৫২ ফুট উঁচু কালি মায়ের দর্শন

in Incredible India2 months ago

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলেই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। বাঙালির বারো মাসে তেরো র্পার্বণ ।এর মধ্যে একটি হলো কালী পূজা। আমরা সদ্য এই উৎসব উদযাপন করলাম। এই বছরের মতো মা আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিলেও কালীপুজোর রেশ কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। আমি আমার আগের ব্লগে আমাদের পাড়ার কালীপুজো নিয়ে একটি পোস্ট করেছিলাম। আজ আবারো চলে এসেছি ৫২ ফুট কালি ঠাকুর দেখার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করে নিতে। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।

1000106263.jpg

কৃষ্ণনগরের সবচেয়ে উঁচু কালী প্রতিমা

আমি আগেও জানিয়েছি কালীপুজোয় আমরা সকলে খুব মজা করে সময় কাটাই। নিজের পাড়ার পুজো তো বটেই তার সাথে আশেপাশের সমস্ত পাড়া এবং সর্বোপরি কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন জায়গায় যে সমস্ত পুজোগুলো হয় সেগুলোও ঘুরে দেখা হয়। কৃষ্ণনগরের বাকি পুজোর গল্প না হয় পরের ব্লগে বলবো। নিজের পাড়ার ঠাকুর দেখার পর বাড়ির সবচেয়ে কাছে যে ঠাকুরটি আমরা প্রত্যেক বছর দেখতে যাই সেটি হল আমাদের পাশের পাড়ার ৫২ ফুট কালি ঠাকুর।

1000106271.jpg

মা কে দর্শন করতে গিয়ে তোলা ছবি

জায়গাটির নাম হল সন্ধ্যা মাঠ পাড়া। এখানে বহু বছর ধরেই একটি কালীমন্দির রয়েছে। এই কালী মন্দির কে কেন্দ্র করেই এখানে বহু আগে থেকেই কালীপুজো খুব ধুমধাম করে আয়োজিত হয়। তবে বেশ কিছু বছর হলো এই পাড়ার পুজোটি হেডলাইনে রয়েছে। কারণ এখানে কৃষ্ণনগরের সবচেয়ে বড় কালী ঠাকুর পুজো হয়। লোকমুখে শোনা এই ঠাকুর প্রায় ৫২ ফুট উঁচু হয়। শুধু কৃষ্ণনগর নয়, কৃষ্ণনগরের আশেপাশেও এত বড় ঠাকুর কোথাও পুজো হয় না। তাই কৃষ্ণনগরের এক প্রান্তে হওয়া এই পুজো দেখতে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়।

1000106262.jpg

কৃষ্ণনগরের বড়োমা

আর এই পুজোকে কেন্দ্র করেই এখানকার মন্দিরের পাশে থাকা বড় মাঠটিতে একটি মেলার আয়োজন করা হয়। মেলা মানে হরেক রকম আইটেমের দোকান, খাবারের দোকান আর তার সাথে বিভিন্ন নাগরদোলা তো রয়েছেই। এই কালীপুজো উপলক্ষে এখানে কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। নিজেদের পাড়ার পুজো ছেড়ে প্রতিদিন সেখানে যাওয়া সম্ভব না হলেও একদিন অন্তত আমরা সেখানে ঘুরতে যাই।

1000106282.jpg

মেলা

এই বছরও নানারকম ব্যস্ততার মাঝেও একটি দিন বের করে নিয়েছিলাম মা কে দর্শন করতে যাওয়ার জন্য। যেহেতু ওই দিন অনেকগুলো ঠাকুর দেখার পরিকল্পনা করেছিলাম তাই সন্ধ্যের দিকেই আমি এবং আমার বন্ধু বেড়িয়ে পড়েছিলাম মাঠপাড়ার ঠাকুর দেখার উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে প্রথমেই ভিড় ঠেলে মাঠের ভিতরে প্রবেশ করে মাকে প্রণাম করে মায়ের ফটো তুলে নিয়েছিলাম।

এরপর ভিড় আরো বেড়ে গেলে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব ছিল না। তাই আমরা সেখান থেকে চলে গেলাম খাবারের স্টলের দিকে। এখানে গিয়ে প্রথমেই আমাদের যে স্টলটির দিকে চোখ পড়েছিল সেটি হল একটি পকোড়ার স্টল।

1000106273.jpg

মুখোরোচক খাবারের স্টল

আমার বন্ধু যেহেতু একটু খাদ্য রসিক তাই বলল, " চল একটা স্প্রিং চিকেন রোল খেয়ে এনার্জি বাড়িয়ে নিই।" যেমন ভাবনা তেমন কাজ। নিয়ে নিলাম একটা স্প্রিং চিকেন রোল। দাম ছিল ৫০ টাকা। আমি প্রথমে একটু টেস্ট নিয়ে ডাউট করছিলাম তবে ফার্স্ট বাইট নেওয়ার পর আমার সে ভ্রান্তি কেটে গেল। সত্যিই অসাধারণ খেতেছিল।

1000103802.jpg

স্প্রিং চিকেন রোল

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা বেড়িয়ে পড়েছিলাম অন্য একটি ঠাকুর দর্শন এর উদ্দেশ্যে। আমরা চলে গিয়েছিলাম আমাদের এখানে হরিজনপট্টিতে হওয়া ঠাকুর পরিদর্শন করতে। এখানকার পুজো টি হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষেরাই আয়োজন করে থাকে। ছোটবেলায় এইখানকার ঠাকুর দেখে আমি খুব ভয় পেতাম। এই রানী মা কৃষ্ণনগরের একটি প্রসিদ্ধ বারোয়ারী।

1000106283.jpg

রানী মা

এরপর চলে গিয়েছিলাম কৃষ্ণনগরের রাধানগর সংলগ্ন এলাকায় হওয়া একটি ঠাকুর পরিদর্শন করতে। এই রাস্তা দিয়েই আমি পড়াতে যাওয়াই দুপুর বেলা ঠাকুর টিকে একবার দেখেছিলাম। তবে দিনের বেলা দেখে আমার এতটাই ভালো লেগেছিল যে রাত্রিবেলায় লাইটিং সহকারে ঠাকুরটিকে দেখার লোভ আমি সামলাতে পারলাম না। সত্যি রাত্রিবেলায় লাইটিং এর মধ্যে মাকে অসাধারণ লাগছিল।

1000106268.jpg

একই মায়ের নানা রূপ

এরপর কৃষ্ণনগরের আরো অনেক ঠাকুর আমরা পরিদর্শন করেছিলাম। আমার পরবর্তী ব্লগে আমি অবশ্যই আপনাদের সঙ্গে সেই মুহূর্তগুলো শেয়ার করব। আজকে এখানেই শেষ করছি। আশা করছি আপনাদের সকলের আমার ব্লগটি ভালো লাগবে। আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য করবেন।

Sort:  
 2 months ago 

বাঙ্গালীদের বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই থাকে। আমাদের বড় উৎসব দুর্গা পুজো হলেও। কালীপুজোর মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। বেশ কয়েক বছর ধরেই সন্ধ্যা মাঠ পাড়ায় এত বড় কালী প্রতিমা তৈরি হচ্ছে ।এই প্রতিমা টিকে দেখার জন্য বহু মানুষের ভিড় জমে। তবে আমি এতদিন ধরে কানে শুনে এসেছি ।কিন্তু কোনদিন চোখে দেখিনি। এ বছরে প্রথমবার আমি আমার বরের সাথে গিয়ে তোমাদের সন্ধ্যা মাঠ পাড়ার বড়মাকে দর্শন করেছি। দেখে সত্যিই খুব আশ্চর্যজনক লাগছিল। আমার বর ও এই প্রথমবার দেখলো। তবে শুনেছি ওখানে নাকি খুব ভিড় হয়। এ বছরে আমি যখন দেখতে গিয়েছিলাম তখন ভোর সাড়ে তিনটে মত বাজে। তখন খুব একটা ভিড় ছিল না। দেখলাম অনেক বড় বেশ মেলা বসেছে, যেহেতু ভোরবেলায় তাই সমস্ত দোকান বন্ধ ছিল। আমিও এ বছরে বেশ অনেক প্রতিমাই দর্শন করেছি। তবে কৃষ্ণনগরে রানী মাও বেশ বিখ্যাত। এই মাকে আবার সকলে এক ডাকেই চেনে। এ বছরে রাণী মা কেও অনেকদিন পর দর্শন করেছি। তোমার পোস্ট পড়ে বেশ ভালো লাগলো।

 2 months ago 

তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

 2 months ago 

৫২ ফুটের কালি। এ কি যে সে কথা!? আমার বাবা কালীপুজোর আগের দিন থেকেই আমাকে এই কালি ঠাকুরের ব্যাপারে বলছিল। প্রতিভা ক্লাবের মাঠে এই পুজোটা এর আগেও হয়েছে। এদের পুজোর আকর্ষণ হচ্ছে বড় ঠাকুর করা। আমার মনে আছে আগেরবারেও এরা অনেক বড় ঠাকুর করেছিল। কিন্তু সেটা জগদ্ধাত্রী পুজোতে বোধ হয়।

তুমি এই ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলে, জেনে ভালো লাগলো। তবে আমার আর এবার সময় হয়ে ওঠেনি। তবে প্রতিভা ক্লাবের কাছাকাছি তো তোমাদের বাড়ি। প্রতিভা ক্লাব আমাদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূর হয়। হয়তো তুমি আবদার করে নিমন্ত্রণ করলে অবশ্যই যেতাম। যাইহোক সামনে জগদ্ধাত্রী পুজো।

ঘূর্ণি শীবতলা বারোয়ারি র পক্ষ থেকে, এই পাড়ার বাসিন্দা হিসাবে আমি তোমাকে নিমন্ত্রণ করলাম।। অবশ্যই ঠাকুর দেখতে এসো। আর সাথে আমাকেও দেখে যেও।

বাইরে বেরোলে আমি খুব একটা বাইরের ফাস্টফুট খেতে চাই না। বিশেষ করে পুজোর সময়। কিন্তু ঈশান যদি আজকে চিকেন রোল এর কথাটা শুনতো তাহলে আমাকে সত্যিই এতক্ষণে বকাবকি করত। কারণ ঠাকুর দেখতে গিয়ে ওকেও আমি এসব খেতে দিই না।

ও আমাকে এটাই বলতো যে, দেখ পিংকি দিও বাইরে বেরিয়ে খায়। যাইহোক মাঝেমধ্যে সময় পেলে একটু আমাকেও এসব কিনে খাইও। কত ট্রিট বাকি আছে ,কিছুই তো চাওয়া হয় না।। 😂

 2 months ago (edited)

না ঈশা, তোর একটু ভুল হলো। প্রতিভা ক্লাবের মাঠে যে পুজোটা হয় সেটা জগ্ধাত্রী পুজো আর আমি যে ঠাকুরের ছবি দিয়েছি সেটা সন্ধ্যামাঠপাড়ার কালী ঠাকুর। সন্ধ্যা মাঠ পাড়ায় প্রতিবছর এই বড় কালী ঠাকুর তৈরি হয়।

আর খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে আমি আবার উল্টো। বাইরে ঘুরতে বেরিয়ে একটু পেট পুজো না করলে কেমন যেন mood টা off হয়ে যায়। তাই আমরা দুজনেই বাইরে বেরোলে ছোটখাটো কিছু হলেও খাই।

আর ঈশান তো অনেক ছোট। ডায়েট করার অনেক সময় বাকি আছে। এখন একটু অন্তত খেতে দে। পরে নিজে থেকেই না হয় হেলথ কনসাস হয়ে যাবে। সাথে তুইও একটু খা। খেলে মন ভালো থাকে।

আর আমার কাছ থেকে ট্রিট পেতে হলে আমাদের বাড়ি আসতে হবে। সেই কোন যুগে একবার এসেছিলিস তারপরে তো আর তোর টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। আসিস একদিন।

 2 months ago (edited)

কৃষ্ণনগরের পূজোর দৃশ্য এবং বিস্তারিত পরিদর্শনের অপেক্ষায় রইলাম। তবে আপনি বায়ান্ন ফুট উচ্চতার মায়ের যে দৃশ্য উপস্থাপন করেছেন সেইটা আমার কাছে একদমই অজানা ছিল। মায়ের এইরকম প্রতিমার বিষয় জানতে পেরে ভালোই লাগছে।

তাই কৃষ্ণনগরের এক প্রান্তে হওয়া এই পুজো দেখতে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়।

ব্যতিক্রম যেখানে সেখানে মানুষের আকর্ষণ থাকবে এটাই বাস্তব। তবে শত শত বছরের ঐতিহ্য এটা এবং যাঁরা এখনো এই পূজো উদযাপনের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে মন থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি, মায়ের চরণে শতকোটি প্রণাম। 🙏

মেলা মানে হরেক রকম আইটেমের দোকান, খাবারের দোকান আর তার সাথে বিভিন্ন নাগরদোলা তো রয়েছেই।

পূজোর আনন্দ দিগুন বৃদ্ধি পায় যখন সেখানে থাকে মেলার আয়োজন। পাশাপাশি, নাগরদোলা যেন মেলাকে আরো বেশি জাঁকজমকপূর্ণ করে তোলে। হাঁসি পাচ্ছে, নাগরদোলার কথা মনে পড়তেই। প্রথম যখন আমি নাগরদোলায় উঠেছিলাম এবং কিছুক্ষণ বাদেই ভয়ে আমার হাল বেহাল হয়েছিল।

 2 months ago 

শেষের লাইন পড়ে আমারও হাসি পেল🤣। অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

Loading...
 2 months ago 

৫২ ফুট উঁচু কালি মায়ের দর্শন করার অনুভূতি আপনি খুবই সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করেছেন এবং পূজার সময় আপনারা সবাই অনেক বেশি আনন্দ অনুভব করেন এবং আপনার পোস্টটি পরিদর্শন করে বুঝতে পারলাম আপনি অনেক আনন্দ অনুভব করেছেন এই আনন্দের মুহূর্তগুলো আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ খুবই ভালো লাগলো আপনার পোস্ট পরিদর্শন করে।

 2 months ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।