প্রাচীন শহর ( পর্ব ১ )

আজকে আপনাদের সাথে একটি গল্প শেয়ার করে নেবো। গল্পটি একটি প্রাচীন শহরকে ঘিরে। মূলত এই প্রাচীন শহরটি এই বর্তমান সময়ের থেকে একদম মুছে গিয়েছে বা এই বিষয়ে কারো তেমন কোনো ধারণা নেই। তবে রাহুল নামের একটি ছেলে একদিন নিশীথের মাঝরাতের দিকে অদ্ভুত ধরণের স্বপ্ন দেখে রাতের দিকে হঠাৎ জেগে যায়। এই স্বপ্নে সে একটি প্রাচীন শহরকে দেখতে পায়, যেটা এক পর্যায়ে পুরোপুরি ধংস হয়ে গিয়েছে। চারিদিকে ভাঙাচুরা ইট, পাথর পড়ে রয়েছে। রাহুল তার মধ্যে দিয়ে হাঁটছে এবং সবকিছু অবাক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। প্রতিটা দেওয়ালের গা যেন ফাটল ধরেছে, হাত দিলেই ঝরে ঝরে পড়ছে।

এইভাবে সে ভিতরের দিকে হাঁটতে থাকে এবং এক পর্যায়ে গিয়ে সে দেখতে পায় মাটির নিচে থেকে আলো উপরে ভেসে আসার মতো আসছে অর্থাৎ যেমনটা আলোর ঝিলিক, তেমনটাই আরকি। কিন্তু এই স্বপ্নের মধ্যে তার কাছে একটা অদ্ভুত বিষয় লেগেছিলো যে, এই প্রাচীন শহরটি তাকে যেন ডাকছে। এই স্বপ্নের ঘোরে তো রাত শেষ হয়ে গেলো, এখন এই বিষয়টা সে সকালের দিকে তার কিছু বন্ধুদের ডেকে তাদের সাথে ঘটনাটা শেয়ার করে। কিন্তু তার বন্ধুরা এইসব শুনে সবাই মজার ছলে কথাগুলো উড়িয়ে দিয়ে বললো যে, এইগুলো তোমার কাল্পনিক ঘটনা, এইসব কখনো সত্যি হতে পারে না! কিন্তু রাহুল এর কাছে বিষয়টা তাও কেমন লাগলো, মোটেও সে তার মনকে বোঝাতে পারে না এই ঘটনাটাকে।

তাকে যে ডাকছে এই ঘটনাকে সে কোনো মতেই তার বন্ধুদের মতো উপেক্ষা করতে পারছে না। এরপর এইসব কারো সাথে শেয়ার করে যখন কিছু হলো না, তখন তার স্বপ্নে দেখা সেই প্রাচীন শহরটিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা শুরু করে। অনেক চেষ্টার পরে ঠিক এইরকমই ধংসাবেশ শহরের উল্লেখ পায় যে, ভারতের একটি অঞ্চলে একটি শহর ছিল, যা বহু বছর আগে একটা বিশাল ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের জেরে ধংস হয়ে গিয়েছিলো। তবে এইটা কাকতালীয় হলেও রাহুলের স্বপ্নে দেখা শহরের ঘটনার সাথে এইটা একদম মিলে যায়। এরপর রাহুল এর মনে একটাই বিষয় ঘুরতে থাকে এবং কৌতূহল হতে লাগে সেখানে যাওয়ার।

রাহুল এই বিষয়টা আবারো তার দুই বন্ধুর সাথে শেয়ার করলে তার মধ্যে দুইজন তার এই মিশনে যাওয়ার জন্য রাজি হয়। এই জায়গাটিও একটি দুর্গম জায়গায় অর্থাৎ পাহাড়ি একটি অঞ্চলের দিকে। তারা ট্রেনে করে যাত্রা শুরু করে এবং পরে পাহাড়ি রাস্তা ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এরপর যে জায়গাটায় ভূমিকম্পের ফলে ধংস হয়ে গিয়েছিলো, রাহুল এবং তার দুই সহপাঠী বন্ধু সেখানে বেশ কয়েক ঘন্টা দুর্গম পথ অতিক্রম করে পৌঁছিয়ে যায়। তবে সেখানে বিষয়গুলো রহস্যের মতো হতে থাকে অর্থাৎ সেখানে চারিপাশটা যেন ছিল একদম নিস্তব্দতা আর সেখানে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সেই স্বপ্নে দেখার মতো মাটির নিচ থেকে আলোর রশ্নি আসতে থাকে, যেন তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এইরকম একটা রহস্যময় বিষয়গুলো হতে থাকে তাদের সামনে।

সেই আলোর পথ দেখানো পথে যেতে যেতে তারা একটি গুহার কাছে গিয়ে পৌঁছায়। এরপর রাহুল যে স্বপ্নে ডাক শুনতে পেয়েছিলো, একদম ঠিক সেইরকমই পরিচিত ডাক সে শুনতে পায় বা তার কানে ভেসে আসে। এরপর তারা সাহস করে সেই গুহার ভিতরে প্রবেশ করলো এবং সেখানে তারা একটি বিশালাকার শিলা দেখতে পায়, যার উপর আবার খোদাই করে কিছু লেখা ছিল। এরপর শিলার উপরে নোংরা পরিষ্কার করে দেখতে পায় যে, "শহরটি আবার ফিরে আসবে"। এরপর কিছুক্ষন বাদে একটা শাঁ শাঁ শব্দ আসতে থাকে অর্থাৎ যেমনটা হাওয়া বইলে শোনা যায় এবং সেই সাথে ওই শিলার ভিতর থেকে যেন চারিদিকে আলো ছড়িয়ে পড়ে । যেন সবকিছু তাদের সামনে একটা অলৌকিক ঘটনার মতো ঘটতে থাকে। এরপর সেখানে এমন কিছু ঘটনা ঘটলো যেটা দেখে তারা হতভম্ব হয়ে পড়ে।

সেখানে যেন সেই ধংসাবেশের সবকিছু নতুন করে গড়ে উঠছে এবং শহরটির কাঠামো আবারো জেগে উঠতে শুরু করেছে। এই পরিবর্তন দেখে রাহুল এবং তার বন্ধুরা একটা বিষয় অনুভব করে যে, এটা একটা সময়ের বিশেষ চক্র। মূলত এই প্রাচীন শহরের ইতিহাস যাতে পুরোপুরি মুছে না যায়, তাই এই শহরের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাহুলকে বেছে নেওয়া হয়েছিল আর সেইজন্যই সে এই ডাক শুনতে পেয়েছিলো। তবে এখন প্রশ্ন হলো যে- এই শহর কি মানুষের কাছে রহস্য হয়ে থাকবে, না আবারো ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাবে?...