সঙ্গী- আমার লেখা প্রথম গল্প

in #story3 months ago (edited)

আমি নিলয়। আমি অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ভর্তি হয়েছি ঢাকার বাইরে কোন এক অজানা শহরে এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে। ভার্সিটির পথ আমার তেমন পরিচিত নয়। শুধুমাত্র একবার গিয়েছিলাম ভার্সিটিতে ভর্তি হতে। আগামীকাল আমার ভার্সিটির প্রথম ক্লাস।

Pink and Black Simple Romance Book Cover_20240705_135509_0000.png

ভার্সিটির প্রথম ক্লাস করার জন্য আমার মন উদ্দীপনায় ভরে উঠেছে। নতুন কিছু মুখের সঙ্গী হওয়া, নতুন কিছু বন্ধু পাওয়ার আনন্দই আলাদা। তাই আমি আজ ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি বাড়ি থেকে দুপুর 2 টায়। স্টেশনে পৌঁছলাম দুইটা বেজে 35 মিনিটে। এরপর কিছুক্ষণ স্টেশনের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে বিকাল ঠিক তিনটায়। গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা ছিল সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে। কিন্তু কোন এক সমস্যার কারণে ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছেছে রাত টিক 12টায়। আমি স্টেশন থেকে বের হলাম ১২ টা ২০ মিনিটে। রিক্সা খুঁজলাম কিন্তু একটা রিকশাও পেলাম না।
অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম হেটেই পাড়ি দিব পুরোটা পথ। কারন আমার উদ্দেশ্য ছিল কালকে প্রথম ক্লাসটা করবোই। অবশেষে হাঁটা শুরু করলাম তিন ঘন্টার প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার পথ রওনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। আমার ভার্সিটি যেতে তিনটি ভয়াবহ পথ অতিক্রম করতে হয়। সেগুলো হলো শ্মশান বন এবং কবরস্থান।
এই তিনটি স্থান পাড়ি দেওয়া অনেক ভয়ানক ব্যাপার... তারপরও ভয় কে পেছনে ফেলে যাত্রা শুরু করলাম। সেদিন প্রকৃতি এক অপরূপ সৌন্দর্যে সেজেছিল। আমি প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করছিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা দোকান দেখতে পাই সেখান থেকে এক কাপ চা খাই এবং এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে প্যাকেটের প্রথম সিগারেটটা ধরায়। সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে এগিয়ে চলছিলাম ভার্সিটির দিকে। গাছের ডালে জোনাক পোকার মিটিমিটি আলো প্রাকৃতিক আরও সুন্দর করে তুলেছিল। চাঁদ তারার মিটিমিটি আলো দেখে মনে হয় তারা গল্পের আসরে মেতেছে। জোনাক পোকার রিমঝিম শব্দ শুনতে বেশ অপূর্ব লাগছে। হালকা দমকা হাওয়া গায়ে লাগছে.... সব মিলিয়ে এক অপূর্ব অনুভূতি সৃষ্টি করছে আমার মনে।
হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি আরিফার কল। ফোনটা ধরতেই আরিফা কোন এক অজানা কারণে আমার সাথে ঝগড়া শুরু করেছে। ঝগড়া শেষ করে সম্পর্ক বিচ্ছেদের মাধ্যমে। আরিফার সাথে ঝগড়া করতে করতে কখন যে আমার সে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছি আমার জানা নেই। সিগারেটের দিকে লক্ষ্য করে দেখি প্যাকেটের শেষ সিগারেট টা শেষ হওয়ার দূরগোড়ায়। দুই টান দিয়ে সিগারেট টা শেষ করি।
হঠাৎ নাকে ভেসে আসে জঘন্য এক ঘ্রাণ। চারদিকে তাকিয়ে দেখি শ্মশানের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমি। একটু সামনে দেখি মিটিমিটি আগুন জ্বলছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছু সময় আগে মানুষ পোড়ানো হয়েছে। হঠাৎ কিছু একটার ছায়া দেখতে পাই। পেছনে তাকিয়ে দেখি একটা লাল রঙের কুকুর একটু দূরে দাঁড়িয়ে নাড়ছে। হঠাৎ পূর্ণিমার রাত অমাবস্যার রাতে পরিণত হয়। কুকুরটি ঘেউ ঘেউ চিৎকার শুরু করে। মুহূর্তেই কুকুরটিকে একপাশে আমাকে অন্য পাশে ধাক্কা দেয় অদৃশ্য কেউ একজন। আমি বাঁশ ঝাড়ে এসে পড়ি। মুহূর্তেই আমাকে নখ দিয়ে আঁচরাতে শুরু করে অদৃশ্য কিছু আত্মা। আমি দেখতে পাচ্ছি কুকুরটিকেও ঠিক আমার মতই অবস্থা করছে। কুকুরটির চিৎকারে কানের অবস্থা খারাপ আর আমার গলা দিয়ে যেন আওয়াজই বেরোচ্ছে না। অনেকক্ষণ পড়ে থাকার পর অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়াই আমি... অনেক কষ্টে শশান থেকে বের হই... কুকুরটিও আমার সাথে বের হয়। আবারো সেই প্রাকৃতিক আমাকে মুগ্ধ করে।
ঘড়ির কাটায় সময়টা তখন দুইটা সতের মিনিট। কিছুক্ষণ হাঁটার পর আমি অনুভব করলাম আমাকে এবং কুকুরটিকে কিছু লোক ঘিরে ধরেছে। অনুভব করতে পারছিলাম আমি ঠিক বনের মাঝখানে অবস্থান করছি। কুকুরটি আবারও চিৎকার শুরু করেছে। দেখতে পাচ্ছি ঘিরে ধরার লোকগুলোর নক এবং দাঁত বিশাল আকৃতির। অনুভব করেছি কেউ আমার হাত মচকে তার দাঁতগুলো আমার শরীরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমার রক্তগুলো চুষে খাচ্ছে। কুকুরটিরও আমার মতই অবস্থা। অনেকক্ষণ পরে থাকার পর হাতের কাছে একটা লাঠি পেয়ে সেটা ধরে ওঠার চেষ্টা করি এবং সফল হই। আস্তে আস্তে বের হই বন থেকে। ব্যাগে বিস্কিট এবং পানি ছিল আমি আর কুকুরটি মিলে বিস্কিটটি শেষ করি এবং পানি খাই।

ঘড়ির কাটাই সময়টা তখন ৩ঃ৫৭ মিনিট। লাঠি ধরে আবারো হাঁটতে শুরু করি সাথে ছিল কুকুরটি। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা মেয়ের চিৎকার শুনতে পাই। চারদিকে তাকিয়ে বুঝলাম আমি এক কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। কবরটি একদম কাঁচা কবর দেখে বোঝাই যাচ্ছে ঘন্টা চার এক আগে কবরটি হয়েছে এবং ওই কবরে আজব চলছে। কুকুরটি আবারও ঘেউ ঘেউ শব্দ শুরু করে। হঠাৎ অনুভব করলাম মাটি কম্পিত হচ্ছে এবং ফাটল ধরছে আর আমি মাটির নিচে ঢুকে যাচ্ছি। তখনই আমি জ্ঞান হারাই।
আমার যখন জ্ঞান ফিরে তখন আমি নিজেকে আবিষ্কার করি অন্য এক রূপে। আমার চারপাশে অসংখ্য মানুষের ভিড়। আমার পুরো শরীরে নখের আঁচর। আমি শুয়ে আছি গ্রামের কোন এক ঘরের কোন এক খাটে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম আমি এখানে কিভাবে আসলাম। তারা উত্তরে জানাই যে, গ্রামের কোন এক লোক কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এমন সময় কবরটি এলোমেলো দেখায় এবং আমার একটি হাত কবরের বাইরে ছিল। তিনি গ্রামের সকলকে জানান এবং সকলে সিদ্ধান্তে কবরটি খোরা হয়। কবর থেকে বের করা হয় আমাকে এবং কুকুরটিকে। তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে কবরের লাশটি কই এবং আমার সাথে কি ঘটেছে কাল রাতে? আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনাটি খুলে বলি। পরবর্তীতে আমি জিজ্ঞাসা করি কুকুরটি কই? তারা উত্তরে জানায় কুকুরটিকে খালপাড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমি তাদের অনুরোধ করি কুকুরটিকে যেন নিয়ে আসা হয় এবং তাকে পশু চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। আমার অনুরোধে তারা কুকুরটিকে নিয়ে আসে এবং পশু চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করায়... সাথে আমাকেও চিকিৎসা করায় গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে। আমার সুস্থ হতে প্রায় এক মাসের মত সময় লাগে কিন্তু কুকুরটি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে। আমি কুকুরটির নাম দিই রাজা। আমি যে বাড়িতে ছিলাম ওই বাড়ির ছোট মেয়ের নাম সুমি। সে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। আমার আর রাজার দেখাশোনা করে সুমি। সুমি রাজা আর আমার মধ্যে বেশ ভাব জমে। সুস্থ হয়ে ঢাকায় ফেরার সময় সুমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
ঢাকার এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে আমি অনার্স শেষ করে মাস্টার্স এ ভর্তি হই। একদিন আমি আর রাজা পার্কে বসে ছিলাম। এমন সময় বিষাক্ত এক সাপের ছোবলে রাজার আয়ুষ্কাল ওখানেই শেষ হয়। আমি ভীষণ একা হয়ে পড়ি। মাস্টার্স শেষ করে আমি পিতার ব্যবসায় যোগ দিই।
হঠাৎ একদিন আরিফার সাথে আমার দেখা। আরিফা পুনরায় আমার জীবনে ফিরতে চাই। কিন্তু আমার সোজাসাপ্টা কথা বেইমানের জন্য আমার জীবনে কোন জায়গা নাই।
আমি সুমির কথা বাবা মাকে বলি। বাবা মা দুজনেরই সুমিকে খুব পছন্দ হয়েছে এবং আমি ওখানে থাকা অবস্থায় আমি গ্রামের লোকের মন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে সাথে সুমির পরিবারের। তাই আমার আর সুমির পরিবারের সম্মতিতে আমাদের মিলন ঘটে। সুমি হয় আমার জীবন সঙ্গী।

Sort:  
Loading...