আধ্যাত্মিক প্রশান্তি
নতুন বাড়ি করার পরে, কয়েকদিন থেকেই দেখছিলাম রাত্রিবেলা করে একটা কুকুর আমাদের বড় গেটের সামনে শুয়ে থাকে। প্রথম দিকে বিষয়টা সেভাবে নজরে না নিয়ে আসলেও, আজকাল একটু বিষয়টাতে বেশিই নজর দেই।
করোনাকালীন সময়ে যখন সবচেয়ে বেশি ভাইরাস ছড়িয়ে গিয়েছিল এবং যখন সবকিছু ক্রমাগত অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন হয়ে গিয়েছিল, তখন শহরের বাসার সামনের গলিতে বোবা প্রাণীগুলো প্রায়ই চিৎকার করত, তবে কেউ খাবার দিত না।
তাছাড়া খাবারের হোটেল গুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সব যেন একদম অচল অবস্থা। সেসময় মেডিকেল প্রফেশনের সঙ্গে যেহেতু যুক্ত ছিলাম, তাই দিব্যি নিজের প্রয়োজনে বাহিরে যখন তখন যেতে পারতাম। তবে নিজেকে বাসার সবার থেকে আলাদা করে রেখেছিলাম, বলতে গেলে চেম্বারেই আইসোলেট অবস্থায় ছিলাম।
যতদূর সম্ভব হত সর্বোচ্চ সতর্ক ও সচেতন থাকার চেষ্টা করতাম। কেননা আমাকে সেসময় সরাসরি রোগী দেখতে হতো। তাছাড়া স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার স্বল্পতার কারণে খন্ডকালীন ডিউটি করতে হয়েছিল। সারাদিন পিপিই পড়ে থাকার পরে, ভীষণ অস্থিরতায় ভুগতাম। কি যে কঠিন সময় গুলো কাটিয়েছি সেই সময় , তা একদম চিন্তার বাহিরে।
যেহেতু হাসপাতালে ডিউটি করতাম, তাই খাবারের বন্দোবস্ত সেখানেও কিছুটা হয়ে যেত। প্রায়ই মাঝে মাঝে ব্যাগে করে শুকনা খাবার বাসায় নিয়ে আসতাম। যেহেতু হাসপাতাল থেকে বাসার দূরত্ব পায়ে হাঁটা পথ ছিল, তাই হেঁটেই আসতাম। তাছাড়া যানবাহনও ছিল না সেসময়। রাস্তার কুকুরগুলো আমার দিকে প্রতিনিয়ত এমন ভাবে চেয়ে থাকতো, যেন ওরা ভূত দেখছে।
পুরো শরীর সাদা এমনকি হাত-পা মুখ পর্যন্ত দেখা যেত না আমার। প্রথমদিকে প্রায়ই ওরা চিৎকার চেঁচামেচি করতো, তবে যখন থেকে শুকনো খাবার গুলো ওদের দেওয়া শুরু করেছিলাম, তারপর থেকে একপ্রকার ওদের সঙ্গে ভালই সখ্য তৈরি হয়েছিল। ডিউটি করে ফেরার পথে মনে হতো ওরা আমার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে, পরে গলির ভিতরে এসে দেখি তা একদম সত্য।
আগের দিন যেখানে খাবার দিয়েছিলাম ঠিক পরেরদিন দেখি, ওখানেই ওরা দাঁড়িয়ে ছিল। এভাবে টানা এক মাসের মত ওদের সেসময় খাবার দিয়েছিলাম, তারপরে তো নিজেই কিছুটা অসুস্থ হয়েছিলাম বিধায় আর বাইরে বের হইনি।
সেসময় থেকেই টুকটাক বোবা প্রাণীর প্রতি একটু আলাদা দুর্বলতা কাজ করা শুরু করেছিল। গত কয়েকদিন আগে, বাড়ির বড় গেটের সামনে যখন থেকে কুকুর দেখেছিলাম, তারপর থেকেই বাড়ির সবাইকে বলে দিয়েছি, ও আমার অতিথি রোজ রাতেই যেন ওকে খাবার দেওয়া হয়, কিঞ্চিৎ পরিমাণ যেন অবহেলা না হয় ওর।
বিশ্বাস না হলে, নিজের সঙ্গে একটা বিষয় প্রমাণ করে দেখিয়েন। যখন আপনি বোবা প্রাণীর প্রতি যত্নশীল হবেন, তখন দেখবেন আপনার ভেতর থেকে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি কাজ করবে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
একেবারে যথার্থ বলেছেন ভাই। এটা আমিও বেশ কয়েকবার প্রমাণ পেয়েছি। হীরা আপুর পোস্ট পড়েই জানতে পেরেছিলাম আপনাদের বাড়ির বড় গেটের সামনে একটি কুকুর নাকি বসে থাকে। শায়ান নাকি তার নাম দিয়েছে ডগি। আসলে কুকুর কখনো বেঈমানী করে না। তাই কুকুরের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত আমাদের। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যাঁ ভাই এটা সত্য, শায়ান ওকে ডগি বলেই ডাকে।
কথাটা বেশ মজার হলেও এটাই কিন্তু চরম সত্য ছিল। ওই সময়ে পিপি পরিহিত অবস্থায় চিকিৎসারত কর্মীদের দেখলে সবাই একটু অন্যরকম ফিল করতো। একটি শোচনীয় সময় পার করে এসেছি আমরা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি অবলা প্রাণীদের খাবার খাইছিলেন এটা শুনে আপনার প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। যেমন বর্তমানে আপনার বাসার বড় গেটের সামনে কুকুরকেও খাওয়াচ্ছেন। যাই হোক আমাদের প্রত্যেকের উচিত আপনার মতই এরকম অবহেলা প্রাণীর প্রতি যত্নশীল হওয়া। তবেই মনে আধ্যাত্মিক শান্তি অনুভব করা যাবে।
করোনাকালীন সময়টা আসলেই বেশ কঠিন গিয়েছিল, এটা কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না।
অবলা প্রাণী কোনদিন লোক ঠকায় না৷ আপনার লেখা পড়তে পড়তে মনে পড়ল, আমি তখন হোস্টেলে থাকি। বাড়ি এসেছি ছুটিতে, মা সাইকেল নিয়ে স্কুল থেকে ফিরছে৷ এসেই হাকডাক শুরু করে দিয়েছে কেন না সাথে করে একটি কুকুর বাচ্চাকে এনেছে যাকে কেউ খুব বাজে ভাবে মেরেছিল৷ পাশের পাড়ায় এক ভেটেনারি ডাক্তার ছিল৷ তাকে ডেকে আনা হল৷ ওষুধ খাবার পড়তেই বাচ্চা চাঙ্গা। তারপর সে বড় হল। মায়ের সাথে রোজ স্কুলে যেত। আবার মা ফেরার আগে আনতেও যাবার নাম করে হাল্ফ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকত।
অবলাগুলো বড্ড ন্যাওটা হয়। বহু মানুষই ওদের জন্য।সুইটেবল না। বিতর্কিত কিথা হলেও সত্য।
অপ্রিয় সত্য।
এই ধরনের কাজগুলো করতে পারলে মানসিকভাবে একটু শান্তি পাওয়া যায়। ঠিক বলছেন এই বোবা প্রাণীগুলো কথা বলতে পারে না। কিন্তু তাদেরকে যখন খাবার দিবেন আদর যত্ন করবেন দেখবেন আপনার পিছু ছাড়বে না। তারাও চিনে ভালো মানুষ এবং খারাপ মানুষ কোনগুলো। বেশ ভালোই স্মৃতিচারণ করলেন সেই করোনা ভাইরাসের দিন গুলোর। কুকুরটাকে প্রতিদিন খাবার দিচ্ছেন জেনে ভালো লাগলো।
এটা একদম ঠিক বলেছেন আপু, এই কাজগুলো করলে আলাদা প্রশান্তি কাজ করে ।