অকৃতজ্ঞ সন্তান (শেষ পর্ব)

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


সোহেল বাসায় থাকা অবস্থায় এলাকার মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে সেখানে তার খলিল চাচার সাথে দেখা হোতো। কিন্তু কয়েক মাস হয়ে যায় সোহেল আর খলিল মিয়াকে দেখতে পায় না। সোহেল মনে করে তাদের দিন ভালো হয়েছে এই জন্য খলিল মিয়া এখন আর তার কাছে আসে না। সে চিন্তা করতে থাকে তারা ভালো থাকলেই ভালো। বেশ কয়েক মাস পরে সোহেল একদিন সকালে বাজার করে ফিরছিলো। বাজার করে ফেরার পথে পথের পাশে কয়েকজন ভিক্ষুককে দেখতে পায়। সোহেল হঠাৎ করে তাকিয়ে দেখে সেই ভিক্ষুকদেন ভেতরে খলিল চাচা বসে রয়েছে। সোহেল তাকে ভিক্ষা করতে দেখে খুব অবাক হয়ে যায়। আর খলিল মিয়া সোহেলকে দেখে তার মুখ লুকানোর চেষ্টা করে।


Black and Gold Fancy New Year Card_20240504_213920_0000.png

ক্যানভা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

সোহেল তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে ব্যাপার কি চাচামিয়া? আপনি এই অবস্থায় কেন? সোহেলকে দেখে খলিল মিয়া আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। সে হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করে। সোহেল কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। পরবর্তীতে সোহেল জানতে পারে খলিল মিয়ার ছেলে চাকরি পাওয়ার পরে তার সাথেই পড়ুয়া এক মেয়েকে বিয়ে করেছে। চাকরি সূত্রে সোহেল একটি ফ্ল্যাট পেয়েছে থাকার জন্য। সেখানে সে তার বাবা-মা ভাই বোনকে নিয়ে উঠেছিলো। সাথে ছিলো তার স্ত্রী। তবে স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় সে তার বাবা-মা ভাই-বোনকে তার ফ্ল্যাট থেকে বের করে দিয়েছে। তার স্ত্রীর অভিযোগ তার ইনকামের সমস্ত টাকা পরিবারের পেছনে খরচ করে ফেলে। এটা নিয়ে সে খলিল মিয়ার ছেলের সাথে অনেক ঝামেলা করে। তারপর খলিল মিয়ার ছেলে তার পরিবারের সকলকে বাসা থেকে চলে যেতে বলে। বাসা থেকে বের করে দিলেও প্রথম কয়েক মাস তাদেরকে খরচের টাকা পাঠাতো। কিন্তু কয়েক মাস পরে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে খলিল মিয়ার বয়স হয়ে গিয়েছে অনেক। তাকে এখন কেউ কাজে নেয় না। যার ফলে ভিক্ষা করা ছাড়া তার সামনে আর কোন পথ খোলা ছিলো না। সোহেল তখন বসে বসে চিন্তা করতে থাকে মানুষ কতোটা অকৃতজ্ঞ হলে এমন হতে পারে? যে ছেলেকে পড়ানোর জন্য সে রাত দিন দিয়ে পরিশ্রম করেছে। মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে হাত পেতেছে সাহায্যের জন্য। আজকে সেই ছেলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তার স্ত্রীর কথায় বাবা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। সোহেল তখন খলিল মিয়াকে বলে আপনাকে এখানে ভিক্ষা করতে হবে না। আপনি আমার সাথে আসেন এই কথা বলে সোহেল খলিল মিয়াকে সেখান থেকে নিয়ে যায়। তারপর খলিল মিয়াকে বাসায় নিয়ে তাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বলে এই টাকা দিয়ে আপনি ব্যবসা করবেন। সবজি বা ফল কিনে সেটা বিক্রি করবেন। তাহলে আপনাকে আর ভিক্ষা করে টাকা ইনকাম করতে হবে না। কৃতজ্ঞতায় খলিল মিয়ার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে আর দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সে মনে মনে চিন্তা করতে থাকে যে ছেলেকে এত কষ্ট করে বড় করলাম আজ সেই ছেলে আমাকে পর করে দিলো। আর যার সাথে কোন সম্পর্ক নেই সে আমাকে সম্মান নিয়ে বাঁচার পথ করে দিলো। খলিল মিয়র তখন শুধুই মনে হতে থাকে ছেলেকে ভালো লেখাপড়া করার থেকে ভালো মানুষ বানানোটা বেশি প্রয়োজন ছিলো। (সমাপ্ত)


আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।



ধন্যবাদ

Sort:  

আসসালামুআলাইকুম, কেমন আছেন ভাইয়া?
আপনার লেখাগুলা খুবই সুন্দর। আপনার লেখাগুলা পড়তে খুবই ভালো লাগে। আমি সবসময় চেষ্টা করি আপনার লিখাগুলো পড়ার জন্য।
আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই, আপনার কোনো কন্টাক্ট ডিটেলস কি দেওয়া যাবে? Discord, facebook, or whatsapp.
দয়া করে রিপ্লাই করবেন, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো।।
ভালোবাসা ।।

 2 days ago 

বর্তমানে এমনটা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। এসব সন্তানদের জন্য পরকালে চরম লেভেলের শাস্তি অপেক্ষা করছে। খলিল মিয়া এবং তার পরিবারের জন্য আসলেই খুব খারাপ লাগছে। তবে সোহেলের কোনো তুলনা হয় না। সোহেল ২০ হাজার টাকা দিয়েছে খলিল মিয়াকে ব্যবসা করার জন্য, এটা জেনে ভীষণ ভালো লাগলো। যাইহোক খলিল মিয়ার ছেলের মতো এমন কুলাঙ্গার ছেলেদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক সেই কামনা করছি। এতো সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।