কবিতাবিহীন জীবন -- পেটার হান্‌ট্‌কে | অনুবাদ: মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

in #rndailylife3 years ago

peterin@1.jpg
২০১৯-এ সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার পেলেন পেটার হান্‌ট্‌কে। যদিও তাঁর এই পুরস্কারপ্রাপ্তি নতুন করে একটি পুরনো বিতর্ককে সামনে তুলে এনেছে। পেটার হান্‌ট্‌কে একসময় খোলাখুলিভাবে যুগোস্লাভিয়া ও সার্বিয়ার যুদ্ধাপরাধী ও গণহত্যাকারী মিলোসেভিচ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁর শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থেকেছিলেন। পেটার বলেছিলেন নব্বইয়ের দশকে বল্কান যুদ্ধের সময় সারাজেভোর মুসলিমদের নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বই তাদের হত্যার জন্য দায়ী, সার্বদের এতে কোনও হাত নেই। পেটারের এই রাজনৈতিক মত সেইসময় রাজনৈতিক ও সাহিত্যিক মহলে আলোড়ন তুলেছিল। সুইডিশ নোবেল কমিটির পেটারকে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা আবার এই পুরনো বিতর্ক সামনে নিয়ে এনেছে। নোবেল পুরস্কারের যোগ্যতামান নির্ণয়ে লেখকের সাহিত্য প্রতিভার বিচারের পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক মতকেও একইরকম গুরুত্ব দেওয়া উচিত কিনা, সেই প্রাচীন প্রশ্নটি আরেকবার তুলে এনেছে। সলমন রুশদি-সহ একগুচ্ছ বিশিষ্ট সাহিত্যিক নোবেল কমিটির এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছেন।

কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রনির্মাতা পেটার-এর জন্ম অস্ট্রিয়ার গ্রিটেন-এ, ১৯৪২-এ। তিনি আইন নিয়ে পড়াশুনো করলেও তাঁর গভীর অনুরাগ ভিটগেনস্টাইনের ভাষাতত্ত্বে। ১৯৬৬ সালে বেরোয় তাঁর প্রথম উপন্যাস, সেই বছরই ফ্রাঙ্কফুর্ট-এ প্রথম অভিনীত হয় তাঁর নাটক 'দর্শকদের চটিয়ে দেওয়া'। 'স্বয়ং-সোপর্দ' আর 'কাসপার' তাঁর আরও দুটি চমকপ্রদ নাটক। ষাটের দশকের মধ্যভাগে তাঁর নাটকের প্রভাব বা অভিঘাত ইউরোপে সেইরকম হয়েছিল, পঞ্চাশের দশকে ঠিক যেমন প্রভাব বিস্তার করেছিল সামুয়েল বেকেটের নাটক। হান্‌ট্‌কের প্রথম কবিতার বই 'অন্তর্জগতের বহির্জগতের অন্তর্জগৎ' (১৯৬৯), এবং পাঁচ বছর পর বেরোয় দ্বিতীয় কবিতার বই 'অর্থহীনতা আর সুখ' (১৯৭৪)। এই নতুন কবিতার বইটিতে হান্‌ট্‌কে আরও প্রত্যক্ষ অথচ সূক্ষ্মভাবে তাঁর বক্তব্যকে উপস্থিত করার উপায় আবিষ্কার করেছেন— এবং তেমনি নাটকীয়ভাবে। তিনটি দীর্ঘ ও পরস্পর-সংলগ্ন কবিতায় তিনি অর্থহীনতা ও সুখের প্রসঙ্গকে ক্রমগভীর স্তরান্বয়ে সাজিয়ে হাজির করেছেন এবং বিশদ করেছেন। রচনার ভঙ্গি সাঙ্গীতিক, তিনটি জটিল ও বহুস্বরঘাতিক আন্দোলন। প্রথমটি অন্তরঙ্গ ও মমত্বময়, দ্বিতীয়টিতে সন্ধিক্ষণ, তৃতীয়টি যুগপৎ বেদনায় অস্থির ও প্রচণ্ডভাবে হাস্যকর— অথচ সেইসঙ্গে আধুনিক বহুজাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কারিগরি বিদ্যার অমোঘ অঙ্গুলিহেলনে পরিচালিত সমাজে একটি বিচ্ছিন্ন মানুষের বেঁচে থাকার মানে খোঁজার, মাথা-কোটার চেষ্টায় আর্ত, উন্মাদক ও স্পর্শাতুর।

আলোচ্য বইটির প্রথম কবিতাটি পাঠকের জন্য
peter.jpg