অজানা ইতিহাস ( If you like history, then must read...)

in Incredible India4 days ago

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলেই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। সকলের সুস্থতা কামনা করে আমি আমার আজকের ব্লগটি শুরু করছি। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে। প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করে আমারও বেশ ভালো লাগে।

1000113327.jpg

এখানে অনেকেই আছেন যারা ইতিহাস পড়তে বা জানতে ভালোবাসেন। আমিও কোনো ঐতিহাসিক স্থানে ঘুরতে যেতে বা সেখানকার ইতিহাস জানতে ভীষণ ভালোবাসি। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো আমি যে শহরে বাস করি তার আনাচে কানাচেও লুকিয়ে আছে বহু ইতিহাস। শুধু মাত্র সরকারের অনিহা ও আরও নানা কারণে সে সব ইতিহাস আজ অস্তাগত। কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ি, যে নিজেই তার সময়কার কত ইতিহাস বহন করে চলেছে সেও অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত।

যাক সে সব কথা। যারা আমার পোস্ট আগে পড়েছেন তারা জানেন গত দুটি পোস্টে আমি কৃষ্ণনগরে কীভাবে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন হয়েছিল, সেই ইতিহাস এবং বেশ কিছু বারোয়ারীর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়েছি। আজ আমি বলবো আরও একটি বারোয়ারীর ইতিহাস। যে বারোয়ারীর পুজো সরাসরি রাজবাড়ির সাথে যুক্ত। প্রায় ২০০ বছর আগে রাজবাড়ির সদস্যের অনুদানে শুরু হওয়া সেই পুজো আজ ও তার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।

1000113335.jpg

কৃষ্ণনগরের মালোপাড়ায় বসবাস করে মালো উপজাতির মানুষেরা। তারা জাতিতে জেলে। যাদের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ হতো জলের মাধ্যমেই। তাদেরও ইচ্ছে হলো নিজেদের পাড়ার মায়ের আরাধনা করবে। কিন্তু তাদের মনে বড়ো প্রশ্ন জাগলো পুজোর এত খরচ বহন করবে কে? এই মালো উপজাতির মানুষেরাই রাজবাড়ির মা রাজ রাজেশ্বরী কে নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যেত। তাই তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তৎকালীন রাজাও তাদের কথা মেনে নিলেন।

কথিত আছে, তৎকালীন রাজা সতীশচন্দ্র রায়ের দ্বিতীয় রানী ভুবনেশ্বরী দেবী ১৫ টাকা মালোদের হাতে তুলে দিয়ে এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। আজ ও সেই রীতি মেনে প্রতি বছর রাজবাড়ির তরফ থেকে প্রবীণতম সদস্য/সদস্যা এসে এই ১৫ টি টাকা অনুদান হিসেবে এই বারোয়ারীতে দিয়ে যাওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। এই টাকা রাজবাড়ি থেকে না আসা পর্যন্ত এখানকার পুজো শুরু হয় না। যদিও বর্তমান সময়ে এই টাকার মূল্য খুবই কম , কিন্তু সেই পুরোনো রীতি আজও অব্যাহত রয়েছে।

এইখানকার মূলত দুটি রীতি আগত দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। একটি হলো --- জয়রামবাটিতে সারদা মায়ের মা, শ্যামা সুন্দরী দেবী যে রীতিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেছিলেন এই বারোয়ারীতেও একই রীতিতে মায়ের পুজো হয়। আর দ্বিতীয়ত----- এখানে শিবের কারণে অর্ধ নারীশ্বর রূপ কল্পনা করে মাঝরাতে পুরুষেরা পায়ে নূপুর পরে, শাড়ি পরে, নারী সেজে অধিবাস পালন করে।

এই পুজো কৃষ্ণনগরের সকল অধিবাসীর কাছে একটা ঐতিহ্য। এইখানকার মায়ের নাম দেওয়া হয়েছে 'জলেশ্বরী'। প্রতিমার সামনে থাকে সোনার ঝুলন্ত মাছ। আর এখানকার আরও একটি বিশেষ আকর্ষণ হলো মানসিকের ধুনো পোড়ানো। এ এক দেখার মতো দৃশ্য। ধুনো পোড়ানোর বিশেষ কায়দা রয়েছে। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আগুনের শিখা মন্ডপের চূড়া স্পর্শ করে। প্রচুর মানুষ জড়ো হয় এই ধুনো পোড়ানো দেখার জন্য।

আরও সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এই বারোয়ারী তে এখন বর্তমানে যে দুইজন প্রধান পুরোহিত থাকেন তারা হলো আমার হবু বরের নিজের দুই মামা। তাই এই বছর সেই সুবাদেই বেশ ভালো ভাবেই ধুনো পোড়ানো দেখতে পেয়েছিলাম।

1000113331.jpg

লিংক

ভিডিও টি দেখলে খানিকটা হলেও বুঝতে পারবেন।

এখানকার ভোগেরও কিন্তু বিশেষত্ব রয়েছে। ভোগের থালায় মাছ ভাজাও দেওয়া হয়। এই বছর মায়ের ভোগ খাওয়ারও সুযোগ হয়েছিল।

1000112601.jpg

এই বারোয়ারীর মায়ের নিরঞ্জন ও কিন্তু একটু ইউনিক ভাবে হতো। তবে এখনও সেই রীতিতে হয় কিনা আমার সেই বিষয়ে সঠিক জানা নেই। জোড়া নৌকার মাঝে মা রাজরাজেশ্বরী কে রেখে এক অদ্ভুত কায়দায় মালোরা মায়ের বিসর্জন দিতেন। সেই একই রীতি অনুসরণ করে এই মালোরা মা জলেশ্বরী কেও নিরঞ্জন করতেন।

এই রকম আরও অনেক ইতিহাস রয়েছে আমাদের কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর সাথে। তাই আমরা এতটা ইমোশানের সাথে এই পুজো টাকে পালন করি।

তাহলে আজকে আমার লেখাটি এখানেই শেষ করছি। আবার আগামীকাল অন্য কোনো গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

Sort:  
 4 days ago 

এখানে শিবের কারণে অর্ধ নারীশ্বর রূপ কল্পনা করে মাঝরাতে পুরুষেরা পায়ে নূপুর পরে, শাড়ি পরে, নারী সেজে অধিবাস পালন করে।

তোমার লেখার ইতিহাসের সবচাইতে আকর্ষণীয় জায়গাটিকে তুলে ধরলাম, যেটি আমাকে বেশ অবাক করেছে!

আমি মনে প্রাণে দুই একটি বিষয় ভীষণভাবে বিশ্বাস করি,
যেমন:- ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, যেটি জেলেরা করে দেখিয়েছিল আজ থেকে ২০০ বছর আগে।
আরেকটি হলো সৎ এবং নিঃস্বার্থ ইচ্ছে পূর্তি সৃষ্টিকর্তা করেন!

ধুনো জ্বালাবার বিষয়টি দেখলাম লিংক থেকে, বেশ আকর্ষণীয় বিষয়। যদি মা ডাকেন হয়তো কোনো এক্ বছর তোমাদের স্থানের ঐতিহ্য দর্শনের সুযোগ পাবো!

তিনি না চাইলে আসলে তার স্থান পরিদর্শন করা যায় না বলে আমি বিশ্বাস করি। যাক হবু বরের মামাদের কারণে কাছ থেকে আচার অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ পেয়েছো এটাও অনেক বড় বিষয়।

এক্ সময়ের ১৫ টাকার আজ বাজার মূল্য কমে গেলেও তার ঐতিহাসিক মূল্য আজও অটুট।
সৃষ্টির ইতিহাসের সাথে এই অঙ্কের মূল্য সদাই বিদ্যমান থাকবে, এটা কিন্তু অনেক মূল্য রাখে।

তোমার লেখার শীর্ষক আমাকে আকর্ষিত করেছে, এবং লেখা পড়ে আমার বেশ ভালো লাগলো, অজানা কিছু ইতিহাসের সাক্ষী হবার সুযোগ দেবার জন্য ধন্যবাদ।

 4 days ago 

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

  • Nd TEAM 06
    Congratulations!!!
    your post has been supported. We support quality posts, good comments anywhere and any tags.
    Curated By : @wirngo
 3 days ago 

Thank you my dear @wirngo 💕

Loading...
  • Nd TEAM 06
    Congratulations!!!
    your post has been supported. We support quality posts, good comments anywhere and any tags.
    Curated By : @wirngo