের জবাব এখনো অজানা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানিয়েছেন সরকার গবেষনা করছে কেন প্রবাসিদের দেশে টাকা পাঠানোর পরিমান বছর বছর কমছে। তবে বিশেষজ্ঞ্ররা বলছেন রেমিটেন্স কমার প্রধান কারন অবৈধ মোবাই ব্যাংকিং ও হুন্ডি। মধ্যেপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মীদের আয় কমে যাওয়াও এর একটি কারন। ২০১৭ সালে রেকর্ট সংখ্যক কর্মী বিদেশ গেলেও একই বছরে রেকট সংখ্যক অদক্ষ কর্মী বিদেশ গেছেন। যে টাকা তারা পান তার একটা বড় অংশই চলে যায় বিদেশে থাকা খাওয়ায়। এতে করে দেশে টাকা পাঠাতে পারে না। জ্বালানি তেলের দাম পরে যাওয়ায় মধ্যেপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতিক মন্দাকে রেমিটেন্স কমার একটি কারন হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষন করে দেখা গেছে তেল নির্বর নয় এমন দেশ সিঙ্গাপুর ও মালয়সিয়া থেকেও রেমিটেন্স কমেছে। এই দুই দেশ থেকে রেমিটেন্স কমার হার মধ্যেপ্রচ্যের দেশ গুলো থেকেও বেশি। প্রবাসি কর্মী এবং দেশে তাদের সজনদের সাথে কথা বলে অনোসন্দান করে জানা গেছে প্রবাসি আয় কমার প্রধান কারন মধ্যেপ্রচ্যের মন্দা নয় বরং মোবাইল ব্যাংকিং ও হুন্ডি। যদিও বাংলাদেশের কোন ব্যাংকের বিদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নেই বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু প্রবাসি কর্মীরা জানিয়েছেন বিদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেওয়া বিকাশ, রকেট, এম ক্যাশ ও ইউ ক্যাশ মধ্যেপ্রচ্যের দেশ, মালয়সিয়া ও সিঙ্গাপুরে রয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে প্রবাসি বাংলাদেশিরা জানান সে দেশে বাঙালি অর্ধসিত এলাকা গুলোর দোকানে দোকানে বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রয়েছে। তারা সেখানে টাকা দেন তা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সজনদের মোবাইলে পৌছে যায়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেভাবে মোবাইলে লেনদেন করা যায় সিঙ্গাপুর থেকেও তা করা যায়। মোবাইল ব্যাংকিং বলা হলেও আসলে তা হুন্ডি। প্রবাসি কর্মীদের দেওয়া তথ্য এবং দেশের বিশেষজ্ঞদের মতামত অনোযায়ী দুই উপায়ে বিদেশ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশে টাকা আসে। প্রথম উপায় বিদেশ থেকে টাকা দেশে পাঠাতে মোবাইল ব্যাংকিং এ যে সিম ব্যবহার করা হয় তা আন্তর্জাতিক রোমিং করা থাকে। যে পরিমান টাকা দেশে পাঠানো হয় সেই পরিমান বিদেশি মূদ্রা নেন মোবাইলের মাধ্যমে টাকা পাঠানো ব্যবসায়িরা। মোবাইল ব্যাংকে থাকা টাকা সজনদের মোবাইল নাম্বারে পাঠানো হয়। বিদেশে বসে থাকা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা করা বাংলাদেশি এজেন্টদের একাউন্ট রিচার্জ করা হয় বাংলাদেশ থেকে। বিদেশ থেকে এসব টাকা পাঠাতে এজেন্টরা হাজারে বিশ টাকা চার্জ নেন। অন্য দিকে বৈদভাবে দেশে টাকা পাঠাতে হাজারে ৩০ থকে ৬০ টাকা ব্যয় হয়। অল্প খরচে টাকা পাঠানোর সুযোগ পেয়ে প্রবাসি কর্মীরা অবৈদ মোবাইল ব্যাংকিং কে বেছে নেন। বৈদভাবে টাকা পাঠাতে গেলে ব্যাংকে গিয়ে টাকা তোলতে হয়। কিন্তু মোবাইলে পাঠালে টাকা সজনরা বাড়িতে বসেই পান। গ্রামে থাকা প্রবাসি সজনরা কষ্টকরে ব্যাংকে যেতে হয় না। এ কারনে প্রবাসিরা অবৈদ জেনেও কিছুটা সাশ্রয়ের জন্য মোবাই ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা পাঠান। এছাড়াও তারা জানিয়েছেন ব্যাংকে টাকা পাঠাতে বেশি ফি লাগে। প্রবাসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা অনেকেই বিদেশে অতিরিক্ত সময় কাজ করেন। এই আয়ের বৈদ প্রমান তাদের নেই। এ কারনে চাইলেও ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারেন না। তাই অবৈদ মোবাইল ব্যাংকিং বেচে নেন। বাংলাদেশে রিজার্ভের বড় একটি অংশ রেমিটেন্স। বছর বছর রেমিটেন্স কমলে রিজার্ভ কমবে বলে সতর্ক করেছেন অভিবাসন গভেষনা বিষয়ক প্রতিস্থান। তাদের মতে দেশে টাকা পাঠানোর পদ্দতি আরো সহজ করা উচিত। তাদের মতে রেমিটেন্স পাঠানোর ফি হওয়া উচিত নাম মাত্র। প্রবাসিরা যে অর্থ আয় করেন তাতে সরকারের কোন সহযোগিতা নেই, তাই তাদের আয়ের টাকা দেশে পাঠানোর সময় কোন ফি থাকা উচিচ নয়। এ সুবিদা চালু না করলে প্রতি বছর রেমিটেন্স কমতেই থাকবে। কারন প্রবাসিদের হাতে এখন দেশে টাকা পাঠানোর অনেক বিকল্প পথ রয়েছে। তাছাড়া অনেক প্রবাসি বলেন তারা টাকা বৈদভাবেই পাঠাতে চান কিন্তু তাদের কম খরচে টাকা পাঠানোর সুযোগ দিতে হবে।
remitence.jpg