আমরা নতুন করে ইতিহাস লিখতে তৈরি
১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপে পরপর দুবার ইতালিকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন ভিতোরিও পোজ্জো। যে রেকর্ড অক্ষুণ্ন এখনো। তবে এবার সেই কীর্তি ছোঁয়ার সুযোগ জোয়াকিম লোর সামনে। ব্রাজিল বিশ্বকাপ জেতা জার্মানি রাশিয়ায়ও অন্যতম ফেবারিট, র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর দল। লো পারবেন জার্মানিকে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতাতে?
প্রশ্ন: ইতালি (১৯৩৪ ও ১৯৩৮) ও ব্রাজিল (১৯৫৮ ও ১৯৬২) ছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো দেশ পরপর দুবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়নি। জার্মানি কি তৃতীয় দল হিসেবে এই কীর্তি গড়তে পারবে?
জোয়াকিম লো: অবশ্যই আমরা পারব। একই সঙ্গে এটাও বলতে হবে, কাজটা খুব কঠিন। বিশ্বকাপ জেতা দুর্দান্ত ব্যাপার, আর সেটাকে ধরে রাখতে পারাটা চূড়ান্ত গৌরবের। এর আগে যে দুটি দল এই কীর্তি গড়েছে, তাদের কাছে পৌঁছাতে পারাটা হবে আমাদের জন্য অনেক সম্মানের। এটা করতে পারলে আমরাই সবচেয়ে খুশি হব।
প্রশ্ন: জার্মানি তো ২০১৭ সালে কনফেডারেশনস কাপ জিতেছে। ইতিহাস বলে, কোনো দলই কনফেডারেশনস কাপ জেতার পর বিশ্বকাপ জেতেনি...
লো: এই তথ্যটা আমার অজানা নয়। কিন্তু আমরা নতুন করে ইতিহাস লিখতে তৈরি। আগে কোনো দল জেতেনি মানে এই নয় যে, আমরা নতুন কিছু করতে পারব না।
প্রশ্ন: এবার তো বলতে গেলে আপনার দলটা একেবারে নতুন। ফিলিপ লাম, মিরোস্লাভ ক্লোসা, বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগারের মতো কিংবদন্তিরা নেই। নতুন এই দল সাজানো কতটা কঠিন ছিল?
লো: অনেক বছর ধরেই আমরা তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিটি বয়সভিত্তিক দল ও প্রতিটি একাডেমিতে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। আমরা জাতীয় দলের জন্য একটা সাপ্লাই লাইন তৈরি করতে চেয়েছিলাম, যাতে কখনোই প্রতিভার অভাব না হয়। হ্যাঁ, একজন লাম, একজন ক্লোসা কিংবা একজন শোয়েইনির অভাব পূরণ করা কঠিন। কিন্তু আমাদের হাতে সম্ভাবনাময় দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছে। যারা নিজেদের প্রমাণও করেছে।
প্রশ্ন: জার্মানি তো কনফেডারেশনস কাপটাও জিতেছিল তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে...
লো: আসলে এমন একটা দল তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ যেখানে ২৩ জন খেলোয়াড়ই যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকবে। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে শুধু শুরুর একাদশ নিয়ে ভাবলে হবে না। আমরা একাদশের চেয়ে পুরো দলকে প্রস্তুত রাখাটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বিশ্বের সব দলকে হারাতে পারে—এমন দল গড়তে এ ছাড়া বিকল্প নেই।
প্রশ্ন: জার্মানি ছাড়া আর কোন দল শিরোপার দাবিদার?
লো: আমার বিশ্বাস, অনেকগুলো দল। গত তিনটি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইউরোপের দেশ। ২০০৬ বিশ্বকাপে আমাদের দেশ থেকে ট্রফি নিয়ে ফিরেছে ইতালি। তারপর চ্যাম্পিয়ন স্পেন, সর্বশেষ আমরা। এবারও ইউরোপে খেলা। তাই ফেবারিটদের মধ্যে স্পেন, পর্তুগাল ও ফ্রান্সকে রাখতেই হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকা দুই বড় শক্তি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা তো আছেই। বেলজিয়ামকেও ভুললে চলবে না! বহুদূর যাওয়ার মতো একটা দল আছে তাদেরও।
প্রশ্ন: ইতালি ও হল্যান্ডের মতো বড় দুটি দল বিশ্বকাপে নেই। ফুটবল অনুরাগী হিসেবে কতটা হতাশার?
লো: ফুটবল অনুরাগী হিসেবে অবশ্যই এই দুটি দেশকে মিস করব। ইতালি ও হল্যান্ড বিশ্ব ফুটবলকে অনেক কিছু দিয়েছে। পাশাপাশি কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলিও নেই এবার। আবার অন্যভাবে বললে, এটাই তো বিশ্বকাপ। আগেও এমন হয়েছে। বিশ্বকাপ কখনো এতটাই কঠিন যে সেরারাও এখানে পৌঁছাতে পারে না।
প্রশ্ন: বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে ঠিক কী দরকার?
লো: আসলে এ রকম ধরে ধরে কোনো তালিকা করে, সেই অনুযায়ী কাজ করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় না। প্রতিভা দরকার, কিন্তু শুধু প্রতিভা দিয়েও ট্রফি জেতা সম্ভব না। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে প্রতিটি ধাপে। আবার শুধু পরিশ্রমও বিশ্বকাপে সাফল্যের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। প্রতিপক্ষের ভুলত্রুটি খুঁজে তা কাজে লাগানো খুবই দরকার। ব্যক্তিগতভাবে এবং দল হয়ে কীভাবে খেলছেন সেটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর হ্যাঁ, একটু ভাগ্যও লাগে বৈকি!
প্রশ্ন: অস্কার তাবারেজ এবং আপনি—দুজনই দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের দায়িত্বে রয়েছেন। এটা কতটা বাড়তি সুবিধা দেয়?
লো: অবশ্যই একটু সুবিধা দেয়। আপনি খেলোয়াড়দের আরও ভালো করে জানবেন। খেলোয়াড়েরা আপনার সম্পর্কে জানবে। আপনি জানবেন কোন সমস্যায় কোথায় যেতে হবে, কার সঙ্গে কথা বলতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেও সুবিধা। অন্যদিকে প্রত্যাশার চাপটা থাকে বেশি। যদিও বিশ্বমঞ্চে এই প্রত্যাশার চাপ আর জার্মানি সমার্থক। এটা আমাদের সাফল্যের কারণেই হয়েছে। সব মিলিয়ে সুবিধা-অসুবিধা দুটিই আছে। কিন্তু আমার কাছে, দীর্ঘ সময় ধরে সবার সম্পর্কে জানাটা খুবই সুবিধাজনক।